Are you sure?

কুরআন »  বিজ্ঞান হাদিস »  তাহকীক

সূর্যের উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যাওয়ার হাদিসটি শায হওয়া সম্পর্কে আলোচনা।

বিষয় : সূর্যের উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যাওয়ার হাদিসটি শায হওয়া সম্পর্কে আলোচনা।
লেখক : সামিউল হাসান তবিব আল-ইনফিরাদী।  

0.সূচিপত্র :-  

  1. ভূমিকা।
    2. শায (شاذ) এর সংজ্ঞা। 
    3. বিরোধিতা (مخالفة) এর সংজ্ঞা। 
    4. যিয়াদাতুছছিক্বাহ (زيادة الثقة) এর সংজ্ঞা। 
    5. যিয়াদাতুছছিক্বাহ এর হুকুম সংক্রান্ত মতভেদ। 
    6. শায ও যিয়াদাতুছছিক্বাহ এর মাঝে বিভ্রান্তি। 
    7. শায ও যিয়াদাতুছছিক্বাহ এর মাঝে পার্থক্য। 
    8. সনদ সহিহ হওয়া মতন ভুলমুক্ত হওয়াকে আবশ্যক করেনা। 
    9. সূর্যের উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যাওয়ার হাদিসটিকে উল্লেখকরণ। 
    10. উক্ত হাদিসটির সনদের মান। 
    11. উক্ত হাদিসটির মতন প্রসঙ্গে। 
    12. হাদিসটির মতনটির মর্ম সম্পর্কে একটি স্পষ্টীকরণ।
    13. "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশটি শায।
    14.  তর্কের খাতিরে ধরে নিচ্ছি যে, উক্ত অংশটি শায না।
    15.  উপসংহার।  
    16.  টীকাসমূহ।

1. ভূমিকা :-  

এই লেখাটিতে, সূর্যের জলাশয়ে অস্ত যাওয়ার হাদিসটির শায হওয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।  

2. শায (شاذ) এর সংজ্ঞা :-  

একজন বর্ণনাকারী কর্তৃক তাঁর চেয়ে অধিক নির্ভরযোগ্য অন্য বর্ণনাকারীর বর্ণনার বিরোধিতা (مخالفة) করে বর্ণিত বর্ণনাকে শায (شاذ) বলা হয়। [1]  

3. বিরোধিতা (مخالفة) এর সংজ্ঞা :-  

মুহাদ্দিসদের ভাষায় বিরোধিতা (مخالفة) এর মানে হচ্ছে : ভিন্নরূপ হওয়া বা পরিবর্তিত হওয়া [2]  

4. যিয়াদাতুছছিক্বাহ (زيادة الثقة) এর সংজ্ঞা :-  

নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের একটি দল একই সনদে এবং একই মতনে একটি হাদিস বর্ণনা করলেন, অতঃপর উক্ত বর্ণনাকারীদের মধ্য হতে একজন এমন একটা অতিরিক্ত অংশ বর্ণনা করলেন যা বাকি বর্ণনাকারীরা উল্লেখ করেন নি। এক্ষেত্রে, উক্ত অতিরিক্ত অংশটিকে যিয়াদাতু-
ছছিক্বাহ (زيادة الثقة) বলা হয়। [3]  

5. যিয়াদাতুছছিক্বাহ এর হুকুম সংক্রান্ত মতভেদ :-  

যিয়াদাতুছছিক্বাহ (زيادة الثقة) নির্ভরযোগ্য নাকি অনির্ভরযোগ্য? এই প্রসঙ্গে উলামাদের মাঝে অত্যন্ত জটিল ধরনবিশিষ্ট মতভেদ (اختلاف) বিদ্যমান।   

এ প্রসঙ্গে প্রচলিত প্রধান মতবাদসমূহ নিম্নরূপ, 

(১) অধিকাংশ উলামাদের মতে : যিয়াদাতুছছিক্বাহ সর্বদাই সকলক্ষেত্রেই নির্ভরযোগ্য। 

(২) একদল উলামাদের মতে : যিয়াদাতুছছিক্বাহ সর্বদাই সকলক্ষেত্রেই অনির্ভরযোগ্য। 

(৩) একদল উলামাদের মতে : যিয়াদাতুছছিক্বাহ কিছু শর্তসাপেক্ষে নির্ভরযোগ্য।  

(৪) একদল উলামাদের মতে : যিয়াদাতুছছিক্বাহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনির্ভরযোগ্য। কখন নির্ভরযোগ্য এবং কখন অনির্ভরযোগ্য তা নির্ণয় করার জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট শর্ত নেই, বরং তা বিভিন্ন ইঙ্গিত (قرينة) এর সাহায্যে নির্ণয় করা হবে।  

(৫) একদল উলামাদের মতে : যিয়াদাতুছছিক্বাহ এর নির্ভরযোগ্যতার ক্ষেত্রে অউদো কোনো অনুসরণযোগ্য সুনির্দিষ্ট নিয়মের অস্তিত্বই নেই।

6. শায ও যিয়াদাতুছছিক্বাহ এর মাঝে বিভ্রান্তি :-  

শায এবং যিয়াদাতুছছিক্বাহ এর মাঝে পার্থক্যকরণ অত্যন্ত কঠিন, কারণ বিভিন্ন বর্ণনায় প্রকাশিত হওয়ার ক্ষেত্রে শায এবং যিয়াদাতুছছিক্বাহ একে অপরের সহিত খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ হয়। কোনটা কখন শায? এবং কোনটা কখন যিয়াদাতুছছিক্বাহ? তা নিয়ে প্রায়সময়ই বিভ্রান্তি, অস্পষ্টতা ও জটিলতা দেখা দেয়।_[4]  

7. শায ও যিয়াদাতুছছিক্বাহ এর মাঝে পার্থক্য :-  

শায (شاذ) এর ক্ষেত্রে বিরোধিতা (مخالفة) বিদ্যমান এবং যিয়াদাতুছছিক্বাহ (زيادة الثقة) এর ক্ষেত্রে বিরোধিতা (مخالفة) অবিদ্যমান। _[5]   

8. সনদ সহিহ হওয়া মতন ভুলমুক্ত হওয়াকে আবশ্যক করেনা :-  

কোনো বর্ণনার সনদ সহিহ বা হাসান হওয়ার দ্বারা উক্ত বর্ণনাটির মতন সহিহ বা হাসান হওয়া আবশ্যক হয়ে যায়না, বরং একটি বর্ণনার সনদ সহিহ বা হাসান হওয়া সত্ত্বেও মতন ক্রুটিবিশিষ্ট এবং ভুলযুক্ত হতে পারে। _[6]  

9. সূর্যের উষ্ণ জলাশয়ে অস্ত যাওয়ার হাদিসটিকে উল্লেখকরণ :-  

روي عن سفيان بن حسين عن الحكم بن عتيبة عن إبراهيم بن يزيد بن شريك التيمي عن أبيه عن أبي ذر عن النبي ﷺ أنه قال : …فإنها تغرب في عين حمئة أو حامية…  

অর্থ : সুফিয়ান বিন হুসাইন হতে বর্ণিত হয়েছে যে আল-হাকাম বিন উতাইবাহ হতে বর্ণিত যে ইব্রাহিম আত্তাইমী হতে বর্ণিত যে ইয়াযিদ বিন শারীক হতে বর্ণিত যে আবু-যার (রা) হতে বর্ণিত যে নবী (সা) হতে বর্ণিত যে তিনি (সা) বলেছেন যে : …তা (সূর্য) উষ্ণ বা কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়।… 

_[7]  

10. উক্ত হাদিসটির সনদের মান :-  

উপর্যুক্ত হাদিসটির সনদ সহিহ। এবং আমি এই বিষয়টির বিরোধিতা করতে যাচ্ছি না।  

11. উক্ত হাদিসটির মতন প্রসঙ্গে :-  

উপর্যুক্ত হাদিসটির অসংক্ষেপিত বিস্তারিত সম্পূর্ণ বর্ণনাগুলো দ্বারা এটা সুস্পষ্ট হয় যে উপর্যুক্ত হাদিসটি হচ্ছে সূর্যের আরশের নিচে সেজদাহ করার হাদিসটির একটি রূপ।   

মোট ৫ জন রাবী ইব্রাহিম আত্তাইমী হতে সূর্যের আরশের নিচে সেজদাহ করার হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, এবং তাঁরা হলেন :   

(১) সুলাইমান আল-আ'মাশ 
(২) ইউনুস বিন উবাইদ 
(৩) মুসা ইবনুল মুসাইইব 
(৪) হারুন বিন সা'দ 
(৫) আল-হাকাম বিন উতাইবাহ   

আল-আ'মাশ, ইউনুস, মুসা এবং হারুন হতে বর্ণিত বর্ণনাগুলোতে "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশটি অবিদ্যমান। অপরদিকে, শুধুমাত্র আল-হাকাম হতে বর্ণিত বর্ণনাটিতে "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশটি বিদ্যমান।  

উল্লেখ্য যে, 

আল-হাকাম বিন উতাইবাহ হতে বর্ণিত বর্ণনাটিকে শুধুমাত্র সুফিয়ান বিন হুসাইন বর্ণনা করেছেন। সুফিয়ান ব্যতীত অন্য আর কেওই, আল-হাকাম হতে বর্ণিত বর্ণনাটিকে আল-হাকাম হতে বর্ণনা করেন নি।  

_[8] 

12. হাদিসটির মতনটির মর্ম সম্পর্কে একটি স্পষ্টীকরণ :-  

সূরা আল-কাহফ (18) এর আয়াত নং 86 তে এটা সুস্পষ্ট যে, আয়াতটিতে জুলকারনাইন তাঁর চোখ দ্বারা যা দেখতে পেয়েছিলেন নিছকই তা বর্ণনা করা হয়েছে, উক্ত আয়াতটিতে সূর্যের জলাশয়ে অস্ত যাওয়ার বিষয়টিকে একটি বাস্তব সত্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি।   

সুতরাং উক্ত আয়াতটির উপর ভিত্তি করে এটা দাবি করা সঠিক হবে না যে, সূর্য প্রকৃতপক্ষেই উষ্ণ জলাশয়ে অস্ত যায়।    

অপরদিকে, আলোচনাধীন হাদিসটিতে,চোখ দ্বারা যা দেখা হয়েছিল বা দেখা যায় নিছকই তা বর্ণনা করা হয়নি, বরং বাস্তবে যা ঘটেছিল বা ঘটে তা বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ, আলোচনাধীন হাদিসটিতে বিদ্যমান "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" কথাটি একটি বাস্তব সত্য হিসেবে ব্যক্তকৃত হয়েছে।   

সুতরাং, আলোচনাধীন হাদিসটিতে বিদ্যমান "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশটি সহিহ হলে, এর মানে দাঁড়াবে এই যে, সূর্য প্রকৃতপক্ষেই উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়।  

13. "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশটি শায :-  

একভাবে চিন্তা করলে, আলোচনাধীন হাদিসটিতে বিদ্যমান "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" (فإنها تغرب في عين حمئة أو حامية) অংশটি "শায" (شاذ)। 

আরেকভাবে চিন্তা করলে, উক্ত অংশটি শায নয়, বরং নিছকই "যিয়াদাতুছছিক্বাহ" (زيادة الثقة)। 

অর্থাৎ, এক্ষেত্রে দুইটি সম্ভাবনা বিদ্যমান। যথা : 

(১) প্রথম সম্ভাবনা : উক্ত অংশটি শায।  

(২) দ্বিতীয় সম্ভাবনা : উক্ত অংশটি যিয়াদাতুছছিক্বাহ। 

এক্ষেত্রে, সঠিক হচ্ছে প্রথম সম্ভাবনাটি, অর্থাৎ উক্ত অংশটি প্রকৃতপক্ষে শায। 

এক্ষেত্রে প্রথম সম্ভাবনাটি অর্থাৎ শায হওয়ার সম্ভাবনাটি সঠিক হওয়ার কিছু কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হল। নিম্নোক্ত কারণগুলো একত্রে মিলে প্রথম সম্ভাবনাটিকে সঠিক এবং দ্বিতীয় সম্ভাবনাটিকে ভুল সাব্যস্ত করে।  

প্রথম কারণ :  

সুফিয়ান বিন হুসাইন সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনু আদিই বলেছেন যে, _[9]  

ومن الزُّهْريّ يروي عنه أشياء خالف فيها الناس من باب المتون ومن الأسانيد 

অর্থ : এবং তিনি (সুফিয়ান) আয-যুহরী হতে এমন বহু জিনিস বর্ণনা করেছেন যেসবের ক্ষেত্রে মানুষরা (তার) বিরোধিতা (مخالفة) করেছেন, সনদের দিক দিয়ে এবং মতনের দিক দিয়ে। 

অর্থাৎ, সুফিয়ান বিন হুসাইন, আয-যুহরী হতে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে, বিভিন্ন শায জিনিস বর্ণনা করতেন। 

সুতরাং, এক্ষেত্রে, সুফিয়ান কর্তৃক আল-হাকাম হতে বর্ণিত বর্ণনাটিতে বিদ্যমান "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশটি শায হওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি। 

দ্বিতীয় কারণ :  

সুফিয়ান বিন হুসাইন সম্পর্কে ইবনু হিব্বান আল-বুস্তী বলেছেন যে, _[10]  

يَرْوِي عَن الزُّهْرِيّ المقلوبات وَإِذا روى عَن غَيره أشبه حَدِيثه حَدِيث الْأَثْبَات  

অর্থ : তিনি (সুফিয়ান) আয-যুহরী হতে বহু বিকৃত (مقلوبة) জিনিস বর্ণনা করেন, এবং তিনি (সুফিয়ান) যখন আয-যুহরী ব্যতীত অন্য কারও নিকট হতে বর্ণনা করেন তখন তাঁর হাদিস নির্ভরযোগ্যদের হাদিসের সহিত সাদৃশ্যপূর্ণ হয়। 

ইবনু হিব্বান এর উপর্যুক্ত এই বক্তব্যটি হতে বুঝা যায় যে, আয-যুহরী হতে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে সুফিয়ান এর মধ্যে বিদ্যমান একটি সমস্যা ছিল এই যে, আয-যুহরী হতে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে সুফিয়ানের বর্ণনাগুলো আয-যুহরী হতে বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্যদের  বর্ণনাগুলোর সহিত সাদৃশ্যপূর্ণ হত না।   

সুফিয়ান কর্তৃক আল-হাকাম হতে বর্ণিত বর্ণনাটিতে "তা (সূর্য) উষ্ণ জলাশয়ে অস্ত যায় " অংশটি বিদ্যমান এবং আল-আ'মাশ, ইউনুস, মুসা এবং হারুন হতে বর্ণিত বর্ণনাগুলোতে উক্ত অংশটি অবিদ্যমান। 

অর্থাৎ, সুফিয়ান কর্তৃক আল-হাকাম হতে বর্ণিত আলোচনাধীন বর্ণনাটির ক্ষেত্রে, সুফিয়ান এর বর্ণনাটির সহিত অন্যান্য নির্ভরযোগ্যদের বর্ণনাগুলো বৈসাদৃশ্যপূর্ণ, এই দিক দিয়ে, যে, শুধুমাত্র সুফিয়ান এর বর্ণনাটিতে "তা (সূর্য) উষ্ণ জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশটি বিদ্যমান এবং বাকি নির্ভরযোগ্যদের বর্ণনায় উক্ত অংশটি অবিদ্যমান। 

সুতরাং, এক্ষেত্রে, সুফিয়ান কর্তৃক আল-হাকাম হতে বর্ণিত বর্ণনাটিতে বিদ্যমান "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশটি শায হওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি।

তৃতীয় কারণ :  

সুফিয়ান বিন হুসাইন এর নির্ভরযোগ্যতা প্রসঙ্গে মুহাদ্দিসদের মাঝে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং অধিকাংশ মুহাদ্দিসদের মত হচ্ছে এই যে : সুফিয়ান বিন হুসাইন একজন ছিক্বাহ রাবী কিন্ত সুনির্দিষ্টভাবে শুধুমাত্র আয-যুহরীর ক্ষেত্রে তিনি (সুফিয়ান) যইফুল হাদিস।   

এক্ষেত্রে, সুফিয়ান বিন হুসাইন আলোচনাধীন হাদিসটিকে আয-যুহরী হতে বর্ণনা করেন নি, বরং আল-হাকাম বিন উতাইবাহ হতে বর্ণনা করেছেন। সুতরাং সুনির্দিষ্টভাবে শুধুমাত্র আয-যুহরী এর ক্ষেত্রে সুফিয়ানের যইফুল হাদিস হওয়ার বিষয়টি এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।  

অপরদিকে, মুহাদ্দিসদের একটি (তুলনামূলকভাবে) ক্ষুদ্র অংশের মতে, সুফিয়ান বিন হুসাইন রাবী হিসেবে সকল ক্ষেত্রেই অনির্ভরযোগ্য।  

আবু-হাতিম আর-রাযী বলেছেন যে : _[11]  

سفيان بن حسين صالح الحديث يكتب حديثه، ولا يحتج به،  

অর্থ : সুফিয়ান বিন হুসাইন হাদিসের ক্ষেত্রে ভাল (সালিহুল হাদিস), এবং তার দ্বারা প্রমাণ উপস্থাপন (ইহতিজাজ) করা যাবেনা।  

ইবনুল-ক্বাত্তান আল-ফাসী বলেছেন যে : _[12]  

وَكلهمْ يَقُول فِيهِ: لَا يحْتَج بِهِ إِمَّا مُطلقًا، وَإِمَّا فِيمَا يروي عَن الزُّهْرِيّ  

অর্থ : তাঁদের (মুহাদ্দিসদের) সকলেই তাঁর (সুফিয়ান বিন হুসাইন) সম্পর্কে বলেছেন যে : তার দ্বারা প্রমাণ উপস্থাপন (ইহতিজাজ) করা যাবে না, হয় সকল ক্ষেত্রেই, আর নাহয় যেসব বর্ণনা আয-যুহরী হতে বর্ণনা করেছেন সেসব বর্ণনার ক্ষেত্রে।  

আল-ইমাম আহমাদ বিন হানবাল তাঁকে (সুফিয়ান বিন হুসাইন কে) যইফ সাব্যস্ত করেছেন এবং বলেছেন যে : সে (সুফিয়ান বিন হুসাইন) কিছুই না। _[13]  

আবুল-ফারাজ ইবনুল-যাওযী তাঁকে (সুফিয়ান বিন হুসাইন কে) যইফ হিসেবে গণ্য করেছেন। [14]  

উল্লেখ্য যে, শামসুদ্দিন আয-যাহাবী তাঁর "المغني في الضعفاء" গ্রন্থে এবং তাঁর "ديوان الضعفاء" গ্রন্থে সুফিয়ান বিন হুসাইন কে উল্লেখ করেছেন। [15]  

অপরদিকে, মুহাদ্দিসদের অন্য একটি (তুলনামূলকভাবে) ক্ষুদ্র অংশ সুফিয়ান বিন হুসাইন কে ছিক্বাহ সাব্যস্ত করেছেন এবং বলেছেন যে সুফিয়ান হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে ভুল করতেন। কিন্ত, উক্ত অংশটি সুফিয়ানের ভুল করার বিষয়টিকে সুনির্দিষ্টভাবে শুধুমাত্র আয-যুহরীর ক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য করেন নি।   

মুহাম্মাদ ইবনু সাদ বলেছেন যে : _[16]  

وكان ثقة يخطئ في حديثه كثيرا.  

অর্থ : তিনি (সুফিয়ান বিন হুসাইন) ছিক্বাহ ছিলেন এবং হাদিসের ক্ষেত্রে প্রচুর ভুল করতেন।  

ইয়াক্বুব বিন শাইবাহ বলেছেন যে : _[17]  

وسفيان بن حسين صدوق ثقة، وفي حديثه ضعف  

অর্থ : এবং সুফিয়ান বিন হুসাইন সুদুক্ব ছিক্বাহ, এবং তার হাদিসে দূর্বলতা বিদ্যমান।   

উসমান বিন আবি-শাইবাহ বলেছেন যে : _[18]  

كان ثقة إلا أنه كان مضطربا في الحديث قليلا  

অর্থ : তিনি (সুফিয়ান বিন হুসাইন) ছিক্বাহ ছিলেন, কিন্ত তিনি হাদিসের ক্ষেত্রে সামান্য অসুস্থ (মুযত্বরিব) ছিলেন।   

সাধারণ পরিস্থিতিতে, সুফিয়ান বিন হুসাইন এর সূত্রে বর্ণিত সনদসমূহের মান নির্ণয়করণ এর ক্ষেত্রে, সুফিয়ান বিন হুসাইন কে আয-যুহরীর ক্ষেত্রে যইফ এবং বাকি সকল ক্ষেত্রে ছিক্বাহ ধরে নেওয়া হয়, এবং সুফিয়ান বিন হুসাইন এর ব্যাপারে বর্ণিত হওয়া উপর্যুক্ত নেতিবাচক মন্তব্যগুলোকে বিবেচনার বাহিরে রাখা হয়।  

কিন্ত, এক্ষেত্রে পরিস্থিতি "সাধারণ" না।  

সুতরাং, এক্ষেত্রে সুফিয়ান বিন হুসাইন এর ব্যাপারে বর্ণিত হওয়া নেতিবাচক মন্তব্যগুলোকে বিবেচনার বাহিরে রাখা অনুচিত বরং বিবেচনায় আনা উচিত।  

অতএব,  

আলোচনাধীন হাদিসটির ক্ষেত্রে এমনটা হওয়া অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে সম্ভাব্য যে, হাদিসটিতে বিদ্যমান "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশটি সুফিয়ান বিন হুসাইন এর ভুলের ফলাফল এবং রাসূল (সা) এর বক্তব্য নয়।  

সুতরাং,এক্ষেত্রে, সুফিয়ান কর্তৃক আল-হাকাম হতে বর্ণিত বর্ণনাটিতে বিদ্যমান "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশটি শায হওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি। 

চতুর্থ কারণ :  

আলোচনাধীন হাদিসটির ক্ষেত্রে, আল-হাকাম বিন উতাইবাহ শ্রবণ স্পষ্টীকরণ (التصريح بالسماع) ব্যতীত "আন"(عن) শব্দে ইব্রাহিম আত্তাইমী হতে বর্ণনা করেছেন। [8]  

এবং, আল-হাকাম বিন উতাইবাহ একজন মুদাল্লিস ছিলেন। [19]  

তবে, আল-হাকাম বিন উতাইবাহ একজন দ্বিতীয় স্তরের মুদাল্লিস ছিলেন [19]। অর্থাৎ, সাধারণ পরিস্থিতিতে, আল-হাকাম বিন উতাইবাহ এর সূত্রে বর্ণিত সনদসমূহের মান নির্ণয়করণ এর ক্ষেত্রে, আল-হাকাম এর মুদাল্লিস হওয়ার বিষয়টি অধর্তব্য ও অবিবেচ্য।   

কিন্ত এক্ষেত্রে পরিস্থিতি "সাধারণ" না।  

সুতরাং এক্ষেত্রে আল-হাকাম এর মুদাল্লিস হওয়ার বিষয়টিকে বিবেচনায় আনা উচিত।  

অতএব,  

আলোচনাধীন হাদিসটির ক্ষেত্রে এমনটা হওয়া খুবই সম্ভব যে, হাদিসটিতে বিদ্যমান "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশটি আল-হাকাম বিন উতাইবাহ এর তাদলিসের ফলাফল এবং রাসূল (সা) এর বক্তব্য নয়।  

সুতরাং,এক্ষেত্রে, সুফিয়ান কর্তৃক আল-হাকাম হতে বর্ণিত বর্ণনাটিতে বিদ্যমান "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশটি শায হওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি। 

পঞ্চম কারণ :  

কোনো আলেমই সরাসরিভাবে এটা বলেন নি যে, আলোচনাধীন "তা উষ্ণ জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশটি শায বা ভুল।   

কিন্ত, কিছু আলেমরা বলেছেন যে, সূর্য কখনো কোনো জলাশয়ে অস্ত যায়না বরং তা সর্বদাই আকাশে থাকে। [20]  

উক্ত আলেমদের উক্ত কথাটি "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশটির সহিত সরাসরিভাবে সাংঘর্ষিক।   

সুতরাং , কিছু আলেমরা "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশটিকে নবী (সা) হতে অপ্রমাণিত এবং ভুল মনে করতেন।  

যদি বলা হয় যে : এমনও তো হতে পারে যে, উক্ত আলেমরা রাসূল (সা) হতে বর্ণিত "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশবিশিষ্ট বর্ণনাটি জানতেন না। 

তাহলে উত্তরস্বরূপ বলা হবে যে :  

ইবনু তাইমিয়াহ, ইবনু কাসির, ফাখরুদ্দিন আর-রাযী এবং আল-খাতিব আশ-শিরবিনী হচ্ছেন সূর্যের জলাশয়ে অস্ত যাওয়ার বিষয়টিকে অস্বীকারকারী উলামাদের অন্তর্ভুক্ত।_[20]  

সূর্যের জলাশয়ে অস্ত যাওয়ার হাদিসটি মুসনাদু আহমাদ, সুনানু আবিদাউদ এবং মুস্তাদরাকুল হাকিম নামক তিনটি হাদিসগ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। উক্ত হাদিসগ্রন্থত্রয় ইবনু তাইমিয়াহ এবং ইবনু কাসির এর যুগে অত্যন্ত সুপ্রসিদ্ধ ও অত্যন্ত প্রচলিত ছিল।  

অপরদিকে, ইবনু তাইমিয়াহ এবং ইবনু কাসির বড় মাপের হাফিযুল-হাদিস ছিলেন।  

সুতরাং, ইবনু তাইমিয়াহ এবং ইবনু কাসির এর ক্ষেত্রে এমনটা হওয়া প্রায় অসম্ভব যে, তাঁরা আলোচনাধীন "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশবিশিষ্ট হাদিসটি জানতেন না। 

ফাখরুদ্দিন আর-রাযী এবং আল-খাতিব আশ-শিরবিনী আলোচনাধীন "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশবিশিষ্ট হাদিসটিকে উল্লেখ করার পাশাপাশি সূর্যের জলাশয়ে অস্ত যাওয়ার বিষয়টিকে অস্বীকার করেছেন।_[20]  

সুতরাং, ফাখরুদ্দিন এবং আশ-শিরবিনী এর ক্ষেত্রে এমনটা হওয়া অসম্ভব যে, তাঁরা  "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশবিশিষ্ট হাদিসটি জানতেন না। 

সূর্যের জলাশয়ে অস্ত যাওয়ার বিষয়টিকে অস্বীকারকারী উলামাদের মধ্যে সম্ভবত এমন কিছু উলামারাও অন্তর্ভুক্ত আছেন, যারা কিনা রাসূল (সা) হতে বর্ণিত "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশবিশিষ্ট হাদিসটি জানতেন না। 

কিন্ত, উপর্যুক্ত চারজন উলামার উদাহরণ হতে এটা সুস্পষ্ট হয় যে, সূর্যের জলাশয়ে অস্ত যাওয়ার বিষয়টিকে অস্বীকারকারী উলামাদের মধ্যে এমন কিছু উলামারাও অন্তর্ভুক্ত আছেন, যারা কিনা রাসূল (সা) হতে বর্ণিত "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশবিশিষ্ট হাদিসটি জানতেন, এবং জানা সত্ত্বেও সূর্যের জলাশয়ে অস্ত যাওয়ার বিষয়টিকে অস্বীকার করেছেন। 

অতএব, এটা বলা সঠিক হবে যে, কিছু আলেমরা "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশটিকে নবী (সা) হতে অপ্রমাণিত এবং ভুল মনে করতেন।  

কিছু উলামা কর্তৃক "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশটিকে নবী (সা) হতে অপ্রমাণিত এবং ভুল মনে করার দ্বারা "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশটি শায হওয়ার বিষয়টি সমর্থিত হয়। 

ষষ্ঠ কারণ :  

প্রকৃতপক্ষে, সূর্য কখনো কোনো জলাশয়ে অস্ত যায়না।  

সুতরাং, "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশটি বাস্তবতাবিরোধী।  

ইসলাম অনুযায়ী, রাসূল (সা) এর কোনো বক্তব্য বাস্তবতাবিরোধী হওয়া অসম্ভব। 

সুতরাং,  "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশটি রাসূল (সা) এর বক্তব্য না। 

সুতরাং, "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশটি শায।  

অতীতে এবং বর্তমানে, মুসলিমদের একটি ক্ষুদ্র অংশ বিশ্বাস করত এবং করে যে, সূর্য প্রকৃতপক্ষেই উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়।   

বর্তমানে যেসব মুসলিমরা উক্ত ক্ষুদ্র অংশটির অন্তর্ভুক্ত, সেসব মুসলিমদের জন্য, নিম্নে প্রমাণ করে দেখানো হল যে, প্রকৃতপক্ষে, সূর্য কখনো কোনো জলাশয়ে অস্ত যায়না। 

পরিগ্রহ : "সূর্য প্রকৃতপক্ষেই উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়।"  

উপর্যুক্ত পরিগ্রহটি অনুযায়ী, সূর্য সমতল পৃথিবীর পশ্চিম দিকে বিদ্যমান একটি উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়। 

সুতরাং, অস্ত যাওয়ার পর সূর্য পৃথিবীর নিচে চলে যায়, অতঃপর তা পৃথিবীর নিচ দিয়ে ভ্রমণ করতে করতে পৃথিবীর পূর্ব দিকে পৌছায়, অতঃপর পূর্ব দিকে উদিত হয়, অতঃপর পশ্চিম দিকে বিদ্যমান একটি জলাশয়ে অস্ত যায়, এবং এভাবেই চলতে থাকে। 

সুতরাং, যখন পৃথিবীর কোনো একটি স্থানে সূর্যাস্ত হয়, তখন পৃথিবীর সকল স্থানেই সূর্যাস্ত হয়, যখন পৃথিবীর কোনো একটি স্থানে সূর্যোদয় হয়, তখন পৃথিবীর সকল স্থানেই সূর্যোদয় হয়, অর্থাৎ, পৃথিবীর সকল স্থানে একই সময়ে সুর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়। 

প্রকৃতপক্ষে, যখন পৃথিবীর কিছু স্থানে সূর্যাস্ত হয়, তখন পৃথিবীর কিছু স্থানে সূর্য আকাশে বিদ্যমান থাকে, কিছু স্থানে সূর্যোদয় হয় এবং কিছু স্থানে রাত বিদ্যমান থাকে, যখন পৃথিবীর কিছু স্থানে সূর্যোদয় হয়, তখন পৃথিবীর কিছু স্থানে রাত বিদ্যমান থাকে, কিছু স্থানে সূর্যাস্ত হয় এবং কিছু স্থানে সূর্য পূর্ব দিগন্ত হতে কিছুটা দূরে আকাশে বিদ্যমান থাকে। বর্তমানে এটি একটি সুপ্রতিষ্ঠিত বাস্তব সত্য, শতভাগ নিশ্চয়তার সহিত সত্য, এবং এর মিথ্যা হওয়া অসম্ভব। এটি যে সত্য, তা বর্তমানে বিভিন্নভাবে নিশ্চিত করা যায় এবং যাচাই করা যায়।_[21]  

দেখা যাচ্ছে যে, উপর্যুক্ত পরিগ্রহটি সত্য হলে পরিগ্রহটির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য যেসব বক্তব্যের সত্য হওয়া আবশ্যক হয় সেসব বক্তব্যের একটি এক্ষেত্রে ভুল, অসঠিক এবং  বাস্তবতাবিরোধী। 

সুতরাং, উপর্যুক্ত পরিগ্রহটি ভুল, অসঠিক এবং বাস্তবতাবিরোধী। 

সুতরাং, সূর্য প্রকৃতপক্ষেই উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়না। 

14. তর্কের খাতিরে ধরে নিচ্ছি যে, উক্ত অংশটি শায না :-  

তর্কের খাতিরে ধরে নিচ্ছি যে "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" অংশটি শায না।   

উক্ত অংশটি যদি শায না হয়ে থাকে, তাহলে উক্ত অংশটি যিয়াদাতুছছিক্বাহ হবে।   

এখন, যিয়াদাতুছছিক্বাহ নির্ভরযোগ্য নাকি অনির্ভরযোগ্য? এই প্রসঙ্গে উলামাদের মাঝে অত্যন্ত জটিল ধরনবিশিষ্ট মতভেদ (اختلاف) বিদ্যমান।   

অতএব, উক্ত অংশটি যদি শায না হয়ে থাকে, তাহলে যিয়াদাতুছছিক্বাহ হওয়ার কারণে উক্ত অংশটির নির্ভরযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ ও সন্দেহপূর্ণ হবে। 

15. উপসংহার :-  

সুফিয়ান বিন হুসাইন কর্তৃক আল-হাকাম বিন উতাইবাহ হতে বর্ণিত "তা (সূর্য) উষ্ণ/কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়" (فإنها تغرب في عين حمئة أو حامية) অংশটি শায (شاذ) এবং রাসূল (সা) এর বক্তব্য না। 

মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ উক্ত অংশটির শায হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। [8]  

16. টীকাসমূহ :-  

[1]  

قال تقي الدين أبو عمرو عثمان بن عبد الرحمن الشهرزوري المعروف بابن الصلاح في "معرفة أنواع علوم الحديث" (بتحقيق نور الدين عتر ،صفحة 79) : 

إذا انفرد الراوي بشيء نظر فيه: فإن كان ما انفرد به مخالفا لما رواه من هو أولى منه بالحفظ لذلك، وأضبط كان ما انفرد به شاذا مردودا، 

[2]  

قال يوسف بن جودة الداودي في "منهج الإمام الدارقطني في نقد الحديث في كتاب العلل"(دار المحدثين ،صفحة 258) :  

والمخالفة عند المحدثين هي التغير الذي يطرأ على الإسناد أو المتن من قبل رواة الحديث، ولها أنواع كثيرة حصرها المحققون من الأئمة، وكل نوع من المخالفة يطرأ على الإسناد أو المتن يختلف به الحكم على الحديث تبعاً لنوع المخالفة التي في الإسناد أو المتن 

قال أبو بكر كافي في "منهج الإمام البخاري"(دار ابن حزم بيروت ، صفحة 259) : 

هي أن يروي الرواة عن شيخهم حديثاً ما، فيقع بينهم تغاير في سياق إسناده أو متنه 

[3]  

قال زين الدين عبد الرحمن بن أحمد بن رجب الحنبلي في "شرح علل الترمذي"(مكتبة المنار ،2/635) : 

وأما مسألة زيادة الثقة التي نتكلم فيها ههنا فصورتها: إن يروي جماعة حديثا واحدا بإسناد واحد، ومتن واحد فيزيد بعض الرواة فيه زيادة، لم يذكرها بقية الرواة 

[4]  

قال نور الدين عتر في "منهج النقد في علوم الحديث"(دار الفكر ،صفحة 428 و 429) : 

والحكم في الشاذ أنه مردود لا يقبل، لأن راويه وإن كان ثقة، لكنه لما خالف من هو أقوى منه علمنا أنه لم يضبط هذا الحديث. فيكون مردودا .وهذا النوع دقيق جدا، لأنه يشتبه كثيرا بزيادة الثقة في السند أو المتن ويحتاج إلى نظر دقيق للفصل بينهما. 

[5]  

قال حسن أبو الأشبال الزهيري :  

والفرق بين الشذوذ وزيادة الثقة وجود المخالفة، والراوي في الحالتين ثقة، وهذا وجه الاتفاق بين الحديث الشاذ وزيادة الثقة. والفرق بينهما أن الشاذ فيه مخالفة، وزيادة الثقة ليس فيها مخالفة 

https://shamela.ws/book/37606/164 

قال عبد الكريم الخضير :   

الشاذ: هو ما يرويه الثقة مخالفًا فيه من هو أوثق منه، والزيادة ليست فيها مخالفة، فزيادة الثقة لا تتضمن مخالفة، فإن تضمَّنتْ مخالفة لمن هو أوثق حُكم عليها بالشذوذ، فالراوي ثقة في الشاذ وفي الزيادة، فإن تضمن مخالفة لمن هو أوثق منه فهذا الذي يَحكم عليه أهل العلم بالشذوذ، والزيادة هذه إذا لم تتضمن مخالفة فمقبولة عند جمهور أهل العلم، هذا ما يُفرَّق به عندهم 

https://shkhudheir.com/fatawa/73015156 

[6] https://www.islamweb.net/ar/fatwa/356587/ 

[7] 
انظر : سنن أبي داود (دار الرسالة العالمية ، 6/124) و مسند الإمام أحمد بن حنبل (مؤسسة الرسالة ، 35/363) و مستدرك الحاكم (دار الكتب العلمية ،2/267) و مسند البزار (مكتبة العلوم و الحكم ،9/407) و تفسير الطبري (دار التربية و التراث ، 12/257) و جزء فيه قراءات النبي لأبي عمر الدوري (مكتبة الدار ،صفحة 123) و معرفة أسامي أرداف النبي لأبي زكريا ابن منده (المدينة ،صفحة 41) و حديث السراج (الفاروق الحديثة،3/258) و تخريج أحاديث الكشاف لجمال الدين الزيلعي (دار ابن خزيمة ،2/310,311) و غيرهم.  

[8] https://islamqa.info/ar/176375 

[9] 
قال أبو أحمد عبد الله بن عدي الجرجاني في "الكامل في ضعفاء الرجال"(الكتب العلمية ،4/477) :  

وَلِسُفْيَانَ أَحَادِيثٌ، عنِ الزُّهْريّ وَغَيْرِهِ، وَهو فِي غَيْرِ الزُّهْريّ صالح الحديث كما قال ابن مَعِين ومن الزُّهْريّ يروي عنه أشياء خالف فيها الناس من باب المتون ومن الأسانيد  

[10] 
و قال ابن حبان في "كتاب المجروحين" (دار الوعي ، 1/358) :  

سُفْيَان بْن حُسَيْن بْن حسن السّلمِيّ من أهل وَاسِط كنيته أَبُو مُحَمَّد يَرْوِي عَن الزُّهْرِيّ وَأَبُو بشر روى عَنْهُ يَزِيد بْن هَارُون وَعباد بْن الْعَوام يَرْوِي عَن الزُّهْرِيّ المقلوبات وَإِذا روى عَن غَيره أشبه حَدِيثه حَدِيث الْأَثْبَات وَذَاكَ أَن صحيفَة الزُّهْرِيّ اخْتَلَط عَلَيْهِ فَكَانَ يَأْتِي بِهَا عَلَى التَّوَهُّم فالأنصاف فِي أمره تنكب مَا روى عَن الزُّهْرِيّ والاحتجاج بِمَا روى عَن غَيره  

[11]  
الجرح والتعديل لابن أبي حاتم ( مطبعة مجلس دائرة المعارف العثمانية، 4/ 227-228)   

[12] 
بيان الوهم و الإيهام لابن القطان الفاسي (دار طيبة ، 5/364)   

[13] 
انظر : تاريخ بغداد للخطيب البغدادي (دار الكتب العلمية ، 9/152) و بحر الدم لابن المبرد (دار الكتب العلمية ،صفحة 65) و العلل ومعرفة الرجال لأحمد رواية المروذي و غيره (مكتبة المعارف ، بتحقيق صبحي البدري ،صفحة 82)  و الكمال لعبد الغني (الهيئة العامة ،شركة غراس ،5/204) و غيرهم  

[14] 
الضعفاء و المتروكون لابن الجوزي (دار الكتب العلمية ، 2/3)   

[15] 
المغني في الضعفاء للذهبي (بتحقيق نور الدين عتر ،1/268) و ديوان الضعفاء للذهبي (مكتبة النهضة الحديثة .صفحة 164)  

[16] 
الطبقات الكبری لابن سعد (دار الكتب العلمية ،7/227)   

[17] 
تاريخ بغداد للخطيب البغدادي (دار الكتب العلمية ، 9/152)   

[18] 
 انظر : تاريخ بغداد للخطيب البغدادي (دار الكتب العلمية ، 9/151) و إكمال تهذيب الكمال لمغلطاي (الفاروق الحديثة ، 5/384) و تهذيب الكمال للمزي (مؤسسة الرسالة، 11/141) و تهذيب التهذيب لابن حجر (دار المعرفة ، 2/354) و تاريخ أسماء الثقات لابن شاهين (الدار السلفية،صفحة 106) وغيرهم  

[19] 
 انظر : ذكر المدلسين للنسائي (دار عالم الفوائد ،صفحة 123) و الثقات لابن حبان (دائرة المعارف العثمانية ،4/144)  و كتاب المدلسين لأبي زرعة العراقي (رفعت فزري و نافذ حسين ،صفحة 46) و طبقات المدلسين لابن حجر (مكتبة المنار ،صفحة 30)  و جامع التحصيل للعلائي (عالم الكتب ،صفحة 113) و أسماء المدلسين للسيوطي (دار الجيل ،صفحة 44) و معجم المدلسين لمحمد بن طلعت (دار أضواء السلف ،صفحة 163) و التبيين لأسماء المدلسين لبرهان الدين الحلبي (دار الكتب العلمية ، صفحة 23) وغيرهم .  

[20] 
انظر : مختصر الفتاوی المصرية لابن تيمية لبدر الدين البعلي (ركائز ،2/444) و تفسير ابن كثير (دار الكتب العلمية ، 5/172) و السراج المنير للخطيب الشربيني (مطبعة بولاق ، 2/402) و مفاتيح الغيب لفخر الدين الرازي (دار إحياء التراث العربي ، 21/496)  و غيرهم 

[21]  

قال عبد الرحمن بن ناصر بن عبد الله السعدي في "تيسير اللطيف المنان في خلاصة تفسير القران"(وزارة الشئون ،1/335) :  

ينافي المعلوم أن الشمس والقمر والكواكب لا تغرب عن الدنيا بالكلية، فيقال هذا من الجهل والعجمة بمكان سحيق عن الحقائق، وذلك أن الله لم يقل: وجدها تغرب عن جميع الأرض حتى يكون لهذا الجاهل اعتراض، بل أخبر عن غروبها وطلوعها عن ذلك الموضع وذلك القطر، كما يفهم الناس كلهم سابقا ولاحقا، ولا فرق بين الإخبارات والأحكام بوجه، ومن المعلوم أن لكل أهل قطر مطلعا ومغربا، فهذه الخطابات في الأحكام والإخبارات في غاية الإحكام التي لا يتطرق إليها اعتراضات المعترض، ومن اعترض على شيء من ذلك عرف الناس أن ذلك من آثار جهله وحمقه، وهذا واضح لا يحتاج إلى كل هذا، يفهمه الذكي والبليد، وهذا مقتضى كون القرآن عربيا، أنزله الله بما يعقله العباد