Are you sure?

বিজ্ঞান »  ইসলাম ও বিজ্ঞান

শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি কি বিজ্ঞানবিরোধী?  

বিষয় : শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি কি বিজ্ঞানবিরোধী?  
লেখক : সামিউল হাসান তবিব আল-ইনফিরাদী  

ইমাম মুসলিম তাঁর "সহিহ" গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,  

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِيَدِي فَقَال ‏خَلَقَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ التُّرْبَةَ يَوْمَ السَّبْتِ وَخَلَقَ فِيهَا الْجِبَالَ يَوْمَ الأَحَدِ وَخَلَقَ الشَّجَرَ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَخَلَقَ الْمَكْرُوهَ يَوْمَ الثُّلاَثَاءِ وَخَلَقَ النُّورَ يَوْمَ الأَرْبِعَاءِ وَبَثَّ فِيهَا الدَّوَابَّ يَوْمَ الْخَمِيسِ وَخَلَقَ آدَمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ بَعْدَ الْعَصْرِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فِي آخِرِ الْخَلْقِ وَفِي آخِرِ سَاعَةٍ مِنْ سَاعَاتِ الْجُمُعَةِ فِيمَا بَيْنَ الْعَصْرِ إِلَى اللَّيْل…[1]  

অর্থ : আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার হাত ধরে বললেন, আল্লাহ তা’আলা শনিবার দিন মাটি সৃষ্টি করেন এবং এতে পর্বত সৃষ্টি করেন রবিবার দিন। সোমবার দিন তিনি বৃক্ষরাজি সৃষ্টি করেন। মঙ্গলবার দিন তিনি বিপদাপদ সৃষ্টি করেন। তিনি নূর সৃষ্টি করেন বুধবার দিন। তিনি বৃহস্পতিবার দিন পৃথিবীতে পশু-পাখি ছড়িয়ে দেন এবং জুমুআর দিন আসরের পর জুমুআর দিনের শেষ মুহূর্তে অর্থাৎ আসর থেকে নিয়ে রাত পর্যন্ত সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে সর্বশেষ মাখলুক আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করেন।   

উপর্যুক্ত এই হাদিসটিকে حديث خلق التربة في يوم السبت (শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিস) বলা হয়। 

সহিহ মুসলিম গ্রন্থটির ক্ষেত্রে সাধারণ নিয়ম হচ্ছে এই যে, সহিহ মুসলিমের সকল হাদিস সহিহ হওয়ার ইজমার সহিত সহিহ। কিন্ত শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি হচ্ছে উক্ত সাধারণ নিয়মের বহির্ভূত একটি বিশেষ ব্যতিক্রম।  

শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি সহিহ নাকি ইল্লতবিশিষ্ট? তা একটি বিতর্কিত ও মতভেদপূর্ণ বিষয়।
একদল উলামাদের মতে হাদিসটি ইল্লতবিশিষ্ট, এবং এর বিপরীতে আরেকদল উলামাদের মতে হাদিসটি সহিহ ইল্লতমুক্ত। ৩০০ হিজরির আগে, ৩০০ হিজরির পরে, সাম্প্রতিক শতাব্দীগুলোতে এবং বর্তমানে, অর্থাৎ সর্বদাই সকল যুগেই, শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি সহিহ নাকি ইল্লতবিশিষ্ট তা নিয়ে উলামাদের মাঝে মতভেদ ছিল এবং আছে। এবং এই মতভেদ ভবিৎষতেও খুব সম্ভবত চলমান থাকবে।  

আমি মনে করি যে, হাদিসটি ইল্লতবিশিষ্ট হওয়ার মতটিই এক্ষেত্রে সঠিক এবং রাজিহ।শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি সম্পর্কে islamicauthors.com এ আমার আরেকটা লেখা আছে, সেই লেখাটাতে আমি হাদিসটি ইল্লতবিশিষ্ট হওয়ার মতটির পক্ষে অনেক কথা বলেছি এবং এটা প্রমাণ করে দেখানোর চেষ্টা করেছি যে হাদিসটি ইল্লতবিশিষ্ট হওয়ার মতটিই সঠিক এবং রাজিহ। _[2] 

যাই হোক, এবার মূল আলোচনায় আসা যাক। 

শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিকে বিজ্ঞানের সহিত সাংঘর্ষিক হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায় এবং বিজ্ঞানের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হিসেবেও ব্যাখ্যা করা যায়। এক্ষেত্রে এমনটা হওয়া আবশ্যক না, এবং এক্ষেত্রে এমনটা নিশ্চয়তার সহিত বলা যাবেনা, যে, শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি বিজ্ঞানের সহিত সাংঘর্ষিক। বরং, এক্ষেত্রে এমনটা হওয়া সম্ভব যে, শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি বিজ্ঞানের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ।  

শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটির মাতানে বিদ্যমান কিছু বিষয়ের জন্য এমনকিছু সম্ভাব্য ব্যাখ্যা নিম্নে উল্লেখ করা হল, যা গ্রহণ করলে হাদিসটি এবং বিজ্ঞান এর মাঝে কোনো বিরোধ এবং সাংঘর্ষিকতা থাকবেনা। 

এক. 

নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী এর মতে, শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিতে বর্ণিত সাতদিন কোরআনে বর্ণিত সৃষ্টির ছয়দিন হতে ভিন্ন এবং উক্ত হাদিসটিতে শুধুমাত্র পৃথিবী সংক্রান্ত কিছু বিষয় সম্পর্কে আলাদাভাবে পৃথকভাবে বিশেষভাবে এবং সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে।_[3]  

দুই.  

মাজদুদ্দিন আবুস-সাআদাত ইবনুল-আছীর এর মতে, শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিতে "نور"
(নূর) বলতে "خير" (কল্যাণ) উদ্দেশ্য এবং "مكروه" (মাকরুহ) বলতে "شرّ" (অকল্যাণ) উদ্দেশ্য। _[4]  

তিন. 

শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি সম্পর্কে মুহাম্মাদ ছানাউল্লাহ আল-মাযহারী লিখেছেন যে, [5]  

لا دليل في الحديث على ان المراد بالجمعة التي خلق فيها آدم أول جمعة بعد خلق الأرض لعل ذلك الجمعة بعد مضى الدهور 

অর্থ : উক্ত হাদিসের মধ্যে এমন কোনো দলিল নেই যা প্রমাণ করে যে যেই জুময়াতে আদম (আ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে সেই জুময়াহ পৃথিবীকে সৃষ্টি করার ঠিক পরের প্রথম জুময়াহই, বরং হতে 
পারে যে সেই জুময়াহ বলতে উদ্দেশ্য বহু-যূগ গত হয়ে যাওয়ার পরে আগত কোনো জুময়াহ।  

আলমাযহারী এর উপর্যুক্ত এই বক্তব্যটি হাদিসটিতে বর্ণিত অন্যান্য দিনগুলোর ক্ষেত্রেও সত্য, হাদিসটিতে এমনও কোনো দলিল নেই যা প্রমাণ করে যে হাদিসটিতে বর্ণিত দিনগুলো একই সপ্তাহের অন্তর্ভুক্ত বা ধারাবাহিকভাবে একটার পর আরেকটা। 

সুতরাং, এক্ষেত্রে এমনটা হওয়া সম্ভব যে, হাদিসটিতে বর্ণিত দিনগুলো ধারাবাহিক না, ক্রমভিত্তিক না, একটার পর আরেকটা না, একই সপ্তাহের অন্তর্ভুক্ত না, বরং এদের প্রত্যেকেই সম্ভবত একেকটা ভিন্ন ভিন্ন সপ্তাহের অন্তর্ভুক্ত।


টীকাসমূহ :  

[1] 
صحيح مسلم (دار الطباعة العامرة ، 8/127) 

[2] 
https://islamicauthors.com/article/376 

[3] 
مختصر العلو للعلي العظيم للذهبي لناصر الدين الألباني (المكتب الإسلامي، صفحة 112) 

[4] 
النهاية في غريب الحديث والأثر لابن الأثير (المكتبة العلمية، 4/169) 

[5] 
التفسير المظهري لمحمد ثناء الله المظهري (مكتبة الرشدية ،1/49)