Are you sure?

ইতিহাস »  সিরাত

আবু-বকর (রা) কি নিজ দাসকে প্রহার করেছিলেন? এবং মুহাম্মাদ (সা) কি উক্ত প্রহারকে মুচকি হেসে সমর্থন জানিয়েছিলেন?


অভিযোগ :

আবু বকর আলী দাসদের প্রহার করতেন

ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র মুহাম্মদের পরে ইসলামি সাম্রাজ্যের খলিফা আবু বকরের একজন দাস একটি উট হারিয়ে ফেলায় আবু বকর তাকে প্রহার করছিলেন, সেই দৃশ্য দেখে নবী মুহাম্মদ হাসছিলেন বলে হাদিস গ্রন্থ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়

সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫/ হাজ্জ
পরিচ্ছেদঃ ২৮. ইহরা্ম অবস্থায় কোনো ব্যক্তি নিজ গোলামকে প্রহার করলে।
১৮১৮.আহমাদ ইবন হাম্বল (রহঃ) ...... আসমা বিনত আবূ বাকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (বিদায় হজ্জের সময়) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হজ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আমরা আরাজ নামক স্থানে উপনীত হলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাহন থেকে অবতরণ করলেন এবং আমরাও অবতরণ করলাম। আয়েশা (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পার্শ্বে উপবেশন করেন এবং আমি আমার পিতা (আবূ বাকর) এর পার্শ্বে উপবেশন করি। আবূ বাকর (রাঃ) ও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খাদ্য পানীয় ও সফরের সরঞ্জাম একই সংগে আবূ বাকরের একটি গোলামের নিকট (একটি উষ্ট্রের পৃষ্ঠে) রক্ষিত ছিল।আবূ বাকর (রাঃ) গোলামের অপেক্ষায় ছিলেন (যেন খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করা যায়)। কিন্তু সে এমন অবস্থায় উপস্থিত হল যে, সে উট তার সাথে ছিল না। তিনি (আবূ বাকর) জিজ্ঞাসা করেন, তোমার সে উটটি কোথায়? জবাবে সে বলল, আমি গতকাল তাকে হারিয়ে ফেলেছি। আবূ বাকর (রাঃ) বলেন, মাত্র একটি উট, তুমি তাও হারিয়ে ফেললে? রাবী বলেন, তখন তিনি তাকে মারধর করেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হেসে বলেনঃ তোমরা এ মুহরিম ব্যক্তির দিকে দেখ, কী করছে। রাবী ইবন আবূ রিয্‌মা বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ উক্তির চাইতে অধিক কিছু বলেননি যে, ‘তোমরা এ মুহরিম ব্যক্তির দিকে দেখ কী কাজ করছে, আর তিনি মুচকি হাসছিলেন।

জবাব :

প্রথমত, এই হাদিসটা "যইফ "। যইফ হাদিস দলিল-প্রমান হিসেবে ব্যবহারের যোগ্য কোনো কিছু না।

হাদিসটির চেইন বা বর্ননাধারা নিম্নরুপ …[1]

"আবু-দাউদ" হাদিসটি "আহমাদ বিন হানবল" এবং "মুহাম্মাদ বিন আব্দিল-আযিয বিন আবি-রিযমাহ" হতে বর্ননা করেছেন।

এবং "আহমদ বিন হানবল" নিজেও বর্ননাটি উল্লেখ্য করেছেন। 

"ইবন মাজাহ" বর্ননা করেছেন "আবু বকর বিন আবি-শাইবাহ" থেকে।

"ইবন খুযায়মাহ" বর্ননা করেছেন "আব্দুল্লাহ বিন সাইদ আল-আশাজ্জ" এবং "সালম বিন জুনাদাহ " থেকে।

"ইবন খুযায়মাহ " আরো বর্ননা করেছেন "ইয়াকুব বিন ইব্রাহিম আদ-দাওরাক্বী " এবং "ইউসুফ বিন মুসা" থেকে।

এবং এই সাতজন, অর্থাৎ :

(১) আহমাদ বিন হানবল
(২) মুহাম্মাদ বিন আব্দিল-আযিয বিন আবি-রিযমাহ
(৩) আবু বকর বিন আবি-শাইবাহ
(৪) আব্দুল্লাহ বিন সাইদ আল-আশাজ্জ
(৫) সালম বিন জুনাদাহ
(৬) ইয়াকুব বিন ইব্রাহিম আদ-দাওরাক্বী
(৭) ইউসুফ বিন মুসা

এনারা সবাই হাদিসটি বর্ননা করেছেন "আব্দুল্লাহ বিন ইদ্রিস " থেকে। "আব্দুল্লাহ বিন ইদ্রিস" বর্ননা করেছেন "মুহাম্মাদ বিন ইসহাক" থেকে। "মুহাম্মাদ বিন ইসহাক" বর্ননা করেছেন "ইয়াহইয়া বিন আব্বাদ বিন আব্দিল্লাহ বিন আয-যুবাইর" থেকে। "ইয়াহইয়া বিন আববাদ" বর্ননা করেছেন তার পিতা "আববাদ বিন আব্দিল্লাহ বিন আয-যুবাইর" থেকে। এবং "আববাদ বিন আব্দিল্লাহ" বর্ননা করেছেন "আসমা বিনত আবি-বকর "(রা) থেকে।

হাদিসটির একজন রাবি হলেন : "মুহাম্মাদ বিন ইসহাক ",তিনি একজন বাজে পর্যায়ের "মুদাল্লিস "। তার তাদলিস করার ব্যাপারে জারাহ তা'দিলের ইমামদের বক্তব্য উল্লেখ্য করা হলো : …[2]

আবু-বকর আল-বায়হাকী বলেছেন : "তার রেওয়ায়েত যইফ, যদি সে উক্ত রেওয়ায়েতে নিজের শ্রবন স্পষ্ট না করে "।

ইবন হিববান আল-বাস্তী বলেছেন : "সে যইফ রাবিদের থেকে তাদলিস করত, ফলে তার রেওয়ায়েতে বহু অগ্রহনযোগ্য বিষয়বস্ত প্রবেশ করেছে "।

আহমাদ বিন হানবল বলেছেন : "সে প্রচুর তাদলিসকারী "।

ইবন হাজার আল-আসকালানি বলেছেন : "সত্যবাদী, তাদলিস করত "।

আল-খাতিব আল-বাগদাদী বলেছেন : "সে তার হাদিসে তাদলিস করে "।

নুরুদ্দিন আল-হাইছামী বলেছেন : "সে মুদাল্লিস "।

ইবন হাজার আল-আসকালানী  উল্লেখ্য করেছেন যে "মুহাম্মাদ বিন ইসহাক " একজন "চতুর্থ" পর্যায়ের মুদাল্লিস [3]। এবং চতুর্থ পর্যায়ের মুদাল্লিস সম্পর্কে ইবন হাজার বলেছেন :
"من اتفق على أنه لا يحتج بشئ من حديثهم الا بما صرحوا فيه بالسماع لكثرة تدليسهم على الضعفاء والمجاهيل كبقية بن الوليد" [4]

"যাদের সম্পর্কে ঐক্যমত হয়েছে যে তাদের হাদিসের কোনোকিছু হতেই দলিল নেয়া যাবেনা,যদি না তারা সেই হাদিসের শ্রবন সুস্পষ্ট না করে। এর কারন হলো যইফ ও মাজহুল রাবিদের নিকট হতে তাদের তাদলিসের আধিক্যতা। উদাহরনস্বরুপ : বাকিয়াহ ইবনুল ওয়ালিদ "

এই হাদিসের ক্ষেত্রে "মুহাম্মাদ বিন ইসহাক " হাদিসটি "আন" শব্দে বর্ননা করেছেন।তিনি শ্রবন স্পষ্ট করেন নি। সুতরাং উক্ত হাদিসটি "মুহাম্মাদ বিন ইসহাক " এর তাদলিসের কারনে "যইফ "। [5]

শায়খ শুয়াইব আল-আরনাওত এই হাদিস সম্পর্কে বলেছেন :

"إسناده ضعيف، محمَّد بن إسحاق مدلِّس وقد عنعن"[6][7]

"হাদিসটির সনদ যইফ, মুহাম্মাদ বিন ইসহাক মুদাল্লিস, সে আন দ্বারা বর্ননা করেছে "

যদি বলা হয় যে অমুক এপে বা অমুক ওয়েবসাইটে হাদিসটিকে হাসান বলা হয়েছে, তাই এটা হাসান। তাহলে এর জবাবে বলব :

হাদিসের উসুল অনুযায়ি এই হাদিসটি যইফ। কোনো চতুর্থ পর্যায়ের মুদাল্লিস যদি আন দ্বারা বর্ননা করে ও শ্রবন স্পষ্ট না করে, তাহলে তার বর্নিত হাদিস যইফ,এটা উসুল। কোনো ওয়েবসাইট বা এপে এটাকে "হাসান" বলার কারনে এই উসুল পরিবর্তিত হয়ে যাবেনা, এই হাদিস হাসান হয়ে যাবেনা। এই হাদিসটি মুলনিতী অনুযায়ি যইফ, সুতরাং কেও যদি এটাকে সহিহ বা হাসান বলে দাবি করে, তাহলে তার উক্ত দাবি ভুল, তার উক্ত তাহকিক ভুল। কোনো মুহাদ্দিসের তাহকিক দিয়ে উসুলকে বিচার করা মুর্খতা, বরং উসুল দিয়ে সেই মুহাদ্দিসের তাহকিককে বিচার করতে হবে, এব্যাপারটা ইসলামবিরুধিদের অধিকাংশই হাদিসশাস্ত্র সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতার দরুন বুঝেনা।

এপে বা ইন্টারনেটে বাংলা ভাষায় যেসব হাদিসের সোর্স আছে, এসব স্থানে শায়খ নাসিরুদ্দিন আল-আলবানির তাহকিককে কপি-পেস্ট করা হয়। শায়খ আল-আলবানি একবার এই হাদিসটিকে "হাসান " বলেছিলেন [8]। কিন্ত উনার এই হাসান বলাটা একদম প্রাথমিক পর্যায়ের উসুল অনুযায়ি ভুল, উনার এই হাসান বলাটা সঠিক নয়। শায়খ আল-আলবানির সমপর্যায়ের মুহাক্কিক শুয়াইব আল-আরনাওত এই হাদিসটিকে "যইফ" বলেছেন যা আমি উল্লেখ্য করেছি। শায়খ আল-আলবানি যদিও একবার এই হাদিসটিকে হাসান বলেছিলেন, কিন্ত তিনি উনার "সিলসিলাতুয যইফাহ" গ্রন্থে উক্ত হাদিসকে মুহাম্মাদ বিন ইসহাক এর আন দ্বারা বর্ননা করার কারনে "যইফ " বলেছেন [9]! অর্থাৎ এব্যাপারে স্বয়ং শায়খ আল-আলাবানীরই পরস্পরবিরুধি দুইটি বক্তব্য আছে। তিনি একবার হাসান বলেছেন, যা ভুল ও আরেকবার যইফ বলেছেন, যা সঠিক। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে  বা এপে শুধুমাত্র উনার হাসান বলাটাই উল্লেখিত হয়েছে, উনি যে এটাকে "যইফ" ও বলেছেন, সেটা উল্লেখিত হয়নি।

দ্বিতীয়ত, রাসুল (সা) "মুচকি হাসলেন ", তিনি এটা বলে মুচকি হেসেছিলেন "তোমরা এ মুহরিম ব্যক্তির দিকে দেখ কী কাজ করছে" - এই কথার মাধ্যমে তিনি প্রকৃতপক্ষে উক্ত কাজের নিন্দা জানিয়েছেন, তিনি বুঝিয়েছেন যে একজন মানুষ হজ্জের জন্য ইহরাম বাধা সত্ত্বেও কিভাবে এই ধরনের একটা কাজ করতে পারে? এই হাসি সমর্থনের হাসি নয়।

খালিল আহমাদ আস-সাহারানপুরী বলেছেন :

 قوله صلى الله عليه وسلم -: "انظروا إلى هذا المحرم ما يصنع! "، يومئ إلى أنه لا ينبغي للمحرم ذلك[10]
"তার (সা) এর কথা : 'তোমরা এ মুহরিম ব্যক্তির দিকে দেখ কী কাজ করছে', এটা ইংগিত দিচ্ছে যে একজন মুহরিম (যে ইহরাম বেধেছে) ব্যাক্তির জন্য এটা অনুচিত কাজ "

মুহাম্মাদ আল-আমিন আল-হারারী বলেছেন :

 (انظروا إلى هذا المحرم) الذي يضرب عبده ولا يحتاط لإحرامه (ما يصنع) من ضربه الغلام؛ يعني: أبا بكر؛ أي: انظروا إلى صنعه وضربه العبد مع تركه التوقي والاحتياط لإحرامه حيث فعل ما لا ينبغي للمحرم [11]

"(তোমরা এই মুহরিমের দিকে তাকাও) অর্থাৎ যে তার দাসকে প্রহার করছে এবং নিজের ইহরামের ব্যাপারে অসতর্ক হয়ে গিয়েছে। (সে কি করছে) অর্থাৎ যে তার গোলামকে প্রহার করছে, তথা আবু-বকর (রা),  অর্থাৎ : তার কাজকারবারের দিকে তাকাও, তার দাসকে প্রহার করার বিষয়টির দিকে তাকাও,  এই কাজের সাথে তার ইহরাম হতে নিজের সচেতনতা ও মনোযোগকে ত্যাগ করার বিষয়টি দেখো, সে তো এমন কাজ করেছে যা একজন মুহরিম করতে পারেনা "

তৃতীয়ত, মহাম্মাদ (সা) দাস-দের প্রহার করার বিরুধি ছিলেন।

তিনি দাসদের প্রহার করতে সরাসরি নিষেধ করেছেন, তিনি (সা) বলেছেন : "তোমাদের গোলামদের মধ্যে যারা তোমাদের খুশি রাখে তাদের তোমরা যা খাও তাই খেতে দাও, তোমরা যা পরিধান করো তাদে তাই পরিধান করাও। এবং যদি সে তোমাদের খুশি না রাখে তাহলে তাকে বিক্রি করে দাও, আল্লাহর সৃষ্টিকে কষ্ট দিবেনা "[12]

মুহাম্মাদ (সা) এর মতে, দাস-দাসিরা যদি অন্যায়ও করে, তবুও তাদের প্রহার করা যাবেনা। বরং বার বার তাদের ক্ষমা করে দিতে হবে। [13]

মুহাম্মাদ (সা) একদা সাহাবি আবু-মাসউদ (রা) কে দেখতে পান যে তিনি উনার দাসকে প্রহার করছেন। তিনি (সা) তাকে এমনটা করতে নিষেধ করেন, এর পর থেকে আবু-মাসউদ (রা) কখনৌই তার দাসকে প্রহার করেন নি [14]

যদি দাস-দাসিদের আদব শিক্ষা দেয়ার জন্য প্রহারের একান্ত প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রেও ইসলামে বিভিন্ন নিয়ম আছে, যেমন : উক্ত প্রহার জোরে হতে পারবেনা, নামেমাত্র প্রহার হতে হবে, হালকা প্রহার হতে হবে, যেমনটা ছোট ছোট বাচ্চাদের আদব শিক্ষা দেয়ার জন্য দেয়া হয়।প্রহারের কারন হতে হবে খুবই বড় পর্যায়ের, অর্থাৎ দাস বা দাসি যদি মহা-অন্যায়/মহা-পাপ  জাতিয় কিছু করে বসে তখনিই এটা বৈধ হবে। একাধিকবার ক্ষমা করার পরেও যদি দাস বা দাসি একই অন্যায় করে, তখনিই এই আদব শিক্ষার প্রহার প্রযোজ্য হতে পারবে, অন্যথায় বৈধ হবেনা [15][16][17]

টিকা ও প্রমান :

[1]আল-মুসনাদুল জামে (19/24),মুসনাদ আহমাদ (3/344),সুনান আবিদাউদ (1818), সুনান ইবন মাজাহ (2933),সহিহ ইবন খুযায়মাহ (2679), মুজামুত তাব্রানি আলকাবির (24/239), মুস্তাদরাকুল হাকেম (1/453-454), সুনানুল বায়হাকী আলকুবরা (5/67-68)

[2]http://hadith.islam-db.com/narrators/6811/%D9%85%D8%AD%D9%85%D8%AF-%D8%A8%D9%86-%D8%A5%D8%B3%D8%AD%D8%A7%D9%82-%D8%A8%D9%86-%D9%8A%D8%B3%D8%A7%D8%B1-%D8%A8%D9%86-%D8%AE%D9%8A%D8%A7%D8%B1

[3]তাবাকাতুল মুদাল্লিসিন (রাবি/125)

[4]তাবাকাতুল মুদাল্লিসিন (পৃ/14)- মুকাদ্দামাহ

[5]পাঠকের বুঝার সুবিধার্থে কিছু প্রাথমিক বিষয়বস্ত উল্লেখ্য করে দিলাম :  "ক" রাবি "খ" হতে শ্রবন করল, এবং "খ" শ্রবন করল "গ" হতে। অর্থাৎ "ক" রাবিটি "খ" এর সুত্রে "গ" হতে হাদিসটি পেল। এখন "ক" যখন হাদিসটি "ম" এর নিকট বর্ননা করল, তখন তার বলার কথা ছিল "আমি শুনেছি খ থেকে, খ শুনেছে গ থেকে "। কিন্ত "ক" এটা না করে বলল "আমি হাদিসটি গ থেকে শুনেছি "। অর্থাৎ এখানে "ক", তার ও "গ" এর মাঝখানের রাবি "খ" কে  বাদ দিয়ে হাদিসটি বর্ননা করেছে। "ক" এর "খ" কে এভাবে বাদ দেয়ার বিষয়টিকেই বলা হয় "তাদলিস "। যে এই তাদলিস করে তাকে বলা হয় মুদাল্লিস, ক এখানে "খ" এর নিকট থেকে তাদলিস করেছে, অর্থাৎ সে মুদাল্লিস। এই মুদাল্লিস রাবিদের বিভিন্ন পর্যায় বা স্তর রয়েছে। ১ম ও ২য় স্তরের মুদাল্লিসরা তেমন সমস্যার কেও না। কিন্ত ৩য় ও ৪র্থ স্তরের মুদাল্লিসরা সমস্যার। তারা বিভিন্ন যইফ ও মাজহুল রাবিদের নিকট থেকে তাদলিস করে ও পরে সেইসব যইফ ও মাজহুল রাবিদের নাম বিলুপ্ত করে দিয়ে বর্ননা করে, ঠিক যেভাবে "ক", "খ" থেকে তাদলিস করে "খ" এর নাম বিলুপ্ত করে দিয়ে "ম" এর কাছে বর্ননা করেছে। কাজেই এদের বর্ননা সবক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য না ; হাদিসশাস্ত্রের পরিভাষায় একজন মুদাল্লিস রাবির শ্রবন স্পষ্টকরন (التصريح بالسماع) করার অর্থ হলো তাকে হাদিসটি "সামি'তু,হাদ্দাসানা, হাদ্দাসানি, আখবারানা, আখবারানি " এই ধরনের শব্দে তার পুর্ববর্তি রাবি (যার কাছ থেকে সে হাদিসটা শুনেছে বলে দাবি করছে) হতে বর্ননা করতে হবে। যদি সে শ্রবন স্পষ্টকরন না করে তাহলে এর অর্থ হলো সে হাদিসটি "আন" শব্দে বর্ননা করেছে, এই আন শব্দে বর্ননা করাকে "আন'আনাহ "(عنعنة) বলা হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ের মুদাল্লিস রাবিদের হাদিস শুধুমাত্র তখনিই গ্রহনযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে  যখন উক্ত হাদিসে সেই মুদাল্লিস রাবি পুর্ববর্তি রাবি হতে তার শ্রবন স্পষ্ট করবে। যদি সে শ্রবন স্পষ্ট না করে, অর্থাৎ আন'আনাহ দ্বারা বর্ননা করে, তাহলে তার সেই হাদিস যইফ হিসেবে গন্য হবে। এগুলো হাদিসশাস্ত্রের একদম প্রাথমিক পর্যায়ের উসুল বা মুলনিতী।উল্লেখিত এসব কথার প্রমান হিসেবে দেখা যেতে পারে : আব্দুল-কারিম আল-খাযির রচিত "শারহু নুখবাতিল ফিকার (6/9-11) ", আব্দুল মাজিদ আল-গাওরি রচিত "মুজামুল মুস্তালাহাতিল হাদিসিয়াহ (পৃ/691,472, 221) , নাইফ বিন নাসির রচিত "ফাওয়াইদুল মুস্তাখরাজাত (পৃ/80)"।

[6]তাহকিক সুনান ইবন-মাজাহ (4/166,টিকা-1)

[7]তাহকিক সুনান আবি-দাউদ (3/224,টিকা-1)

[8]সহিহ সুনান ইবন মাজাহ (হা/2986),সহিহ সুনান আবি-দাউদ (হা/1818)

[9]সিলসিলাতুল আহাদিসিয যইফাহ (9/40)

[10]বাযলুল মাজহুদ (7/174)

[11]মুরশিদ যাওইল হাজা ওয়াল হাজাহ (17/165)

[12]সুনান আবি দাউদ (হা/5161), মুসনাদুল বাযযার (হা/ 3923), মাসাওইয়াল আখলাক (হা/720), মাকারিমুল আখলাক (হা/518), সুনানুল বায়হাকী আলকুবরা (7/8), শু'বুল ইমান (হা/8560), মুসনাদ আহমাদ (হা/21483) 

[13]মুসনাদ আহমাদ(9/453),আত-তারিখুল কাবির (7/4),মুসনাদ আবি ইয়ালা (হা/5760),সুনান আবি দাউদ (হা/5164),সুনানুত তিরমিযি (হা/1949),সুনানুল বায়হাকী আল-কুবরা (8/10-11), মুসনাদ আহমাদ (হা/5899)।

[14]সহিহ মুসলিম (হা/1659,1660,34) , মুসনাদ আহমাদ (হা/17087),মুসান্নাফ আব্দির রাজ্জাক (হা/17959),মু'জামুত তাব্রানি আল-কাবির (17/683-686),সুনানুত তিরমিযি (হা/1948),সুনান আবি দাউদ (হা/5160)
 
[15]ইবন-মুফলাহ, আল-ফুরুউ ওয়া তাসহিহুল ফুরুউ (9/326)

[16]ইবন কুদ্দামাহ, আল-মুগনী (8/257)

[17]আল-জামি লিউলুমিল ইমাম আহমাদ আল-আদাব ওয়ায-যাহদ (20/122)