Are you sure?

বিজ্ঞান »  ইসলাম ও বিজ্ঞান

নারী ও পুরুষের বীর্যের মিলন এবং নুতফাহ গঠন।

 

 0. সুচিপত্র :- 

 

 1. সুচনা।

 2. কোরান সুন্নাহর তথ্যসমুহকে আধুনিক পরিভাষা দিয়ে বিচার করা যাবেনা। 

 3. পুরুষের বীর্য ও তা দ্বারা ভ্রূণ গঠন।

 4. নারীর বীর্য ও তা দ্বারা ভ্রূণ গঠন। 

 5. নারীর বীর্য ও পুরুষের বীর্যের মিলনে ভ্রুণ গঠন। 

 6. নুতফাহ।

 7. উপসংহার। 

 8. টিকাসমুহ। 

 

 

 1. সুচনা :- 

 

কোরান সুন্নাহর বহু আয়াত ও হাদিস হতে আমরা জানতে পারি যে নারীর বীর্য ও পুরুষের বীর্যের মাঝে মিলন ঘটার ফলস্বরূপ মানবভ্রূণ গঠিত হয়। এই ব্যাপারটা নিয়ে অনেকে ঝামেলা করে,আপত্তি করে বলে উঠে যে "বীর্য দ্বারা মোটেও ভ্রূণ গঠিত হয়না, বরং ভ্রুণ গঠিত হয় বীর্যে অবস্থিত শুক্রাণু দ্বারা,তাছাড়া নারীদের বীর্য বলে কিছুনাই"। এই ধরনের আপত্তিসমুহের খন্ডনস্বরুপ এই লেখাটিতে "নারী পুরুষের বীর্যের মিলন ও নুতফাহ গঠন" প্রসঙ্গে আলোচনা করা হবে ইন-শা-আল্লাহ।

 

 2. কোরান সুন্নাহর তথ্যসমুহকে আধুনিক পরিভাষা দিয়ে বিচার করা যাবেনা :- 

 

'শুক্রাণু', 'ডিম্বাণু', এসব আধুনিক পরিভাষা। কোরআন ও সুন্নাহ যখন অবতীর্ণ হচ্ছিলো, তখন আরবি ভাষাতে এসব পরিভাষার কোনো অস্তিত্বই ছিলোনা, প্রাচীন ধ্রুপদী আরবিতে শুক্রাণু বা ডিম্বাণু বোঝানোর জন্য নির্দিষ্ট কোনো শব্দের অস্তিত্বই ছিলোনা। তাছারা 'নারীদের বীর্য বলে কিছুই নেই ' এই কথাটা বীর্যের আধুনিক পারিভাষিক সংজ্ঞা অনুযায়ী সঠিক, এটাও একটা আধুনিক পরিভাষানির্ভর মন্তব্য। বীর্যের আধুনিক বৈজ্ঞানিক পরিভাষাভিত্তিক সংজ্ঞা অনুযায়ী মহিলাদের বীর্য নেই বরং ডিম্বাণু আছে, মহিলাদের দেহ হতে যৌন উত্তেজনার দরুন বীর্যের ন্যায় দেখতে যেই সাদা ভাবযুক্ত তরল নির্গত হয় সেই তরলকে আধুনিক পরিভাষা অনুযায়ী বীর্য বলা হয়না ও যায়না। পক্ষান্তরে প্রাচীন ধ্রুপদী আরবি পরিভাষা অনুযায়ী মহিলাদেরও বীর্য আছে। প্রাচীন ধ্রুপদী আরবি পরিভাষা অনুযায়ী মহিলাদের দেহ হতে নির্গত সেই বীর্যের ন্যায় দেখতে তরলটিও বীর্য। 

 

অতএব, কোনো ইসলামবিরোধী ব্যাক্তি যদি এইটা আশা করে যে কোরআনে এক্ষেত্রে আধুনিক পরিভাষাসমুহের অনুসরণে সবকিছু বলা হবে, তাহলে হয় সে অজ্ঞ, আর নাহয় নির্বোধ, আর নাহয় অসৎ। কোরআনে বর্ণিত তথ্যসমুহকে আধুনিক পরিভাষাসমুহ দ্বারা বিচার করা যাবেনা, বরং কোরানকে বিচার করতে হবে প্রাচীন ধ্রুপদী আরবিতে প্রচলিত পরিভাষাসমুহ দ্বারা। কেননা কোরানে প্রাচীন ধ্রুপদী আরবি পরিভাষাসমুহ ব্যবহৃত হয়েছে, প্রাচীন ধ্রুপদী আরবি ভাষা ও পরিভাষাসমুহ দ্বারাই কোরানের সবকিছু বর্ণিত হয়েছে, কোরানে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পরিভাষাসমুহ ব্যবহৃত হয়নি, তৎকালীন সময়ের প্রচলিত প্রাচীন ধ্রুপদী আরবিতে এসব আধুনিক বৈজ্ঞানিক পরিভাষাসমুহের অউদো কোনো অস্তিত্বই ছিলোনা।

 

 3. পুরুষের বীর্য ও তা দ্বারা ভ্রূণ গঠন :- 

 

পুরুষের বীর্য নারীর বীর্যের সহিত মিলিত হয়ে ভ্রুণ গঠন করে। তবে এরমানে এইনা যে সমগ্র তরল বীর্যটি দ্বারাই ভ্রুণ গঠিত হয়। বরং প্রকৃতপক্ষে ভ্রুণ গঠিত হয় পুরুষের বীর্যের একটি অংশ দ্বারা, সমগ্র বীর্য দ্বারাই নয়। অর্থাৎ পুরুষের বীর্য নারীদেহে প্রবেশের পর সেই বীর্যের একটি অংশ গিয়ে নারীর বীর্যের সহিত মিলিত হয়ে ভ্রুণ গঠন করে ; ব্যাপারটা মোটেও এমন না যে পুরুষের যেই পরিমাণ বীর্য নারীদেহে প্রবেশ করে সেই বীর্যের সবটাই ভ্রুণ গঠনে অংশ নিয়ে নেয়। 

 

নবী মুহাম্মদ (সা) হতে 'সহিহ' সনদে প্রমাণিত আছে যে তিনি বলেছেন,

 

"ليس من كل الماء يكون الولد" _[1] 

অর্থ : "বীর্যের সব অংশ হতে সন্তান হয়না।" 

 

আধুনিক বিজ্ঞান অনুযায়ী ভ্রূণ গঠিত হয় পুরুষের বীর্যে বিদ্যমান শুক্রাণু দ্বারা, শুক্রাণুকে পুরুষের বীর্যের একটি অংশ বা উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইসলাম অনুযায়ী ভ্রুণ গঠিত হয় পুরুষের বীর্যের একটি অংশ দ্বারা। স্পষ্টতই, এক্ষেত্রে ইসলাম ও আধুনিক বিজ্ঞানের মাঝে কোনো বিরোধ নেই, বরং খুব সহজেই সামঞ্জস্য সাধন করে বলা যায় যে পুরুষের বীর্যের যেই অংশ দ্বারা ভ্রূণ গঠিত হয়, সেই অংশটি হচ্ছে শুক্রাণু।

 

 4. নারীর বীর্য ও তা দ্বারা ভ্রুণ গঠন :- 

 

সহবাসের সময় নারীদের যৌনাঙ্গ হতে পুরুষদের বীর্যের মতো দেখতে সাদা ভাব-বিশিষ্ট এক ধরনের তরল নির্গত হতে পারে, এই যৌনতরলকে আধুনিক বিজ্ঞানের পরিভাষায় 'বীর্য' হিসেবে গণ্য করা হয়না, তবে প্রাচীন ধ্রুপদী আরবির পরিভাষায় এটাও 'বীর্য' হিসেবে গণ্য হয়। এটাই হলো নারীদের বীর্য। কিন্ত এখানে আরো অনেক কথা আছে। প্রকৃতপক্ষে নারীদের বীর্য দুই ধরনের, এই সাদা ভাববিশিষ্ট যৌনতরল হলো সেই দুই প্রকারের বীর্যের অন্তর্ভুক্ত একটি প্রকার।

 

প্রশ্ন - এরমানে কি এই যে এই সাদা ভাববিশিষ্ট নির্গত যৌনতরলই পুরুষের বীর্যের সহিত মিলিত হয়ে ভ্রূণ গঠন করে?  

 

উত্তর : না, বরং নারীদের যেই প্রকারের বীর্য পুরুষদের বীর্যের সহিত মিলিত হয়ে ভ্রুণ গঠন করে সেই নারী-বীর্য হচ্ছে ভিন্ন আরেক প্রকারের নারী-বীর্য, তা এই সাদা ভাববিশিষ্ট নির্গত যৌনতরল হতে ভিন্ন।

 

প্রশ্ন- যদি তাই হয়, তাহলে সেই ভিন্ন আরেক প্রকারের নারীদের বীর্যের কৈফিয়ত কি? 

 

উত্তর : নারীদের যেই বীর্য পুরুষের বীর্যের সহিত মিলিত হয়ে ভ্রুণ গঠন করে, সেই বীর্যের বৈশিষ্ট হলো এই যে সেটা হলুদ বর্ণের, পাতলা ও ক্ষুদ্র বা ছোটো। 

 

নবী মুহাম্মদ (সা) হতে 'সহিহ' সনদে প্রমাণিত আছে যে তিনি বলেছেন, 

 

مَاءُ الرَّجُلِ غَلِيظٌ أَبْيَضُ، وَمَاءُ الْمَرْأَةِ رَقِيقٌ أَصْفَرُ، فَأَيُّهُمَا سَبَقَ، أَوْ عَلَا، أَشْبَهَهُ الْوَلَدُ_[2][3] 

 

অর্থ : পুরুষের বীর্য হলো সাদা ও ঘন, এবং মহিলার বীর্য হলো হলুদ পাতলা ও ক্ষুদ্র, (নারীদেহের অভ্যন্তরে) এদের মধ্য হতে যার বীর্য অগ্রাধিকার পায় বা উপরে থাকে, সন্তান তার অনুরূপ হয়। 

 

অপরদিকে ডিম্বাণুর বর্ণ হয় হলুদ, এবং তা পাতলা ও ক্ষুদ্র হয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে নারীদের বীর্যের যেই বৈশিষ্ট্যগুলো রাসুল (সা) এখানে বর্ণনা করেছেন, সেই বৈশিষ্ট্যগুলো হুবুহু ডিম্বাণুর বৈশিষ্ট্যসমুহের সহিত মিলে যায়। সুতরাং রাসুল (সা) এর এই বক্তব্যটি হতে প্রমাণিত হয় যে ডিম্বাণুই হলো নারীদের বীর্য।

 

প্রশ্ন- নারীদের যৌনাঙ্গ হতে কিছু কারণে এক ধরনের হলুদ বর্ণের তরল নির্গত হতে পারে,যা কিনা ডিম্বাণু হতে সম্পুর্ণ ভিন্ন ধরনের জিনিস। রাসুল (সা) যে ডিম্বাণু হতে ভিন্ন এই  হলুদ বর্ণের তরলকেই উক্ত হাদিসে উদ্দেশ্য করেন নি, এর নিশ্চয়তা কি?  

 

উত্তর : না, এখানে যেই ডিম্বাণু হতে ভিন্ন হলুদ বর্ণের তরলের কথা বলা হচ্ছে তা উক্ত হাদিসে উদ্দেশ্য করা হয়নি, এবং এক্ষেত্রে এটা উদ্দেশ্য হয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। কেননা এই প্রশ্নটিতে যেই হলুদ বর্ণের তরলের কথা আনা হচ্ছে, সেই তরলটিই যদি উক্ত হাদিসে উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই এই তরলটিকে এমন কোনো তরল হতে হবে যা কিনা যৌন উত্তেজনার কারণে নির্গত হয়, কারণ বীর্য নির্গত হয়ার সহিত যৌন উত্তেজনা সরাসরিভাবে সম্পর্কিত। অথচ বাস্তবে এই হলুদ বর্ণের তরলটি মোটেও যৌন উত্তেজনার কারণে নির্গত হয়না, বরং ডিম্বাণু হতে ভিন্ন এই হলুদ বর্ণের তরলটি প্রকৃতপক্ষে ইনফেকশনজাতীয় অসুস্থতার কারণে কিংবা অন্যান্য কিছু যৌন উত্তেজনার সহিত অসম্পৃক্ত কারণে নির্গত হয়। সুতরাং রাসুল (সা) এখানে নারীদের বীর্যের যেই বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ্য করেছেন সেগুলোর অনুসরণে এই ডিম্বাণু হতে ভিন্ন ও যৌন উত্তেজনার সহিত অসম্পর্কিত কারণে নির্গত হয়া হলুদ বর্ণের তরলটিকে 'নারীদের বীর্য' হিসেবে ধরে নেয়া সম্পুর্ণ ভুল, উক্ত হাদিসে এই ধরনের হলুদ বর্ণের তরল উদ্দেশ্য নয় যা কিনা যৌন উত্তেজনার সহিত অসম্পৃক্ত বরং উক্ত হাদিসে সম্পুর্ণ ভিন্ন একটা জিনিস উদ্দেশ্য। আর সেই একটা জিনিস হলো ডিম্বাণু। কেননা এই হলুদ বর্ণের তরলকে বিবেচনা হতে বাদ দিলে শুধুমাত্র ডিম্বাণুর সাথেই রাসুল (সা) এর দেয়া বিবরণগুলো অধিক সামঞ্জস্যপুর্ণ হয়।

 

প্রশ্ন - লেখক এখানে যেই হাদিসটি উল্লেখ্য করেছে, সেই হাদিসের কিছু রেওয়ায়েতে নারীদের কর্তৃক নিজেদের বীর্য দেখতে পাওয়ার কথা বলা হয়েছে এবং তারপর নারীদের এই বীর্যের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে তা হলুদ বর্ণের পাতলা ও ক্ষুদ্র। যদি নারীদের বীর্য মানে ডিম্বাণু হয়, তাহলে এর অর্থ কি এই না যে উক্ত হাদিস অনুযায়ী নারীদের ডিম্বাণু যৌন উত্তেজনার কারণে নির্গত হয়ে যেতে পারে? কিন্ত বাস্তবে তো নারীদের ডিম্বাণু যৌন উত্তেজনার কারণে নির্গত হয়ে যায়না!  

 

উত্তর :হাদিসের যেই অংশে নারীদের বীর্য দেখতে পাওয়ার কথা বলা হয়েছে সেই অংশ, আর যেই অংশে নারীদের বীর্যকে হলুদ পাতলা ও ক্ষুদ্র বলা হয়েছে হয়েছে সেই অংশ, এইদুটি অংশে সম্পুর্ণ ভিন্ন ধরনের দুটি ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের নারী-বীর্য উদ্দেশ্য, উভয় অংশেই একই প্রকারের নারী-বীর্য উদ্দেশ্য নয় ; এক্ষেত্রে এমনটা হয়া জরুরি না যে উভয় অংশেই একই প্রকারের বীর্য বোঝানো হয়েছে, বরং এমনটা হয়াও সম্ভব ও গ্রহণযোগ্য যে এই দুটি ভিন্ন ভিন্ন অংশের মধ্যে দুটি ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের নারী-বীর্য বোঝানো হয়েছে, কেননা এদুটি অংশের জন্য দুটি ভিন্ন ভিন্ন প্রসঙ্গ রয়েছে । যৌন উত্তেজনার কারণে নারীদের যৌনাঙ্গ হতে সাদা ভাববিশিষ্ট একধরনের তরল নির্গত হয় ও নির্গত হয়ার দরুন তা দেখা যায় ,এই তরলটিও প্রাচীন ধ্রুপদী আরবির  পরিভাষায় 'বীর্য' হিসেবে গণ্য হয়, যেই অংশটিতে নারীদের বীর্য দেখতে পাওয়ার কথা বলা হয়েছে সেই অংশে এই প্রকারের বীর্যকেই উদ্দেশ্য করা হয়েছে। সেই অংশটিতে এর পরের অংশটিতে বর্ণিত হলুদ বর্ণের পাতলা ও ক্ষুদ্র বীর্য দেখতে পাওয়ার কথা বোঝানো হয়েছে এমনটা হয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, কেননা নারীদের যৌনাঙ্গ হতে যৌন উত্তেজনাবশত এরকম হলুদ বর্ণের কোনো বীর্য নির্গত হয়না, বরং যৌন উত্তেজনার দরুন যা নির্গত হয় তা অহলুদ ও সাদা বর্ণের আভাযুক্ত হয়। যদি দুটি অংশে একই প্রকারের বীর্য  উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই ব্যাপারটাকে এমন হতে হবে যে নারীদের যৌনাঙ্গ হতে যৌন উত্তেজনার কারণে হলুদ বর্ণের বীর্য নির্গত হয়, কিন্ত বাস্তবে এমন কিছুই হয় না, সুতরাং দুটি অংশে একই প্রকারের বীর্য উদ্দেশ্য নয়, বরং প্রথম অংশটিতে এক ধরনের বীর্যের কথা বলা হয়েছে, এবং দ্বিতীয় অংশে সম্পুর্ণ আরেক ধরনের ভিন্ন প্রকারের বীর্যের কথা বলা হয়েছে। মূলত প্রথম অংশে রাসুল (সা) নারীদের সেই প্রকারের বীর্যের কথা বলেছেন যা কিনা যৌন উত্তেজনার কারণে নির্গত হয় ও নির্গত হিসেবে দেখা যায়, এবং দ্বিতীয় অংশে রাসুল (সা) নারীদের সেই প্রকারের বীর্যের কথা বলেছেন যা কিনা নির্গত হয়না এবং পুরুষের বীর্যের সহিত মিলিত হয়ে ভ্রুণ গঠন করে। মোদ্দাকথা, প্রথম অংশে এক প্রকারের বীর্যের ব্যাপারে বলা হয়েছে ও দ্বিতীয় অংশে প্রথম অংশ হতে ভিন্ন ও পৃথক আরেক প্রকারের বীর্যের ব্যাপারে বলা হয়েছে, প্রথম অংশে যেই প্রকারের বির্যের কথা বলা হয়েছে তা সাদা আভাযুক্ত ও যৌন উত্তেজনাবশত নির্গত হয় ও নির্গত হয়ার দরুন দেখা যায়, পক্ষান্তরে দ্বিতীয় অংশে যেই প্রকারের বীর্যের কথা বলা হচ্ছে তা হলুদ, পাতলা ও ক্ষুদ্র অর্থাৎ ডিম্বাণু এবং যৌন উত্তেজনাবশত নির্গত হয়না এবং পুরুষের বীর্যের সহিত মিলিত হয়ে ভ্রুণ গঠনে অংশ নেয়। 

 

আপত্তি :-'বীর্য ' হলো তরল, এখন ডিম্বাণু যদি নারীদের বীর্য হতো, তাহলে ডিম্বাণুওতো তরল হয়ার কথা, অথচ বাস্তবে ডিম্বাণু  কোনো তরল নয়, বরং তা হচ্ছে পাতলা স্পঞ্জসদৃশ ক্ষুদ্র গোলকের ন্যায় পদার্থ।

 

উত্তর : পুরুষদের বীর্য যখন শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায়, প্রাচীন ধ্রুপদী আরবিতে তখনো সেটাকে বীর্যই বলা হয়। যেহেতু শুকনো শক্ত বীর্য তরল না হয়া সত্ত্বেও 'বীর্য' হিসেবে স্বীকৃত, সেহেতু ডিম্বাণুর তরল না হয়া সত্ত্বেও নারীদের বীর্য হয়াটা ভুল কিছু নয়।

 

 5. নারীর বীর্য ও পুরুষের বীর্যের মিলনে ভ্রুণ গঠন :- 

 

নারীদের বীর্য ও পুরুষের বীর্য মিলিত হয়ে ভ্রুণ গঠন করে। অর্থাৎ পুরুষের বীর্যের একটি অংশ তথা শুক্রাণু এবং নারীদের হলুদ পাতলা ও ক্ষুদ্র বীর্য তথা ডিম্বাণু মিলে মানবভ্রূণ গঠন করে।

 

 6. নুতফাহ :- 

 

কোরআনীয় পরিভাষা অনুযায়ী নুতফাহ হলো মানবভ্রুণের সর্বপ্রথম পর্যায়। মুফাসসিররা এই 'নুতফাহ' এর ব্যাখ্যায় বলেছেন যে নুতফাহ হচ্ছে নারীর বীর্য ও পুরুষের বীর্যের মিলিত রুপ। এই ব্যাপারটা মোটেও অবৈজ্ঞানিক কিছু নয়। কারণ,

 

এক. নারীদের যেই বীর্য পুরুষের বীর্যের সহিত মিলিত হয়ে ভ্রুণ গঠন করে সেই বীর্যের বৈশিষ্ট্য হিসেবে রাসুল (সা) বলেছেন যে তা হলুদ বর্ণের, পাতলা ও ক্ষুদ্র। এই বৈশিষ্ট্যগুলো ডিম্বাণুর সাথে মিলে যায়। এবং ডিম্বাণু ব্যাতিত আর কোনোকিছুর সাথেই উক্ত হাদিসটি মিলেনা। সুতরাং নারীদের বীর্য মানেই নারীদের ডিম্বাণু।

 

দুই. পুরুষের বীর্য কর্তৃক নারীর বীর্যের সহিত মিলিত হয়াপুর্বক ভ্রুণ গঠন করার মানে এইনা যে পুরুষের বীর্যের সব অংশই নারীর বীর্যের সহিত মিলিত হয়ে যায়। বরং রাসুল (সা) এর হাদিস অনুযায়ী পুরুষের বীর্যের একটি অংশ গিয়ে নারীর বীর্যের সহিত মিলিত হয়ে ভ্রুণ গঠন করে। আধুনিক বিজ্ঞান অনুযায়ী ভ্রূণ গঠিত হয় পুরুষের বীর্যে বিদ্যমান শুক্রাণু দ্বারা, শুক্রাণুকে পুরুষের বীর্যের একটি অংশ বা উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।স্পষ্টতই, এক্ষেত্রে ইসলাম ও আধুনিক বিজ্ঞানের মাঝে কোনো বিরোধ নেই, বরং খুব সহজেই সামঞ্জস্য সাধন করে বলা যায় যে পুরুষের বীর্যের যেই অংশ দ্বারা ভ্রূণ গঠিত হয়, সেই অংশটি হচ্ছে শুক্রাণু।

 

 7. উপসংহার :- 

 

সুতরাং বলা যায়, নারী এবং পুরুষের বীর্যের মিলন ও নুতফাহ গঠন প্রসঙ্গে কোরান সুন্নাহতে যা বলা হয়েছে তা মোটেও অবৈজ্ঞানিক বা বাস্তবতাবিরোধী নয়।

 

 

8.টিকাসমুহ : 

 

[1]মুসনাদু আহমাদ (আর-রিসালাহ) - (18/43, টিকা 3) 

 

[2]মুসনাদু আহমাদ (আর-রিসালাহ) - (19/253, টিকা-1)

 

[3]সহিহ মুসলিম (হা/311)