Are you sure?

ইতিহাস »  সিরাত

আলি (রা) কি আয়েশাহ (রা) এর দাসি 'বারিরাহ' কে প্রহার করেছিলেন?

 

 

সিরাতে ইবন হিশামে আছে :

" وَأَمَّا عَلِيٌّ فَإِنَّهُ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إنَّ النِّسَاءَ لَكَثِيرٌ، وَإِنَّكَ لَقَادِرٌ عَلَى أَنْ تَسْتَخْلِفَ، وَسَلْ الْجَارِيَةَ، فَإِنَّهَا سَتُصْدِقُكَ.فَدَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَرِيرَةَ لِيَسْأَلَهَا، قَالَتْ: فَقَامَ إلَيْهَا عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ، فَضَرَبَهَا ضَرْبًا شَدِيدًا، وَيَقُولُ: اُصْدُقِي رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،" [1]

"আলি (রা) বললেন : হে রাসুলুল্লাহ, নিশ্চই নারিরা অনেক, অবশ্যই প্রতিনিধি বানানোর উপর আপনার নিয়ন্ত্রন আছে, দাসিটিকে জিজ্ঞাস করুন, অবশ্যই সে সত্য বলবে। ফলে রাসুলুল্লাহ (সা) বারিরাহকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকলেন, আয়েশাহ (রা) বলেন : তারপর আলি (রা) বারিরাহর নিকটে এসে দাড়ালেন ও তাকে প্রচন্ডভাবে প্রহার করলেন। এবং বললেন :আল্লাহর রাসুল (সা) এর নিকট সত্য বলো! "

এখানে "তারপর আলি (রা) বারিরাহর নিকটে এসে দাড়ালেন ও তাকে প্রচন্ডভাবে প্রহার করলেন" এই অংশটা অপ্রমানিত, অগ্রহনযোগ্য।

ইবন-হিশাম, ইবন ইসহাক হতে একটি সুত্র উল্লেখ্য করেছেন। সেই সুত্রে খুবই লম্বা ও বড় একটি হাদিস বর্ননা করেছেন, ও সেই লম্বা হাদিসটির একটি অতিক্ষুদ্র অংশ হলো এই অংশটি। ইবন ইসহাক একত্রে এই তিনটি সনদ ধরে লম্বা হাদিসটি বর্ননা করেছেন : [2]

قَالَ ابْنُ إسْحَاقَ: حَدَّثَنَا الزُّهْرِيُّ، عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَقَّاصٍ، وَعَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ وَعَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، وَعَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُتْبَةَ، قَالَ: كُلٌّ قَدْ حَدَّثَنِي بَعْضَ هَذَا الْحَدِيثِ، وَبَعْضُ الْقَوْمِ كَانَ أَوْعَى لَهُ مِنْ بَعْضٍ، وَقَدْ جَمَعْتُ لَكَ الَّذِي حَدَّثَنِي الْقَوْمُ

قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ إسْحَاقَ: وَحَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ عَبَّادِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَائِشَةَ،

وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي بَكْرٍ، عَنْ عَمْرَةَ بِنْتِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ عَائِشَةَ، عَنْ نَفْسِهَا، حِينَ قَالَ فِيهَا أَهْلُ الْإِفْكِ مَا قَالُوا، فَكُلٌّ قَدْ دَخَلَ فِي حَدِيثِهَا عَنْ هَؤُلَاءِ جَمِيعًا يُحَدِّثُ بَعْضُهُمْ مَا لَمْ يُحَدِّثْ صَاحِبَهُ، وَكُلٌّ كَانَ عَنْهَا ثِقَةً، فَكُلُّهُمْ حَدَّثَ عَنْهَا مَا سَمِعَ،

(১)ইবন ইসহাক → আয-যুহরী → আলকামাহ বিন ওয়াককাস, সাইদ বিন জুবাইর, উরওয়াহ ইবনুয যুবাইর, উবাইদুল্লাহ বিন আব্দিল্লাহ বিন উতবাহ ও সাধারন মানুষজন।

(২)মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক → ইয়াহইয়া বিন আববাদ বিন আব্দিল্লাহ বিন আয-যুবাইর → আববাদ বিন আব্দিল্লাহ বিন আয-যুবাইর → আয়েশাহ (রা)

(৩)মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক → আব্দুল্লাহ বিন আবি-বকর → আমরাহ বিনত আব্দির-রহমান→ আয়েশাহ (রা)

ইবন ইসহাকের এই তিনটি সুত্র ধরে ইবন ইসহাক হতে এই লম্বা হাদিসটি উল্লেখ্য করেছেন ইবন-কাসির "আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ" তে ও আত-তাবারী তার "তারিখ" এ [3]

এই লম্বা হাদিসটি  বহু হাদিসগ্রন্থে আয-যুহরির সুত্রে আলকামাহ, সাইদ, উরওয়াহ ও উবাইদুল্লাহ হতে বর্নিত হয়েছে।[4][5][6]একই লম্বা হাদিসটি অন্যান্য অনেক স্থানে বর্নিত হলেও ইবন ইসহাকের বর্ননা ব্যাতিত আর কোনো স্থানেই আলি (রা) এর বারিরাহকে প্রহার করার বিষয়টি নেই। অর্থাৎ "তারপর আলি (রা) বারিরাহর নিকটে এসে দাড়ালেন ও তাকে প্রচন্ডভাবে প্রহার করলেন" এই অংশটা ইবনে ইসহাকের বর্ননা ব্যাতিত আর কোথাও  নেই।

"তারপর আলি (রা) বারিরাহর নিকটে এসে দাড়ালেন ও তাকে প্রচন্ডভাবে প্রহার করলেন" এই অংশটির তাহকিক উল্লেখ্য করা হলো :

যদি ধরে নেয়া হয় যে ইবন ইসহাক এই অংশটি ১ম সনদ ধরে পেয়েছেন, সেক্ষেত্রে এই অংশটি "শায" সাব্যস্ত হবে। কেননা আয-যুহরী থেকে এই সম্পুর্ন লম্বা হাদিসটি ইয়াহইয়া বিন সাইদ ,উবাইদুল্লাহ বিন উমার,মা'মার বিন রাশিদ,সালিহ বিন কাইসান,ইউনুস বিন ইয়াযিদ ও ফুলাইহ বিন সুলাইমান বর্ননা করেছেন।  তাদের কারো বর্ননাতেই এই অংশটি নেই। শুধুমাত্র আয-যুহরী হতে ইবন ইসহাকের বর্ননাতেই এই অংশটি আছে। যার অর্থ হলো এই ইবন ইসহাকের বর্নিত অতিরিক্ত অংশটি উসুল অনুযায়ী শায।[7]

যদি ধরে নেয়া হয় যে ইবন ইসহাক এই অংশটি ২য় বা ৩য় সুত্রে ধরে পেয়েছেন। তবুও এই অংশটি অগ্রহনযোগ্য। এক্ষেত্রে পরিস্থিতি এমন হবে যে ; শুধুমাত্র ইবনে ইসহাকই আব্দুল্লাহ বিন আবি-বকর ও ইয়াহইয়া বিন আববাদ হতে এই লম্বা হাদিসটি এই অংশটিসহ বর্ননা করেছেন , অন্য কেওই আব্দুল্লাহ বা ইয়াহইয়া হতে এই অংশটি বা এই লম্বা হাদিসটি বর্ননা করেন নি ; এবং এব্যাপারটাকে বলা হয় "তাফাররুদ"। ইবন ইসহাক আব্দুল্লাহ বিন আবি-বকর ও ইয়াহইয়া বিন আববাদ হতে এই হাদিসটি এই অংশ সহকারে বর্ননার মাধ্যমে তাফাররুদ ঘটিয়েছেন। এবং ইবন ইসহাকের তাফাররুদ অগ্রহনযোগ্য, অনির্ভরযোগ্য। সুতরাং ইবনে ইসহাকের বৃদ্ধিকৃত এই অংশটি অগ্রহনযোগ্য।

আয-যাহাবী তার সম্পর্কে বলেন :
فالذي يظهر لي أن ابن إسحاق حسن الحديث، صالح الحال صدوق، وما انفرد به ففيه نكارة، [8]
"আমার কাছে যা প্রকাশিত হচ্ছে তা হলো এই যে ইবন-ইসহাক হাদিসের ক্ষেত্রে হাসান, তার অবস্থা ভালো ও সে সত্যবাদী। এবং তিনি যাদ্বারা তাফাররুদ ঘটান সেটাতে নাকারাত (অনির্ভরযোগ্যতা) আছে "

আয-যাহাবির এই বক্তব্যকে আল-মুয়াল্লেমী ও আল-আইনী সমর্থন দিয়েছেন [9]

আইয়ুব বিন ইসহাক বিন সাফিরী বলেন :

سألت أحمد بْن حَنْبَل، فقلت: يَا أَبَا عَبد اللَّهِ بْن إِسْحَاق إذا تفرد بحديث تقبله؟ قال: لا، والله إني رأيته يحدث عَنْ جماعة بالحديث الواحد، ولا يفصل كلام ذا من ذا [10]

"আমি আহমাদ বিন হাম্বল কে প্রশ্ন করলাম, আমি প্রশ্নে বললাম : হে আবু-আব্দুল্লাহ, ইবন ইসহাক যদি হাদিসে তাফাররুদ ঘটায় তাহলে কি তা গ্রহনযোগ্য হবে?  তিনি (আহমাদ) বললেন : না (গ্রহনযোগ্য হবেনা)। আল্লাহর কসম, অবশ্যই আমি তাকে দেখেছি যে সে একটি জামা'আত হতে হাদিস বর্ননা করছে এবং এটাই স্পষ্ট করছেনা যে কোনটা কার কথা "

আল-আলবানী বলেছেন :
"وقد علم كل مشتغل بهذا الفن أن في تفرده نكارة"[11]
"এই শাস্ত্রে কাজ করা সবাই জানে যে তার (ইবন ইসহাকের) তাফাররুদে নাকারত (অনির্ভরযোগ্যতা) আছে "

সুতরাং আলি (রা) এর বারিরাহকে প্রহার করার অংশটা ভুল ও অগ্রহনযোগ্য। বাস্তব ঘটনাটা ছিল এরুপ :

وَأَمَّا عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، لَمْ يُضَيِّقْ اللَّهُ عَلَيْكَ، وَالنِّسَاءُ سِوَاهَا كَثِيرٌ، وَسَلِ الْجَارِيَةَ تَصْدُقْكَ، فَدَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بريرة، فقال: (يا بريرة، هل رأيت شَيْئًا يَرِيبُكِ). فَقَالَتْ بَرِيرَةُ: لَا وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ [12]

"আলি বিন আবি-তালিব (রা) বললেন 'হে আল্লাহর রাসুল '!  আল্লাহ আপনার জন্য সংকীর্ণ করে দেন নি, সে ছারাও তো আরো বহু নারি আছে! এবং দাসিটিকে প্রশ্ন করুন, সে সত্য বলবে। ফলে রাসুলুল্লাহ (সা) বারিরাহকে ডাকলেন ও বললেন 'হে বারিরাহ, তুমি কি সন্দেহজনক কিছু দেখেছো'? উত্তরে বারিরাহ বললেন : সেই সত্ত্বার কসম যে আপনাকে সত্য দ্বারা প্রেরম করেছেন, না (আমি দেখিনি) । "

তাছারা ইবন-ইসহাকের স্বরনশক্তিতেও দুর্বলতা ছিল বলে বহু মুহাদ্দিসরা বলেছেন [13]। যেহেতু উনার স্বরনশক্তিতে দুর্বলতা ছিল, সেহেতু উনার বর্ননাতে ভুলবশত অতিরিক্ত অগ্রহনযোগ্য অংশ প্রবেশ করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

প্রমানসমুহ :

[1]সিরাত ইবন হিশাম (2/301)

[2]সিরাত ইবন হিশাম (2/297)

[3]আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (6/193), তারিখুত তাবারী (2/611)

[4]আল-মুসনাদুল জামে (20/370)

[5]মুসনাদ আহমাদ -রিসালাহ (42/412,টিকা-2)

[6]আল-মুসনাদুল মুসান্নাফুল মুয়াল্লাল (39/424)

[7]মুজামুল মুস্তালাহাতিল হাদিসিয়াহ (পৃ/414-415)

[8]মিযানুল ই'তিদাল (3/475)

[9]ইমারাতুল কুবুর (পৃ/31), নাখবুল আফকার (2/97)

[10]তাহযিবুল কামাল (24/422)

[11]https://al-maktaba.org/book/31615/30757

[12]সহিহুল বুখারী (হা/2518)

[13]http://hadith.islam-db.com/narrators/6811/%D9%85%D8%AD%D9%85%D8%AF-%D8%A8%D9%86-%D8%A5%D8%B3%D8%AD%D8%A7%D9%82-%D8%A8%D9%86-%D9%8A%D8%B3%D8%A7%D8%B1-%D8%A8%D9%86-%D8%AE%D9%8A%D8%A7%D8%B1