Are you sure?

তুলনামূলক ধর্মতত্ব »  নাস্তিক্যধর্ম

ইসলাম নারীদের মুক্তিদাতা

যারা ইসলামের বিধি-বিধান ও ইসলামী আদর্শ সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করবে সে অবশ্যই দেখতে পাবে যে, মূলত ইসলামই নারীদের যুলুম-নির্যাতন থেকে রক্ষা করছে ও তাদের ফিতনা-ফ্যাসাদ থেকে মুক্তি দিয়েছে। একজন নারী ইসলামের অনুশাসনের আওতায় ও সুশীতল ছায়াতলে অত্যন্ত পবিত্র, উন্নত ও সন্তোষজনক জীবন যাপন করে। ইসলামী অনুশাসন মেনে যারা জীবন-যাপন করবে তাদের জীবন হবে সুন্দর, ক্রেশ মুক্ত ও পরিচ্ছন্ন। থাকবে না কোনাে অশান্তি, বিশৃঙ্খলা ও দূষণ। কোনাে যড়যন্ত্র তাদের স্পর্শ করতে পারবে না। ইসলামের পূর্বে জাহিলিয়াতের যুগের নারীদের অবস্থা কেমন ছিল, ইসলামের যুগের নারীদের অবস্থা সম্পর্কে পর্যালােচনা করলে দুয়ের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হবে।

ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ তার সহীহ গ্রন্থে ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ)-এর স্ত্রী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, قَالَ يَحْيٰى بْنُ سُلَيْمَانَ حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ عَنْ يُونُسَ ح و حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ صَالِحٍ حَدَّثَنَا عَنْبَسَةُ حَدَّثَنَا يُونُسُ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ قَالَ أَخْبَرَنِي عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ أَنَّ عَائِشَةَ زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَخْبَرَتْه“ أَنَّ النِّكَاحَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ كَانَ عَلٰى أَرْبَعَةِ أَنْحَاءٍ فَنِكَاحٌ مِنْهَا نِكَاحُ النَّاسِ الْيَوْمَ يَخْطُبُ الرَّجُلُ إِلَى الرَّجُلِ وَلِيَّتَه“ أَوْ ابْنَتَه“ فَيُصْدِقُهَا ثُمَّ يَنْكِحُهَا وَنِكَاحٌ آخَرُ كَانَ الرَّجُلُ يَقُوْلُ لِامْرَأَتِه„ إِذَا طَهُرَتْ مِنْ طَمْثِهَا أَرْسِلِي إِلٰى فُلاَنٍ فَاسْتَبْضِعِي مِنْه“ وَيَعْتَزِلُهَا زَوْجُهَا وَلاَ يَمَسُّهَا أَبَدًا حَتّٰى يَتَبَيَّنَ حَمْلُهَا مِنْ ذ‘لِكَ الرَّجُلِ الَّذِي تَسْتَبْضِعُ مِنْه“ فَإِذَا تَبَيَّنَ حَمْلُهَا أَصَابَهَا زَوْجُهَا إِذَا أَحَبَّ وَإِنَّمَا يَفْعَلُ ذ‘لِكَ رَغْبَةً فِي نَجَابَةِ الْوَلَدِ فَكَانَ هٰذَا النِّكَاحُ نِكَاحَ الِاسْتِبْضَاعِ وَنِكَاحٌ آخَرُ يَجْتَمِعُ الرَّهْطُ مَا دُونَ الْعَشَرَةِ فَيَدْخُلُونَ عَلَى الْمَرْأَةِ كُلُّهُمْ يُصِيبُهَا فَإِذَا حَمَلَتْ وَوَضَعَتْ وَمَرَّ عَلَيْهَا لَيَالٍ بَعْدَ أَنْ تَضَعَ حَمْلَهَا أَرْسَلَتْ إِلَيْهِمْ فَلَمْ يَسْتَطِعْ رَجُلٌ مِنْهُمْ أَنْ يَمْتَنِعَ حَتّٰى يَجْتَمِعُوا عِنْدَهَا تَقُولُ لَهُمْ قَدْ عَرَفْتُمْ الَّذِي كَانَ مِنْ أَمْرِكُمْ وَقَدْ وَلَدْتُ فَهُوَ ابْنُكَ يَا فُلاَنُ تُسَمِّي مَنْ أَحَبَّتْ بِاسْمِه„ فَيَلْحَقُ بِه„ وَلَدُهَا لاَ يَسْتَطِيعُ أَنْ يَمْتَنِعَ بِه„ الرَّجُلُ وَنِكَاحُ الرَّابِعِ يَجْتَمِعُ النَّاسُ الْكَثِيرُ فَيَدْخُلُونَ عَلَى الْمَرْأَةِ لاَ تَمْتَنِعُ مِمَّنْ جَاءَهَا وَهُنَّ الْبَغَايَا كُنَّ يَنْصِبْنَ عَلٰى أَبْوَابِهِنَّ رَايَاتٍ تَكُونُ عَلَمًا فَمَنْ أَرَادَهُنَّ دَخَلَ عَلَيْهِنَّ فَإِذَا حَمَلَتْ إِحْدَاهُنَّ وَوَضَعَتْ حَمْلَهَا جُمِعُوا لَهَا وَدَعَوْا لَهُمْ الْقَافَةَ ثُمَّ أَلْحَقُوا وَلَدَهَا بِالَّذِي يَرَوْنَ فَالْتَاطَ بِه„ وَدُعِيَ ابْنَه“ لاَ يَمْتَنِعُ مِنْ ذ‘لِكَ فَلَمَّا بُعِثَ مُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم بِالْحَقِّ هَدَمَ نِكَاحَ الْجَاهِلِيَّةِ كُلَّه“ إِلاَّ نِكَاحَ النَّاسِ الْيَوْمَ.

জাহেলিয়যাতের যুগে বিবাহ ছিল চার প্রকার:

এক- বর্তমানে মানুষ যেভাবে বিবাহ করে-কোনাে ব্যক্তি কারও অভিভাবক অথবা কোনাে মেয়ের নিকট বিবাহের প্রস্তাব করে। তারপর সে তাকে মােহরানা দিয়ে বিবাহ করে।

দুই- স্বামী তার স্ত্রীকে বলত, তুমি তােমার অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হলে অমুকের নিকট গিয়ে তার কাছ থেকে তুমি উপভােগ করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ কর। তারপর তার স্বামী তাকে সম্পূর্ণ আলাদা করে রাখত এবং যতদিন পর্যন্ত ঐ লােক যার সাথে সে যৌনাচারে লিপ্ত হয়েছিল তার থেকে গর্ভধারণ না করা পর্যন্ত সে তাকে স্পর্শ করত না। আর যখন সে গর্ভধারণ করত তখন চাইলে সে তার সাথে সংসার করত অথবা ইচ্ছা করলে সে নাও করতে পারত। আর তাদের এ ধরনের অনৈতিক কাজ করার উদ্দেশ্য হলাে যাতে তাদের গর্ভে যে সম্ভান আসবে তা যেন মােটা-তাজা ও সুঠাম দেহের অধিকারী হয়। এ বিবাহকে জাহেলী যুগে নিকাহে ইস্তেবযা বলে আখ্যায়িত করা হত।

তিন- দশ জনের চেয়ে কমসংখ্যক লােক একত্র হত, তারা সকলেই পালাক্রমে একজন মহিলার সাথে সঙ্গম করত। সে তাদের থেকে গর্ভধারণ করার পর যখন সন্তান প্রসব করত এবং কয়েক দিন অতিবাহিত হত তখন সে প্রতিটি লােকের নিকট তার কাছে উপস্থিত হওয়ার জন্য খবর পাঠাত। নিয়ম হলাে, সে যাদের নিকট সংবাদ পাঠাতাে তাদের কেউ তা অস্বীকার করতে পারতাে না। ফলে তারা সকলে তার সামনে একত্র হত। তখন সে তাদের বলত, তােমরা অবশ্যই তােমাদের বিষয়ে অবগত আছ। আমি এখন সন্তান প্রসব করছি, এর দায়িত্ব তােমাদের যে কোনাে একজনকে নিতে হবে। তার পর সে যাকে পছন্দ করত তার নাম ধরে তাকে বলত, এটি তােমার সন্তান। এভাবেই সে তার সন্তানকে তাদের একজনের সাথে সম্পৃক্ত করে দিত। তখন লােকটি তাকে কোনােভাবেই অস্বীকার করতে পারত না।

চার- অসংখ্য মানুষ কোনাে এক মহিলার সাথে যৌনকর্মে মিলিত হত। তার অভ্যাস ছিল যেই তার নিকট আসতাে সে কাউকে নিষেধ বা বাধা দিত না। এ ধরনের মহিলারা হলাে ব্যভিচারী মহিলা। তারা তাদের দরজায় নিদর্শন স্থাপন করত, যাতে মানুষ বুঝতে পারত যে এখানে যৌনাচারী মহিলা আছে, যে কেউ ইচ্ছা করে সে তার নিকট প্রবেশ করতে পারবে। তারপর যখন তারা গর্ভবতী হত এবং সন্তান প্রসব করত তখন তারা সবাই তার নিকট একত্র হত এবং একজন গণককে ডাকা হত। সে যাকে ভালাে মনে করত তার সাথে সন্তানটিকে সম্পৃক্ত করে দিত এবং তাকে তার ছেলে বলে আখ্যায়িত করা হতাে। নিয়ম হলাে, গণক যাকে পছন্দ করবে সে তাকে অস্বীকার করতে পারতাে না।[1]

এভাবেই চলছিল আরবদের সামাজিক অবস্থা ও তাদের নারীদের করুণ পরিণতি। তারপর যখন রাসূল (ﷺ)-কে সত্যের বাণী দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হলাে, রাসূল (ﷺ) জাহিলিয়াতের যুগের সব বিবাহ প্রথাকে বাদ দিলেন এবং একমাত্র বর্তমানে প্রচলিত বিবাহকে তিনি স্বীকৃতি দিলেন।” এছাড়াও জাহেলী যুগে নারীদের চতু্ষ্পদ জন্তু ও পণ্যের মতাে বাজারে বিক্রি করা হতো, তাদের ব্যভিচার ও অনাচারের ওপর বাধ্য করা হত। তাদের সম্পদের মালিক হত কিন্তু তারা মালিক হত না। তারা নিজেরা অন্যের মালিকানায় থাকত কিন্তু তারা নিজেরা মালিক হত না। তাদের স্বামীরা তাদের ধন সম্পত্তিতে ব্যয় করতে পারত। কিন্তু তারা তাদের স্বামীদের সম্পত্তিতে কোনাে প্রকার ব্যয় করতে পারতাে না। এমনকি বিভিন্ন দেশে পুরুষরা এ নিয়ে মতবিরােধ করতাে যে, নারীরা কি রক্তে মাংসে গড়া পুরুষের মতােই মানুষ নাকি অন্য কোনাে বস্তু? তাদের এ মতবিরােধের প্রেক্ষাপটে পারস্যের একজন সমাজ বিজ্ঞানী এ সিদ্ধান্ত দেন যে, নারীরা কোনাে মানুষ নয়, তারা এক প্রকার জীব যাদের কোনাে আত্মা বা স্থায়ত্ব বলতে কিছু নেই। তবে তাদের ও গোলামী করা ও খেদমত করা কর্তব্য। তারা তাদের বােবা উট ও কুকুরের মতাে বােবা বানিয়ে রাখতাে যাতে তারা কোনাে কথা বলতে না পারে এবং হাসা-হাসি করতে না পারে। কারণ, তারা হলাে শয়তানের মন্ত্র। তাদের নিয়মের সবচেয়ে মারাত্মক দিক হলাে, বাবা তার মেয়েকে বিক্রি করত। এর চেয়ে আরও আশ্চর্য হলাে, পিতার জন্য তার মেয়েকে হত্যা করা এমনকি জীবন্ত প্রােথিত করারও অধিকার আছে। তাদের মধ্যে কতক আরবদের বিধান ছিল নারীদের যদি হত্যা করা হয়, তাহলে পুরুষের ওপর কোনাে কিসাসের বিধান নেই। তাদের সমাজে নারীদের প্রতি এত বেশি যুলুম-নির্যাতন করা হত যে, তাতে নারীদের জীবনের কোনাে মূল্যই ছিল না, তাদের জীবনটা ছিল বিষাক্ত এবং তিক্তাপূর্ণ।এখন পর্যন্ত ইসলামের আদর্শের বাইরে গিয়ে যারা জীবন-যাপন করছে, বর্তমানে তারা অসহনীয় এক যন্ত্রণায় জীবন-যাপন করছে। তারা অত্যন্ত কষ্টে আছে যার ফলে অমুসলিম নারীরা তাদের জীবনের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে এ কামনা করছে যে, যদি আমরা মুসলিম সমাজে বসবাস করতে পারতাম।

একজন বিখ্যাত লেখক মাসআতুরদ, তিনি বলেন, আমাদের মেয়দের জন্য ঘরের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন কল-কারখানায় কাজ করা থেকে তাদের নিজ গৃহে অবস্থান করে ঘরের কাজ-কর্ম সমাধান করা অনেক উত্তম। কারণ, নারীরা যখন ঘরের বাইরে যায় তখ্ন তাদের জীবনের সৌন্দর্য চিরতরে ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, আফসাস যদি আমাদের দেশ মুসালিম দেশের মতাে হত তাহলে কতই না ভালাে হত! মুসলিম দেশে নারীরা পবিত্র ও ইজ্জত-সম্মানের অধিকারী। তাদের ইজ্জত সম্মানের ওপর কোনাে আঘাত আসে না। হ্যাঁ, আমাদের ইংরেজ দেশের জন্য এর চেয়ে খারাপ আর কী হতে পারে যে, আমরা আমাদের নারীদেরকে অপবিত্র বানিয়ে রেখেছিলাম। আমাদের এধরনের করুণ পরিণতি কেন? আমরা কেন আমাদের মেয়েদের জন্য এমন ধরনের কাজ নির্ধারণ করি না যা তাদের স্বভাবর সাথে মিলে। যেমন, তারা ঘরের কাজ আঞ্জাম দিবে, বাচ্চাদের লালন-পালন করবে, পুরুমদের খেদমত করবে ইত্যাদি এবং পুরুষরা যেসব কাজ করে তা থেকে তারা সম্পূর্ণ বিরত থাকবে। এতে তাদের ইজ্জত-সম্মান ঠিক থাকবে এবং তাদের মযাদা অক্ষুন্ন থাকবে।[2]

লেখিকা লেডিকুক ‘আলাইকু' ম্যাগাজিনে বলেন, নারীদের সাথে মেলামেশার ফলে পুরুষ নারী সম্ভোগের অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। আর এর মাধ্যমে নারীকে তার সহজাত স্বভাবের বিপরীত করতে হয়। যত বেশি মেলামেশা তত বেশি জারজ সন্তান হয়। এতে নারীর ওপর বড় বিপদ নেমে আসে। যে পুরুষের সাথে সে অবেধ সম্পর্ক গড়ে তােলে সে তাকে দারিদ্রের মুখে ঠেলে দিয়ে সরে পড়ে। নারী তখন লাঞ্চনা, অবমাননা আর কষ্ট সহ্য করতে বাধ্য হয়। কখনও তাকে মৃতুকেও বরণ করতে হয়। দারিদ্রের কারণ হলাে সন্তান পেটে ধারণ করার ফলে নানা রকম খরচ যুক্ত হওয়া ও পাশাপাশি উপার্জনের সুযোগ বন্ধ হওয়া। আর কষ্ট অনুভব করার কারণ এ সময় নারী হয়ে পড়ে চরম হতভম্ব। সে বুঝ্তে পারে না যে, সে নিজেকে নিয়ে কী করবে? আবার যে অপমান এসে জুটে তার মতো অপমান তো হয়ই না। মৃত্যুর কারণ হলাে সে আআহত্যার পথ বেছে নেয়। এদিকে পুরুষের এ রকম কোনাে ঝামেলাই নেই। নারীর ওপরই সব দায়ভার। তাকেই সব দোষ বহন করতে হয়। অথচ পুরুষ তার সাথে মেলামেশা করেছিল। এখনও কি সময় হয়নি এসব বিপদ কমানাের এ বিপদ তাে পাশ্চাত্য সভ্যতার কলঙ্ক। আমাদের কি এমন কোনাে পথ বেছে নেওয়া উচিত নয় যা হাজার-হাজার নিস্পাপ শিশু হত্যা থেকে বাঁচাবে? দোষ তাে ঐ পুরুষের যে এই নারীর নরম হৃদয়কে বুঝিয়ে শুনিয়ে অপকর্ম করেছে। তারপর নিজ প্রয়ােজন ফুরানাের সাথে সাথে তাকে যন্তরণাদায়ক কষ্টে ফেলে কেটে পড়ছে।

এভাবেই নারীর ওপর অনিষ্ট ও অকল্যাণের খড়গ নেমে আসে। নারীকে কষ্ট মেনে নিতে হয়। নারী চায় এ সকল ঝামেলা থেকে মুক্ত হতে। নিজ স্বভাবের সাথে খাপ খায় এমন সহজ জীবন-যাপন করতে চায়। সে তার সামনে ইসলামই একমাত্র নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়। এই ইসলামই একমাত্র তার সুখ-শান্তি প্রতিবিধান করতে পারে।

আর এই জন্যই মহান আল্লাহ বলেন, وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তাছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না।[3]

নারীদের তালাকের অধিকার

ইসলাম নারীকে দিয়েছে তালাকে অধিকার। তালাক প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানতে পড়ুন/ নারীকে তালাক দেয়ার পর নারীর খরচ দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,

وَلِلْمُطَلَّقَاتِ مَتَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ ۖ حَقًّا عَلَى الْمُتَّقِينَ

আর তালাকপ্রাপ্তা নারীদের জন্য প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী খরচ দেয়া পরহেযগারদের উপর কর্তব্য।[4]

নারীদের সাথে সর্বদা উত্তম আচরণ 

মহান আল্লাহ বলেন, وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۚ إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا

তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।[5]

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমরা নারীদেরকে উত্তম নাসীহাত প্রদান করবে। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে উপরের হাড়টি বেশী বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে তা ভেঙ্গে যাবে আর যদি ছেড়ে দাও, তাহলে সব সময় তা বাঁকাই থাকবে। কাজেই নারীদেরকে নাসীহাত করতে থাক।[6]

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এ হাদীসে নারীদের সাথে বিনম্র ব্যবহার, তাদের প্রতি দয়া, তাদের চারিত্রিক ত্রুটি ও অসৌজন্য মূলক আচরণের ওপর ধৈর্যধারণ, তাদের জ্ঞান ও বুদ্ধি কম হওয়ার কারণে তারা যেসব খারাপ আচরণ করে তা সহ্যকরা, কারণ ছাড়াই তাদের তালাক না দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।[7]

নারীদের সম্পত্তির অধিকার 

মহান আল্লাহ বলেন, لِلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنْهُ أَوْ كَثُرَ ۚ نَصِيبًا مَفْرُوضًا

পিতা-মাতা ও আত্নীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদেরও অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্নীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ আছে; অল্প হোক কিংবা বেশী। এ অংশ নির্ধারিত।[8]

নারীদের যখন কোন সম্মানই ছিল না, তাদের যখন বাজারে ক্রয়-বিক্রয় করা হতো, এমন অবস্থা থেকে ইসলাম তাদের মুক্তি দান করে। ইসলামে একজন নারীকে যেসব সম্মান অধিকার দেয়া হয়েছে এর এক ভাগও অন্য কোন ধর্মে দেয়া হয়নি। মহানবী (ﷺ)-এর আগমনের আগে নারীদের অবস্থা ছিল ভয়ানক, বিশেষ করে বাইজেন্টাজন সাম্রাজ্য, রোমান সাম্রাজ্য, আরব, ভারত ও পারস্যে ছিল খুবই নির্মম অবস্থা। ইসলাম নারীদেরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা সকল বর্ববর প্রথা উচ্ছেদ করেছে। নারীদের মুক্তি একমাত্র ইসলাম ধর্মেই। ইসলামই দিয়েছে নারীকে তার পূর্ণ অধিকার। এ প্রসঙ্গে লিখলে শেষ করা যাবে না, কয়েক খন্ডের বই লিখা যাবে।  

 

 

রেফারেন্স- 

  • [1] সহী বুখারী, হাদিস নং ৫১৫২। 
  • [2] হককুন নেসা, আহমেদ রেজা পৃ: ০৬। 
  • [3] সূরা: আন-নূর, আয়াত: ৩১)।
  • [4] সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ২৪১।
  • [5] সূরা: বনী ইসরাঈল, আয়াত: ২৩।
  • [6] সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৩৩১।
  • [7] শরহু সহিহিল মুসলিম ১০:৫৭।
  • [8] সূরা: আন নিসা, আয়াত: ৭। 

লেখাটির বেশকিছু অংশ "নারী অধিকার প্রতিষ্ঠাই ইসলাম" বই থেকে নেয়া।