পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহﷻ তা'আলা বলেন,
Al-Ma'idah ৫:৩৮-৪০
(38) وَٱلسَّارِقُ وَٱلسَّارِقَةُ فَٱقْطَعُوٓا۟ أَيْدِيَهُمَا جَزَآءًۢ بِمَا كَسَبَا نَكَٰلًا مِّنَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
(39) فَمَن تَابَ مِنۢ بَعْدِ ظُلْمِهِۦ وَأَصْلَحَ فَإِنَّ ٱللَّهَ يَتُوبُ عَلَيْهِۗ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
(40) أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ ٱللَّهَ لَهُۥ مُلْكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ يُعَذِّبُ مَن يَشَآءُ وَيَغْفِرُ لِمَن يَشَآءُۗ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
(38) আর পুরুষ চোর ও নারী চোর তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও তাদের অর্জনের প্রতিদান ও আল্লাহর পক্ষ থেকে শিক্ষণীয় আযাবস্বরূপ এবং আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
(39) অতঃপর যে তার যুলমের পর তাওবা করবে এবং নিজকে সংশোধন করবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(40) তুমি কি জান না যে, নিশ্চয় আল্লাহ, তাঁর জন্যই আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব, তিনি যাকে ইচ্ছা আযাব দেন এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন, আর আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
এখানে (৫:৩৮ এ) আল্লাহﷻ বলেন,
কেউ চুরি করলে তার হাত কেটে দাও । এবং এটা (১) তাদের অর্জনের প্রতিদান ।
(২) আল্লাহﷻর পক্ষ থেকে আজাব ।
তারপরে , তাওবার সাধারণ মূলনীতি উল্লেখ করে (৫:৩৯ এ) আল্লাহﷻ বলেন যে, জুলুমকরার পর যে তাওবা করবে, নিজেকে সংশোধন করবে , আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন ।
কিন্তু এই আয়াতে আল্লাহ কোথাও ‘চোর যদি তাওবা করে তবে তোমরা তাকে ক্ষমা করো’এবং এমন কোন নির্দেশনা কুরআনের কোথাও দেন নি ।
এখানে অনেকেই বলে থাকেন যে, যেখানে আল্লাহﷻ ক্ষমা করছেন সেখানে আমরা কেনো ক্ষমা করবো না ?
এমন প্রশ্ন যারা করেন তাদের জবাবে বলা হবে,
প্রথমতঃ আমরা অন্তর্যামী নই, আমাদের কাছে ওহিও আসে না , আর আমরা গায়েবও জানি না , কাজেই আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না এই চোরের তাওবা আল্লাহ কবুল করেছেন কিনা, অথবা সে আন্তরিকভাবে তওবা করেছে কিনা ।
দ্বিতীয়তঃ তাওবা কবুলের একমাত্র অধিকার আল্লাহ ﷻর । একই ভাবে বিধান প্রণয়নের একমাত্র এখতিয়ার আল্লাহﷻর ।
আল্লাহﷻ যেখানে তাওবার কারনে বিচারককে ক্ষমা করার আদেশ অথবা এখতিয়ার দিয়েছেন কেবল সেখানেই বিচারক ক্ষমা করতে পারে ।
উদাহরণস্বরূপ, নিচের আয়াতে আল্লাহ ﷻ বলেন,
An-Nisa' ৪:১৬
وَٱلَّذَانِ يَأْتِيَٰنِهَا مِنكُمْ فَـَٔاذُوهُمَاۖ فَإِن تَابَا وَأَصْلَحَا فَأَعْرِضُوا۟ عَنْهُمَآۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ تَوَّابًا رَّحِيمًا
আর তোমাদের মধ্য থেকে যে দু’জন অপকর্ম ( সমকামিতা ) করবে, তাদেরকে তোমরা শাস্তি দাও। অতঃপর যদি তারা তাওবা করে এবং শুধরিয়ে নেয় তবে তোমরা তাদের (শাস্তি দেয়া)থেকে বিরত থাক। নিশ্চয় আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, দয়ালু ।
এখানে সমকামীরা তাওবা করলে আল্লাহﷻ বিচারককে, তাদের ক্ষমা করার আদেশ দিয়েছেন,
কিন্তু আলোচ্য (৫:৩৯) নং আয়াতে বিচারককে এমন কোন নির্দেশ আল্লাহﷻ দেন নি ।
একই ভাবে সূরা নুরের ৪ ও ৫ নং আয়াতে আল্লাহﷻ বিধান দিয়েছেন, যারা সৎচ্চরিত্র নারীদের বিরুদ্ধে অপবাদ দিবে কিন্তু উপযুক্ত সাক্ষী পেশ করতে পারবেনা তাদের কে ৮০টি বেত্রাঘাত করতে হবে , এবং তাদের সাক্ষী আজীবনের জন্য বাতিল হয়ে যাবে । তবে তারা তাওবা করে সংশোধিত হলে আল্লাহﷻ ক্ষমা করবেন , কিন্তু এখানে বিচারকের ক্ষমাকরার অনুমতি নেই ।
অনুরুপ ভাবে এর পরবর্তী ( ২৪:৬-১০) আয়াতগুলোতে বিধান রয়েছে,
শুধু মাত্র স্বামী/স্ত্রী কর্তৃক ব্যভিচারের অভিযোগে অভিযুক্ত স্বামী/স্ত্রী যদি লিয়ান করে তবে তাদের উপর বিচারকের হুদুদ প্রয়োগের এখতিয়ার নেই, কিন্তু তারা মিথ্যাচার করলে আল্লাহﷻ তাদের শাস্তি দিবেন ।
অথচ, আলোচ্য আয়াত(৫:৩৮,৩৯,৪০) এ আল্লাহﷻ বিচারককে কেবল শাস্তি দানের আদেশ করছেন কিন্তু তাওবা কবুলের এখতিয়ার নিজের ﷻ এর নিকট সংরক্ষিত রেখেছেন ।
হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবী রাঃ এবং সম্মানিত ইমাম গণের ফিক্হ থেকেও আমরা এই সিদ্ধান্তই পেয়েছি ,“ যে কেউ নিসাব পরিমাণ চুরি করলে এবং চুরি প্রমাণিত হলে তাওবার কারনে তার শাস্তি মাফ হবে না, এরপর সে আন্তরিক তাওবা করলে আল্লাহﷻ তার তাওবা কবুল করবেন ”
যেমন নিচের হাদীসে এসেছে,
কোন মাল রক্ষিত এবং কোন মাল অরক্ষিত :
হিলাল ইবন ‘আলা (রহঃ) ... সাফওয়ান ইবন উমাইয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি কা'বা শরীফ তওয়াফ করলেন ও সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি তার চাদর ভাঁজ করে মাথার নিচে রেখে শুয়ে পড়লেন। চোর এসে চাদর টান দিলে তিনি চোরকে ধরে ফেললেন এবং তাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে আসলেন এবং বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই ব্যক্তি আমার চাদর চুরি করেছে। তিনি চোরকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কি চাদর চুরি করেছ? সে বললোঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ একে নিয়ে যাও এবং তার হাত কেটে দাও। তখন সাফওয়ান বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার এই নিয়্যত ছিল না যে, মাত্র একটি চাদরের জন্য তার হাত কাটা যাবে। রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার নিকট বিচার আনার পূর্বে যদি তুমি ক্ষমা করতে, তবে হতো, এখন আর হবে না।
গ্রন্থঃ সূনান নাসাঈ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৪৭/ চোরের হাত কাটা (كتاب قطع السارق)
হাদিস নম্বরঃ ৪৮৮১
তাহক্বীকঃ সহীহ।
উল্লেখিত হাদীস সহ সকল প্রকার হাদীসের কোথাও আমরা দেখিনা যে রাসূলুল্লাহ ﷺ চুরির পর চোঁর তাওবা করবে কিনা জিজ্ঞেস করেছেন । এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে নিসাব পরিমাণ চুরি করলে তার শাস্তি হাত কেটে দেওয়া, এরপর যদি সে তওবা করে বা সংশোধিত হয় তাহলে আল্লাহﷻ তাকে ক্ষমা করে দিবেন ।
এবং আল্লাহ ভালো জানেন ।
বিনীত ,
আব্দুল্লাহ আল আসিফ
May, 20, 2023 .