বিষয় : ছয় দিনে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি কি বিজ্ঞানবিরোধী?
লেখক : সামিউল হাসান তবিব আল-ইনফিরাদী
বহু আয়াত এবং বহু হাদিস দ্বারা এটা সুস্পষ্ট যে, আকাশ ও পৃথিবী ছয় ইয়াওমে সৃষ্টি হয়েছে।
অধিকাংশ মুফাসসিরদের মতে, আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির ছয় ইয়াওমের ক্ষেত্রে "ইয়াওম"(يوم) শব্দটি দ্বারা আমাদের পরিচিত 24 ঘন্টার দিনের সমান সময়কাল উদ্দেশ্য।_[1]
ধরে নিচ্ছি যে , এক্ষেত্রে ইয়াওম বলতে 24 ঘন্টার দিনের সমান সময়কাল উদ্দেশ্য হওয়ার মতটিই সঠিক।
ছয় দিনে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টিকে বিজ্ঞানের সহিত সাংঘর্ষিক হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায় এবং বিজ্ঞানের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হিসেবেও ব্যাখ্যা করা যায়। এক্ষেত্রে এমনটা হওয়া আবশ্যক না, এবং এক্ষেত্রে এমনটা নিশ্চয়তার সহিত বলা যাবেনা, যে, ছয় দিনে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি বিজ্ঞানের সহিত সাংঘর্ষিক। বরং, এক্ষেত্রে এমনটা হওয়া সম্ভব যে, ছয় দিনে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি বিজ্ঞানের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সময় (الزمان) আল্লাহ কর্তৃক সৃষ্ট (مخلوق)। _[2][3]
সুতরাং, আল্লাহ সময়কে নিজের ইচ্ছামত নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম।
আধুনিক বিজ্ঞান অনুযায়ী, সময়ের প্রবাহ আপেক্ষিক।
অর্থাৎ, একেক জনের সাপেক্ষে বা দৃষ্টিকোণ হতে সময়ের প্রবাহ একেক রকম হতে পারে।
কোরআন-সুন্নাহতে আকাশ ও পৃথিবী ছয়দিনে সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি খুব সম্ভবত আল্লাহর দৃষ্টিকোণ হতে বর্ণিত হয়েছে।
সুতরাং, এক্ষেত্রে এমনটা হওয়া সম্ভব যে, আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার জন্য, আল্লাহর দৃষ্টিকোণ হতে ছয়দিন লেগেছিল এবং আমাদের দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী ছয়দিনের চেয়ে অনেক বেশি সময় লেগেছিল।
যদি বলা হয় যে :
"কোরআন অনুযায়ী, আল্লাহর একদিন আমাদের এক হাজার বছরের সমান। সুতরাং আল্লাহর দৃষ্টিকোণের ছয়দিন আমাদের দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী ছয় হাজার বছর। অর্থাৎ সময়ের প্রবাহের আপেক্ষিকতাকে বিবেচনায় আনলে বিষয়টা দাঁড়াবে এই যে, আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার জন্য আমাদের দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী ছয় হাজার বছর লেগেছিল। আমাদের দৃষ্টিকোণের ছয় হাজার বছরে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে বিজ্ঞানবিরোধী।"
তাহলে উত্তরস্বরূপ বলা হবে যে :
আল্লাহর একদিন আমাদের এক হাজার বছরের সমান হওয়ার বিষয়টির মানে কী? তা নিয়ে মুফাসসিরদের মাঝে মতভেদ বিদ্যমান। এ প্রসঙ্গে মুফাসসিরদের মাঝে মোট তিনটি প্রধান মত প্রচলিত আছে, যথা :_[4]
(১) এর মানে হচ্ছে এই যে, আখিরাতে (অর্থাৎ পরকালে) 24 ঘন্টায় একদিন না হয়ে এক হাজার বছরে একদিন হবে।
(২) এর মানে হচ্ছে এই যে, আখিরাতের আযাবের একদিন দুনিয়ার এক হাজার বছরের সমান হবে।
(৩) এর মানে হচ্ছে এই যে, আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির ছয়দিনের অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেকটা দিন দুনিয়ার এক হাজার বছরের সমান। (অর্থাৎ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার জন্য আমাদের দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী ছয় হাজার বছর লেগেছিল)
অধিকাংশ মুফাসসিররাই উক্ত ৩ নং মতটিকে গ্রহণ করা হতে বিরত থেকেছেন।_[1]
সুতরাং, এক্ষেত্রে এমনটা হওয়া আবশ্যক না, এবং এক্ষেত্রে এমনটা নিশ্চয়তার সহিত বলা যাবে না, যে, আল্লাহর একদিন আমাদের এক হাজার বছরের সমান হওয়ার বিষয়টি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির ছয়দিনের উপর প্রযোজ্য। বরং, এক্ষেত্রে এমনটা হওয়া সম্ভব যে, আল্লাহর একদিন আমাদের এক হাজার বছরের সমান হওয়ার বিষয়টি শুধুমাত্র আখিরাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির ছয়দিনের ক্ষেত্রে অপ্রযোজ্য।
অর্থাৎ, এক্ষেত্রে এমনটা হওয়া সম্ভব যে, আল্লাহর দৃষ্টিকোণের সৃষ্টির ছয়দিন আমাদের দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী ছয় হাজার বছর না।
অর্থাৎ, এক্ষেত্রে এমনটা হওয়া সম্ভব যে, আল্লাহর দৃষ্টিকোণের সৃষ্টির ছয়দিন আমাদের দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী এমন একটি সময়কাল, যার দৈর্ঘ্য ও ব্যাপ্তি আমাদের নিকট অনির্দিষ্ট ও অজানা।
আল্লাহ হচ্ছেন সময়ের স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রক, এবং আল্লাহই হচ্ছেন সময়ের প্রবাহের আপেক্ষিকতার স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রক।
সুতরাং, এমনটা হওয়া সম্ভব যে, আল্লাহর দৃষ্টিকোণের সৃষ্টির ছয়দিনের অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেকটা দিন আমাদের দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী অজানা ও অনির্দিষ্ট ব্যাপ্তিবিশিষ্ট একটি সময়কাল এবং আল্লাহর দৃষ্টিকোণের আখিরাতের একদিন আমাদের দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী এক হাজার বছর।
টীকাসমূহ :
[1] ইবনু কাসির, আল-বিদায়াতু ওয়ান নিহাইয়াহ (দারু হিজর,1/27)
[2] আন-নওওই, শারহু সহিহ মুসলিম (দারু ইহইয়াইত তুরাছিল আরাবী, 3/15)
[3] আস-সাফারিনী, লাওয়াইহুল আনওয়ারিস সুন্নিয়াহ (মাক্তাবাতুররুশদ, 2/367)
[4] আল-মাওরিদী, আন-নুকতু ওয়াল উয়ুন (দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, 4/33)