বিষয় : ইবনু উমার (রা) হতে বর্ণিত হিজামাহ করা ও না করার জন্য বিশেষ কিছু দিন থাকা সক্রান্ত একটি হাদিসের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে আলোচনা।
লেখক : আল-আরনাওওত, নাবিল আল-কুয়েতী, সামির আল-ইমরান, ইসলামওয়েব, সালিহ আল-মুনাজ্জিদ, আল-আ'যামী এবং অনুবাদক সামিউল হাসান।
অনুবাদক : islamqa.com/bn এর কর্তৃপক্ষ (শুধুমাত্র শায়খ আল-মুনাজ্জিদের লেখাটির অনুবাদক), সামিউল হাসান তবিব আল-ইনফিরাদী (বাকি সবগুলো আলোচনার অনুবাদক)।
বিন্যাস্তকারী : সামিউল হাসান তবিব আল-ইনফিরাদী।
***************
ইবনু উমার (রা) হতে হিজামাহর ব্যাপারে একটি হাদিস বর্ণিত আছে, উক্ত হাদিসে কিছু নির্দিষ্ট দিনে হিজামাহ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং কিছু নির্দিষ্ট দিনে হিজামাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
হাদিসটি নিম্নরূপ,
ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে নাফে! আমার রক্তে উচ্ছাস দেখা দিয়েছে (রক্তচাপ বেড়েছে)। অতএব আমার জন্য একজন রক্তমোক্ষণকারী খুঁজে আনো, আর সম্ভব হলে সদাশয় কাউকে আনবে। বৃদ্ধ বা বালককে আনবে না। কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ বাসি মুখে রক্তমোক্ষণ করালে তাতে নিরাময় ও বরকত লাভ হয় এবং তাতে জ্ঞান ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। অতএব আল্লাহর বরকত লাভে ধন্য হতে তোমরা বৃহস্পতিবার রক্তমোক্ষণ করাও, কিন্তু বুধ, শুক্র, শনি ও রবিবারকে রক্তমোক্ষণ করানোর জন্য বেছে নেয়া থেকে বিরত থাকো। সোম ও মঙ্গলবারে রক্তমোক্ষণ করাও, কেননা এ দিনই আল্লাহ আইউব (আ) -কে রোগমুক্তি দান করেন এবং বুধবার তাকে রোগাক্রান্ত করেন। আর কুষ্ঠরোগ ও ধবল বুধবার দিনে বা রাতেই শুরু হয়।
[https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=44451]
এই হাদিসটি অনেকগুলো ভিন্ন ভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে। এবং হাদিসটির মতনেরও অনেকগুলো ভিন্ন ভিন্ন কমবেশি পার্থক্যবিশিষ্ট সংস্করণ বা রূপ আছে। রেওয়ায়েতভেদে এই হাদিসটির সনদে এবং মতনে কম বা বেশি পার্থক্য বিদ্যমান। আমি এখানে শুধুমাত্র একটা রেওয়ায়েত উল্লেখ্য করেছি সুনানু ইবনে মাজাহ থেকে। তবে মূল আলোচনায় উক্ত হাদিসের সবগুলো সনদ ও মতনকে অন্তর্ভুক্ত করাপুর্বক সকল সনদ ও মতন নিয়েই আলোচনা করা হবে।
অতপর বলব যে, ইবনু উমার (রা) হতে বর্ণিত এই হাদিসটি প্রকৃতপক্ষে "যইফ", সহিহ নয়। শুধু যে এই হাদিসটা একাই যইফ, ব্যাপারটা মোটেও এমন না ; বরং এই হাদিসের অনুরূপ অন্যান্য যত হাদিসেই হিজামাহ করা বা না করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট দিনকে বিশেষায়িত করা হয়েছে, সেইসব হাদিসের সবগুলোওই অধিকাংশ উলামাদের মতে যইফ।
তবে এই লেখাটির মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে শুধুমাত্র ইবনু উমার (রা) হতে বর্ণিত উপরে উল্লেখিত হাদিসটি, এই হাদিসের অনুরূপ অন্য কোনো হাদিস এই লেখার মূল আলোচ্য বিষয় নয়। কাজেই এই লেখাটিতে অন্যান্য হাদিসের ব্যাপারে খুবই সামান্য ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা থাকবে।
এবার, আলোচ্য হাদিসটির বিশুদ্ধতার ব্যাপারে ৫ জন ভিন্ন ভিন্ন আলেমের ৫ টি ভিন্ন ভিন্ন আলোচনা অর্থাৎ লেখা উপস্থাপন করা হবে। এবং এরপাশাপাশি আলোচ্য হাদিসটি সম্পর্কে islamweb কর্তৃক প্রদানকৃত একটি ফতোয়াও উপস্থাপন করা হবে। তাছারা এসবকিছু উল্লেখ্য করার পর একদম শেষের দিকে আমার নিজের একটি আলোচনাও উল্লেখ্য করা থাকবে।
সেই পাঁচজন আলেম হলেন,
1. আশ-শায়খ শুয়াইব আল-আরনাওওত
2. আশ-শায়খ নাবিল বিন মানসুর আল-কুয়েতী
3. ডক্টর সামির বিন সুলাইমান আল-ইমরান
4. ডক্টর মুহাম্মদ দ্বিয়াউর রহমান আল-আ'যামী
5. আশ-শায়খ মুহাম্মদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ
1. আশ-শায়খ শুয়াইব আল-আরনাওওত এর আলোচনা :
সুনানু ইবনে মাজাহ (হাদিস নং 3487) :
ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে নাফে! আমার রক্তে উচ্ছাস দেখা দিয়েছে (রক্তচাপ বেড়েছে)। অতএব আমার জন্য একজন রক্তমোক্ষণকারী খুঁজে আনো, আর সম্ভব হলে সদাশয় কাউকে আনবে। বৃদ্ধ বা বালককে আনবে না। কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ বাসি মুখে রক্তমোক্ষণ করালে তাতে নিরাময় ও বরকত লাভ হয় এবং তাতে জ্ঞান ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। অতএব আল্লাহর বরকত লাভে ধন্য হতে তোমরা বৃহস্পতিবার রক্তমোক্ষণ করাও, কিন্তু বুধ, শুক্র, শনি ও রবিবারকে রক্তমোক্ষণ করানোর জন্য বেছে নেয়া থেকে বিরত থাকো। সোম ও মঙ্গলবারে রক্তমোক্ষণ করাও, কেননা এ দিনই আল্লাহ আইউব (আ) -কে রোগমুক্তি দান করেন এবং বুধবার তাকে রোগাক্রান্ত করেন। আর কুষ্ঠরোগ ও ধবল বুধবার দিনে বা রাতেই শুরু হয়।
[https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=44451]
উক্ত হাদিসটির সনদটি ধারাবাহিকভাবে দুইয়ের অধিক যইফ রাবিদের দ্বারা আক্রান্ত, 'সুয়াইদ বিন সাঈদ', 'উসমান বিন মাতার' এবং 'আল-হাসান বিন আবি জাফার' এনারা সবাই যইফ।
উক্ত হাদিসটিকে 'ইবনু হিব্বান' তাঁর "আল-মাজরুহিন"(2/100) গ্রন্থে উসমানের জিবনীতে বর্ণনা করেছেন। এবং 'ইবনু আদি' তাঁর "আল-কামিল"(2/721) গ্রন্থে আল-হাসানের জিবনীতে বর্ণনা করেছেন। আবার 'ইবনুল-যাওযি' তাঁর "আল-ইলালুল মুতানাহিয়াহ"
(1464) গ্রন্থে 'উসমান বিন মাতার' এর সুত্রে এই সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
'আল-হাকিম' তাঁর "আল-মুস্তাদরাক"(4/409) গ্রন্থে উক্ত হাদিসটিকে বর্ণনা করেছেন 'আব্দুল মালিক বিন আব্দু রাব্বিহ আত-ত্বয়িই' এর সুত্রে 'উসমান বিন জাফর' হতে তিনি 'মুহাম্মাদ বিন জুহাদাহ' হতে অনুরূপ সনদে, এবং (বর্ণনা করার পর আল-হাকেম) বলেছেন : "উসমান বিন জাফর, এই লোকের ব্যাপারে আমি কোনো জারাহ বা তাদিল জানিনা।" তাছারা 'আয-যাহাবী' তাঁর "তালখিস" গ্রন্থে উসমানের এই হাদিসটিকে ক্রুটিপুর্ণ সাব্যস্ত করেছেন। 'আল-হাফিয ইবনু হাজার' তাঁর "লিসানুল মিযান" গ্রন্থে উসমানকে উল্লেখ্য করেছেন এবং বলেছেন : "হিজামাহর ব্যাপারে তার বর্ণিত হাদিসটি মুনকার"। আমরা বলব : এই 'আব্দুল মালিক বিন আব্দু রাব্বিহ আত-ত্বয়িই' কে 'আয-যাহাবী' তাঁর "আল-মিযান" গ্রন্থে উল্লেখ্য করেছেন এবং "মুনকার" বলেছেন।
'আল-হাকিম' (4/211) এবং 'ইবনুল-যাওযি'(1463) হাদিসটি বর্ণনা করেছেন 'গাযযাল বিন মুহাম্মদ' এর সুত্র ধরে 'মুহাম্মদ বিন জুহাদাহ' হতে অনুরূপ সনদে। 'গাযযাল বিন মুহাম্মদ' কে মাজহুল সাব্যস্ত করেছেন 'আল-হাকিম' এবং 'ইবনুল যাওযি', এবং 'আয-যাহাবী' তাঁর "আল-মিযান" গ্রন্থে গাযযালকে মাজহুল সাব্যস্ত করাপুর্বক বলেছেন যে : "হিজামাহর ব্যাপারে তার বর্ণিত বর্ণনাটি মুনকার।"
'আল-হাকিম' (4/211-212) হাদিসটি বর্ণনা করেছেন 'আব্দুল্লাহ বিন সালিহ আল-মাসরী' এর সুত্রে 'আত্তাফ বিন খালিদ' হতে, তিনি নাফি হতে অনুরূপ সনদে। 'আব্দুল্লাহ বিন সালিহ ' বাজে স্বরনশক্তিবিশিষ্ট ছিলেন এবং 'আত্তাফ বিন খালিদ' এর অবস্থা সম্পর্কে মতভেদ আছে, তাকে 'ইমাম মালিক' প্রশংসা করেন নি, এবং 'ইবনু হিব্বান' তাকে এই বলে অভিযুক্ত করেছেন যে বিশেষভাবে নির্দিষ্টভাবে নাফি হতে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে তার স্বরনশক্তি বাজে ছিলো।
হাদিসটি 'আল-হাকিম'(4/211) এবং 'ইবনুল-যাওযি'(1465) সংক্ষিপ্তরূপে মাওকুফরূপে বর্ণনা করেছেন 'আব্দুল্লাহ ইবনু হিশাম আদ-দাস্তাওয়াই' এর সুত্র ধরে তার পিতা (হিশাম) হতে, তিনি আইয়ুব আস-সাখতিয়ানি হতে, তিনি নাফি হতে, তিনি ইবনু উমার হতে। কিন্ত 'আব্দুল্লাহ বিন হিশাম' হচ্ছেন একজন "মাতরুক" রাবি।
এর পরে যা আছে তা দেখুন।
সুনানু ইবনে মাজাহ (হাদিস নং 3488) :
ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে নাফে! আমার রক্তচাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। অতএব তুমি আমার জন্য এক যুবক রক্তমোক্ষণকারীকে নিয়ে এসো, বৃদ্ধকেও নয় এবং বালককেও নয়। রাবী বলেন, ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ বাসি মুখে রক্তমোক্ষণ করানো উত্তম, তা জ্ঞান বৃদ্ধি করে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং হাফেজের মুখস্থ শক্তি বৃদ্ধি করে। কেউ রক্তমোক্ষণ করতে চাইলে যেন আল্লাহর নামে বৃহস্পতিবারে তা করায়। তোমরা শুক্র, শনি ও রবিবার রক্তমোক্ষণ করানো পরিহার করো এবং সোমবার ও মঙ্গলবার রক্তমোক্ষণ করাও, কিন্তু বুধবার তা করাবে না। কারণ এদিনই আইউব (আ) বিপদে পতিত হন। আর কুষ্ঠ রোগ ও শ্বেতরোগ বুধবার দিনে বা রাতেই শুরু হয়।
[https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=44452]
উক্ত হাদিসটির সনদ যইফ, এর কারণ হলো 'উসমান বিন আব্দুর-রহমান আত-তারাইফি' এর দুর্বলতা এবং 'আব্দুল্লাহ বিন উসমাহ' ও 'সাঈদ বিন মাইমুন' এর অজ্ঞাত হয়া।
এর পুর্বে যা আছে দেখুন।
আল-আরনাওওতের আলোচনা সমাপ্ত।
আলোচনাটির উৎস : আল-আরনাওওত কর্তৃক তাহকিককৃত "সুনানু ইবনে মাজাহ" গ্রন্থের ৪র্থ খন্ডের পৃষ্ঠা নম্বর 530 এর টিকা নং 1 এবং পৃষ্ঠা নম্বর 531 এর টিকা নং 1।
2. আশ-শায়খ নাবিল বিন মানসুর আল-কুয়েতী এর আলোচনা :
হাদিসটি যইফ।
ইবনু উমার হতে, হাদিসটির দুটি চুড়ান্ত সুত্র রয়েছে।
প্রথম চুড়ান্ত সুত্র : এটা নাফের সুত্রে ইবনু উমার হতে বর্ণিত, এবং নাফে হতে এর মারফু ও মাওকুফ হয়ার ব্যাপারে ইখতিলাফ ঘটেছে।
হাদিসটিকে একের অধিক সংখ্যাক রাবি সরাসরিভাবে নাফির সুত্র ধরে ইবনু উমার হতে বর্ণনা করেছেন। তাদের মধ্যে আছেন,
এক - "মুহাম্মদ বিন জুহাদাহ আল-কুফী"
আবার 'মুহাম্মদ বিন জুহাদাহ' হতে একের অধিক সংখ্যাক রাবি হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তাদের মধ্যে আছেন,
(ক) আল-হাসান বিন আবি জাফার আল-জুফরী আল-বাসরী,
আল-হাসানের বর্ণিত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন 'ইবনু মাজাহ' তাঁর "সুনান"(3487) গ্রন্থে , 'ইবনু হিব্বান' তাঁর "আল-মাজরুহিন"(2/100) গ্রন্থে, 'ইবনু আদি' তার "আল-কামিল"
(2/721) গ্রন্থে, 'ইবনুল যাওযি' তাঁর "আল-ইলাল" গ্রন্থে, বহু সুত্র ধরে চুড়ান্তভাবে 'উসমান বিন মাতার আশ-শাইবানী' হতে, তিনি 'আল-হাসান বিন আবি জাফার' হতে, তিনি 'মুহাম্মদ বিন জুহাদাহ' হতে, তিনি নাফে হতে, তিনি ইবনু উমার হতে, যে ইবনু উমার (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেছেন : হে নাফে! আমার রক্তে উচ্ছাস দেখা দিয়েছে (রক্তচাপ বেড়েছে)। অতএব আমার জন্য একজন রক্তমোক্ষণকারী খুঁজে আনো, আর সম্ভব হলে সদাশয় কাউকে আনবে। বৃদ্ধ বা বালককে আনবে না। কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ বাসি মুখে রক্তমোক্ষণ করালে তাতে নিরাময় ও বরকত লাভ হয় এবং তাতে জ্ঞান ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। অতএব আল্লাহর বরকত লাভে ধন্য হতে তোমরা বৃহস্পতিবার রক্তমোক্ষণ করাও, কিন্তু বুধ, শুক্র, শনি ও রবিবারকে রক্তমোক্ষণ করানোর জন্য বেছে নেয়া থেকে বিরত থাকো। সোম ও মঙ্গলবারে রক্তমোক্ষণ করাও, কেননা এ দিনই আল্লাহ আইউব (আ) -কে রোগমুক্তি দান করেন এবং বুধবার তাকে রোগাক্রান্ত করেন। আর কুষ্ঠরোগ ও ধবল বুধবার দিনে বা রাতেই শুরু হয়।
[https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=44451]
ইবনুল যাওযি বলেছেন : এই হাদিসটি সহিহ নয়, এর সনদে ইবনু মাতার রয়েছে যার ব্যাপারে ইবনু মুয়াইন বলেছেন যে "সে যইফ ছিলো"।
এবং ইবনু হিব্বান বলেছেন : "সে (ইবনু মাতার) নির্ভরযোগ্যদের থেকে বহু জাল হাদিস বর্ণনা করে সুতরাং তার দ্বারা ইহতিজাজ করা হালাল নয়।"
আবার উক্ত হাদিসটির সনদে 'আল-হাসান বিন আবি জাফার' আছে যার ব্যাপারে ইবনু মুয়াইন বলেছেন যে "সে কিছুইনা", এবং আন-নাসাঈ বলেছেন যে "সে মাতরুকুল হাদিস"।
আল-বাওসিরী বলেছেন : "এই সনদটিতে আল-হাসান বিন আবি জাফার আছেন, যিনি কিনা যইফ", [দেখুন : আল-মিসবাহ (4/63)]
(খ) আযযাল/গাযযাল বিন মুহাম্মদ,
গাযযালের বর্ণিত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আদ-দারাকুতনী তাঁর "আল-আফরাদ" গ্রন্থে (আল-লিসান 4/161, আল-মিসবাহ 4/65), আল-হাকিম তাঁর "আল-মুস্তাদরাক"(4/211) গ্রন্থে এবং ইবনুল-যাওযি তাঁর "আল-ইলাল" (1463) গ্রন্থে বহু সুত্র ধরে চুড়ান্তভাবে 'আবুল-খাত্তাব যিয়াদ বিন ইয়াহইয়া আল-হাসসানী' হতে, তিনি গাযযাল বিন মুহাম্মদ হতে, তিনি মুহাম্মদ বিন জুহাদাহ হতে অনুরূপ সনদে।
আল-হাকিম বলেছেন : "এই হাদিসের সকল রাবিরাই ছিকাহ শুধুমাত্র গাযযাল বিন মুহাম্মদ ব্যাতিত, সে মাজহুল, আমি তার ব্যাপারে কোনো জারাহ বা তাদিল জানিনা। "
ইবনুল যাওযি বলেছেন : "এই হাদিসটি সহিহ নয়।"
আদ-দারাকুতনী বলেছেন : "হাদিসটি যিয়াদ বিন ইয়াহইয়া একা বর্ণনা করেছেন। আমি বলব যে যিয়াদ এবং আযযাল (বা গাযযাল) মাজহুল স্তরের রাবি। "
আমি বলব : আযযাল (বা গাযযাল) কে আয-যাহাবী তাঁর "আল-মিযান" গ্রন্থে উল্লেখ্য করেছেন এবং বলেছেন : "সে কে তা জানা যায়না, তাকে আহমদ বিন আলি আস-সুলাইমানী সেইসব রাবিদের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে উল্লেখ্য করেছেন যারা কিনা হাদিস জাল করে এবং তার জন্য এই হাদিসটি উল্লেখ্য করেছেন। "
আর যদি কথা আসে আল-হাসসানীর ব্যাপারে, তিনি মুলত ছিকাহ, যেমনটা আবু-হাতেম ও আন-নাসাঈ বলেছেন, এবং ইবনু হিব্বান তাঁকে "আছ-ছিকাত" গ্রন্থে উল্লেখ্য করেছেন।
(গ) আবু আলি উসমান বিন জাফার,
উসমান বিন জাফরের বর্ণিত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আল-হাকিম তাঁর "আল-মুস্তাদরাক"(4/409) গ্রন্থে 'আব্দুল-মালিক বিন আব্দু রাব্বিহ আত্ব-ত্বয়িই' হতে, তিনি আবু-আলি উসমান বিন জাফার হতে, তিনি মুহাম্মদ বিন জুহাদাহ হতে অনুরূপ সনদে।
এবং আল-হাকিম বলেছেন : "এই হাদিসের রাবিদের সকলেই ছিকাহ শুধুমাত্র উসমান বিন জাফার ব্যাতিত, আমি তার ব্যাপারে কোনো জারাহ বা তাদিল জানিনা। "
আয-যাহাবি বলেছেন : "এটা অতিক্রান্ত হয়েছে, এবং সে হচ্ছে ক্রুটিপুর্ণ।"
দুই - "সাইদ বিন মাইমুন "
সাঈদ বিন মাইমুনের বর্ণিত হাদিসটি 'ইবনু মাজাহ' তাঁর "আস-সুনান"(3488) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন 'মুহাম্মদ বিন মুস্ফা আল-হামসী' হতে, তিনি উসমান বিন আব্দুর-রহমান হতে, তিনি আব্দুল্লাহ বিন উসমাহ হতে, তিনি সাইদ বিন মাইমুন হতে, তিনি নাফে হতে অনুরূপ সনদে।
এই বর্ণনাটির সনদ যইফ, এতে একইসাথে তিনজন মাজহুল রাবি রয়েছে।
প্রথমজন হলেন 'উসমান বিন আব্দুর রহমান' যার ব্যাপারে আয-যাহাবি "আল-মুজাররাদ" গ্রন্থে বলেছেন যে "আমি তাকে চিনিনা "।
দ্বিতীয়জন হলেন 'আব্দুল্লাহ বিন উসমাহ' যার ব্যাপারে আল-মিযযী "তাহযিবুল কামাল" গ্রন্থে বলেছেন যে "সে মাজহুল রাবিদের অন্তর্ভুক্ত একজন" এবং ইবনু হাজার "আত-তাকরিব" গ্রন্থে বলেছেন যে "সে মাজহুল"।
তৃতীয়জন হলেন 'সাইদ বিন মাইমুন', তার ব্যাপারে ইবনু হাজার "আত-তাহযিব" গ্রন্থে বলেছেন যে "সে মাজহুল, হিজামাহর ব্যাপারে তার বর্ণিত বর্ণনাটি প্রচন্ড মুনকার"।
তিন- "আত্তাফ বিন খালিদ আল-মাখযুমী"
আত্তাফের বর্ণিত বর্ণনাটি বর্ণনা করেছেন আল-ইসমাঈলি তাঁর "মুজাম"(2/675-676) গ্রন্থে, আল-হাকিম তাঁর "আল-মুস্তাদরাক" (4/211-212) গ্রন্থে, এবং আল-খাতিব তাঁর "আত-তারিখ"(10/38-39) গ্রন্থে, আব্দুল্লাহ বিন সালিহ আল-মাসরী এর সুত্রে আত্তাফ বিন খালিদ হতে, তিনি নাফে হতে, অনুরূপ সনদে।
ইবনু হাজার বলেছেন যে : "আল-আত্তাফের ব্যাপারে মতভেদ আছে, এবং তার সুত্র ধরে যে বর্ণনা করেছেন তিনি হলেন আব্দুল্লাহ বিন সালিহ, জুমহুর উলামাদের মতে সে (আব্দুল্লাহ) যইফ, আল-বোখারী তার ব্যাপারে ভালো দৃষ্টিভংগি রাখতেন কিন্ত তার মধ্যে হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে সবকিছু এলোমেলো করে ফেলার প্রবণতা অনেক বেশি ছিলো, আল-বোখারী তার (আব্দুল্লাহর) বর্ণিত হাদিসগুলোর মধ্যে কোনগুলো সহিহ ও কোনোগুলো সমস্যাজনক তা চিনতেন, যার ফলস্বরুপ আল-বোখারী তার (আব্দুল্লাহর) ভুলের দ্বারা প্রতারিত হন নি। এবং এটা সুস্পষ্ট যে সে এক্ষেত্রে হাদিসটিকে মারফু করার ক্ষেত্রে ভুল করেছে। [দেখুন : আল-লিসান (4/162)]
তাছারা আইয়ুব আস-সাখতিয়ানি নাফের সুত্র ধরে ইবনু উমার হতে মাওকুফরূপে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। আইয়ুবের বর্ণিত এই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আল-হাকেম তাঁর "আল-মুস্তাদরাক"(4/211) গ্রন্থে এবং ইবনুল-যাওযি "আল-ইলাল"(1465) গ্রন্থে, আব্দুল্লাহ বিন হিশাম আদ-দাস্তাওয়াই এর সুত্র ধরে আব্দুল্লাহর পিতা হিশাম হতে, তিনি আইয়ুব হতে, তিনি নাফে হতে অনুরূপ সনদে।
ইবনুল-যাওযি বলেছেন : "এই হাদিসটি সহিহ নয়"। আদ-দারাকুতনী বলেছেন : "আব্দুল্লাহ বিন হিশাম এই হাদিসটি তার পিতার সুত্রে আইয়ুব হতে বিচ্ছিন্নভাবে একা বর্ণনা করেছে"।
এবং আয-যাহাবী তাঁর "তালখিসুল মুস্তাদরাক" গ্রন্থে বলেছেন যে : "আমি বলব, আব্দুল্লাহ (বিন হিশাম) মাতরুক"।
অপরদিকে এই হাদিসটিকে আবু-নুয়াইম "আত-তিব্ব" গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন আবু-ইয়াহইয়া যাকারিয়া বিন ইয়াহইয়া আল-ওয়াক্কার আল-মাসরী এর সুত্র ধরে মুহাম্মদ বিন ইসমাইল আল-মুরাদী হতে, তিনি তার পিতা ইসমাইল আল-মুরাদী হতে, তিনি নাফে হতে।
[দেখুন : আল-বাওসিরী, হামিশুল হিজামাহ (পৃ/54)]
এবং আবু-ইয়াহইয়া আল-ওয়াক্কার সম্পর্কে,
সালিহ জাযরাহ বলেছেন : "সে মহামিথ্যুকদের অন্তর্ভুক্ত একজন"।
ইবনু আদি বলেছেন : "সে হাদিস জাল করে"।
(এতক্ষন দুটি চুড়ান্ত সুত্রের মধ্য থেকে প্রথম চুড়ান্ত সুত্রটির ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। এবার দ্বিতীয় চুড়ান্ত সুত্রের ব্যাপারে আলোচনা করা হবে)
দ্বিতীয় চুড়ান্ত সুত্র : এই সুত্রের হাদিসটি বর্ণনা করেছেন 'আবু কিলাবাহ আব্দুল্লাহ বিন যাইদ আল-জারমী', তিনি (আবু-কিলাবাহ) বলেছেন যে : "আমি ইবনু উমারের নিকট ছিলাম, ফলে তিনি বললেন হে নাফে! আমার রক্তে উচ্ছাস দেখা দিয়েছে (রক্তচাপ বেড়েছে)। অতএব আমার জন্য একজন রক্তমোক্ষণকারী খুঁজে আনো, আর সম্ভব হলে সদাশয় কাউকে আনবে। বৃদ্ধ বা বালককে আনবে না। কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ বাসি মুখে রক্তমোক্ষণ করালে তাতে নিরাময় ও বরকত লাভ হয় এবং তাতে জ্ঞান ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। যে ব্যাক্তি বৃহস্পতিবারে এবং রবিবারে হিজামাহ করলো সে অপরাধ করলো, সোমবার ও মঙ্গলবারে হিজামাহ করাও কেননা এদিনই আল্লাহ আইয়ুব (আ) কে রোগ হতে মুক্তি দেন। এবং বুধবারে তাঁকে রোগ্রাক্রান্ত করেন।
এই দ্বিতীয় চুড়ান্ত সুত্রে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন 'আদ-দাইনুরী' তাঁর "আল-মাজালিসাহ"
(631) গ্রন্থে এবং ইবনু হিব্বান তাঁর "আল-মাজরুহিন"(3/20-21) গ্রন্থে, 'আবু আব্দুর-রহমান আব্দুল্লাহ বিন ইয়াযিদ আল-মুকরী' এর সুত্র ধরে 'ইসমাইল বিন ইব্রাহিম' হতে, তিনি 'আল-মুছান্না বিন উমার' হতে, তিনি 'আবু-সিনান' হতে, তিনি আবু-কিলাবাহ হতে অনুরূপ সনদে।
হাদিসটিকে ইবনু কুতাইবাহ তাঁর "আল-গারিব"(1/591-592) গ্রন্থে আবু-আব্দুর-রহমান আল-মুকরী হতে তা'লিক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ইবনু হিব্বান বলেছেন : "আল-মুছান্না বিন উমার এমন একজন শায়খ যিনি আবু-সিনান হতে এমনসব হাদিস বর্ণনা করেন যেগুলো কিনা ছিকাহদের হাদিসের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাঁর দ্বারা ইহতিজাজ করা যায়েয নয়।"
আবু হাতেম বলেছেন : "এই হাদিসটি কিছুই না, এইটা মোটেও সত্যবাদীদের হাদিস নয়, ইসমাইল এবং আল-মুছান্না তারা দুজনেই মাজহুল। " [আল-ইলাল (2/320)]
ইবনুল যাওযি বলেছেন যে : "এই হাদিসটি সহিহ নয়"। এবং তিনি হাদিসটিকে আল-মুছান্নার দ্বারা ইল্লতযুক্ত সাব্যস্ত করেছেন।
নাবিল আল-কুয়েতী এর আলোচনা সমাপ্ত।
আলোচনাটির উৎস : নাবিল বিন মানসুর আল-কুয়েতী কর্তৃক রচিত গ্রন্থ "আনিসুস সারি" এর ১১তম খন্ডের পৃষ্ঠা নম্বর 1215 থেকে 1218 পর্যন্ত।
3. ডক্টর সামির বিন সুলাইমান আল-ইমরান এর আলোচনা :
এই বাবে (অর্থাৎ হিজামাহ কোন দিন করা উচিত ও কোন দিন করা অনুচিত সেব্যাপারে) ইবনু উমার ও আবু-মুয়াইদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে হাদিস বর্ণিত আছে।
আমি বলব : ইবনু উমারের যেই হাদিসটি আস-সুয়ুতি শাহিদ হিসেবে নিয়ে এসেছেন, সেই হাদিসটির জন্য ইবনু উমার পর্যন্ত দুইটি চুড়ান্ত সুত্র রয়েছে।
প্রথম চুড়ান্ত সুত্র : ইবনু উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে নাফির সুত্রে।
এখন নাফির সুত্র ধরে ইবনু উমার (রা) হতে হাদিসটি মোট পাঁচজন রাবি বর্ণনা করেছেন।
এবং তারা হলেন,
এক. "আত্তাফ বিন খালিদ",
তিনি নাফে হতে বর্ণনা করেন যে ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে নাফে! আমার রক্তে উচ্ছাস দেখা দিয়েছে (রক্তচাপ বেড়েছে)। অতএব আমার জন্য একজন রক্তমোক্ষণকারী খুঁজে আনো, আর সম্ভব হলে সদাশয় কাউকে আনবে। বৃদ্ধ বা বালককে আনবে না। কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ বাসি মুখে রক্তমোক্ষণ করালে তাতে নিরাময় ও বরকত লাভ হয় এবং তাতে জ্ঞান ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। অতএব আল্লাহর বরকত লাভে ধন্য হতে তোমরা বৃহস্পতিবার রক্তমোক্ষণ করাও, কিন্তু বুধ, শুক্র, শনি ও রবিবারকে রক্তমোক্ষণ করানোর জন্য বেছে নেয়া থেকে বিরত থাকো। সোম ও মঙ্গলবারে রক্তমোক্ষণ করাও, কেননা এ দিনই আল্লাহ আইউব (আ) -কে রোগমুক্তি দান করেন এবং বুধবার তাকে রোগাক্রান্ত করেন। আর কুষ্ঠরোগ ও ধবল বুধবার দিনে বা রাতেই শুরু হয়।
হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আল-হাকেম তাঁর "আল-মুস্তাদরাক"(4/211) গ্রন্থে এবং এর ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেন নি, আল-খাতিব "তারিখু বাগদাদ"(10/39) গ্রন্থে সংক্ষিপ্তরূপে, আত-তাবারী তাঁর "তাহযিবুল আছার মুসনাদে ইবনে আব্বাস"(পৃ/532) গ্রন্থে, আল-বায়হাকী তাঁর "আল-কুবরা"(9/341) গ্রন্থে। এনাদের প্রত্যেকেই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আব্দুল্লাহ বিন সালিহ আল-মাসরী এর সুত্রে আত্তাফ হতে অনুরূপ সনদে।
এবং আত-তাবারী এই অংশটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন : "নিশ্চয়ই জুময়াহর দিনে এমন একটি সময় আছে যখন হিজামাহ করা যায়েয নয়, তবে যদি এমন কোনো রোগ হয় যার হিজামাহ ব্যাতিত অন্য কোনো নিরাময় নেই সেক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম (তথা সেক্ষেত্রে যায়েয)। "
আল-বায়হাকী তাঁর রেওয়ায়েতটিতে আত-তাবারীর বর্ণিত অতিরিক্ত অংশটি ব্যাতিত আর কিছুই উল্লেখ্য করেন নি।
আল-হিন্দী তাঁর "আল-কানয"(হা/27122) গ্রন্থে আত-তাবারীর বর্ণিত অতিরিক্ত অংশটি উল্লেখ্য করেছেন এবং সেটাকে আল-উকাইলির দিকে সম্পৃক্ত করেছেন এই বলে যে তিনি (আল-উকাইলি) উক্ত অংশটিকে নিজ "আদ্ব-দুয়াফা" গ্রন্থে উল্লেখ্য করেছেন।কিন্ত আমি আদ-দুয়াফা গ্রন্থে হাদিসটি পাইনি, আমি আশঙ্কা করি যে সংকেতটি ভুলবশত هق থেকে عق হয়ে গিয়েছে।
এই সুত্রটির সনদে আত্তাফ বিন খালিদ আল-মাখযুমী আছেন, যার ব্যাপারে ইবনু হাজার তাঁর "আত-তাকরিব"(পৃ/393) গ্রন্থে বলেছেন যে "সে সত্যবাদী তবে ভুল করে "।
এবং আরো আছেন আব্দুল্লাহ বিন সালিহ আল-মাসরী, তার ব্যাপারে ইবনু হাজার তাঁর "আত-তাকরিব"(পৃ/308) গ্রন্থে বলেছেন যে "সে সত্যবাদী তবে প্রচুর ভুলকারী, কিতাবের ক্ষেত্রে প্রমাণিত এবং তার মধ্যে গাফলত ছিলো।"
দুই. "মুহাম্মদ বিন জুহাদাহ "
তিনি নাফের সুত্র ধরে ইবনু উমার (রা) হতে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
এখন, এই মুহাম্মদ বিন জুহাদাহ থেকে আবার তিনজন রাবি হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তারা হলেন,
(ক) আযযাল/গাযযাল বিন মুহাম্মদ
তিনি মুহাম্মাদ বিন জুহাদাহ এর সুত্র ধরে নাফির মাধ্যমে ইবনু উমার (রা) হতে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
আযযালের বর্ণিত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আল-হাকিম তাঁর "আল-মুস্তাদরাক" (4/211) গ্রন্থে, ইবনুল যাওযি তাঁর "আল-ইলাল"(2/391) গ্রন্থে, ইবনু আসাকির তাঁর "জুযয়ু আখবার লিহিফযিল কোরান "(ق ٤ ب) গ্রন্থে যেমনটা "আস-সাহিহাহ"(2/405) গ্রন্থে বলা হয়েছে, আবু নুয়াইম তাঁর "আত-তিব্ব"(ق ٥٢ ب) গ্রন্থে, আদ-দারাকুতনী "আল-আফরাদ" গ্রন্থে যেমনটা "আল-মিযান"(3/62) গ্রন্থে বলা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকেই হাদিসটি আযযালের সুত্র ধরে অনুরূপ মতনে বর্ণনা করেছেন। কিন্ত আবু-নুয়াইমের বর্ণনাটিতে বৃহস্পতিবারের পাশাপাশি শুক্রবারেও হিজামাহ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, এবং এটা স্পষ্ট হয় যে "হিজামাহ করা হতে বিরত থাকো" কথাটি এক্ষেত্রে কোনো কারণে বাদ পরে গিয়েছে যার ফলে শুক্রবারে হিজামাহ করা নিষিদ্ধ হয়ার ব্যাপারটি পরিবর্তিত হয়ে অনিষিদ্ধ তথা বৈধ হয়ে গিয়েছে।
আল-হাকেম বলেছেন : "আযযাল বিন মুহাম্মদ ব্যাতিত এই হাদিসটির বাকি সব রাবিরাই ছিকাহ, নিশ্চয়ই আযযাল হচ্ছে মাজহুল, আমি তার ব্যাপারে কোনো জারাহ বা তাদিল জানিনা"। এক্ষেত্রে আয-যাহাবি, আল-হাকেমের সহিত ঐক্যমত পোষণ করেছেন এবং বলেছেন যে আযযাল মাজহুল।
"আযযাল", এইভাবেই নামটি ইবনু হাজার তাঁর "তাবাসসুরুল মুনতাবিহ"(3/1044) গ্রন্থে লিখে রেখেছেন, কিন্ত আল-হাকেমের বর্ণনায় তা "গাযযাল" হিসেবে এসেছে, এবং এটা একটা ভুল। এক্ষেত্রে আয-যাহাবি "আল-মিযান" গ্রন্থে বিশৃংখলা ঘটিয়েছেন, তিনি তাকে প্রথম স্থানে (3/62) "আযযাল" হিসেবে উল্লেখ্য করেছেন, এবং দ্বিতীয় স্থানে (3/333) "গাযযাল" হিসেবে উল্লেখ্য করেছেন।
আমি বলব : আয-যাহাবি অনুরূপ কথা তাঁর "আল-মিযান" গ্রন্থের ৩য় খন্ডের ৬২ নং পৃষ্ঠায়ও বলেছেন, তিনি বলেছেন যে "আমি জানিনা সে (আযযাল) কে, তাকে আহমদ বিন আলি আস-সুলাইমানী সেসব ব্যাক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে উল্লেখ্য করেছেন যারা কিনা হাদিস জাল করে। "
(খ) আল-হাসান বিন আবি জাফার
তিনি মুহাম্মাদ বিন জুহাদাহ এর সুত্র ধরে নাফির মাধ্যমে ইবনু উমার (রা) হতে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
আল-হাসানের বর্ণিত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইবনু মাজাহ তাঁর "সুনান"(হা/3487) গ্রন্থে, ইবনু আদি তাঁর "আল-কামিল"(2/308) গ্রন্থে, ইবনু হিব্বান তাঁর"আল-মাজরুহিন"
(2/100) গ্রন্থে, আল-খাতিব তাঁর "আল-ফাকিহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ"(2/105) গ্রন্থে, ইবনুল যাওযি তাঁর "আল-ইলাল"(2/391) গ্রন্থে। তাদের প্রত্যেকেই বর্ণনা করেছেন 'উসমান বিন মাতার আশ-শাইবানী' এর সুত্র ধরে আল-হাসান বিন আবি-জাফর হতে অনুরূপ সনদে অনুরূপ মতনে।
আল-খাতিব সংক্ষিপ্তরূপে বর্ণন করেছেন।
ইবনু আদি বলেছেন : "এইটা ইবনু জুহাদাহ হতে বর্ণিত একটি বর্ণনা যেটাকে তাঁর নিকট হতে ইবনু আবি জাফার বর্ণনা করেছেন, সম্ভবত এখানে সমস্যাটি এসেছে উসমান বিন মাতার হতে, আল-হাসান হতে নয়, কেননা এই বর্ণনাটিকে ইবনু জুহাদাহ হতে আল-হাসান ছাড়াও অন্য রাবি বর্ণনা করেছেন। "
আমি বলব : উসমান আশ-শাইবানী যইফুন জিদ্দান (খুবই যইফ)।
এবং আল-হাসান বিন আবি জাফার এর ব্যাপারে ইবনু হাজার তাঁর "আত-তাকরিব"(পৃ/159) গ্রন্থে বলেছেন যে : "সে আবেদ ও সম্মানিত হয়ার পাশাপাশি যইফুল হাদিস "।
সুতরাং এই সনদটি যইফুন জিদ্দান (খুবই যইফ)।
(গ) আবু-আলি উসমান বিন জাফার
তিনি মুহাম্মাদ বিন জুহাদাহ এর সুত্র ধরে নাফির মাধ্যমে ইবনু উমার (রা) হতে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
আবু আলি উসমান এর বর্ণিত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আল-হাকেম তাঁর "আল-মুস্তাদরাক"(4/409) গ্রন্থে।
আল-হাকেম বলেছেন : " এই হাদিসটির সব রাবিরাই ছিকাহ তবে উসমান বিন জাফার ব্যাতিত, এই উসমানকে আমি চিনিনা, তার ব্যাপারে কোনো জারাহ বা তাদিল আমি জানিনা।" এবং আয-যাহাবী এক্ষেত্রে আল-হাকেমের উক্ত কথার সহিত টিকা হিসেবে লিখেছেন যে : "এটা ইতিমধ্যে গত হয়েছে, এবং এটা ক্রুটিপুর্ণ।"
আমি বলব : সম্ভবত আয-যাহাবি এক্ষেত্রে এই টিকাতে যা বোঝাতে চেয়েছেন তা হচ্ছে এই যে, উক্ত হাদিসটি এর আগেও গত হয়েছে এবং এই সনদটি ক্রুটিপুর্ণ কারণ এতে আব্দুল মালিক বিন আব্দু রাব্বিহ নামক একজন রাবি আছে যার ব্যাপারে তিনি (আয-যাহাবী) "আল-মিযান"(2/658) গ্রন্থে বলেছেন যে "সে মুনকারুল হাদিস"। আর যদি কথা আসে উসমান বিন জাফার প্রসংগে, তাকে ইবনু আবি হাতেম তাঁর "আজ-জারহু ওয়াত তাদিল"(6/146) গ্রন্থে উল্লেখ্য করেছেন এবং তার ব্যাপারে কোনো জারাহ বা তাদিল উল্লেখ্য করেন নি।
তিন. "সাঈদ বিন মাইমুন"
তিনি নাফের সুত্র ধরে ইবনু উমার (রা) হতে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
তাঁর বর্ণিত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইবনু মাজাহ তাঁর "সুনান"(হা/3488) গ্রন্থে উসমান বিন আব্দুর রহমান এর সুত্র ধরে আব্দুল্লাহ বিন উসমাহ হতে, তিনি সাঈদ বিন মাইমুন হতে অনুরূপ সনদে।
এবং এই সাঈদ বিন মাইমুন এর ব্যাপারে ইবনু হাজার তাঁর "আত-তাকরিব"(পৃ/241) গ্রন্থে বলেছেন যে "সে মাজহুল"।
চার. "আইয়ুব আস-সাখতিয়ানী"
তিনি নাফের সুত্র ধরে ইবনু উমার হতে মাওকুফরূপে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
তাঁর বর্ণিত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আল-হাকেম তাঁর "আল-মুস্তাদরাক"(4/211) গ্রন্থে, ইবনুল যাওযি তাঁর "আল-ইলাল"(2/392) গ্রন্থে এবং আদ-দারাকুতনী তাঁর "আল-আফরাদ" গ্রন্থে যেমনটা "আল-লায়ালি"(2/411) গ্রন্থে বলা হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকেই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন 'আব্দুল্লাহ বিন হিশাম আদ-দাস্তাওয়াই ' এর সুত্র ধরে তাঁর পিতা হিশাম হতে, তিনি আইয়ুব আস-সাখতিয়ানি হতে, তিনি নাফে হতে অনুরূপ সনদে।
আল-হাকেম বলেছেন যে " হাদিসটি ইবনু উমার (রা) হতে সহিহভাবে প্রমাণিত", এবং তিনি (আল-হাকেম) হাদিসটির সনদ উল্লেখ্য করেছেন। এক্ষেত্রে আয-যাহাবী এই বলে আল-হাকেমের মন্তব্যের ব্যাপারে টিকা লিখেছেন যে : " (উক্ত হাদিসের সনদে থাকা রাবি) আব্দুল্লাহ মাতরুক"।
এবং ইবনু আবি হাতিম তাঁর "আজ-জারহু ওয়াত তাদিল"(5/193) গ্রন্থে আব্দুল্লাহ বিন হিশাম আদ-দাস্তাওয়াই এর জীবনিতে বলেছেন যে : "আমি আমার পিতা আবু-হাতেমকে তার (আব্দুল্লাহ বিন হিশাম এর) ব্যাপারে প্রশ্ন করি, তিনি উত্তরে বলেন যে সে মাতরুকুল হাদিস।" এবং এই অনুযায়ীই সিদ্ধান্ত, সুতরাং এই সনদটি যইফুন জিদ্দান (খুবই যইফ)।
পাচ. "ইসমাইল আল-মুরাদী"
তিনি নাফের সুত্র ধরে ইবনু উমার হতে মাওকুফরূপে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
তাঁর বর্ণিত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আবু নুয়াইম তাঁর "আত-তিব্ব"(ق ٥٢ ب) গ্রন্থে যাকারিয়া বিন ইয়াহইয়া আল-ওয়াক্কার এর সুত্র ধরে মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল আল-মুরাদী হতে, তিনি তাঁর পিতা ইসমাইল হতে, তিনি নাফে হতে অনুরূপ সনদে।
এবং এই বর্ণনাটির সনদ তালিফ (তথা ধ্বংসপ্রাপ্ত, অতিউচ্চমাত্রায় প্রচন্ড বাজে ও নিকৃষ্ট)।
এতে তিনটি ইল্লত (সমস্যা) বিদ্যমান।
প্রথম ও দ্বিতীয় সমস্যা : মুহাম্মদ বিন ইসমাইল আল-মুরাদী ও তার পিতা, ইবনু আবি হাতেম তাঁর "আজ-জারহু ওয়াত তাদিল"(7/179) গ্রন্থে উক্ত দুইজন রাবির ব্যাপারে বলেছেন যে "সে তার পিতার সুত্রে নাফে হতে বর্ণনা করেছে, আমি আমার পিতা আবু হাতেমকে এব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি (আবু হাতেম) বলেন যে, সে মাজহুল এবং তার পিতাও মাজহুল এবং তার বর্ণিত হাদিসটি (তথা হিজামাহ সক্রান্ত আলোচ্য হাদিসটি) বাতিল"।
তৃতীয় সমস্যা : জাকারিয়া বিন ইয়াহইয়া আল-ওয়াক্কার, তার ব্যাপারে ইবনু আদি "আল-কামিল"(3/215) গ্রন্থে বলেছেন যে "সে হাদিস জাল করত"। এবং আয-যাহাবি তাঁর "আল-মিযান"(2/77) গ্রন্থে বলেছেন যে "সালিহ জাযরাহ বলেছেন : সে (জাকারিয়া) মহামিথ্যুকদের অন্তর্ভুক্ত একজন ছিলো। "
দ্বিতীয় চুড়ান্ত সুত্র : ইবনু উমার (রা) হতে আবু কিলাবাহর সুত্রে।
আবু কিলাবাহ হতে বর্ণিত যে তিনি বলেছেন : আমি ইবনু উমারের নিকট ছিলাম, অতপর আবু কিলাবাহ নাফির হাদিসের অনুরূপ সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করেন।
এই বর্ণনাটিকে বর্ণনা করেছেন ইবনু হিব্বান তাঁর "আল-মাজরুহিন"(3/20) গ্রন্থে, ইবনু আবি হাতেম তাঁর "আল-ইলাল"(2/320) গ্রন্থে, ইবনুল যাওযি তাঁর "আল-ইলাল"(2/875) গ্রন্থে এবং আয-যাহাবী তাঁর "আল-মিযান"(3/435) গ্রন্থে।
আমি বলব : উপরে উল্লেখিত সবগুলো সুত্রই এমন যে এসব সমর্থনপ্রদানকারী শাহিদ হিসেবে গণ্য হয়ার যোগ্য নয় ; তবে আব্দুল্লাহ বিন সালিহ আল-মাসরী এর সুত্র এবং সাইদ বিন মাইমুন এর সুত্র, এদুটি সুত্র ব্যাতিত , অর্থাৎ এদুটি সুত্র সমর্থনপ্রদানকারী শাহিদ হিসেবে গণ্য হয়ার যোগ্যতা রাখে, এদুটি সুত্রের উভয়েই যইফ, অতএব এদুটি সুত্র পরস্পরকে শাহিদ হিসেবে শক্তি ও সমর্থন প্রদান করে উভয়ে মিলে হাসান লিগাইরিহ সনদের পর্যায়ে উত্তীর্ণ হয়। [1] কিন্ত উলামাদের একটা জামাত আলোচ্য হাদিসটির মতনকেও মুনকার সাব্যস্ত করেছেন, এবং সুত্রের সংখ্যার আধিক্যতাকে বিবেচনায় আনেন নি। উদাহরণস্বরুপ,
১. আবু হাতিম বলেছেন যে উক্ত হাদিসটি "বাতিল"। যেমনটা "আজ-জারহু ওয়াত তাদিল"(7/179) গ্রন্থে আছে।
তিনি আরো বলেছেন যে : "এই হাদিসটি কিছুই না, এটা সত্যবাদীদের হাদিস না", যেমনটা "আল-ইলাল"(2/320) গ্রন্থে আছে।
২. ইবনুল যাওযি "আল-ইলালুল মুতানাহিয়াহ"(2/875) গ্রন্থে বলেছেন যে "এই হাদিসটি সহিহ নয়"।
৩. আল-হাফেয ইবনু হাজার তাঁর "আত-তাহযিব" গ্রন্থে সাঈদ বিন মাইমুন এর জীবনিতে বলেছেন যে সাইদ বিন মাইমুন মাজহুল, এবং হিজামাহ সম্পর্কে তার বর্ণিত বর্ণনাটি প্রচন্ড মুনকার। এবং ইবনু হাজার তাঁর "লিসানুল মিযান" গ্রন্থে বলেছেন যে এটি মুনকার হাদিস।
যদি কথা আসে আল-আলবানীর, তিনি এক্ষেত্রে আলোচ্য হাদিসটির সবগুলো সুত্রকে একত্রে মিলিয়ে হাদিসটিকে হাসান লিগাইরিহ সাব্যস্ত করে তাঁর "সিলসিলাতুস সহিহাহ"(হা/776) গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কিন্ত তিনি হাদিসটির মতনে থাকা নাকারাতের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন নি।
যদি কথা আসে আবু-মুয়াইদের হাদিসের ব্যাপারে,
হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আত-তাবারী তাঁর "তাহযিবুল আছার"(পৃ/535) গ্রন্থে, তিনি (আত-তাবারী) বর্ণনা করেন যে আমাকে ইবনু আব্দির-রাহিম আল-বারক্বী বর্ণনা করেছেন যে আমাদের উমার বর্ণনা করেছেন যুহাইর হতে, তিনি হিশাম বিন ইসমাইল হতে, যে হিশামের নিকট এইমর্মে সংবাদ পৌছিয়েছে যে ইয়ামুস সুলাসা এর দিন এমন একটা সময় থাকে যখন কেওই হিজামাহ করতে পারেনা, যদি সেই সময়টির মধ্যে কেও হিজামাহ করে তাহলে সে মারা যাবে। যুহাইর বলেন : আমাদের নিকট এমন তিনজন ব্যাক্তি মারা গিয়েছেন যারা কিনা ইয়াওমুস সুলাসা এর দিন হিজামাহ করেছিলেন। অতপর যুহাইর বলেন যে : কে সেই ব্যাক্তি? যিনি কিনা সর্বপ্রথম উক্ত দিনকে "রক্তের দিন" নামকরণ করেছিলেন? নিশ্চয়ই মারওয়ান হলেন সেই ব্যাক্তি যিনি সর্বপ্রথম উক্ত দিনকে "রক্তের দিন" বলে নামকরণ করেছিলেন।এবং আল-বারক্বী বলেছেন যে আবু হাফস বলেছেন যে : আমি আবু মুয়াইদ কে যুহাইর কর্তৃক বর্ণিত সুলাসার দিন সক্রান্ত হাদিসটি বর্ণনা করে শোনাই, ফলে তিনি (আবু মুয়াইদ) বলেন যে : আমাদের নিকট এইমর্মে সংবাদ পৌছেছে যে সেই সময়টি মূলত ইয়াওমুল জুময়াহর মধ্যে বিদ্যমান।
এই সনদের রাবিরা সবাই নির্ভরযোগ্য তবে এটি মুনকাতিঈ। আবু মুয়াইদ এটা স্পষ্ট করেন নি যে তিনি সংবাদটি কার নিকট হতে পেয়েছেন।
আমি বলব : উক্ত দুটি শাহিদ ও প্রথমটির সুত্রসমুহের মধ্য থেকে এটা সুস্পষ্ট হয় যে জুময়াহর দিনের সেই নির্দিষ্ট সময়ের কথা কোনো রেওয়ায়েতেই আসেনি শুধুমাত্র নিম্নে উল্লেখিত রেওয়ায়েতসমুহ ব্যাতিত,
১. মুহাম্মদ বিন ইসমাইল আল-মুরাদী কর্তৃক নিজ পিতা ইসমাইল এর সুত্র ধরে নাফের মাধ্যমে ইবনু উমার (রা) হতে বর্ণিত বর্ণনাটিতে। এবং পুর্বেই এটা স্পষ্ট করে দিয়েছি যে এই বর্ণনাটির সনদ তালিফ (ধ্বংসপ্রাপ্ত, নিকৃষ্ট, বাজে)।
২. আবু মুয়াইদের হাদিসটিতে, যা কিনা আসলে মুনকাতিঈ।
৩. আব্দুল্লাহ বিন সালিহ আল-মাসরী কর্তৃক আত্তাফ বিন খালিদ এর সুত্র ধরে নাফির মাধ্যমে ইবনু উমার (রা) হতে বর্ণিত বর্ণনাটিতে। এর সনদ যইফ, তবে এর লফযে মৃত্যুর কথা উল্লেখ্য নেই যা কিনা উক্ত বাবের হাদিসের বিরোধী।
আর এই হিসেবে বাবটির হাদিসের মতন যইফ। এবং মুহাম্মদ বিন ইসমাইল এর বর্ণিত বর্ণনাটির সনদ তালিফ যেমনটা ইতিমধ্যে স্পষ্ট করা হয়েছে।
সামির আল-ইমরান এর আলোচনা সমাপ্ত
আলোচনাটির উৎস : ডক্টর সামির আল-ইমরান কর্তৃক তাহকিককৃত ইবনু হাজার (রহ) এর গ্রন্থ "আল-মাতালিবুল আলিয়াহ" এর ১১তম খন্ডের পৃষ্ঠা নম্বর 253 থেকে 258 পর্যন্ত।
[1]অনুবাদক (সামিউল হাসান) কর্তৃক সংযোজিত একটি বিশেষ দ্রষ্টব্য :
দ্রষ্টব্য আরম্ভ হলো।
এক্ষেত্রে ডক্টর সামির আল-ইমরান দুইটি ভুল করেছেন। সেই ভুলদুটি নিম্নরুপ,
এক. তিনি বলেছেন যে আব্দুল্লাহর বিন সালিহ এর সুত্রটি এবং সাঈদ বিন মাইমুন এর সুত্রটি, এদুটি সুত্র যইফ হলেও এরা একত্রে মিলে পরস্পরকে সমর্থন দিয়ে আলোচ্য হাদিসটিকে সনদের দিক দিয়ে হাসান লিগাইরিহ সাব্যস্ত করে। এইটা ভুল। কেননা শুধুমাত্র দুইটি যইফ সুত্র কোনো হাদিসকে সনদের দিক দিয়ে হাসান লিগাইরিহ পর্যায়ে উত্তীর্ণ করার মতো ক্ষমতা রাখেনা, যদি তাদের উভয়েই সমর্থন প্রদানকারী শাহেদ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হয় তবুও না, সনদের দিক দিয়ে হাসান লিগাইরিহ পর্যায়ে উত্তীর্ণ হতে হলে অন্তত ৩-৪ টি সমর্থন প্রদানকারী শাহেদ হিসেবে বিবেচনাযোগ্য সুত্র লাগবেই, যা এক্ষেত্রে নেই।
উল্লেখ্য যে, যদি দুইটি যইফ সনদের মধ্যে একটা যইফ সনদের দুর্বলতা সামান্য হয় অর্থাৎ যদি সনদটি মধ্যমমাত্রায় বা উচ্চমাত্রায় যইফ না হয়ে হালকামাত্রায় যইফ হয় ; আবার অপর সনদটির দুর্বলতা সামান্য বা মধ্যমমানের হয়, অর্থাৎ যদি অপর সনদটি হালকামাত্রায় অথবা মধ্যমমাত্রায় যইফ হয়, তাহলে এমন পরিস্থীতিতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুধুমাত্র দুটি যইফ সনদ মিলেই হাসান লিগাইরিহ হয়ে যেতে পারে। তবে এইক্ষেত্রে এই ধরনের কোনো পরিস্থীতি নেই, কারণ সাইদ বিন মাইমুনের সুত্রটি সমর্থনপ্রদানকারী শাহিদ হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয় এবং "প্রচন্ড যইফ"।
দুই. তিনি বলেছেন যে আব্দুল্লাহ বিন সালিহ এর সুত্রটি সমর্থন প্রদানকাদী শাহিদ হিসেবে গ্রহণযোগ্য, এইটা ঠিক। কিন্ত এরপাশাপাশি তিনি আরো বলেছেন যে, সাঈদ বিন মাইমুন এর সুত্রটিও নাকি সমর্থনপ্রদানকারী শাহিদ হিসেবে গ্রহণযোগ্য, যা কিনা সম্পুর্ণ ভুল।
সাইদ বিন মাইমুন এর সুত্রের সনদে একইসাথে মোট তিনজন মাজহুল রাবি আছেন, তাছারা ইবনু হাজার বলেছেন যে সাঈদ কর্তৃক বর্ণিত এই হাদিসটি "মুনকার"।
[নাবিল আল-কুয়েতী এর আলোচনাটির শেষের দিকে দেখুন]।
কোনো একটা সনদে একইসাথে তিনজন মাজহুল রাবি থাকা, সেই সনদটিকে "যইফুন জিদ্দান" তথা "প্রচন্ড যইফ" সাব্যস্ত করার জন্য যথেষ্ট।
[উদাহরণস্বরুপ দেখুন : https://shamela.ws/book/16/7554#p1 এবং এর আগের পৃষ্ঠার একদম শেষের অংশ]
সুতরাং সাঈদের বর্ণিত এই বর্ণনাটির সনদ "প্রচন্ড যইফ"।
আর যেসব সনদ প্রচন্ড যইফ সেগুলো সমর্থন প্রদানকারী শাহিদ হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং সাঈদের বর্ণিত এই বর্ণনাটিকে প্রচন্ড যইফ হয়ার কারণে সমর্থন প্রদানকারী শাহিদ হিসেবে বিবেচনা করা সঠিক হবেনা।
ডক্টর সামির আল-ইমরান এই দ্বিতীয় ভুলটি করেছেন বলেই প্রথম ভুলটি করেছেন। অর্থাৎ উনার প্রথম ভুলটার কারণ ও ভিত্তি হচ্ছে এই দ্বিতীয় ভুলটি, তিনি এই দ্বিতীয় ভুলটি না করলে প্রথম ভুলটিও করতেন না। এখন তিনি কেন এই দ্বিতীয় ভুলটা করলেন, এর সাম্ভাব্য ব্যাখ্যা নিম্নরূপ,
এইক্ষেত্রে সাইদের সুত্রের সনদের মধ্যে ডক্টর সামির শুধুমাত্র সাইদ বিন মাইমুন এর মাজহুল হয়ার ব্যাপারটির দিকেই দৃষ্টিপাত করেছেন ও শুধুমাত্র এটাকেই বিবেচনায় এনেছেন। সাইদ বিন মাইমুন এর পাশাপাশি সনদটিতে যে আরো অন্য দুইজন মাজহুল রাবিও আছেন, তা ডক্টর সামির ভুলবশত খেয়ালই করেন নি, বিবেচনায় আনেন নি। যার ফলে তিনি ধরে নিয়েছেন যে উক্ত সনদে শুধুমাত্র একজন মাজহুল রাবিই আছে। মাত্র একজন মাজহুল রাবির কারণে কোনো সনদ যইফুন জিদ্দান হয়ে যায়না, বরং হালকামাত্রার অথবা মধ্যমস্তরের যইফ হয়। আর এর উপর ভিত্তি করে তিনি উক্ত সনদটিকে মধ্যমস্তরের কিংবা হালকামাত্রার যইফ হিসেবে বিবেচনা করেছেন, যইফুন জিদ্দান হিসেবে বিবেচনা করেন নি। কোনো সনদ হালকা অথবা মধ্যম মাত্রায় যইফ হলে তা সমর্থনপ্রদানকারী শাহিদ হিসেবে বিবেচনাযোগ্য হয়। আর তাই, সামির আল-ইমরান ধরে নিয়েছেন যে এক্ষেত্রে সাইদের সুত্রটি সমর্থনপ্রদানকারী শাহিদ হিসেবে গ্রহণযোগ্য।
আমার দেয়া এই দ্রষ্টব্য দেখে কেও যেন এটা না ভাবে যে ডক্টর সামির আল-ইমরান আলোচ্য হাদিসটিকে হাসান লিগাইরিহ বলেছেন। উনার আলোচনাটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। উনার উক্ত আলোচনাটিতে উনি আলোচ্য হাদিসের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছেন যে : "হাদিসটি মতনের দিক দিয়ে যইফ, সনদের দিক দিয়ে হাসান লিগাইরিহ।" আর যারা জানেন না তাদের জন্য বলে দিচ্ছি যে, মতনের দিক দিয়ে যইফ হয়া মানেই হাদিসটা চুড়ান্তভাবে যইফ, এক্ষেত্রে সনদ কেমন তা আর বিবেচ্য হয়না।
দ্রষ্টব্য সমাপ্ত
4. ডক্টর মুহাম্মদ দ্বিয়াউর রহমান আল-আ'যামী এর আলোচনা :
ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে নাফে! আমার রক্তে উচ্ছাস দেখা দিয়েছে (রক্তচাপ বেড়েছে)। অতএব আমার জন্য একজন রক্তমোক্ষণকারী খুঁজে আনো, আর সম্ভব হলে সদাশয় কাউকে আনবে। বৃদ্ধ বা বালককে আনবে না। কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ বাসি মুখে রক্তমোক্ষণ করালে তাতে নিরাময় ও বরকত লাভ হয় এবং তাতে জ্ঞান ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। অতএব আল্লাহর বরকত লাভে ধন্য হতে তোমরা বৃহস্পতিবার রক্তমোক্ষণ করাও, কিন্তু বুধ, শুক্র, শনি ও রবিবারকে রক্তমোক্ষণ করানোর জন্য বেছে নেয়া থেকে বিরত থাকো। সোম ও মঙ্গলবারে রক্তমোক্ষণ করাও, কেননা এ দিনই আল্লাহ আইউব (আ) -কে রোগমুক্তি দান করেন এবং বুধবার তাকে রোগাক্রান্ত করেন। আর কুষ্ঠরোগ ও ধবল বুধবার দিনে বা রাতেই শুরু হয়।
অনুরূপভাবে, ইবনু উমার (রা) হতে বর্ণিত এই হাদিসটিও সহিহ নয়।
হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইবনু মাজাহ তাঁর "সুনান"(3487) গ্রন্থে সুওয়াইদ বিন সাইদ হতে, তিনি উসমান বিন মাতার হতে, তিনি আল-হাসান বিন আবি জাফার হতে, তিনি মুহাম্মদ বিন জুহাদাহ হতে, তিনি নাফে হতে, তিনি ইবনু উমার হতে।
আল-হাসান বিন আবি জাফার আল-বাসরী "যইফ" এবং এব্যাপারে উলামাদের ঐক্যমত আছে, যইফ হয়ার পাশাপাশি তিনি (আল-হাসান) একজন আবেদ ও সম্মানিত ব্যাক্তি।
হাদিসটি অনুরূপ মতনে বর্ণনা করেছেন আল-হাকিম তাঁর "আল-মুস্তাদরাক"(4/409) গ্রন্থে উসমান বিন জাফার হতে, তিনি মুহাম্মদ বিন জুহাদাহ হতে, তিনি নাফে হতে, অতপর অনুরূপ সনদে।
এবং আল-হাকিম বলেছেন : "এই হাদিসের রাবিদের প্রত্যেকেই ছিকাহ শুধুমাত্র উসমান বিন জাফার ব্যাতিত, উসমান বিন জাফার এর ব্যাপারে আমি কোনো জারাহ বা তাদিল জানিনা।"
এবং এটা একদম সুস্পষ্ট ও প্রকাশিত যে আল-হাকিম এক্ষেত্রে ভুল করেছেন, এখানে সঠিক নামটা হবে "আল-হাসান বিন আবি জাফার" ; উসমান বিন জাফার নয়, এবং একারণেই আয-যাহাবী আল-হাকেমের উক্ত মন্তব্য সম্পর্কে এই বলে টিকা লিখেছেন যে "এটা ইতিমধ্যে গত হয়েছে, এবং সে ক্রুটিপুর্ণ"।
এবং ইবনু মাজাহ তাঁর "সুনান"(3488) গ্রন্থে অপর আরেকটু সুত্রে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। ইবনু মাজাহ বলেছেন যে : আমাদের মুহাম্মদ ইবনুল মুস্ফা আল-হামসী বর্ণনা করেছেন যে আমাদের উসমান বিন আব্দুর রহমান বর্ণনা করেছেন যে আমাদের আব্দুল্লাহ বিন উসমাহ বর্ণনা করেছেন, সাইদ বিন মাইমুন হতে, তিনি নাফি হতে, যে নাফি বলেছেন যে ইবনু উমার (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, হে নাফে! আমার রক্তচাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। অতএব তুমি আমার জন্য এক যুবক রক্তমোক্ষণকারীকে নিয়ে এসো, বৃদ্ধকেও নয় এবং বালককেও নয়। রাবী বলেন, ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ বাসি মুখে রক্তমোক্ষণ করানো উত্তম, তা জ্ঞান বৃদ্ধি করে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং হাফেজের মুখস্থ শক্তি বৃদ্ধি করে। কেউ রক্তমোক্ষণ করতে চাইলে যেন আল্লাহর নামে বৃহস্পতিবারে তা করায়। তোমরা শুক্র, শনি ও রবিবার রক্তমোক্ষণ করানো পরিহার করো এবং সোমবার ও মঙ্গলবার রক্তমোক্ষণ করাও, কিন্তু বুধবার তা করাবে না। কারণ এদিনই আইউব (আ) বিপদে পতিত হন। আর কুষ্ঠ রোগ ও শ্বেতরোগ বুধবার দিনে বা রাতেই শুরু হয়।
এখানে উসমান বিন আব্দুর রহমান ও তার শায়খ আব্দুল্লাহ বিন উসমাহ, এনারা উভয়েই একইসাথে মাজহুল।
আলোচ্য হাদিসটির জন্য অন্যান্য আরো সুত্র বিদ্যমান তবে সেগুলোও দুর্বলতা ব্যাতিত আর কিছুই সরবরাহ করেনা, এবং আলোচ্য হাদিসটি প্রকৃতপক্ষে "মুনকার" যেমনটা আয-যাহাবী, আল-হাকেম সহ অন্যান্য আরো অনেকেই বলেছেন।
…… যদি কথা আসে হিজামাহর সময়ের ব্যাপারে, তাহলে তা যেকোনোসময়েই যায়েয, এবং এই কারণেই আল-বোখারী এই শিরোনামের অধ্যায় দিয়েছেন যে "কোন সময় হিজামাহ করা যায় তা সক্রান্ত অধ্যায়, এবং আবু মাওলা রাত্রে হিজামাহ করেছেন"। এবং ইবনু হাজার তাঁর "ফাতহুল বারী"(10/149) গ্রন্থে বলেছেন যে : "শিঙ্গা লাগানোর উপযুক্ত সময় সম্পর্কে বেশ কিছু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তবে এর কোনটি বুখারীর শর্তে উত্তীর্ণ নয়। তাই তিনি যেন এ ইঙ্গিত করতে চাচ্ছেন যে, প্রয়োজন হলে যে কোন সময় শিঙ্গা লাগানো যাবে। কোন সময় শিঙ্গা লাগানো যাবে; আর কোন সময় শিঙ্গা লাগানো যাবে না— এমনটি নয়। কারণ তিনি রাত্রিবেলা শিঙ্গা লাগানোর বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।"
এবং তিনি বলেছেন যে : যেহেতু এইসব হাদিসের মধ্য হতে কিছুই সহিহ নয়, সেহেতু হানবল বিন ইসহাক বলেছেন যে ইমাম আহমাদ যে সময়েই রক্ত উত্তেজিত হতো সেই সময়েই হিজামাহ করতেন, সময় যাই হোক না কেন। ……
আল-আ'যামীর আলোচনা সমাপ্ত।
আলোচনাটির উৎস : ডক্টর দ্বিয়াউর রহমান আল-আ'যামী কর্তৃক রচিত গ্রন্থ "আল-জামিউল কামিল" এর ৯বম খন্ডের পৃষ্ঠা নম্বর 785 থেকে 786 পর্যন্ত।
5. আশ-শায়খ মুহাম্মদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ এর আলোচনা :
শিরোনাম : "শিঙ্গা লাগানোর সময় নির্ধারণ সংক্রান্ত কোন হাদিস সহিহ নয়"
প্রশ্ন
শনিবার কিংবা শুক্রবারে শিঙ্গা লাগানো কি মাকরুহ; যদি সেই দিন ১৯ তারিখ বা ১৭ তারিখ কিংবা ২১ তারিখ হয়? যেহেতু হাদিসে এসেছে, তোমরা বুধবারে, কিংবা শুক্রবারে, কিংবা শনিবারে, কিংবা রবিবারে শিঙ্গা লাগিও না। বৃটেনের মুসলমানদের নিকট এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশা করি বিষয়টি পরিষ্কার করবেন। এ সংক্রান্ত হাদিসগুলো কি দুর্বল; না সহিহ?
উত্তর
আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
শিঙ্গা লাগানোর সময়ের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অনেকগুলো হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এ ব্যাপারে কওলি (বাচনিক) হাদিস যেমন রয়েছে, ফে’লী (কর্মগত) হাদিসও রয়েছে। এ হাদিসগুলো দুই প্রকার:
প্রথম প্রকার: যে হাদিসগুলোতে শিঙ্গা লাগানোর উত্তম দিনগুলো সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সে দিনগুলো হচ্ছে- চন্দ্রমাসের ১৭ তারিখ (বিশেষতঃ যদি মঙ্গলবার হয়); ১৯ তারিখ ও ২১ তারিখ এবং সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার।
দ্বিতীয় প্রকার: যে হাদিসগুলোতে সপ্তাহের বিশেষ কিছু দিনে শিঙ্গা লাগানোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। সে দিনগুলো হচ্ছে- শনিবার, রবিবার, মঙ্গলবার (মঙ্গলবারে শিঙ্গা লাগানোর প্রতি উৎসাহও বর্ণিত হয়েছে), বুধবার ও শুক্রবার।
অধিকাংশ আলেম এ দুই প্রকারের হাদিসগুলো দুর্বল হওয়া এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এর কোনটি সহিহ না হওয়ার কথা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন। তাদের উক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১। ইমাম মালেককে শনিবার ও বুধবারে শিঙ্গা লাগানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন: এতে কোন অসুবিধা নেই। আমি সব কয়টি দিনে শিঙ্গা লাগিয়েছি। আমি এর কোনটিকে মাকরূহ মনে করি না।[আল-মুনতাকা শারহুল মুয়াত্তা (৭/২২৫) থেকে সংক্ষেপে সমাপ্ত; গ্রন্থকার এ উক্তিটি ‘আল-উতবিয়্যাহ’ থেকে উদ্ধৃত করেছেন]
মালেকি মাযহাবের ‘আল-ফাওয়াকেহ আল-দাওয়ানি’ (২/৩৩৮) গ্রন্থে এসেছে- বছরের প্রতিটি দিন শিঙ্গা লাগানো জায়েয; এমনকি শনিবার ও বুধবারেও। বরং ইমাম মালেক সারা বছর শিঙ্গা লাগাতেন। এই দুই দিনে কোন প্রকার ঔষধ গ্রহণ করা মাকরূহ নয়। পক্ষান্তরে, এই দুই দিনে শিঙ্গা লাগানো থেকে সতর্কমূলক যেসব হাদিস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো ইমাম মালেকের নিকট সহিহ নয়।[সমাপ্ত]
২। আব্দুর রহমান বিন মাহদি (রহঃ) বলেন:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ সংক্রান্ত (অর্থাৎ শিঙ্গা লাগানোর সময় নির্ধারণমূলক) কোন কিছু সহিহ সাব্যস্ত হয়নি। তবে তিনি শিঙ্গা লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন।[সমাপ্ত, ইবনুল জাওযি ‘আল-মাওযুআত (৩/২১৫) গ্রন্থে এ উক্তিটি উল্লেখ করেছেন]
৩। আল-খাল্লাল ইমাম আহমাদ থেকে বর্ণনা করেন যে, হাদিসটি সাব্যস্ত হয়নি।[ইবনে হাজার ‘ফাতহুল বারী (১০/১৪৯) তে এ উক্তিটি উল্লেখ করেছেন]
৪। বারযায়ি বলেন:
‘আমি আবু যর (রাঃ) এর সাক্ষাত পেয়েছি। তিনি বিশেষ কোন দিনে শিঙ্গা লাগানো মাকরূহ হওয়ার ব্যাপারে কোন কিছু সাব্যস্ত করেন না এবং বিশেষ কোন দিনে শিঙ্গা লাগানো মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে কোন কিছু সাব্যস্ত করেন না।[সমাপ্ত, সুআলাতুল বারযায়ি (২/৭৫৭)]
৫। হাফেয ইবনে হাজার –ইমাম বুখারীর উক্তি ‘পরিচ্ছেদ: কোন সময় শিঙ্গা লাগাবে, আবু মুসা (রাঃ) রাত্রিবেলা শিঙ্গা লাগিয়েছেন’ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে- বলেন: শিঙ্গা লাগানোর উপযুক্ত সময় সম্পর্কে বেশ কিছু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তবে এর কোনটি বুখারীর শর্তে উত্তীর্ণ নয়। তাই তিনি যেন এ ইঙ্গিত করতে চাচ্ছেন যে, প্রয়োজন হলে যে কোন সময় শিঙ্গা লাগানো যাবে। কোন সময় শিঙ্গা লাগানো যাবে; আর কোন সময় শিঙ্গা লাগানো যাবে না— এমনটি নয়। কারণ তিনি রাত্রিবেলা শিঙ্গা লাগানোর বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।[ফাতহুল বারী (১০/১৪৯) থেকে সমাপ্ত]
৬। উকাইলি (রহঃ) বলেন: “এ বিষয়ে অর্থাৎ শিঙ্গা লাগানোর জন্য বিশেষ দিন নির্বাচন সম্পর্কে কোন হাদিস সাব্যস্ত নয়।[আল-যুআফা আল-কাবির (১/১৫০) থেকে সমাপ্ত]
৭। ইবনুল জাওযি তার ‘আল-মাওযুআত (জাল হাদিস সংকলন)’ নামক গ্রন্থে (৩/২১১-২১৫) গোটা একটি পরিচ্ছেদ রচনা করেছেন এবং এতে এ সংক্রান্ত হাদিসগুলো উল্লেখ করার পর বলেন: “এ হাদিসগুলোর কোনটি সহিহ নয়।”[সমাপ্ত]
৮। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন:
“সারকথা হচ্ছে- বিশেষ কোন দিনে শিঙ্গা লাগানো নিষিদ্ধ হওয়া সম্পর্কে কোন কিছু সাব্যস্ত হয়নি।”[আল-মাজমু (৯/৬৯), যদিও নববী ১৭ তারিখ, ১৯ তারিখ ও ২১ তারিখে শিঙ্গা লাগানোর সময় সংক্রান্ত হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেন]
৯। হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন:
“এ হাদিসগুলোর কোনটি সহিহ নয়।”[সমাপ্ত; ফাতহুল বারী (১০/১৪৯)]
দুই:
আলেমগণের অনেকে চন্দ্রমাসের ১৭ তারিখ, ১৯ তারিখ ও ২১ তারিখে শিঙ্গা লাগানোকে মুস্তাহাব মনে করেন নিম্নোক্ত দলিলের ভিত্তিতে:
১. সাহাবীগণ থেকে সহিহ সূত্রে এ বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে:
আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণ মাসের বেজোড় দিনগুলোতে শিঙ্গা লাগাতেন।”
তাবারানী ‘তাহযীবুল আছার’ গ্রন্থে (নং-২৮৫৬) এ আছার (সাহাবীর উক্তি) টি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন: এ আছারটি আমাদের নিকট মুহাম্মদ বিন বাশশার বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: আমাদের নিকট আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন: আমাদের নিকট হিশাম বর্ণনা করেছেন কাতাদা থেকে, তিনি বর্ণনা করেছেন আনাস (রাঃ)। এ সনদটি (বর্ণনাসূত্রটি) সহিহ। আবু যুরআ বলেন: এ বিষয়ে সবচেয়ে শুদ্ধ হচ্ছে আনাস (রাঃ) এর হাদিস: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণ ১৭ তারিখ, ১৯ তারিখ ও ২১ তারিখে শিঙ্গা লাগাতেন।” [সুআলাতুল বারযায়ি (২/৭৫৭)] ইমাম তাবারী উল্লেখিত আছার (সাহাবীর উক্তি) এর পর রফি (আবুল আলিয়া) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: “তাঁরা মাসের বেজোড় তারিখে শিঙ্গা লাগানো মুস্তাহাব মনে করতেন।” এবং তিনি ইবনে আওন থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “তিনি তার কিছু সাহাবীকে ১৭ তারিখে ও ১৯ তারিখে শিঙ্গা লাগানোর নির্দেশ দিতেন।” ইমাম আহমাদ বলেন: সুলাইম বলেছেন, হিশাম আমাদেরকে মুহাম্মদ থেকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি এ হাদিসে ‘২১ তারিখ’ এর কথাও বর্ণনা করতেন।
সম্ভবত সাহাবায়ে কেরামের এ অভ্যাসের কারণ ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক এ সময় নির্ধারণ। এতে করে বুঝা যায় যে, এ হাদিসগুলো ‘হাদিসে মারফু’ (রাসূল থেকে বর্ণনা) হওয়ার একটা ভিত্তি রয়েছে। বরং কোন কোন আলেম এ সংক্রান্ত কোন কোন মারফু হাদিসকে মজবুত বলে রায় দিয়েছেন। যেমন ইমাম তিরমিযি। তিনি আনাস বিন মালেক (রাঃ) এর হাদিস: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর গর্দানের দুই পাশে ও পিঠের দুই পাশে শিঙ্গা লাগাতেন। এবং তিনি ১৭ তারিখ, ১৯ তারিখ ও ২১ তারিখে শিঙ্গা লাগাতেন।” হাদিস নং ২০৫১, তিরমিযি বলেন: হাদিসটি হাসান।
একই রকম মত দিয়েছেন- মুতাআখ্খিরীন আলেমদের মধ্যে সুয়ুতী তার ‘আল-হাওয়ি’ নামক ফতোয়া গ্রন্থে (১/২৭৯-২৮০) এবং ইবনে হাজার আল-হাইতামী তার ফতোয়াতে (৪/৩৫১) এবং আলবানি তার ‘আল-সিলসিলা আল-সহিহা’ গ্রন্থে (নং ৬২২ ও ১৮৪৭)।
যদিও ইতিপূর্বে এ সংক্রান্ত মারফু হাদিস দুর্বল হওয়ার মর্মে যেসব ইমমাগণের অভিমত উল্লেখ করা হয়েছে সেটাই শক্তিশালী ও অগ্রগণ্য।
২. চিকিৎসা শাস্ত্রেও এর সমর্থন রয়েছে:
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) ১৭ তারিখ, ১৯ তারিখ ও ২১ তারিখে শিঙ্গা লাগানো সংক্রান্ত হাদিসগুলো উল্লেখ করার পর বলেন: “এ হাদিসগুলো চিকিৎসকদের ঐকমত্যের সাথে মিলে গেল। চিকিৎসকদের মতে, মাসের দ্বিতীয়ার্ধে এবং এরপর অর্থাৎ তৃতীয় চতুর্থাংশে শিঙ্গা লাগানো মাসের প্রথমাংশে কিংবা শেষাংশে শিঙ্গা লাগানোর চেয়ে উত্তম। আর প্রয়োজন হলে আপনি যে কোন সময়ে শিঙ্গা লাগান, মাসের প্রথমে হোক শেষে হোক আপনি উপকার পাবেন।
আল-খাল্লাল বলেন: ইসমত বিন ইসাম আমাকে সংবাদ দেন যে, তিনি বলেন: হাম্বল আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন: আবু আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন হাম্বল এর যখনি রক্ত উত্তাল হয়ে উঠত তখনি শিঙ্গা লাগাতেন সেটি যে সময়ে হোক না কেন।[সমাপ্ত]
[যাদুল মাআদ (৪/৫৪)]
পক্ষান্তরে সপ্তাহের বিশেষ দিনে শিঙ্গা লাগানোর ব্যাপারে আমাদের জানা মতে চিকিৎসা শাস্ত্রে কোন কিছু সাব্যস্ত হয়নি। যদিও এ ব্যাপারে কিছু সাহাবী থেকে কিছু বক্তব্য এসেছে। ইমাম আহমাদ থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি শনিবার ও বুধবারে শিঙ্গা লাগানো থেকে বিরত থাকতেন। ইবনুল কাইয়্যেম যাদুল মাআদ গ্রন্থে (৪/৫৪) আল-খাল্লাল থেকে এটি বর্ণনা করেছেন।
ইবনে মুফলিহ (রহঃ) বলেন:
আবু তালেব ও একদল বর্ণনাকারী বর্ণনামতে, শনিবার ও বুধবারে শিঙ্গা লাগানো মাকরূহ। মুহাম্মদ ইবনে হাসানের বর্ণনা মতে, ইমাম আহমাদ শুক্রবারের কথাও বাড়তি বর্ণনা করেছেন। আল-মুসতাওয়াব ও অন্য গ্রন্থে এ ব্যাপারে দৃঢ়তা ব্যক্ত করা হয়েছে।
আল-মারওয়াযি বলেন: “আবু আব্দুল্লাহ রবিবার ও মঙ্গলবারে শিঙ্গা লাগাতেন।”
কাযী বলেন: “রবিবার ও মঙ্গলবারে পছন্দ করতেন। শনিবারে অপছন্দ করতেন। শুক্রবারের ব্যাপারে নিরব ছিলেন।[বক্তব্য সমাপ্ত]
একটা নীতি হচ্ছে-তিনি যদি কোন বিষয়ে চুপ থাকেন তাহলে সে বিষয়ে দুটো দিকই থাকে।
যুহরী থেকে মুরসাল সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, “যে ব্যক্তি শনিবারে কিংবা বুধবারে শিঙ্গা লাগালো ফলে তার কুষ্ঠরোগ হল তাহলে সে যেন নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকে দোষারোপ না করে।” ইমাম আহমাদ এ উক্তিটি উল্লেখ করেন এবং এটি দিয়ে দলিল দেন। আবু দউদ বলেন: তিনি সনদসহ উল্লেখ করেছেন; কিন্তু এটি সহিহ নয়।
বাইহাকী উল্লেখ করেছেন যে, একাধিক মুহাদ্দিস এ বাণীটি মুত্তাছিল সনদে উল্লেখ করেছেন। তিনি এটিকে দুর্বল বলেছেন। মুখস্তকৃত হচ্ছে- এটি মুনকাতি (কর্তিত সনদ)।[তাঁর কথা সমাপ্ত]
আবু বকর ইবনে আবু শাইবা তার নিজস্ব সনদে মাকহুল থেকে বর্ণনা করেন যে, এটি মুরসাল। আর الوضح শব্দের অর্থ হচ্ছে-البرص অর্থাৎ কুষ্ঠরোগ।
ইমাম আহমাদের কাছে একবার বলা হল যে, এক ব্যক্তি বুধবারে শিঙ্গা লাগিয়েছে এবং এ সংক্রান্ত হাদিসটিকে তুচ্ছ করে বলেছে এটি কেমন হাদিস? এরপর সে লোকের কুষ্ঠরোগ হয়েছে। তখন ইমাম আহমাদ বলেন: কোন ব্যক্তির হাদিসকে তুচ্ছ করা সমীচীন নয়। আল-খাল্লাল এটি বর্ণনা করেন।
ইবনে উমর (রাঃ) থেকে একটি মারফু হাদিস বর্ণিত আছে যে, “জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে যে সময়ে কেউ শিঙ্গা দিলে তার এমন একটি রোগ হবে যে রোগ থেকে মুক্তি পাবে না।”। বাইহাকী হাসান সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেন; সে সনদে আত্তাফ বিন খালেদ রয়েছে; তার মুখস্তশক্তিতে দুর্বলতা আছে।[সমাপ্ত; ইবনে মুফলিহ এর ‘আল-আদাব আল-শারইয়্যাহ (৩/৩৩৩)]
অনুরূপ বর্ণনা ইবনে মায়ীন, আলী ইবনে মাদীনি থেকেও বর্ণিত আছে।
আল্লাহই ভাল জানেন।
আল-মুনাজ্জিদের আলোচনা সমাপ্ত
আলোচনাটির উৎস : https://islamqa.info/bn/128170
6. ইসলামওয়েব এর আলোচনা :
শিরোনাম : "হিজামাহর জন্য কোনো নির্ধারিত দিন দ্বারা নির্দিষ্টকরণ নেই "
প্রশ্ন :
রাসুল (সা) হতে কি এমন কোনো হাদিস পাওয়া যায় যা হিজামাহ করাকে সোমবার, মঙ্গলবার এবং বৃহস্পতিবারের জন্য খাস সাব্যস্ত করে? এবং যদি কেও বুধবারে হিজামাহ করে তাহলে সে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হবে? এবং হিজরির কোনো মাসের ১৭ তারিখ মঙ্গলবার হলে, সেইদিন হিজামাহ করলে যেকোনো রোগ হতে মুক্তি পাওয়া যায়? আমি এই হাদিসের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে জানার আশা প্রকাশ করছি। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
উত্তর :
আল-হামদুলিল্লাহ, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রসুলিল্লাহ ওয়া আলা সহবিহি, আম্মা বা'দ :
এক্ষেত্রে এমন কিছু হাদিস বিদ্যমান আছে যেগুলোতে কিছু কিছু দিনে হিজামাহ করার নির্দেশ করা ও কিছু কিছু দিনে হিজামাহ করতে নিষেধ করা অন্তর্ভুক্ত আছে। এবং এইসব হাদিসের প্রত্যেকটাই যইফ, সবগুলোওই যইফ, যেমনটা আল-হাফেয ইবনু হাজার "ফাতহুল বারি" গ্রন্থে উল্লেখ্য করেছেন, যেখানে তিনি সেইসব হাদিস ও সেগুলো সক্রান্ত আলোচনা উল্লেখ্য করার পর বলেছেন যে : "যেহেতু এইসব হাদিসের মধ্য হতে কিছুই সহিহ না, সেহেতু হানবল বিন ইসহাক বলেছেন যে ইমাম আহমাদ যখনই তাঁর রক্ত উত্তেজিত হতো তখনিই হিজামাহ করতেন, সময় যাই হোক না কেন।"
সুতরাং হিজামাহকে কোনো নির্দিষ্ট দিনের সহিত খাস করে নেয়া সঠিক হবেনা, এই প্রসঙ্গে যত হাদিস বর্ণিত হয়েছে তার সবগুলোওই যইফ ও আমলযোগ্য নয়।
আল্লাহু আ'লাম।
ইসলামওয়েব এর আলোচনা সমাপ্ত
আলোচনাটির উৎস : https://www.islamweb.net/ar/fatwa/46772
এখন, অনেকে উক্ত হাদিসটিকে হাসান লিগাইরিহ দাবি করেন, এই দাবির পক্ষে তারা উল্লেখ্য করেন যে শায়খ আল-আলবানী রহ. উক্ত হাদিসটিকে হাসান লিগাইরিহ বলেছেন।
শায়খ আল-আলবানী এটা সুস্পষ্টভাবেই স্বীকার করেছেন ও মেনে নিয়েছেন যে আলোচ্য হাদিসের ব্যাপারে যত রেওয়ায়েত বর্ণিত আছে তার প্রত্যেকটাই এককভাবে যইফ, তবে তিনি এসকল যইফ বর্ণনাকে পরস্পরের জন্য শক্তি প্রদানকারী শাহেদ হিসেবে বিবেচনা করে সবগুলো বর্ণনাকে একত্রে মিলিয়ে "হাসান লিগাইরিহ" বলেছেন। এব্যাপারে বিস্তারিত জানতে দেখুন : শায়খ আল-আলবানীর "সিলসিলাতুস সহিহাহ"(2/392-395)।
কিন্ত এক্ষেত্রে শায়খ আল-আলবানী কর্তৃক উক্ত হাদিসটিকে হাসান লিগাইরিহ সাব্যস্ত করাটা সমস্যাজনক ও ভুল। কেন ও কিভাবে ভুল, তা নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলো।
হাসান লিগাইরিহ হয়ার একটা পুর্বশর্ত হচ্ছে এই যে, যেসমস্ত রেওয়ায়েতকে একত্রে মিলিয়ে একটা হাদিসকে "হাসান লিগাইরিহ" বলা হচ্ছে, সেই রেওয়ায়েতগুলো "খুবই যইফ" বা "বেশি যইফ" হতে পারবেনা। যদি রেওয়ায়েতগুলো খুবই যইফ হয়, তাহলে সেগুলোকে একত্রে মিলিয়ে কোনো হাদিসকে হাসান লিগাইরিহ বলে দেয়া যাবেনা।
মুহাদ্দিস 'আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ' বলেছেন যে,
"এবং এটা জানা বিষয় যে সুত্রের আধিক্যতা সর্বদাই পরস্পরকে দৃঢ়তা প্রদান করেনা। বরং দুর্বলতার মাত্রা যখন হালকা হয় সেক্ষেত্রে দৃঢ়তা প্রদান করে। পক্ষান্তরে, যদি দুর্বলতা তীব্র হয় সেক্ষেত্রে সুত্রের আধিক্যতাতে বিন্দুমাত্র লাভ নেই। "
[উৎস : https://shamela.ws/book/36944/20]
হাসান লিগাইরিহ সম্পর্কে, মুহাদ্দিস 'আব্দুল-কারিম আল-খাদ্বির ' বলেছেন যে,
"এক্ষেত্রে দুর্বলতা খুবই বেশি বা তীব্র হতে পারবেনা, কেননা তীব্র দুর্বলতা শাহেদ বা মুতাবায়াত দ্বারা মেরামতকৃত হয়াকে গ্রহণ করেনা "
[উৎস : https://shamela.ws/book/23405/154]
মুহাদ্দিস 'হুসাইন আবুল-আশবাল আয-যুহাইরী' বলেছেন যে,
"প্রচন্ড দুর্বলতা মেরামতকৃত হয়না, যদি এর মতো শত সুত্রও বর্ণিত হয়ে আসে তবুও না। "
[উৎস : https://shamela.ws/book/37606/121]
আমি আমার উক্ত দাবির পক্ষে তিনজন মুহাদ্দিসের বক্তব্য উল্লেখ্য করলাম। চাইলে অন্যান্য আরো অসংখ্যা আলেমদের থেকে অনুরূপ বক্তব্য দেখানো যাবে, তবে এতটুকুই যথেষ্ট হবে বলে আমি মনে করছি। তাছারা হাদিসশাস্ত্রের পরিভাষা বা মুলনীতি সক্রান্ত অধিকাংশ গ্রন্থেই হাসান লিগাইরিহ সম্পর্কিত আলোচনার ক্ষেত্রে এব্যাপারটা কোনো না কোনোভাবে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে, একটু অনুসন্ধান করলেই পেয়ে যাবেন।
এবার দেখা যাক যে, আল-আলবানী এক্ষেত্রে যেসব বর্ণনাকে একত্রে মিলিয়ে আলোচ্য হাদিসটিকে "হাসান লিগাইরিহ" বলেছেন, সেই বর্ণনাগুলোর মধ্যে কোনটার অবস্থা কিরকম।
আল-আলবানী মোট ছয়টি রেওয়ায়েতকে একত্রে মিলিয়ে হাদিসটিকে "হাসান লিগাইরিহ" বলেছেন। আমি ধারাবাহিকভাবে সেই ছয়টি রেওয়ায়েতের প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করব।
বর্ণনা নং ১ :
বর্ণনাটি 'ইবনু মাজাহ' তাঁর "সুনান" গ্রন্থে, 'ইবনু আদি' তাঁর "আল-কামিল" গ্রন্থে এবং 'আল-খাতিব' তাঁর "আল-ফাকিহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ" গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। এই বর্ণনাটির সুত্রে একইসাথে তিনজন যইফ রাবি আছেন। তারা হলেন 'সুয়াইদ বিন সাঈদ', 'উসমান বিন মাতার' এবং 'আল-হাসান বিন আবি জাফার'।
'উসমান বিন মাতার' সম্পর্কে,
'আল-হাকেম' বলেছেন : মুনকারুল হাদিস।
'আল-উকাইলী' বলেছেন : ছিকাহদের থেকে বহু মুনকার হাদিস বর্ণনা করে।
'আবু-হাতিম' বলেছেন : যইফুল হাদিস, মুনকারুল হাদিস।
'ইবনু হিব্বান' বলেছেন : নির্ভরযোগ্যদের থেকে জাল হাদিস বর্ণনা করে।
'ইবনুল মাদিনী' বলেছেন : যইফুন জিদ্দান।
'আল-বোখারী' বলেছেন : মুনকারুল হাদিস।
সুতরাং 'উসমান বিন মাতার' শুধুই যইফ নন, বরং "মুনকারুল হাদিস" বা "যইফুন জিদ্দান"। অর্থাৎ অনেক বেশি যইফ, প্রচন্ড যইফ।
'আল-হাসান বিন আবি জাফার' সম্পর্কে,
'আবু নুয়াইম' বলেছেন : মুনকারুল হাদিস।
'আন-নাসাঈ' বলেছেন : যইফ, মাতরুকুল হাদিস।
'আস-সাজী' বলেছেন : মুনকারুল হাদিস।
'আল-ফালাস' বলেছেন : মুনকারুল হাদিস।
'আল-বোখারী' বলেছেন : মুনকারুল হাদিস।
'ইবনু মুয়াইন' বলেছেন : কিছুই না।
অর্থাৎ, 'আল-হাসান বিন আবি জাফার' ও শুধুই যইফ নন, বরং "মুনকারুল হাদিস" তথা "প্রচন্ড যইফ"।
কোনো সনদে মাত্র একজন "প্রচন্ড যইফ" রাবি থাকেলেই সনদটি "খুবই যইফ" হয়ে যায়, সনদটির দুর্বলতা তীব্র হয়ে যায়। এক্ষেত্রে এই বর্ণনাটির সনদে 'উসমান বিন মাতার' ও 'আল-হাসান বিন আবি জাফার' নামক দুইজন "প্রচন্ড যইফ" রাবি ও 'সুয়াইদ বিন সাইদ' নামক একজন যইফ রাবি আছেন।
২ জন প্রচন্ড যইফ রাবি + ১ জন যইফ রাবি = সনদে অতিউচ্চ ও চরম মাত্রার দুর্বলতা।
অর্থাৎ এই সনদটি অত্যন্ত বাজেভাবে ও চরমভাবে "অনেক বেশি যইফ" বা "খুবই যইফ" বা "তীব্র যইফ" বা "প্রচন্ড যইফ" (এক্ষেত্রে এই সবগুলো কথাই একে অপরের সমার্থক)।
বর্ণনা নং ২ :
এই বর্ণনাটি আল-হাকিম তাঁর "আল-মুস্তাদরাক" গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন 'উসমান বিন জাফার' এর সুত্র ধরে, এবং বর্ণনা করার ঠিক পরেই তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে 'উসমান বিন জাফার' একজন মাজহুল রাবি। তাছারা এই বর্ণনাটির সনদে 'আব্দুল মালিক বিন আব্দু রাব্বিহ' নামক আরেকজন রাবি আছেন যার ব্যাপারে আয-যাহাবী বলেছেন যে সে মুনকারুল হাদিস।
যেহেতু উক্ত বর্ণনাটির সনদে একইসাথে একজন মাজহুল রাবি ও একজন মুনকার রাবি আছেন, সুতরাং এই সনদটি "যইফুন জিদ্দান" তথা প্রচন্ড যইফ।
আয-যাহাবী এই বর্ণনাটিকে ক্রুটিপুর্ণ বলেছেন, এবং ইবনু হাজার এই বর্ণনাটিকে মুনকার বলেছেন।
[আল-আরনাওওতের আলোচনাটি দেখুন]
বর্ণনা ৩ :
এই বর্ণনাটি 'আল-হাকিম' তাঁর "আল-মুস্তাদরাক" গ্রন্থে 'গাযযাল বিন মুহাম্মদ' এর সুত্রে বর্ণনা করেছেন, এবং বর্ণনা করার পরই তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে 'গাযযাল বিন মুহাম্মদ' একজন মাজহুল রাবি।
গাযযাল বিন মুহাম্মদ এর ব্যাপারে আয-যাহাবী বলেছেন যে : "সে অজ্ঞাত, এবং তার কর্তৃক বর্ণিত হিজামাহ সক্রান্ত হাদিসটি মুনকার।"
[দেখুন : মিযানুল ই'তিদাল (রাবি/6654), আল-মুগনী (রাবি/4863)]
আয-যাহাবী আরো বলেছেন যে : "আহমদ বিন আলি আস-সুলাইমানী তাকে (গাযযালকে) সেইসব রাবিদের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে উল্লেখ্য করেছেন যারা কিনা হাদিস জাল করে।"
[দেখুন : মিযানুল ই'তিদাল (রাবি/5596)]
যদি ধরে নেই যে গাযযাল মাজহুল, তাহলে বলব যে : কোনো সনদে শুধুমাত্র একজন মাজহুল রাবি থাকলেই সনদটি যইফ হয়ে যায়, তবে যইফুন জিদ্দান হয়না। এই বর্ণনাটির সনদে শুধুমাত্র একজন মাজহুল রাবি গাযযাল বিন মুহাম্মদ আছেন। অতএব উক্ত সনদটির নিছকই যইফ হয়ার কথা, যইফুন জিদ্দান হয়ার কথা না।
কিন্তু তা সত্ত্বেও এক্ষেত্রে উক্ত বর্ণনাটি মুনকার (তথা যইফুন জিদ্দান এর অনুরূপ), কিভাবে ও কেন এমনটা হলো? এর ব্যাখ্যা নিম্নরূপ,
আয-যাহাবি গাযযাল কে মাজহুল বলার পর তার বর্ণিত এই বর্ণনাটিকে সুনির্দিষ্টভাবে বিশেষভাবে মুনকার বলেছেন ; এর অর্থ দাঁড়ায় এই যে, নির্দিষ্টভাবে এই বর্ণনাটির ক্ষেত্রে গাযযাল একজন যইফুন জিদ্দান রাবির মতো আচরণ করেছেন, যার ফলে বর্ণনাটি মুনকার (অর্থাৎ প্রচন্ড যইফ) হয়েছে। অর্থাৎ সাধারণভাবে গাযযাল মাজহুল হলেও নির্দিষ্টভাবে আলোচ্য এই ৩য় বর্ণনাটির ক্ষেত্রে তাকে একজন যইফুন জিদ্দান রাবি হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
যদি আহমদ আস-সুলাইমানী এর বক্তব্য অনুযায়ী ধরে নেই যে গাযযাল একজন হাদিস জালকারী, তাহলে উক্ত বর্ণনার সনদটি জাল বা বাতিল পর্যায়ের হবে।
উল্লেখ্য, আযযাল বিন মুহাম্মদ এবং গাযযাল বিন মুহাম্মদ, উভয়েই আসলে একই ব্যাক্তি। গাযযাল/আযযাল নামক এই একজন রাবির নাম কিছুস্থানে আযযাল এসেছে ও কিছুস্থানে গাযযাল এসেছে।
বর্ণনা নং ৪ :
এই বর্ণনাটি 'আল-হাকিম' তাঁর "আল-মুস্তাদরাক" গ্রন্থে 'আব্দুল্লাহ বিন সালিহ' এর সুত্র ধরে 'আত্তাফ বিন খালিদ' হতে বর্ণনা করেছেন।
জুমহুর উলামাদের মতে এই আব্দুল্লাহ বিন সালিহ একজন যইফ রাবি।আবার আত্তাফ বিন খালিদের ব্যাপারে মতভেদ আছে। যদি ধরেও নেই যে আত্তাফ রাবি হিসেবে ছিকাহ/হাসান তাহলেও সমস্যা থেকেই যায়, কেননা আত্তাফের ব্যাপারে ইবনু হিব্বান বলেছেন যে আত্তাফ নির্দিষ্টভাবে নাফি হতে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে বাজে স্বরণশক্তির ছিলেন ও নাফে হতে বর্ণিত তার বর্ণনাগুলো নির্ভরযোগ্য নয়। উল্লেখ্য যে, উক্ত বর্ণনাটি আত্তাফ বিন খালিদ সরাসরি নাফি হতে বর্ণনা করেছেন।
উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো অনুযায়ী বিচার করলে, এই বর্ণনাটি "মধ্যম স্তরের যইফ।"
[আল-আরনাওওত এবং নাবিল আল-কুয়েতী এর আলোচনাদুটি দেখুন। তাছারা আরো দেখুন : https://shamela.ws/book/151099/682]
বর্ণনা নং ৫ :
এই বর্ণনাটি 'ইবনু মাজাহ' তাঁর "সুনান" গ্রন্থে 'সাইদ বিন মাইমুন' এর সুত্র ধরে বর্ণনা করেছেন।
এই বর্ণনাটির সনদে 'সাইদ বিন মাইমুন', 'আব্দুল্লাহ বিন উসমাহ' এবং 'উসমান বিন আব্দুর রহমান' নামক তিনজন রাবি আছেন।
আর এই তিনজনের প্রত্যেকেই মাজহুল।
[দেখুন : নাবিল আল-কুয়েতী, আনিসুস সারী (11/1217)]
"সিলসিলাতুস সহিহাহ" তে স্বয়ং আল-আলবানী নিজেই এদের সবাইকে মাজহুল বলেছেন।
কোনো একটা সনদে একইসাথে তিনজন মাজহুল রাবি থাকা, সেই সনদটিকে "যইফুন জিদ্দান" তথা "প্রচন্ড যইফ" সাব্যস্ত করার জন্য যথেষ্ট।
[উদাহরণস্বরুপ দেখুন : https://shamela.ws/book/16/7554#p1 এবং এর আগের পৃষ্ঠার একদম শেষের অংশ]
সুতরাং এই সনদটি যইফুন জিদ্দান তথা প্রচন্ড যইফ।
ইবনু হাজার তাঁর "তাহযিবুত তাহযিব" গ্রন্থে সাঈদের বর্ণিত এই বর্ণনাটিকে "অত্যন্ত মুনকার" বলেছেন [দেখুন : https://shamela.ws/book/3310/1627]
উল্লেখ্য, শায়খ আল-আরনাওওত এর মতে এখানে উসমান বিন আব্দুর রহমান হচ্ছেন আত-তারাইফী, যদি উসমান বিন আব্দুর রহমান প্রকৃতপক্ষে আত-তারাইফি হয়েও থাকেন তাতেও কিছু আসে যায়না, কেননা আত-তারাইফী রাবি হিসেবে যইফ ছিলেন।
বর্ণনা নং ৬:
এই বর্ণনাটি আল-হাকিম বর্ণনা করেছেন 'আব্দুল্লাহ বিন হিশাম' এর সুত্র ধরে ইবনু উমার (রা) হতে "মাওকুফরূপে", এবং তিনি আবার এটাকে সহিহও বলেছেন। আল-হাকেমের পাশাপাশি অন্য কয়েকজন আলেমরাও এই বর্ণনাটিকে ভুলবশত সহিহ/হাসান/জাইয়েদ বলেছেন।
তবে প্রকৃতপক্ষে এই সনদটি বাতিল পর্যায়ের, কেননা এই বর্ণনার সনদে থাকা আব্দুল্লাহ বিন হিশাম এর ব্যাপারে 'আবু হাতেম আর-রাযী' বলেছেন যে সে "মাতরুকুল হাদিস ", এবং এরপাশাপাশি আয-যাহাবিও তাকে 'মাতরুকুল হাদিস' বলেছেন।
[দেখুন : আয-যাহাবী, দ্বিওয়ানুয যুয়াফা (রাবি/2339) ; ইবনুল মুলাক্কিন, মুখতাসারু তালখিসিয যাহাবি (রাবি/940)। এবং ড. সামির আল-ইমরানের আলোচনাটি]
দেখা যাচ্ছে যে এই ৬ টি বর্ণনার মধ্যে ৫ টিই হচ্ছে প্রচন্ড যইফ স্তরের বা প্রচন্ড যইফের চেয়েও বাজে স্তরের। আর শুধুমাত্র একটা রেওয়ায়েতই এখানে এমন আছে যা মধ্যম স্তরের যইফ। কাজেই এখানে বাকি ৫ টি বর্ণনার নিকট এই ক্ষমতা নেই যে তারা সেই একটি বর্ণনার সাথে মিলে আলোচ্য হাদিসটিকে "হাসান লিগাইরিহ" স্তরে উত্তীর্ণ করতে পারবে।
অতএব এই হাদিসটিকে হাসান লিগাইরিহ বলা সঠিক নয়।