Are you sure?

ইতিহাস »  সিরাত

মহানবী ﷺ এর একাধিক বিয়ে নিয়ে অভিযোগের জবাব !

Pearl S. Buck একজন বিখ্যাত মহিলা আমেরিকান উপন্যাসিক যিনি ১৯৩৮ সালে সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন। ঊনার উপন্যাস গুলি ১৯০০ সালের চীনের সামাজিক পটভূমির উপর লিখিত। The Good Earth,  East Wind:West Wind, A House divided এই গুলি উনার Best Selling উপন্যাস। Pearl S. Buck এর উপন্যাসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে ১৯০০ সালের দিকে চীনের অনেক ধনী ব্যবসায়ী, বড় বড় আমলা, রাজনীতিবীদরা নিজ স্ত্রী ছাড়াও ঘরে আরো অনেক রক্ষিতা রাখতো। এই রক্ষিতাদের গর্ভে চীনের এইসব ধনী ব্যবসায়ী, বড় বড় আমলা, রাজনীতিবীদদের সন্তানও হত। কিন্তু এই শিশু গুলি কখনই তাদের পিতার পরিচয় পেত না। অনেকটা ঘরের কাজের ছেলের মত তাদের জীবন কাটতো।

পশ্চিম বাংলার একজন জনপ্রিয় উপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় উনার “ প্রথম আলো ” উপন্যাসে ব্রিটিশ ভারতের সময়কাল ১৯০০ সালের দিকে ত্রিপুরার মহারাজ বীর চন্দ্র মাণিক্যের স্ত্রী ব্যতীত যে অনেক গুলি রক্ষিতা ছিল এই তথ্যও খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এই রক্ষিতাদের ঘরে বীর চন্দ্র মাণিক্যের অনেক গুলি সন্তানও ছিল যাদের কে বলা হয়ত মহারাজের পৌরষত্ত্বের প্রতীক। “প্রথম আলো” উপন্যাসে এই রক্ষিতাদের যখন বয়স ৪০ পেরিয়ে যেত তখন ত্রিপুরার মহারাজ বীর চন্দ্র মাণিক্য লাত্থি মেরে তার রাজপ্রাসাদ থেকে তাদের কে তাড়িয়ে দিত এই তথ্যও উল্লেখ আছে। এই কাহিনীগুলি কিন্তু আমরা শিক্ষিত সমাজের সবাই জানি যে ১৯০০ সালের দিকেও ভারত, চীন, বার্মায় ধনী ব্যক্তিরা স্ত্রী ছাড়াও অনেক রক্ষিতা রাখত যাদের কে ভদ্র ভাষায় উপ-পত্নী বলা হত। কিন্তু এই তথাকথিত উপ-পত্নীদের না ছিল কোন সামাজিক  স্বীকৃতি না ছিল কোন সামাজিক নিরাপত্তা। এমনকি এই রক্ষিতা বা তথাকথিত উপ-পত্নীদের সন্তানেরাও কোন পিতৃ পরিচয় ছাড়াই বড় হত। যদি ১৯০০ সালের দিকে যদি সমাজপতিরা বিয়ে বহির্ভূত উপায়ে কোন সামাজিক স্বীকৃতি ছাড়াই নারীদের কে এইভাবে ভোগ করে তাইলে একটু চিন্তা করে দেখুন ১৮০০, ১৭০০ সালের দিকে ঐসব দেশে নারীদের কি অবস্থা ছিল।

রাসুলুল্লাহ ﷺ এর বহুবিবাহ নিয়ে ইসলাম বিদ্বেষীরা অনেকেই অনেক কথা বলেন। সীরাত সম্পর্কে সঠিক ধারনা না থাকায়  অনেক মুসলিমও বিভ্রান্ত হচ্ছে তাদের এইসব কথায়। রাসুলুল্লাহ ﷺ  এর কোন স্থায়ি উপ-পত্নী বা সুরাইয়া ছিল না। সীরাত বিশেষজ্ঞরা সর্ব সাকুল্যে একমত যে রাসুলুল্লাহ ﷺ এর স্ত্রী ছিলেন মোট ১১ জন রা:  আর প্রথম জীবনে দাসী ছিলেন মোট ২ জন । রাসুলুল্লাহ ﷺ এর দাসিরা হলেন মিশর বাদশাহ থেকে উপহার হিসাবে প্রেরিত মারিয়া কিবতিয়া রা: এবং বানু কুরাইজা গোত্রের রাইয়ানা বিনতে শামাউন। কিন্তু হিজরি ৭ম ও ৮ম হিজরিতে  রাসুলুল্লাহ ﷺ  এই ২ জন দাসী মিশর বাদশাহ থেকে উপহার হিসাবে প্রেরিত মারিয়া কিবতিয়া রিঃ  এবং বানু কুরাইজা গোত্রের রাইয়ানা বিনতে শামাউন রা:  কেও বিয়ে করেছিলেন। তাইলে রাসুলুল্লাহ ﷺ এর স্ত্রীর সংখ্যা হয় মোট ১৩ জন এবং সেই হিসাবে রাসুলুল্লাহ ﷺ  এর কোন দাসী ছিল না। মারিয়া কিবতিয়া রা: এর গর্ভে রাসুলুল্লাহ ﷺ এর একজন পুত্র সন্তান হয়েছিল যার নাম ছিল ইব্রাহিম রা:। ইব্রাহিম রা: কে কিন্তু রাসুলুল্লাহ ﷺ এর ৩য় পুত্র হিসাবেই ধরা হয়। যদিও  ১ম জীবনে মারিয়া কিবতিয়া রা: ছিলেন একজন সুরাইয়া । 

যখনই কোন নাস্তিক আপনাকে বলবে যে রাসুলুল্লাহ ﷺ এর  অনেক গুলা দাসী ছিল তখনই আপনি সাথে সাথে ঐ নাস্তিক কে জিজ্ঞাস করবেন যে কারা কারা রাসুলুল্লাহ ﷺ ঐদাসী ছিল আপনি তাদের নাম গুলি আমাকে বলুন। তখন দেখবেন যে ঐ নাস্তিক একদম চুপ হয়ে গেছে। সূরা আত তাহরীমের ১ম থেকে ১২ নং আয়াতের তাফসিরে উম্মুল মুমেনীন মারিয়া কিবতিয়া রা:  নাম কোন তাফসীরকারক উল্লেখ না করলেও নাস্তিকরা প্রায়ই উম্মুল মুমেনীন মারিয়া কিবতিয়ার রা: প্রসঙ্গ টেনে নিয়ে এসে  রাসুলুল্লাহ ﷺ সম্পর্কে চরম অশ্লীল মন্তব্য করে।

উম্মুল মুমেনীন মারিয়া কিবতিয়া রা: সম্পর্কে  সকল প্রশ্নের জবাব এখানে দেয়া হয়েছে:

মারিয়া কিবতিয়া (রা.) কে নিয়ে কিছু কুরআনের আয়াতের পটভূমি ।‌ 

মারিয়া কিবতিয়া (রা.) কি সত্যিই নবি মুহাম্মাদ (ﷺ) এর দাসী ছিলেন? 

মারিয়া রা: , হাফসা রা: ও গোপনে দাসির সাথে সহবাস সংক্রান্ত মিথ্যাচারের জবাব !

রাসুলুল্লাহ ﷺ এর স্ত্রীরা হলেন উম্মুল মুমেনিন বা উম্মতের মাতা। রাসুলুল্লাহ ﷺ এর ইন্তেকালের পরেও খলিফা হযরত আবুবকর, উমর, ওসমান, আলী,  মুয়াবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহুর সময়েও উনারা ভাতা পেতেন এবং উনাদের মৃত্যুর পর খলিফা হযরত আবুবকর, উমর, ওসমান রাযিয়াল্লাহু আনহুর ইমামতিতেই উনাদের জানাজা হয়ছিল। অর্থ্যাৎ রাসুলুল্লাহ ﷺ এর কখনই কোন রক্ষিতা ছিল না ববরং তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সহধর্মিণী ।

রাসুলুল্লাহ ﷺ  একজন নবী ছিলেন। বুখারী মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে একজন নবীর গায়ে মোট ৪০ জন পুরুষের সমান শক্তি থাকে। অনেক নবীর আশ্চর্যজনক শারিরীক শক্তির কথা কোরআন হাদীসে পাওয়া যায়। যেমন দাউদ আলাইহিস সাল্লাম উনার সময়ের কাফের বাদশাহ জালুতকে জিহাদের ময়দানে মাত্র ৩ টা পাথরের টুকরার আঘাতে হত্যা করে ফেলেছিলেন। যদিও বাদশাহ জালুতের পুরা শরীর লোহার বর্ম দ্বারা ঢাকা ছিল। হযরত মুসা আলাইহিস সাল্লাম বনী ইসরাইল বংশের এক ব্যক্তিকে বাঁচাতে গিয়ে ফেরাউনের গোত্রের একব্যক্তিকে সামান্য একটা চড় মেরেছিলেন। আর মুসা আলাইহিস সাল্লামের সামান্য একটি চড়ের আঘাতেই ঐ ব্যক্তিটি মারা যায়। খন্দকের যুদ্ধে পরিখা খননের সময় যেই পাথর সকল সাহাবীরা সম্মিলিত ভাবেও ভাঙতে পারছিল না সেই পাথর রাসুলুল্লাহ ﷺ এর মাত্র ৩ টা হাতুড়ির আঘাতে চূর্ন বিচূর্ন হয়ে যায়। মক্কার রুকানা নামক একজন বড় কুস্তিগীর ছিল। যাকে হযরত ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে শুরু করে কেউ কুস্তিতে হারাতে পারেনি। রাসুলুল্লাহ ﷺ সেই রুকানা কুস্তীগীরকে পরপর ৩ বার কুস্তিতে হারিয়েছিলেন যা দেখে মক্কার সকল কাফেররাও অবাক হয়ে গিয়েছিল। তাই রাসুলুল্লাহ ﷺ এর শারিরীক শক্তি আমাদের থেকে অনেক অনেক বেশি ছিল এতে কোন সন্দেহ নাই । একজন পুরুষ যদি তার শারিরীক শক্তির তুলনায় একটি বিয়ে করেন তাহলে তো সেই হিসাবে রাসুলুল্লাহ ﷺ  এর আরো অনেক গুলি বিয়ে করার কথা (তর্কের খাতিরে বললাম) ।

এখন আমরা দেখবো রাসুলুল্লাহ ﷺ উনার জীবনের বিয়ে গুলি জীবনের কোন কোন পর্যায়ে করেছিলেন এবং ঠিক কি কারনে করেছিলেন ।

রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন ২৫ বছরের যুবক ছিলেন তখন উনি বিয়ে করেছিলেন খাদিযা রাযিয়াল্লাহু আনহা কে। রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সাথে বিয়ের সময়  খাদিযা রাযিয়াল্লাহু আনহার বয়স ছিল ৪০ বছর। খাদিযা রাযিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন একজন বিধবা নারী যার আগে ২ টা বিয়ে হয়েছিল। সেই ঘরে খাদিযা রাযিয়াল্লাহু আনহার ২ টি ছেলে ও একটি কন্যা সন্তানও ছিল। খাদিযা রাযিয়াল্লাহু আনহার সাথে রাসুলুল্লাহ ﷺ একটানা ২৫ বছর সংসার করেন। এই ২৫ বছর পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ ﷺ আর কোন নারী কে বিয়ে করেননি। খাদিযা রাযিয়াল্লাহু আনহার সাথে সংসার জীবনের বেশির ভাগ সময়টাই রাসুলুল্লাহ ﷺ ঘরের বাইরে কাটাতেন। বিভিন্ন জনকল্যাণ মূলক কাজ ও হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন।

খাদিযা রাযিয়াল্লাহু আনহার মৃত্যুর সময় রাসুলুল্লাহ ﷺ এর বয়স ছিল ৫০ বছর। রাসুলুল্লাহ ﷺ আমৃত্যু খাদিজা রা: ভালোবেসেছেন, তাঁর কথা স্মরণ করেছেন, যেমনটা হাদীসে এসেছে,

باب فَضَائِلِ خَدِيجَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ رضى الله تعالى عنها ‏‏ حَدَّثَنَا سَهْلُ بْنُ عُثْمَانَ، حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ غِيَاثٍ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ مَا غِرْتُ عَلَى نِسَاءِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِلاَّ عَلَى خَدِيجَةَ وَإِنِّي لَمْ أُدْرِكْهَا ‏.‏ قَالَتْ وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا ذَبَحَ الشَّاةَ فَيَقُولُ ‏"‏ أَرْسِلُوا بِهَا إِلَى أَصْدِقَاءِ خَدِيجَةَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَتْ فَأَغْضَبْتُهُ يَوْمًا فَقُلْتُ خَدِيجَةَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ إِنِّي قَدْ رُزِقْتُ حُبَّهَا ‏"‏ ‏.‏

উম্মুল মু'মিনীন খাদিজা (রা:) এর ফযীলত   ৬০৬০। সাহল ইবনু উসমান (রহঃ) ... আয়িশা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি খাদীজা ছাড়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের আর কাউকে ঈর্ষা করি নি, যদিও আমি তাঁকে পাই নি। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বকরী যবেহ করতেন তখন বলতেন, এর গোশত খাদীজার বান্ধবীদের পাঠিয়ে দাও। একদিন আমি তাঁকে রাগান্বিত করার জন্য বললাম, শুধু খাদিজা খাদিজা (খাদীজাকে এতই ভালবাসেন?) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেনঃ আল্লাহর পক্ষ থেকে  তাঁর ভালোবাসা আমার অন্তরে গেঁথে দেয়া হয়েছে।

গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪৬/ সাহাবী (রা:) গণের ফযীলত (كتاب فضائل الصحابة رضى الله تعالى عنهم), হাদিস নম্বরঃ ৬০৬০।

সেই সময়ে রাসুলুল্লাহ ﷺ এর ঘরে ৪ জন কন্যা সন্তান ছিল। এই কন্যা সন্তানদের দেখা শুনা করার জন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ বিধবা হযরত সাওদা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে বিয়ে করেন। হযরত সাওদার  রা:  বয়স ছিল তখন ৫০ বছর। হযরত সাওদা রাযিয়াল্লাহু আনহার স্বামী সাফওয়ান ইবনে উমায়ের রাযিয়াল্লাহু আনহু একটি পুত্র সন্তান রেখে মারা গিয়েছিলেন।

এরপর রাসুলুল্লাহ ﷺ আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা কে বিয়ে করেন। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার বিয়ের বয়স নিয়ে সীরাত বিশেষজ্ঞদের মাঝে বিতর্ক আছে। মুসনাদে আহমদে রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সাথে বিয়ের সময় আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক যুবতী হিসাবেই উল্লেখ করা হয়েছে। আপনি Google এ The Marriage Age of Ayesha লিখে Search দিলে রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সাথে আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার বিয়ের বয়স বিষয়ে সীরাত বিশেষজ্ঞদের মতামত পাবেন।  

অনেকেই বলেন আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে বিয়ে করার মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ ﷺ বাল্যবিবাহ করতে উম্মাত কে উৎসাহ দিয়েছেন। নাউযুবিল্লাহ। এক আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা ছাড়া রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সকল স্ত্রীই তো ছিল বিধবা বা । তাহলে কি রাসুলুল্লাহ ﷺ উম্মত কে খালি বিধবা/তালাকপ্রাপ্তা নারীদের কে বিয়ে করতে বলেছিলেন ?

কখনই নয় বরং কোন সাহাবী বিধবা নারীকে বিয়ে করলে রাসুলুল্লাহ ﷺ ঐ সাহাবীকে জিজ্ঞাস করতেন তুমি কুমারী নারীকে কেন বিয়ে করনি ? হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার বিয়ে নিয়ে নাস্তিকদের সকল অপপ্রচারের জবাব এখানে দেয়া হয়েছে।

ইসলাম বিরোধীদের অপপ্রচারের অন্যতম লক্ষ্য আয়েশা(رضي الله عنها)-এর সাথে রাসুল(ﷺ) এর বিয়ে!

এবং এখানে,

পুতুল খেলার হাদিসে কি আয়িশা (রা:) বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেছিলেন?

 

আয়েশা রা: এর পর রাসুলুল্লাহ ﷺ হযরত ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহুর বিধবা কন্যা হাফসা রা:  কে বিয়ে করেন। হযরত হাফসার রা:  স্বামী বদর যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন।

এরপরে রাসুলুল্লাহ ﷺ বিধবা যয়নব বিনতে খুযায়মাকে রা:  বিয়ে করেন। যয়নব বিনতে খুযায়মার স্বামী ওহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। বিয়ের সময় যয়নব বিনতে খুযায়মার বয়স ছিল ৩০ বছর। মাত্র ৩ মাস দাম্পত্য জীবন যাপন করার পর যয়নব বিনতে খুযায়মা ইন্তেকাল করেন।

এরপরে রাসুলুল্লাহ ﷺ উম্মে সালমা রা: কে বিয়ে করেন। উম্মে সালমার স্বামী ১ টি পুত্র সন্তান রেখে ওহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। বিয়ের সময় উম্মে সালমার বয়স ছিল ৩০ বছর।

এরপরে রাসুলুল্লাহ ﷺ ঊনার আপন ফুফাত বোন  তালাকপ্রাপ্তা যয়নব কে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় যয়নবের রা:   বয়স ছিল ৩৭ বছর।

(যয়নব রা এর বিষয়ে বিস্তারিত এই পোস্টে পাবেন, যায়নাব (রা:)কে নিয়ে সব রটনার প্রকৃত ঘটনা । )

বনু মোস্তালিক গোত্র মুসলমানদের কাছে হারার পর বনু মুস্তাল গোত্রের গোত্রপতি হারিসের কন্যা জুয়াইরিয়াকে  রা:  রাসুলুল্লাহ ﷺ বিয়ে করেন। জুয়াইরিয়ার  রা:   স্বামী মুনায়েফ ইবনে সাফোয়ান মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে জুয়াইরিয়াই নিজের ইচ্ছাই রাসুলুল্লাহ ﷺ তাকে বিয়ে করেন।

এরপরে রাসুলুল্লাহ ﷺ আবু সুফিয়ানের কন্যা উম্মে হাবিবাকে রা:  বিয়ে করেন। উম্মে হাবিবার  রা:   বামী উবাইদুল্লাহ ইবনে জাহাশ মুরতাদ হয়ে যাওয়ার কারনে স্বাভাবিক ভাবেই তার সাথে উম্মে হাবিবার ছারাছাড়ি হয়ে যায়। বিয়ের সময় উম্মে হাবিবার রা:  বয়স ছিল ৩৬ বছর।

এরপরে খয়বারের যুদ্ধে ইহুদীরা পরাজিত হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ ﷺ   ইহুদী নেতা হুয়াই বিন আখতারের কন্যা সাফিয়া রা:  কে বিয়ে করেন। রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সাথে বিয়ের আগে সাফিয়ার রা: আরো ২ বার বিয়ে হয়েছিল।

এরপরে রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সর্বশেষ বিয়ে হয়েছিল মায়মুনা রা: এর সাথে। মায়মুনাও রা: একজন তালাক প্রাপ্তা নারী ছিলেন। উনার আগের স্বামী ছিলেন আবু রহম ইবনে আব্দুল উজ্জা। বিয়ের সময় মায়মুনার রা: বয়স ছিল ৩২ বছর। আর রাসুলুল্লাহ ﷺ এর ২ জন সুরাঈয়া রায়হানা রা: ও মারিয়া কিবতিয়া রা: যখন রাসুলুল্লাহ ﷺ এর কাছে নীত হন তখন উনাদেরর বয়স ছিল যথাক্রমে ২৮ বছর ও ২৩ বছর।

আমরা এইখানে দেখতে পাই যে রাসুলুল্লাহ ﷺ এর স্ত্রীদের মধ্যে একমাত্র আয়েশা রা: ছাড়া আর সবাই ছিল বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা। অনেকের আবার পূর্বের স্বামীর ছেলে মেয়েও ছিল। রাসুলুল্লাহ ﷺ যদি জৈবিক চাহিদার জন্য বিয়ে করতেন নাউযুবিল্লাহ তাইলে অবশ্যই কুমারী নারীদের কে বিয়ে করঅনেক  আমাদের দেশেও অনেক ধনী ব্যক্তি উনার ৪০ বছর বয়সে গ্রাম থেকে একটা কুমারী মেয়ে ধরে নিয়ে এসে বিয়ে করে। কুমারী মেয়ে বিয়ে করা হচ্ছে একটা মানুষের Basic instinct.

আর কুমারী মেয়ে বিয়ে করা রাসুলুল্লাহ ﷺ এর জন্য কোন কঠিন কাজ ছিল না। আর রাসুলুল্লাহ ﷺ যদি জৈবিক চাহিদার জন্যই বিয়ে করতেন নাউযুবিল্লাহ তাইলে কেন উনি বিগত যৌবণা বিধবা তালাক প্রাপ্তা নারীদের কে বিয়ে করবেন ? 

 মক্কী জীবনে কাফেররা রাসুলুল্লাহ ﷺ কে অনেকবারই বলেছিলেন যে আপনি চাইলে আরবের সবচেয়ে সুন্দরী নারীদের কে আপনার সামনে নিয়ে এসে হাজির করি। তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছিলেন- “ আমার এক হাতে সূর্য্য আর এক হাতে চন্দ্র দিলেও আমি ইসলাম প্রচার থেকে পিছপা হব না। ” সুন্দর নারীদের প্রতি যদি রাসুলুল্লাহ ﷺ এর লোভই থাকত নাউযুবিল্লাহ তাইলে রাসুলুল্লাহ ﷺ ঐ সময়ই মক্কার কাফেরদের কথা মেনে নিয়ে সুন্দরী নারীদের কে হস্তগত করে ইসলাম প্রচার থেকে বিরত হয়ে যেতেন। ২৫ বছরের এক সুদর্শন যুবক যাকে কিনা মক্কার প্রতিটা নারীই কামনা করত সেই ২৫ বছরের সুদর্শন যুবকটি মক্কার সকল কুমারী নারীর পাণি প্রার্থনার আহবান অগ্রাহ্য করে বিগতা যৌবণা ৩ টি সন্তানের মা ৪০ বছর বয়স্কা এক মধ্যবয়সী নারীর পাণি গ্রহন করল। তারপর একটানা ২৫ বছর তারা সংসার করল এবং তাদের ছেলে মেয়েও হল। যেই সুদর্শন যুবকটি তার বিবাহিত জীবনের ২৫ টি বছর কাটিয়ে দিল পৌঢ়া এক রমনীর সাথে আজ নাস্তিকরা আসছে সেই যুবকের চরিত্রের ব্যবচ্ছেদ করতে ! আমাদের পুরুষ মানুষের বিয়ের ক্ষেত্রে অনেক ট্যাবূ কাজ করে যেমন ঐ মেয়ের আগে বিয়ে হয়েছে কিনা, ঐ মেয়ের কারো সাথে প্রেম ছিল কিনা প্রভৃতি। কিন্তু রাসূলাল্লাহ ﷺ এই সকল ট্যাবূ থেকে মুক্ত ছিলেন। তাই দেখা যায় এক আয়েশা রা: ছাড়া রাসূলাল্লাহ ﷺ 'র সকল স্ত্রীই ছিল বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা। বুখারী মুসলিম শরীফে অনেক হাদীসে বর্ণিত আছে একটানা ২ মাস উম্মুল মুমেনিনদের ঘরে চুলায় আগুন জ্বলত না। শুধু খেজুর আর পানি খেয়েই রাসুলুল্লাহ ﷺ আর উম্মুল মুমেনিনরা জীবন যাপন করতেন।

সেই যুগে আরবের একজন সাধারন ব্যক্তির গৃহেও ৪-৫ টা দাসী ছিল। রাস্তাঘাটে গরু ছাগলের মত দাস-দাসী কেনা বেচা হত। রাসুলুল্লাহ ﷺ কিন্তু চাইলেই পারতেন বিয়ে না করেও উনার ইচ্ছামত ৪-৫ টা দাসী ঘরে রাখতে। সেই যুগে আরবে এটা খুব সাধারন একটা ব্যাপার ছিল। কিন্তু রাসুলুল্লাহ ﷺ উনার পবিত্র বৈবাহিক জীবনের মাধ্যমে সমাজের দাসী প্রথাকে বিলুপ্ত করে উম্মত কে বৈবাহিক প্রথার দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। রাসুলুল্লাহ ﷺ এর নির্দেশে ও উৎসাহে অনেক সাহাবীও উনাদের অধীনস্থ দাসীদের কে মুক্ত করে দিয়ে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিলেন। অনেক বড় বড় তাবেইনদের মা রা কিন্তু উনাদের পূর্ব জীবনে দাসী ছিলেন। আর যৌণতা বা জৈবিক চাহিদা মানব জীবনের কোন অস্বীকার করার জিনিস নয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ ও আমাদের মত একজন রক্ত মাংসের মানুষ ছিলেন এবং নারও জৈবিক চাহিদা ছিল।  রাসূলুল্লাহ ﷺ ঊনার স্ত্রীদের পালাক্রমে সময় দিতেন। অর্থ্যাত্‍ যে স্ত্রীর সাথে উনি ১ম রাতে থাকতেন ২য় রাতে উনি অন্য স্ত্রীর সাথে থাকতেন। যদি রাসূলুল্লাহ ﷺ এক স্ত্রীর সাথেই সব সময় থাকতেন তাইলে ঐ স্ত্রীর উপর একটা বিরাট শারিরীক চাপ আসতো। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ পালাক্রমে প্রত্যেক স্ত্রীর সাথে থাকার কারনে কোন স্ত্রীর উপরই বাড়তি কোন শারিরীক চাপ আসে নি।

ইসলাম কোন ধর্ম না ইসলাম হল একটা জীবন ব্যবস্থা। হাদীস সংরক্ষন ও দ্বীনের ইলম শিক্ষার উদ্দেশ্যে ৭০ জন সাহাবী সার্বক্ষনিক ভাবে মসজিদে নব্বীতে রাসূলুল্লাহ ﷺ 'র সাথে থাকতেন। উনাদের কেই আসহাবে সুফফা বলা হত।  কিন্তু এই সকল সাহাবীর পক্ষে ইসলামের পর্দা প্রথার কারনে সম্পর্কহীনা নারীদের মাঝে দ্বীন ইসলাম প্রচার করা সম্ভব ছিল না। যেহেতু মাদানী জীবনে ইসলামের প্রচুর বিধিবিধান নাযিল হয়েছিল তাই নারী সমাজের নিকট দ্বীন  ইসলাম প্রচারের জন্যও অনুরুপ একদল মহিলা সাহাবীরও প্রয়োজন ছিল যাদেরকে সার্বক্ষনিক ভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ 'র সাহচর্যে থেকে দ্বীন ইসলাম শিখে নারী সমাজের নিকট প্রচার করার প্রয়োজনীয়তা ছিল।

মেয়েদের সম্পর্কিত অনেক মাসলা মাসায়েল গুলি রাসুলুল্লাহ ﷺ এর স্ত্রীগন যারা হলেন উম্মতের মাতা বা উম্মুল মুমেনিন তাদের মাধ্যমে নারী সমাজের কাছে এসেছে। খোদ আয়েশা রাযিয়াল্লহু আনহা ২২১০ টি  হাদীস বর্ণনা করেছেন যার  মধ্যে মুত্তাফিকুন আলাইহি হচ্ছে ১৭৪ টি । উম্মে সালমা রাযিয়াল্লাহু আনহা ৩৭৮ টি হাদীস বর্ননা করেছেন যার মধ্যে মুত্তাফিকুন আলাইহি হচ্ছে ১৩ টি । মেয়েদের এই মাসলা গুলি মেয়েদের মাধ্যমেই আসা সম্ভব ছিল। পুরুষ সাহাবীদের মাধ্যমে এই মেয়েলী মাসলা গুলি আসা কখনই সম্ভব ছিল না আর এটা শোভনও ছিল না। আর মেয়েদের এই মাসলা গুলি বেশির ভাগ মাদানী জীবনেই নাযিল হয়েছিল। তাই রাসুলুল্লাহ ﷺ এর বেশির ভাগ বিয়েই উনার মাদানী জীবনে সংঘটিত হয়েছিল।  এখন রাসূলুল্লাহ ﷺ যদি এই প্রয়োজন পূর্ণ করার লক্ষ্যে বৈবাহিক সম্পর্কহীনা ২/৪ জন স্ত্রীলোক কে উনার সাথে রাখতেন নাউযুবিল্লাহ তাইলে এর পথ ধরে মুসলিম সমাজের মাঝেও হিন্দুদের মন্দিরের মত সেবাদাসী প্রথা বা খ্রিষ্টানদের গীর্জার মত সন্নাসিনী বা Nun প্রথা চালু হয়ে যেত এবং যার পথ ধরে মুসলিম সমাজের ভিতর অনেক অনৈতিকতার পথ উন্মুক্ত হতে পারতো এবং ইসলামের ভিতর পর্দা প্রথা টি ধ্বংস হয়ে যেত।  আর তাই বৈবাহিক বন্ধন ছাড়া আর কোন উপায়ে যদি রাসুলুল্লাহ ﷺ মহিলাদের কে উনার সাথে রাখতেন তাইলে অদূর ভবিষ্যতে ইসলামের ভিতর মন্দিরের সেবাদাসী প্রথা বা গীর্জার সন্ন্যাসিনী বা Nun প্রথা চালু হয়ে যেত যা ইসলামের পর্দা প্রথার সাথে সাংঘর্ষিক। আর তাই একমাত্র বিয়ের মাধ্যমেই রাসুলুল্লাহ ﷺ উম্মতের কাছে এই মাসলা গুলি পৌছিয়ে দিয়েছেন।   রাসূলুল্লাহ ﷺ যদি বৈবাহিক সম্পর্কবিহীন একটি মেয়েদের জামাত কে সার্বক্ষনিক ভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ উনার সাথে রাখতেন নাউযুবিল্লাহ তাইলে রাসূলুল্লাহ ﷺ নাস্তিকদের কাছে খুবই চরিত্রবান ব্যক্তিতে পরিনত হয়ে যেতেন। তাই যারা রাসুলুল্লাহ ﷺ এর বহু বিবাহ নিয়ে অশ্লীল কথা বলে তারা আসলে চেয়েছিল ইসলামের ভিতরেও যেন মন্দিরের সেবাদাসী প্রথা বা গীর্জার সন্ন্যাসিনী বা Nun প্রথা চালু হোক। যেহেতু রাসুলুল্লাহ ﷺ এর পবিত্র বৈবাহিক জীবনের কারনে ইসলামের ভিতর কখনই কোন ভাবেই মন্দিরের সেবাদাসী প্রথা বা গীর্জার সন্ন্যাসিনী বা Nun প্রথা চালু হতে পারবেনা তাই ইসলাম বিদ্বেষীদের এখন যত রাগ রাসুলুল্লাহ ﷺ এর পবিত্র বৈবাহিক জীবনের উপর।

 

কৃতজ্ঞতা : গুগল স্কলার প্রজেক্ট।