Are you sure?

বিজ্ঞান »  ইসলাম ও বিজ্ঞান

আসমানসুহের মধ্যবর্তী দুরত্ব সম্পর্কে ইবনু মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত মাওকুফ হাদিস ও রাসুল (সা) হতে বর্ণিত মারফু হাদিস সম্পর্কে।

 

বিষয় : আসমানসুহের মধ্যবর্তী দুরত্ব সম্পর্কে ইবনু মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত মাওকুফ হাদিস ও রাসুল (সা) হতে বর্ণিত মারফু হাদিস সম্পর্কে।

লেখক : সামিউল হাসান তবিব আল-ইনফিরাদী

মুহাম্মদ (সা) হতে মারফুরূপে এইমর্মে একটি হাদিস বর্ণিত আছে যে তিনি (সা) বলেছেন যে প্রথম আসমান ও ভুপৃষ্ঠের মধ্যকার দুরত্ব বা ব্যবধান হচ্ছে ৫০০ বছরের পথ, একইভাবে সাত আসমানের প্রত্যেকটা আসমানের পরস্পরের মধ্যবর্তী দুরত্বও ৫০০ বছরের পথ, ইত্যাদি ইত্যাদি।

তবে রাসুল (সা) হতে বর্ণিত হয়া এই হাদিসটি "যইফ", এটি রাসুল (সা) হতে মারফুরূপে প্রমাণিত নয়, দেখুন : https://islamqa.info/ar/225192

পক্ষান্তরে, আকাশসমুহের মধ্যবর্তী দুরত্ব ও পৃথিবী হতে প্রথম আসমানের দুরত্ব সম্পর্কে আস-সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) হতে মাওক্বুফরূপে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, হাদিসটি নিম্নরূপ,

عن ابن مسعود رضي اللّٰه عنه قال بين السماء الدنيا و التي تليها خمسمائة عام و بين كل سماء مسيرة خمسمائة عام و غلظ كل سماء مسيرة خمسمائة و بين السماء السابعة و بين الكرسي خمسمائة عام و بين الكرسي و بين الماء خمسمائة عام و العرش فوق الماء و اللّٰه فوق العرش و لا يخفی عليه شيء من أعمالكم_

অর্থ :

ইবনু মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন যে, নিকটবর্তী আকাশ ও তার নিচের (তথা পৃথিবীর) মধ্যকার দুরত্ব হচ্ছে ৫০০ বছরের পথ। এবং প্রত্যেক আকাশের মধ্যবর্তী দুরত্ব হচ্ছে ৫০০ বছরের পথ। এবং প্রত্যেক আসমানের পুরুত্ব ৫০০ শত বছরের পথ। এবং সপ্তম আসমান ও কুরসীর মধ্যকার দুরত্ব ৫০০ বছরের পথ। এবং কুরসী ও পানির মধ্যকার দুরত্ব ৫০০ বছরের পথ। এবং আরশ পানির উপরে আছে, এবং আল্লাহ আরশের উপরে আছেন, এবং তোমাদের কোনোকিছুর তাঁর নিকট গোপন নয়।

এই মাওক্বুফ বর্ণনাটি ইবনু মাসউদ (রা) হতে "হাসান" সনদে প্রমাণিত।

এই হাদিসটি ইবনু মাসউদ (রা) হতে মাওক্বুফরূপে বর্ণনা করেছেন,

১. আদ-দারিমী (রহ) তাঁর "আর-রদ্দু আলাজ-জাহমিয়াহ"(ক্র/81) গ্রন্থে এবং "আর-রদ্দু আলাল মারিসী"(1/471,519) গ্রন্থে।

২. ইবনু খুযাইমাহ (রহ) তাঁর "আত-তাওহিদ"(1/242,244) গ্রন্থে।

৩. আত-তাবারী (রহ) তাঁর "জামিউল বায়ান"(23/78) গ্রন্থে।

৪.  আবুশ-শায়খ (রহ) তাঁর "আল-আযমাহ"[(2/688)&(3/1047)] গ্রন্থে।

৫. আবুল-লাইস (রহ) তাঁর "বাহরুল উলুম"(1/169) গ্রন্থে।

৬. আত-তাবারানী (রহ) তাঁর "আল-মুজামুল কাবির"(হা/8987) গ্রন্থে।

৭. ইবনু আব্দিল-বার (রহ) তাঁর "আত-তামহিদ" (7/139) গ্রন্থে।

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত উক্ত মাওক্বুফ হাদিসটির হুকুম মারফুউ নাকি না, এবার সেব্যাপারে আলোচনা করা হবে।

কোনো সাহাবি যদি এমন কোনো তথ্য বর্ণনা করেন যা কিনা ইজতিহাদ বা মেধার দ্বারা জানা সম্ভব নয় বা যা কিনা ইলমুল গায়েবের অন্তর্ভুক্ত, তাহলে উক্ত সাহাবি কর্তৃক বর্ণিত এই ধরনের তথ্যটির হুকুম হবে এই যে তা "মারফু", তবে এই হুকুম প্রযোজ্য হয়ার জন্য একটা শর্ত আছে, শর্তটা হচ্ছে এই যে সেই সাহাবি ইসরাইলি উৎস হতে তথ্য গ্রহণকারী হতে পারবেন না। যদি তিনি ইসরাইলি উৎস হতে তথ্য গ্রহণকারী হয়ে থাকেন এবং তাঁর কর্তৃক বর্ণিত এইধরনের কোনো একটি তথ্যের ইসরাইলি উৎস হতে গ্রহণকৃত হয়ার সম্ভাবনা থেকে থাকে, তাহলে তাঁর কর্তৃক বর্ণিত এই ধরনের তথ্যটির হুকুম মোটেও মারফু হবেনা।

[দেখুন : ইবনু হাজার, আন-নুকত (2/532) এবং আন-নুখবাহ (পৃ/49]

ইবনু মাসউদ (রা) একজন সাহাবি, উক্ত হাদিসে তিনি ভুপৃষ্ঠ ও প্রথম আসমানের মধ্যকার দুরত্ব, সাত আসমানের পরস্পরের মধ্যকার ব্যবধান, সপ্তম আসমান হতে কুরসির দুরত্ব এবং প্রত্যেক আসমানের পুরত্ব এর বর্ণনা দিয়েছেন। এসব বিষয়ই এমন, যা কিনা ইজতিহাদ বা মেধার দ্বারা জানা সম্ভব নয় বরং ইলমুল গায়েবের অন্তর্ভুক্ত।

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) প্রকৃতপক্ষে ইসরাইলি উৎস হতে তথ্য গ্রহণকারী ছিলেন! 

ইবনু মাসউদ (রা) এর ব্যাপারে বলা হয়ে থাকে যে, তিনি নাকি ইসরাইলি উৎস হতে তথ্য গ্রহণ করতেন না, এটা সম্পুর্ণ ভুল। বরং বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, তিনিও ইসরাইলি উৎস হতে তথ্য গ্রহণ করতেন। উনার মধ্যে ইসরাইলি উৎস হতে তথ্য গ্রহণের প্রবণতাটা অন্যান্য বিভিন্ন সাহাবিদের তুলনায় কম ছিল, তবে ছিল।

নিম্নে ইবনু মাসউদ (রা) হতে মাওক্বুফরূপে বর্ণিত কিছু ইসরাইলি তথ্যবিশিষ্ট হাদিস উল্লেখ্য করা হলো।

এক.

ইবনু কাসির (রহ) নিজ তাফসিরগ্রন্থে উল্লেখ্য করেছেন যে,

عَنْ أَبِي الْأَحْوَصِ قَالَ افْتَخَرَ رجل عند ابن مسعود رضي الله عنه فَقَالَ: أَنَا فُلَانُ بْنُ فُلَانٍ ابْنُ الْأَشْيَاخِ الكرام، فقال عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ذَاكَ يُوسُفُ بْنُ يَعْقُوبَ بْنِ إِسْحَاقَ ذَبِيحِ الله ابن إبراهيم خليل الله.

অর্থ:
আবুল-আহওয়াস হতে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে, এক লোক ইবনু মাসউদ (রা) এর নিকট এসে অহংকার করে বললো যে 'আমি অমুক বিন অমুক ইবনুল আশইয়াখিল কিরাম', ফলে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) বললেন 'ঐ ইউসুফ বিন ইয়াক্বুব বিন ইসহাক্ব যাবিহুল্লাহ ইবনু ইব্রাহিম খালিলুল্লাহ।'

অতঃপর উক্ত বর্ণনাটি সম্পর্কে ইবনু কাসির (রহ) বলেছেন যে,
وهذا صحيح عن ابن مسعود رضي الله عنه
অর্থ : এবং এটা ইবনু মাসউদ (রা) হতে সহিহ।

অতঃপর তিনি (ইবনু কাসির রহ.)  ইবনু মাসউদ (রা) এর উক্ত বর্ণনাটিসহ অন্যান্যকিছু বর্ণনা সম্পর্কে বলেছেন যে এসব বর্ণনাই মূলত ইসরাইলি উৎস হতে গ্রহণকৃত।

[দেখুন : তাফসিরু ইবনে কাছির (7/28)]

দুই.

ইবনু আবি হাতিম (রহ) তাঁর তাফসিরে বর্ণনা করেছেন যে,

حَدَّثَنَا يُونُسُ بْنُ حَبِيبٍ ثنا أَبُو دَاوُدَ، ثنا شُعْبَةُ، عَنْ سُلَيْمَانَ الأَعْمَشِ عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ أَبِي مَعْمَرٍ الأَزْدِيِّ، عَنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: كَانَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ تَقْتُلُ فِي الْيَوْمِ ثَلَاثَمِائَةِ نَبِيٍّ، ثُمَّ يَقُومُ سُوقُ بَقْلِهِمْ مِنْ آخِرِ النهار.

অর্থ :

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত যে তিনি বলেছেন যে বনু ইসরাইলবাসীরা এক দিনে তিনশ জন নবীকে হত্যা করতো …

উক্ত বর্ণনাটির সনদ সম্পর্কে আল-আলবানী (রহ) বলেছেন যে,

قلت: وهذا إسناد صحيح؛ إن كان الطيالسي قد ثبت السند إليه به

অর্থ: আমি (আল-আলবানী) বলব যে, এই সনদটি সহিহ ; যদি আত-তায়ালসী পর্যন্ত সনদ প্রমাণিত হয়ে থাকে।

ইবনু আবি হাতিম (রহ) উনার তাফসিরগ্রন্থে ছিকাহ রাবি 'ইউনুস বিন হাবিব' কে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে আবু-দাউদ আত-তায়ালসি পর্যন্ত সনদভিত্তিক সংযোগ স্থাপন করাপুর্বক আত-তায়ালসির সুত্র ধরে ইবনু মাসউদ (রা) পর্যন্ত সনদ পৌছিয়ে ইবনু মাসউদ (রা) হতে উক্ত হাদিসটি মাওক্বুফরূপে বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ আত-তায়ালসি পর্যন্ত সহিহভাবে সনদ প্রমাণিত আছে। সুতরাং উক্ত বর্ণনাটির সনদ ইবনু মাসউদ (রা) পর্যন্ত সহিহ।

উক্ত বর্ণনাটি সম্পর্কে আল-আলবানী (রহ) আরো বলেছেন যে,

فإن صح عنه؛ فهو من الإسرائيليات الباطلة التي يكذبها العقل والنقل

অর্থ : যদি এটা ইবনু মাসউদ (রা) হতে সহিহভাবে বর্ণিত হয়ে থাকে, তাহলে এটা বাতিল পরিত্যাজ্য ইসরাইলি তথ্যসমুহের অন্তর্ভুক্ত হবে যেগুলোকে কিনা আক্বল ও নক্বল মিথ্যা সাব্যস্ত করে।

অতঃপর আল-আলবানী (রহ) ইবনু মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত উক্ত বর্ণনাটি  ঠিক কেন ও কিভাবে পরিত্যাজ্য, বাতিল ও বাস্তবতাবিরোধী, তা সুবিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।

[দেখুন : তাফসিরু ইবনে আবি হাতেম (3/736), সিলসিলাতুয যইফাহ (11/813-814)]

তিন.

ইবনু আবি শাইবাহ (রহ) তাঁর মুসান্নাফগ্রন্থে ইবনু মাসউদ (রা) হতে মাওক্বুফরূপে বর্ণনা করেছেন যে,

حَدَّثَنَا ابْنُ سَعْدٍ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ، عَنْ أَبِي الزَّعْرَاءَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ: «أَنَّ رَاهِبًا عَبَدَ اللَّهَ، فِي صَوْمَعَتِهِ سِتِّينَ سَنَةً، فَجَاءَتِ امْرَأَةٌ فَنَزَلَتْ إِلَى جَنْبِهِ، فَنَزَلَ إِلَيْهَا فَوَاقَعَهَا سِتَّ لَيَالٍ، ثُمَّ سُقِطَ فِي يَدِهِ، ثُمَّ هَرَبَ فَأَتَى مَسْجِدًا فَأَوَى فِيهِ، فَمَكَثَ ثَلَاثًا لَا يَطْعَمُ شَيْئًا، فَأُتِيَ بِرَغِيفٍ فَكَسَرَ نِصْفَهُ فَأَعْطَاهُ رَجُلًا عَنْ يَمِينِهِ، وَأَعْطَى الْآخَرَ رَجُلًا عَنْ يَسَارِهِ، ثُمَّ بُعِثَ إِلَيْهِ مَلَكٌ فَقَبَضَ رُوحَهُ، فَوُضِعَ عَمَلُ سِتِّينَ سَنَةً فِي كِفَّةٍ، وَوُضِعَتِ السَّيِّئَةُ فِي أُخْرَى فَرَجَحَتْ، ثُمَّ جِيءَ بِالرَّغِيفِ فَرَجَحَ بِالسَّيِّئَةِ»

ইবনু আবি শাইবাহর (রহ) উক্ত বর্ণনাটির অনুরূপ সনদে ও মতনে মাওক্বুফরূপে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইসহাক (রহ) নিজ মুসনাদ গ্রন্থে।

তাছারা ইসহাক (রহ) তাঁর মুসনাদ গ্রন্থে আরেকটি ভিন্ন সনদে উক্ত মাওক্বুফ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন,

أخبرنا النَّضْرُ بْنُ شُمَيْلٍ، حمَّاد بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ أَبِي النَّجُودِ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: تَعَبَّدَ رَجُلٌ سِتِّينَ سَنَةً .. فَذَكَرَ نَحْوَهُ

আবুয-যা'রা পর্যন্ত পৌছানো সনদটি সম্পর্কে মুহাক্কিক আহমদ বিন মুহাম্মদ বলেছেন যে "এই সনদটি সহিহ", এবং আল-আলবানী (রহ) বলেছেন যে "এই সনদটি জাইয়েদ।"

ইসহাক (রহ) কর্তৃক নিজ মুসনাদ গ্রন্থে বর্ণিত ভিন্ন সনদটি অর্থাৎ আবু-ওয়াইল পর্যন্ত পৌছানো সনদটি সম্পর্কে ইবনু হাজার আল-আসকালানী (রহ) বলেছেন যে "এই সনদটি সহিহ মাওক্বুফ", এবং মুহাক্কিক আহমদ বিন মুহাম্মদ বলেছেন যে "এই সনদটি হাসান।"

নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী (রহ) উক্ত বর্ণনাটি সম্পর্কে বলেছেন যে "উক্ত বর্ণনাটি ইবনু মাসউদ (রা) হতে সহিহভাবে মাওক্বুফরূপে প্রমাণিত হয়েছে। "

উক্ত বর্ণনাটি রাসুল (সা) হতেও মারফুউরূপে বর্ণিত হয়েছে, তবে রাসুল (সা) হতে এটি প্রমাণিত নয় বরং অত্যন্ত মুনকার । অর্থাৎ উক্ত বর্ণনাটি মারফুউ হিসেবে মুনকার, মাওক্বুফ হিসেবে ইবনু মাসউদ (রা) হতে সহিহ।

ইবনু মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত উক্ত মাওক্বুফ হাদিসটি সম্পর্কে আল-আলবানী (রহ) বলেছেন যে,
ويغلب علی طني أن أصل الحديث من الإسرائيليات

অর্থ : এবং আমার এইমর্মে তীব্র সন্দেহ হচ্ছে যে এই হাদিসটির মূল উৎস হলো ইসরাইলিয়াত।

দেখুন :

১.মুসান্নাফু ইবনে আবি-শাইবাহ (2/351 এবং 7/61 , হা/9813 এবং 34211)

২.'আহমদ বিন মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ' কর্তৃক তাহকিককৃত ইবনু হাজার (রহ) এর গ্রন্থ "আল-মাতালিবুল আলিয়াহ" এর 14 নং খন্ডের পৃষ্ঠা নং 291-293

৩. আল-আলবানী,সিলসিলাতুয যইফাহ (14/874-875)

ইবনু মাসউদ (রা) যে ইসরাইলি উৎস হতে তথ্য গ্রহণ করতেন তা প্রমাণের জন্য এই তিনটি উদাহরণই যথেষ্ট হয়ার কথা, কাজেই আরো উদাহরণ নিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মনে করছিনা, যদিও এগুলো ছাড়াও এরকম আরো অনেক উদাহরণ আনা যাবে।

ইবনু মাসউদ (রা) এই যেই গায়েবসক্রান্ত বিষয়গুলোর বর্ণনা দিয়েছেন, এগুলো কোরআন ও সহিহ হাদিস দ্বারা সমর্থিত নয়, কাজেই এক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা আছে যে তিনি এসব তথ্য ইসরাইলি উৎস হতে নিয়েছেন।

আর যেহেতু এই সম্ভাবনা আছে যে তিনি এসব দুরত্ব, ব্যবধান ও পুরুত্ব সক্রান্ত তথ্যগুলো ইসরাইলি উৎস হতে নিয়েছেন, সেহেতু এক্ষেত্রে উনার বর্ণিত এই তথ্যগুলোর হুকুম মারফুউ হবেনা।

সুতরাং ইবনু মাসউদ (রা) কর্তৃক উক্ত হাদিসে বর্ণিত দুরত্ব, ব্যবধান ও পুরুত্ব সক্রান্ত তথ্যগুলো মোটেও অকাট্য কোনোকিছু নয়, এমনকিছু নয় যার সঠিকতা নিশ্চিত।

ইবনু মাসউদ (রা) এর উক্ত বর্ণনাটির হুকুম মারফুউ নাকি না, এতক্ষণ সেব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে।

এবার, ইবনু মাসউদ (রা) এর উক্ত বর্ণনাটিতে বর্ণিত কিছু বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

প্রথম আকাশ ও ভুপৃষ্ঠের মধ্যকার দূরত্ব, সাত আকাশের পরস্পরের মধ্যকার ব্যবধান, প্রত্যেক আসমানের পুরুত্ব, সপ্তম আকাশ ও কুরসীর মধ্যকার দুরত্ব এবং কুরসী ও আরশীয় পানির মধ্যকার ব্যবধান ; এই সবকিছুর ক্ষেত্রেই ইবনু মাসউদ (রা) বলেছেন যে তা পাঁচশত বছরের পথ।

লক্ষ্য করুন, ইবনু মাসউদ (রা) কিন্ত উনার সময়ে প্রচলিত কোনো  দুরত্ব পরিমাপের একক ব্যবহার করেন নি, তিনি বলেছেন "৫০০ বছরের পথ।"

এখন এই "৫০০ বছরের পথ" এর হিসাবটা দেয়া হয়েছে মূলত জিব্রাইল (আ) এর গতি সাপেক্ষে। জিব্রাইল (আ) যেই গতিতে মহাশুণ্যে চলাচল করেন সেই গতিতে চললে
এসব দুরত্ব পুরুত্ব ও ব্যবধান অতিক্রম করতে ৫০০ বছর লাগবে।

[দেখুন : ইমাম আহমাদ ,আর-রদ্দু আলাজ জাহমিয়াহ (পৃ/70)]

অর্থাৎ এক্ষেত্রে,

৫০০ বছরের পথ = জিব্রাইল (আ) ৫০০ বছরে যেই পরিমাণ পথ অতিক্রম করেন।

এখন,জিব্রাইল (আ) একক সময়ে কি পরিমাণ দুরত্ব অতিক্রম করেন, তা অজানা।

সুতরাং জিব্রাইল (আ) ১ বছরে কি পরিমাণ দুরত্ব অতিক্রম করেন, তাও অজানা।

সুতরাং জিব্রাইল (আ) ৫০০ বছরে কি পরিমাণ দুরত্ব অতিক্রম করেন, তাও অজানা।

সুতরাং "৫০০ বছরের পথ = দুরত্বের হিসেবে কত? ", এটাও অজানা।

যেহেতু কী পরিমাণ পথ অতিক্রম করতে জিব্রাইল (আ) এর ৫০০ বছর লাগে, তা অজানা, সেহেতু ৫০০ বছরের পথ বলতে কি পরিমাণ পথ উদ্দেশ্য, তাও অজানা। 

ইবনু মাসউদ (রা) এর উক্ত হাদিসে মোট ৫ ধরনের দুরত্ব, ব্যবধান ও পুরুত্বের কথা বলা হয়েছে, আর সবক্ষেত্রেই ৫০০ বছরের পথ বলে হিসাব দেয়া হয়েছে, ব্যাপারটাকে এভাবে উপস্থাপন করা যায় :

১.প্রথম আকাশ ও ভুপৃষ্ঠের মধ্যকার দুরত্ব = ৫০০ বছরের পথ।

২.সাত আকাশের পরস্পরের মধ্যকার দুরত্ব = ৫০০ বছরের পথ।

৩.প্রত্যেক আকাশের পুরুত্ব  = ৫০০ বছরের পথ।

৪.সপ্তম আকাশ ও কুরসীর মধ্যকার দুরত্ব = ৫০০ বছরের পথ।

৫.কুরসী ও আরশীয় পানির মধ্যকার দুরত্ব = ৫০০ বছরের পথ।

আর ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করেছি যে এই ৫০০ বছরের পথ বলতে কি পরিমাণ পথ উদ্দেশ্য তা অজানা।

সুতরাং,

প্রথম আকাশ ও ভুপৃষ্ঠের মধ্যকার দুরুত্ব, সাত আকাশের পরস্পরের মধ্যকার দুরত্ব, প্রত্যেক আকাশের পুরুত্ব, সপ্তম আকাশ ও কুরসীর মধ্যকার দুরত্ব, কুরসী ও আরশীয় পানির মধ্যকার দুরুত্ব … এসবকিছুর পরিমাণই অজানা, কেননা ৫০০ বছরের পথ বলতে কি পরিমাণ পথ উদ্দেশ্য তা নিজেই অজানা।