বিষয় : ছয় ইয়াওম প্রসঙ্গে
লেখক : সামিউল হাসান তবিব আল-ইনফিরাদী
কোরআন হাদিসের অসংখ্যা স্থানে বার বার বলা হয়েছে যে আল্লাহ তায়ালা সমগ্র মহাবিশ্বকে ছয় ইয়াওমে সৃষ্টি করেছেন। মুসলিমদের মাঝে এব্যাপারটা মোটামোটিভাবে প্রসিদ্ধ। এই লেখাটিতে, এই ছয় ইয়াওমের অর্থ প্রসঙ্গে আলোচনা করা হবে ইনশাল্লাহ।
বহুশাস্ত্রবিদ 'আমাদুদ্দিন আবুল-ফিদা ইবনু কাসির আদ-দিমাশক্বী' তাঁর "আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ" গ্রন্থে লিখেছেন যে,
وَقَدِ اخْتَلَفَ الْمُفَسِّرُونَ فِي مِقْدَارِ هَذِهِ السِّتَّةِ الْأَيَّامِ عَلَى قَوْلَيْنِ: فَالْجُمْهُورُ عَلَى أَنَّهَا كَأَيَّامِنَا هَذِهِ. وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، وَمُجَاهِدٍ، وَالضَّحَّاكِ، وَكَعْبِ الْأَحْبَارِ: أَنَّ كُلَّ يَوْمٍ مِنْهَا كَأَلْفِ سَنَةٍ مِمَّا تَعُدُّونَ. رَوَاهُنَّ ابْنُ جَرِيرٍ، وَابْنُ أَبِي حَاتِمٍ، وَاخْتَارَ هَذَا الْقَوْلَ الْإِمَامُ أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ فِي كِتَابِهِ الَّذِي رَدَّ فِيهِ عَلَى الْجَهْمِيَّةِ، وَاخْتَارَهُ ابْنُ جَرِيرٍ، وَطَائِفَةٌ مِنَ الْمُتَأَخِّرِينَ، وَاللَّهُ أَعْلَمُ_[1]
অর্থ :
"মুফাসসিরগণ এই ছয় ইয়াওমের পরিমাণ সম্পর্কে দুইটি মতে বিভক্ত করে মতভেদ করেছেন, এর প্রেক্ষিতে জুমহুর (অধিকাংশ) উলামারা এই মতের উপর আছেন যে তা আমাদের (পৃথিবীর) দিনের মতই। এবং ইবনু আব্বাস, মুজাহিদ, আদ্ব-দুহহাক, কাব আল-আহবার হতে এমনটা বর্ণিত আছে যে এক্ষেত্রে প্রত্যেকটা ইয়াওম হচ্ছে আমাদের গণনায় হাজার বছরের ন্যায়, এসব বর্ণনা ইবনু জারির ও ইবনু আবি হাতিম বর্ণনা করেছেন, এবং এই মতটিকে আল-ইমাম আহমদ বিন হাম্বল তাঁর সেই গ্রন্থে পছন্দ করেছেন যেখানে তিনি জাহমিদের উপর রদ্দ করেছেন, তাছারা ইবনু জারির এবং মুতায়াখখির উলামাদের একটি দলও এই মতটিকে পছন্দ করেছেন। এবং আল্লাহই ভালো জানেন "
ইবনু কাসিরের উক্ত বক্তব্যটি হতে প্রমাণিত হয় যে, এক্ষেত্রে ইয়াওমের অর্থ নিয়ে উলামাদের মাঝে মতভেদ আছে, একদলের মতে তাদ্বারা আমাদের দিনের মতই দিন উদ্দেশ্য,আরেকদলের মতে প্রত্যেকটা ইয়াওম দ্বারা হাজার বছরের ন্যায় সময়কাল উদ্দেশ্য।
সাম্ভাব্য আপত্তি - ইবনু কাসির বলেছেন যে জুমহুরদের মতে ইয়াওম বলতে আমাদের দিনের মতই দিন উদ্দেশ্য, সুতরাং এক্ষেত্রে পৃথিবীর দিন উদ্দেশ্য হয়ার মতটিই সঠিক, যেহেতু তা জুমহুর বা অধিকাংশের মত।
জবাব :
বহুশাস্ত্রবিদ 'বদরুদ্দিন মুহাম্মদ বিন আলি আশ-শাওকানী' তাঁর গ্রন্থ "ইরশাদুল ফুহুল ইলা তাহক্বিকিল হাক্ব মিন ইলমিল উসুল" এ লিখেছেন,
إِذَا خَالَفَ أَهْلَ الْإِجْمَاعِ وَاحِدٌ مِنَ الْمُجْتَهِدِينَ فَقَطْ فَذَهَبَ الْجُمْهُورُ إِلَى أَنَّهُ لَا يَكُونُ إِجْمَاعًا وَلَا حُجَّةً [2]
অর্থ : "যদি মুজতাহিদগণের মধ্য হতে শুধুমাত্র একজনও আহলুল ইজমার সহিত মতভেদ করেন, সেক্ষেত্রে জুমহুর উলামাদের মতে তা ইজমা হবেনা, এবং অকাট্য কিছুও হবেনা।"
মুহাম্মদ বিন আলী আশ-শাওকানী এর উক্ত বক্তব্যটি হতে প্রমাণিত হয় যে, জুমহুরদের মত অকাট্য কোনোকিছু নয়। যদি শুধুমাত্র কোনো একজন মুজতাহিদও বাকি সবার বিরোধী মত দেন, তাহলেও এই সম্ভাবনা থাকে যে সেই একজন মুজতাহিদই সঠিক ও বাকিরা সবাই ভুল। অথচ এক্ষেত্রে ইমাম আহমদ, আত-তাবারী সহ উলামাদের একটা দল, হাজার বছরের ন্যায় হয়ার মতটির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
সুতরাং এক্ষেত্রে আমাদের দিনের মতো দিন উদ্দেশ্য হয়ার মতটি অকাট্য কোনোকিছু নয়। বরং হাজার বছরের ন্যায় হয়ার মতটিও সঠিক হতে পারে।
প্রশ্ন - যদি তাই হয়, তাহলে সর্বদা কেন জুমহুরদের মতকে সল্প সংখ্যাকদের মতের উপর অগ্রাধিকার দেয়া হয়ে থাকে?
উত্তর :
জুমহুরদের মতকে 'সর্বদা' ই সল্পসংখ্যাকদের উপর অগ্রাধিকার দেয়া হয়, এই ধারনা সম্পুর্ণ ভুল। বরং সঠিক তথ্য হচ্ছে এই যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে জুমহুরদের মতকে সল্পসংখ্যাকদের মতের উপর অগ্রাধিকার দেয়া হয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে জুমহুরদের মতকে সল্পসংখ্যাকদের মতের উপর অগ্রাধিকার দেয়া হয়, কেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জুমহুরদের মতের পক্ষের দলিল ও যুক্তিগুলো অধিক শক্তিশালী ও অধিক দৃঢ় হয়ে থাকে, এমনটা হয়ার কারণ মোটেই শুধুমাত্র মতের পক্ষের উলামাদের সংখ্যাধিক্যতা নয়।
এক্ষেত্রে হাজার বছরের ন্যায় হয়ার মতটির ভিত্তি আছে, কোরানের কিছু আয়াত ও আরবি ভাষা দ্বারা এটা সমর্থিত।
সাম্ভাব্য আপত্তি - প্রত্যেক ইয়াওম যদি হাজার বছরের ন্যায় হয়, তাহলে ছয় ইয়াওম হবে বড়জোর ৬০০০ বছর। এরমানে কি এই যে, ইসলাম অনুযায়ী মহাবিশ্ব সৃষ্টি হতে ছয় হাজার বছর লেগেছে?
জবাব :
বাংলাতে আমরা অনেকসময় "হাজার" কথাটাকে "১০০০" অর্থে ব্যবহার না করে "অনেক/অধিক/প্রচুর" অর্থে ব্যবহার করে থাকি, উদাহরণস্বরুপ : "তারা হাজার বার সাক্ষাত করেছে ", এই বাক্যে "হাজার" শব্দটি "অনেক" অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
আরবি 'ألْفٌ' (হাজার) শব্দটিরও এইধরনের ব্যবহার আছে, এটাও অনেকসময় "অনেক" বা "প্রচুর" অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
আরবি ভাষাবিদ ও বহুশাস্ত্রবিদ 'মুহাম্মদ আত-তহির বিন আশুর' তাঁর তাফসিরগ্রন্থে লিখেছেন যে,
وألف يجوز أن يستعمل كناية عن الكثرة الشديدة كما يقال: زرتك ألف مرة، وقوله تعالى: يود أحدهم لو يعمر ألف سنة_[3]
অর্থ :
এবং 'হাজার' শব্দটির ক্ষেত্রে এমনটা হয়া বৈধ যে তা পরোক্ষভাবে প্রচন্ড আধিক্য বোঝানোর জন্যে ব্যবহৃত হবে, যেমন বলা হয় : আমি তোমার সহিত হাজার বার সাক্ষাত করেছি, এবং আল্লাহর বক্তব্য : 'তাদের মধ্যে কেও একজন হাজার বছর বেচে থাকতে চাইতো'।
সুতরাং, প্রত্যেক ইয়াওম কর্তৃক হাজার বছরের অনুরূপ হয়ার মতটির ক্ষেত্রে এমনটা হয়া জরুরি নয় যে হাজার বলতে এক্ষেত্রে "এক হাজার" ই উদ্দেশ্য, কেননা হতে পারে যে এক্ষেত্রে "হাজার" দ্বারা "অনেক" বা "প্রচুর " বোঝানো হচ্ছে।
প্রশ্ন - যদি তাই হয়, তাহলে অনেক আলেমদের কেন দেখা যায় যে উনারা হাজার বছরের ন্যায় হয়ার মতটিতে বিদ্যমান থাকা 'হাজার' কথাটিকে 'এক হাজার' ধরে নিয়েছেন এবং বলেছেন যে মহাবিশ্ব ৬০০০ বছরে সৃষ্টি হয়েছে?
উত্তর :
যাঁরা প্রত্যেক ইয়াওমকে "হাজার বছরের" ন্যায় বলেছেন, তাঁরা এক্ষেত্রে সুরা আল-হাজ্জ এর আয়াত নং 47 এর উপর ভিত্তি করে এমনটা বলেছেন, যেখানে বলা হয়েছে যে,
إنّ يوما عند ربك كألف سنة مما تعدون
অর্থ : নিশ্চয়ই তোমার রবের নিকট যা এক ইয়াওম , তা তোমাদের হিসেবে হাজার বছরের অনুরূপ।
এই আয়াতটিই হচ্ছে হাজার বছরের ন্যায় হয়ার মতটির উৎস, এই আয়াত থেকেই মুলত কিছু উলামারা বলেছেন যে ছয় ইয়াওমের প্রত্যেকটা ইয়াওম হাজার বছরের অনুরূপ।
এক্ষেত্রে এমনটা হয়া জরুরি নয় যে উক্ত আয়াতে كألف سنة (হাজার বছরের অনুরূপ) বলতে নির্দিষ্টভাবে এক হাজার বছরই বোঝানো হয়েছে।
বরং এক্ষেত্রে এমনো হয়া সম্ভব ও গ্রহণযোগ্য যে,"এখানে ব্যবহৃত 'হাজার' কথাটি 'এক হাজার' অর্থে ব্যবহৃত হয়নি বরং 'অনেক' বা 'বহু' অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, এবং كألف سنة দ্বারা আল্লাহর নিকট যা এক ইয়াওম সেটাকে হাজার বছরের সহিত উপমা দিয়ে একটি বিশাল তবে অনির্দিষ্ট দৈর্ঘের সময়কালকে বোঝানো হচ্ছে। "
এই সাম্ভাব্য ব্যাখ্যাটি কিছু আলেমদের কর্তৃক প্রদানকৃত [4],
যেমন,
বহুশাস্ত্রবিদ 'বুরহানুদ্দিন ইব্রাহিম বিন উমার ইবনুর রুবাত আল-বাক্বাঈ' তাঁর তাফসিরগ্রন্থ "নিযমুদ দুরার ফি তানাসিবিল আয়াতি ওয়াস-সুয়ার" এ বলেছেন যে,
{كألف سنة} ولما كان المقصود هنا التطويل، فعبر بالسنة تنبيها عليه_[5]
অর্থ : {كألف سنة} যেহেতু এখানে উদ্দেশ্য হলো التطويل (দীর্ঘায়িতকরণ), সেহেতু এখানে বছরের বর্ণনা দেয়া হয়েছে এব্যাপারে মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য।
অর্থাৎ উক্ত আয়াতটির كألف سنة অংশটি দ্বারা হয় এক হাজার বছরই বোঝানো হয়েছে, আর নাহয় বিশাল অনির্দিষ্ট দৈর্ঘের সময়কাল বোঝানো হয়েছে ; এক্ষেত্রে এদুটি অর্থই গ্রহণযোগ্য, এই অংশটিকে উভয় অর্থ দ্বারাই ব্যাখ্যা করা যায়।
যেহেতু উক্ত আয়াতটিকে দুইভাবেই ব্যাখ্যা করা যায়, সেহেতু ছয় ইয়াওমের অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেকটা ইয়াওমের হাজার বছরের ন্যায় হয়ার মতটিকেও এদুইভাবেই ব্যাখ্যা করা যাবে, কারণ হাজার বছরের ন্যায় হয়ার মতটি একদম প্রত্যক্ষভাবে সরাসরিভাবে উক্ত আয়াতটি হতেই নির্গত হয়েছে।
অর্থাৎ হাজার বছরের ন্যায় হয়ার মতটির ব্যাখ্যায় এটা বলা গ্রহণযোগ্য যে প্রত্যেক ইয়াওম হচ্ছে এক হাজার বছরের ন্যায়, তদ্রুপভাবে এটাও বলা গ্রহণযোগ্য যে প্রত্যেক ইয়াওম হচ্ছে বিশাল অনির্দিষ্ট দৈর্ঘের সময়কাল।
অপরদিকে, আলেমদের একটি দল এক্ষেত্রে বলেছেন যে ছয় ইয়াওম দ্বারা ছয়টা "সময়কাল" বা "পর্যায়" উদ্দেশ্য করা হয়েছে অথবা করা হয়ে থাকতে পারে, তারা আবার এক্ষেত্রে কোনো "হাজার বছর" এর প্রসঙ্গ আনেন নি[6]। এই মতটা ডক্টর জাকির নায়েক কর্তৃক প্রদানকৃত ছয় ইয়াওম সম্পর্কিত বিখ্যাত তত্ত্বটির অনুরূপ।
উদাহরণস্বরূপ,
মুফাসসির বহুশাস্ত্রবিদ 'মুহাম্মদ সিদ্দিক হাসান খান আল-কিন্নুজী আল-হুসাইনী' তাঁর তাফসিরগ্রন্থ "ফাতহুল বায়ান" এ লিখেছেন যে,
والمراد بالأيام هنا الأوقات، أي في ستة أوقات…[7]
অর্থ : এবং এখানে ইয়াওমসমুহ বলতে সময়কালসমুহ উদ্দেশ্য, অর্থাৎ ছয়টি সময়কালে।
মুফাসসির বহুশাস্ত্রবিদ 'নাসিরুদ্দিন আবুল-খায়র আব্দুল্লাহ আল-বাইদ্বাওই' তাঁর তাফসিরগ্রন্থ "আনওয়ারুত তানযিল" এ বলেছেন যে,
إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّماواتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ أي في ستة أوقات كقوله: وَمَنْ يُوَلِّهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَهُ أو في مقدار ستة أيام_[8]
অর্থ : "নিশ্চয়ই তোমাদের রব আল্লাহ যিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ছয় ইয়াওমে" অর্থাৎ ছয়টি সময়কালে অথবা ছয় দিনের সমপরিমাণ সময়ে।
নাসিরুদ্দিন আল-বাইদ্বাওই এর উক্ত বক্তব্যটির সমার্থক কথা লিখেছেন,
আলিম ফকিহ মুফাসসির 'আবুস-সউদ মুহাম্মদ ইবনু মুস্তফা আল-আমাদী' তাঁর তাফসিরগ্রন্থ "ইরশাদুল আকলিস সালিম" এ _[9]
বহুশাস্ত্রবিদ মুহাদ্দিস 'শিহাবুদ্দিন আবুল-আব্বাস আহমদ আল-কাস্তাল্লানী' তাঁর "ইরশাদুস সারী লিশারহে সহিহিল বুখারী" গ্রন্থে _[10]
বহুশাস্ত্রবিদ 'শিহাবুদ্দিন আবুছ-ছানা মাহমুদ আল-আলওয়াসী',যেমনটা 'জামালুদ্দিন আল-কাসিমী' তাঁর "মুহাসিনুত তাওইল" গ্রন্থে আল-আলওয়াসী হতে নক্বল করেছেন [11]।
উল্লেখ্য যে, সুরা আস-সিজদাহর আয়াত নং 5 এবং সুরা আল-মায়ারিজ এর আয়াত নং 4-5 এ মোটেও মহাবিশ্ব সৃষ্টির ছয় ইয়াওমের সহিত সম্পর্কিত কোনোকিছু বলা হয়নি, এই আয়াতগুলোতে যা বলা হয়েছে তা মহাবিশ্ব সৃষ্টির ছয় ইয়াওমের সহিত সম্পুর্ণ অসম্পর্কিত ও অপ্রাসঙ্গিক। ছয় ইয়াওমের সহিত প্রাসঙ্গিক ও সম্পৃক্ত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে সুরা আল-হাজ্জের 47 নং আয়াতটি। _[12]
এতক্ষণ বলা এতো সব কথার উপসংহার হচ্ছে এই যে,
কোরআনে বর্ণিত ছয় ইয়াওমের ব্যাপারটাকে মোট তিনভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, যথা :
(১) ইয়াওম বলতে আমাদের পরিচিত দিনের সমপরিমাণ দৈর্ঘের দিনই উদ্দেশ্যে।
(২) ইয়াওম বলতে ১০০০ হাজার বছর উদ্দেশ্য।
(৩) ইয়াওম বলতে অনির্দিষ্ট অজানা দৈর্ঘের সময়কাল উদ্দেশ্য।
এই তিনটি ব্যাখ্যার সবগুলোওই গ্রহণযোগ্য, সবগুলোর পক্ষেই বিভিন্ন যুক্তি ও ভিত্তি আছে, সবগুলোওই মুলধারার আলেমদের পক্ষ হতে প্রদান করা হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে ছয় ইয়াওম দ্বারা কি বোঝানো হচ্ছে তা একটা অনিশ্চিত মতভেদপুর্ণ তিন ধরনের সম্ভাবনাবিশিষ্ট ব্যাপার। এক্ষেত্রে উক্ত তিনটি ব্যাখ্যার মধ্য হতে কোনটি সঠিক তা নিশ্চয়তার সহিত জানা ও বলা সম্ভব না,কারণ উক্ত তিনটি ব্যাখ্যার সবগুলোরই সঠিক হয়ার সম্ভাবনা আছে, আবার পরস্পরের বিরোধী হয়ার দরুন উক্ত তিনটি সাম্ভাব্য ব্যাখ্যা একইসাথে সঠিক হিসেবে বিবেচিত হতে পারছেনা।
অর্থাৎ, উক্ত তিনটি ব্যাখ্যার মধ্য হতে কোনো একটা ব্যাখ্যাই প্রকৃতপক্ষে সঠিক কিন্ত সবগুলোওই সঠিক হয়ার সম্ভাবনাবিশিষ্ট হয়ার দরুন কোনটা আসলেই সঠিক তা নিশ্চয়তার সহিত বলা যায়না।
সুতরাং, ছয় ইয়াওমের ক্ষেত্রে ইয়াওম দ্বারা হয় আমাদের দিনের মতই দিন বোঝানো হয়েছে, আর নাহয় এক হাজার বছর বোঝানো হয়েছে, আর নাহয় অনির্দিষ্ট দৈর্ঘের সময়কাল বোঝানো হয়েছে।
টিকাসমুহ :
[1]ইবনু কাসির, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (1/27)
[2]আশ-শাওকানী, ইরশাদুল ফুহুল (1/234)
[3]তাফসিরু ইবনে আশুর (21/214)
[4]আবু-হাইয়ান, আল-বাহরুল মুহিত (7/523)
[5]আল-বাক্বাঈ, নিযমুদ দুরার (13/67)
[6]তাফসিরু ইবনে আশুর (খন্ড 8 এর ২য় অংশ /পৃষ্ঠা 162)
[7]সিদ্দিক হাসান খান, ফাতহুল বায়ান (6/144)
[8]আল-বাইদ্বাওই, আনওয়ারুত তানযিল (3/15)
[9]আবুস-সউদ, ইরশাদুল আকলিস সালিম (3/232)
[10]আল-কাস্তাল্লানী, ইরশাদুস সারী (10/473)
[11]আল-কাসিমী, মুহাসিনুত তা'ওইল (5/67)
[12]ইমাম আহমদ, আর-রদ্দু আলাজ জাহমিয়াহ (পৃ/69-71)