শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি সম্পর্কে একটি আলোচনা।

 

বিষয় : শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিস সম্পর্কে একটি আলোচনা।
লেখক : সামিউল-হাসান তবিব আল-ইনফিরাদী

0. সুচিপত্র :-

1. সুচনা।
2. আলোচ্য বিষয়টির সাথে সম্পৃক্ত কিছু অস্পষ্টতা, আপত্তি ও জটিলতা প্রসঙ্গে ব্যাখ্যামুলক আলোচনা।
3.আলোচ্য হাদিসটির সুত্রসমুহের উপস্থাপনা ও আল-আখদ্বারের সুত্রটির অসারতার বর্ণনা।
4. হাদিসটির ইল্লত বা দুর্বলতাসমুহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।
5. উক্ত হাদিসকে ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্তকারী কিছু আলেমদের তালিকা।
6. উক্ত হাদিসকে ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্তকারী আলেমদের সংখ্যাটা কি কম?
7. আলোচ্য হাদিসের শুদ্ধতার ব্যাপারে অধিকাংশ আলেমদের মত আসলে কী?
8.  'সহিহ মুসলিমের সব হাদিসের সহিহ হয়ার উপর ইজমা থাকা' বা 'সহিহ মুসলিমের সব হাদিস সহিহ হয়া' বনাম 'আলোচ্য হাদিসের ইল্লতবিশিষ্ট হয়া'।
9. আলোচ্য হাদিসটিকে ইল্লত-মুক্ত সহিহ সাব্যস্তকারী উলামাদের ব্যাপারে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
10. সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কিছু উল্লেখ্যযোগ্য বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচনা।
11. আলোচ্য হাদিসটি যইফ হয়ার মতটিই অধিক সঠিক।
12. পরিশিষ্ট (আলোচ্য হাদিসটি বিজ্ঞানবিরোধী নয়)।
13. উপসংহার।
14. টিকাসমুহ।

1.সুচনা : -

সহিহ মুসলিমে বর্ণিত একটি বিতর্কিত হাদিসে বলা হয়েছে যে আল্লাহ তায়ালা অমুক অমুক বারে তমুক তমুক জিনিস সৃষ্টি করেছেন। এই হাদিসটিকে আলেমদের একটা বড় অংশ ইল্লতযুক্ত তথা যইফ সাব্যস্ত করেছেন। এই লেখাটিতে,সহিহ মুসলিমের উক্ত হাদিস এবং উক্ত হাদিসের ইল্লতবিশিষ্ট হয়া সম্পর্কে  আলোচনা করা হবে।

হাদিসটি নিম্নরুপ ;

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِيَدِي فَقَالَ ‏ "‏ خَلَقَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ التُّرْبَةَ يَوْمَ السَّبْتِ وَخَلَقَ فِيهَا الْجِبَالَ يَوْمَ الأَحَدِ وَخَلَقَ الشَّجَرَ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَخَلَقَ الْمَكْرُوهَ يَوْمَ الثُّلاَثَاءِ وَخَلَقَ النُّورَ يَوْمَ الأَرْبِعَاءِ وَبَثَّ فِيهَا الدَّوَابَّ يَوْمَ الْخَمِيسِ وَخَلَقَ آدَمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ بَعْدَ الْعَصْرِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فِي آخِرِ الْخَلْقِ وَفِي آخِرِ سَاعَةٍ مِنْ سَاعَاتِ الْجُمُعَةِ فِيمَا بَيْنَ الْعَصْرِ إِلَى اللَّيْلِ ‏"‏ ‏…[1]

অনুবাদ (hadithbd.com হতে উল্লেখিত) : "আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার হাত ধরে বললেন, আল্লাহ তা’আলা শনিবার দিন মাটি সৃষ্টি করেন এবং এতে পর্বত সৃষ্টি করেন রবিবার দিন। সোমবার দিন তিনি বৃক্ষরাজি সৃষ্টি করেন। মঙ্গলবার দিন তিনি বিপদাপদ সৃষ্টি করেন। তিনি নূর সৃষ্টি করেন বুধবার দিন। তিনি বৃহস্পতিবার দিন পৃথিবীতে পশু-পাখি ছড়িয়ে দেন এবং জুমুআর দিন আসরের পর জুমুআর দিনের শেষ মুহূর্তে অর্থাৎ আসর থেকে নিয়ে রাত পর্যন্ত সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে সর্বশেষ মাখলুক আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করেন। "

2.আলোচ্য বিষয়টির সাথে সম্পৃক্ত কিছু অস্পষ্টতা, আপত্তি ও জটিলতা প্রসঙ্গে ব্যাখ্যামুলক আলোচনা :-

মুল আলোচনায় যাওয়ার পুর্বে, অন্যান্য কিছু গুরুত্বপুর্ণ বিষয় সম্পর্কে আলাদাভাবে বিস্তারিত আলোচনা করে সবকিছু একদম শুরুতেই সুস্পষ্ট করে নেয়াটা জরুরি। অন্যথায়, পরবর্তীতে মুল আলোচনার মধ্য হতে বিভিন্ন অস্পষ্টতা ও জটিলতা দেখা দিতে পারে ; বিভিন্ন রকমের আপত্তি করা যেতে পারে।

সহিহ মুসলিমের উক্ত হাদিসটির ইল্লতবিশিষ্ট হয়ার ব্যাপারে কথা আনলে সর্বপ্রথম যেই প্রশ্নটি অনেকের মাথায় আসে তা হলো এই যে ;

"সহিহ মুসলিমের সব হাদিসের সহিহ হয়ার ব্যাপারেত ইজমা আছে!  তাহলে কিভাবে এই সহিহ মুসলিমের হাদিসটি ইল্লতবিশিষ্ট যইফ হতে পারে?"

এই প্রশ্নটি একটি যৌক্তিক প্রশ্ন, ও এর উত্তর নিম্নরুপ ;

প্রকৃতপক্ষে, সহিহ মুসলিমের একদম শতভাগ হাদিসের অর্থাৎ 'প্রত্যেকটা' হাদিসের সহিহ হয়ার উপর ইজমা কিংবা ইত্তেফাক (ইত্তেফাক মানে হচ্ছে সামান্য কয়েকজন বাদে বাকি সকল আলেমদের ঐক্যমত হয়া) সংঘটিত হয়নি। সহিহ মুসলিমের প্রায় ৭২০০ এর মতো হাদিসের মধ্যে 'প্রায়' সবগুলোর ক্ষেত্রেই সহিহ হয়ার ইজমা (কিছুক্ষেত্রে ইত্তেফাক) সংঘটিত হয়েছে, কিন্ত এই ৭২০০ এর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটা হাদিস এমনও আছে যেগুলোর সহিহ হয়ার ব্যাপারে ইজমা হয়নি বরং সেগুলোর ব্যাপারে অনেক মুহাদ্দিসের সমালোচনা আছে। স্পষ্টতই, যেগুলোর ব্যাপারে ইজমা হয়নি সেগুলোর সংখ্যা অনেক অনেক অনেক কম ও ছোট। এই যেই হাদিসগুলোর ব্যাপারে সহিহ হয়ার ইজমা হয়নি, সেগুলোর ক্ষেত্রে, এই বলে উক্ত হাদিসগুলোর ব্যাপারে আসা সমালোচনাগুলোকে উড়িয়ে দেয়া যাবেনা কিংবা এই বলে উক্ত হাদিসগুলোকে সহিহ বলে দেয়া যাবেনা যে "এটা সহিহ মুসলিমের হাদিস, সহিহ মুসলিমের হাদিস মানেই তা সহিহ, সহিহ মুসলিমের সব হাদিসের সহিহ হয়ার উপর ইজমা আছে। " বরং সহিহ হয়ার ইজমা হয়নি এমন হাদিসগুলোর ক্ষেত্রে সাধারণভাবেই হাদিসশাস্ত্রের প্রচলিত নিতীমালাসমুহ প্রয়োগ করে আলাদাভাবে যাচাই করে নেয়া হবে যে হাদিসগুলো সহিহ, নাকি সহিহ না ;  আর এটা যাচাই করা অবশ্যই মুহাদ্দিসদের কাজ। তাছারা এই লেখাটিতে যেই হাদিসটির ব্যাপারে আলোচনা করা হচ্ছে সেই হাদিসটি মুলত সহিহ মুসলিমের সেইসব ব্যাতিক্রমী হাদিসসমুহের অন্তর্ভুক্ত একটি, যেগুলোর সহিহ হয়ার ব্যাপারে ইজমা হয়নি।

"সহিহ মুসলিমের সব হাদিস সহিহ হয়ার উপর ইজমা আছে " এই কথা সহিহ মুসলিমের সমালোচিত ব্যাতিক্রমী হাদিসগুলো বাদে বাকি সব হাদিসের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে প্রযোজ্য হবে। সহিহ মুসলিমের সমালোচিত ব্যাতিক্রমী হাদিসগুলোর জন্য একথা প্রযোজ্য হবেনা।

"ইবনু আবিল-ইযয" রহ. বুখারি ও মুসলিমের হাদিসগুলোর বিশুদ্ধতার ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের দৃষ্টিভংগি বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন ;

"অনুরুপভাবে, সহিহাইনের হাদিসসমুহের সহিহ সাব্যস্তকরণে হাদিসবিশারদগণ আল-বুখারী ও মুসলিম এর অন্ধ-অনুসরণ করেন নি। বরং ইমাম বুখারী ও মুসলিম যেসব হাদিসকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন, সেসব হাদিস তাঁদের দুজনের পুর্বে আগত হাদিসশাস্ত্রের ইমামদের নিকটও সহিহই ছিলো, সেগুলোর গ্রহণযোগ্য হয়ার ব্যাপারে সকলের ঐক্যমত ছিলো, এবং অনুরূপ বিষয় প্রযোজ্য তাঁদের দুজনের সমসাময়িক ও পরবর্তী যূগসমুহের জন্য। এই (হাদিস)শাস্ত্রের ইমামগণ তাঁদের দুজনের দুটি গ্রন্থ (তথা সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম) নিয়ে ঘাটাঘাটি করেছেন। এবং তাঁরা সবাই এদুজন যেসব হাদিসকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন সেসব হাদিসের সহিহ সাব্যস্তকরণে এদুজনের সহিত সহমত পোষণ করেছেন, তবে অল্পকিছু ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম ঘটেছে। প্রায় বিশটির মতো এমন হাদিস আছে ; অবশ্য এর বেশিরভাগই সহিহ মুসলিমের অন্তর্ভুক্ত ; যেগুলোর উপর একদল হাফিযদের সমালোচনা রয়েছে। একদল আবার সমালোচনাকারী হাফিযদের বিরুদ্ধে তাঁদের দুজনের পক্ষ অবলম্বন করেছেন, এবং আরেকদল সমালোচনাকারীদের মতকেই সঠিক বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ও সঠিক ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করেছেন। অবশ্যই সেসব সমালোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে এমন কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে যেগুলোর সমালোচিত হয়ার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। উদাহরণস্বরুপ  ; সহিহ মুসলিমের উম্মে হাবিবাহর হাদিস, শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিস।  "_[2]

এবার এই উত্তরের ব্যাপারে অনেকে পালটা প্রশ্ন আনতে পারে যে ;

"বিপুল সংখ্যাক আলেমদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে তাঁরা তাদের বিভিন্ন গ্রন্থে বলেছেন যে সহিহ মুসলিমের সকল হাদিসের সহিহ হয়ার উপর সারা উম্মতের ইজমা আছে, যদি বাস্তবেই সহিহ মুসলিমে খুবই অল্প সংখ্যাক এমন হাদিস থেকে থাকে যার সহিহ উপর ইজমা নেই, তাহলে এত বিপুল সংখ্যাক আলেমরা কেন বললেন যে সহিহ মুসলিমের সব হাদিস সহিহ হয়ার উপর ইজমা আছে !? "

নিম্নে এই প্রশ্নটির বিস্তারিত উত্তর দেয়া হলো।

সহিহ মুসলিমের অন্তর্ভুক্ত সেই সামান্য সংখ্যাক সমালোচিত হাদিসগুলোকে দুইভাগে ভাগ করা যায়।প্রথম ভাগ - সেইসব সমালোচিত হাদিস, যেগুলোর ক্ষেত্রে খুবই সল্প সংখ্যাক মুহাদ্দিসদের সমালোচনা পাওয়া যায়। এবং এর বিপরীতে অধিকাংশ মুহাদ্দিসদের নিকট হতে উক্ত হাদিসের সহিহ বা হাসান সাব্যস্তকরণ পাওয়া যায়।দ্বিতীয় ভাগ - সেইসব সমালোচিত হাদিস, যেগুলোর উপর আলেমদের একটা বিশাল বড় অংশের সমালোচনা পাওয়া যায়।প্রথম ভাগের হাদিসগুলোর বেলায় ইজমা না থাকলেও সেগুলো সহিহই, কারণ বেশিরভাগ মুহাদ্দিসরাই সেগুলোর সহিহ হয়ার পক্ষে ও বিপরীতে খুবই সল্প সংখ্যাক মুহাদ্দিসরা সেগুলোর যইফ হয়ার পক্ষে, যার ফলে ইজমা না হলেও ইত্তেফাক ঠিকিই হবে, আর হাদিসশাস্ত্রের ক্ষেত্রে ইত্তেফাকের সিদ্ধান্তই অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। কাজেই এই ভাগের হাদিসগুলো নিয়ে কোনো চিন্তার দরকার নাই। এক্ষেত্রে মুল বিবেচনার বিষয় হচ্ছে দ্বিতীয় ভাগের হাদিসগুলো, এগুলো প্রকৃতপক্ষেই যইফ বা ইল্লতবিশিষ্ট হতে পারে। উল্লেখ্য ; আলোচ্য হাদিসটি দ্বিতীয় ভাগের সমালোচিত হাদিসগুলোর অন্তর্ভুক্ত একটি, কারণ এই হাদিসের উপর সমালোচনাকারী আলেমদের সংখ্যা যথেষ্ট বেশি।এবার মুল কথায় আসি।

যখন কোনো একটা বিষয়ের বেলায় এক বা একাধিক নির্দিষ্ট ব্যাতিক্রম সাব্যস্তকারী কারণের  দরুন খুবই অল্প ও সামান্য সংখ্যাক 'ব্যাতিক্রম'(Exception) পাওয়া যায় বা বিদ্যমান থাকে ; এবং উক্ত ব্যাতিক্রমসমুহকে বাদে বাকি সবকিছুই কোনো একটা নির্দিষ্ট বিবেচনার-অধীন বিষয়ের দিক দিয়ে একইরকম বা একই ধরনের হয় ও ব্যাতিক্রম সাব্যস্তকারী কারণ হতে মুক্ত হয় ; তখন মানুষ ব্যাতিক্রমগুলোকে উল্লেখ্য করা বা বিবেচনা করা ছাড়াই সাধারণীকরণ (generalization) করা পুর্বক বিষয়টাকে এমনসব কথায় উপস্থাপন করে, যেসব কথাদ্বারা ব্যাহ্যিকভাবে মনে হবে যেন বিষয়টির বেলায় কোনো ব্যাতিক্রম (Exception)  ই নেই, যদিও বাস্তবে ব্যাতিক্রম ( Exception) থাকতে পারে।
ব্যাতিক্রমের পরিমাণ খুবই সামান্য  হলে উক্ত ব্যাতিক্রমগুলোকে বিবেচনার বাহিরে রেখে সাধারণীকরণকরাপুর্বক বর্ণনা করার প্রবণতাটি মানুষদের মধ্যে খুবই সাধারন একটা বৈশিষ্ট, প্রায় সবার মাঝেই কথা বলার ক্ষেত্রে এই বৈশিষ্টটি দেখা যায়। কোনো সৎ ও মানসিকভাবে সুস্থ মানুষই এই বৈশিষ্টকে অস্বীকার করবেনা। এই বৈশিষ্টের পক্ষে অগণিত উদাহরণ দেয়া যাবে।

অতএব, বিপুল সংখ্যাক আলেমদের কর্তৃক সহিহ মুসলিমের 'সব হাদিসের' সহিহ হয়ার উপর উপর ইজমা হয়ার কথা  উল্লেখ্য করাদ্বারা এটা প্রমাণিত হয়না বা সাব্যস্ত হয়না যে উনারা সহিহ মুসলিমের সেই অতি-অল্প সংখ্যাক সমালোচিত হাদিসগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করে নিয়ে এমনটা বলেছেন। বরং এক্ষেত্রে এটাও হতে পারে যে উনারা ব্যাতিক্রমগুলোকে বিবেচনার বাহিরে রেখে সাধারণীকরণ করে এমনটা বলেছেন। উনাদের কর্তৃক সহিহ মুসলিমের 'সব হাদিসের' সহিহ হয়ার উপর ইজমা থাকার কথা দ্বারা এটাও সাব্যস্ত হয়না যে উনারা সেই অতি-অল্প সংখ্যাক সমালোচিত হাদিসগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেই এমনটা বলেছেন, আবার একইভাবে এটাও সাব্যাস্ত হয়না যে উনারা সেই অতি-অল্প সংখ্যাক সমালোচিত হাদিসগুলোকে অন্তর্ভুক্ত না করে এমনটা বলেছেন, অর্থাৎ উনাদের এইরকম কথা উল্লেখ্য করার দ্বারা সেই অতি-অল্প সংখ্যাক সমালোচিত হাদিসগুলোর ব্যাপারে কোনোকিছুই প্রমাণিত হয়না, কোনোকিছুই সাব্যাস্ত হয়না।পক্ষান্তরে, আলেমদের একটা অংশকে দেখা যায় যে তাঁরা উনাদের বিভিন্ন গ্রন্থে সহিহ মুসলিমের সব হাদিসের সহিহ হয়ার উপর ইজমা থাকার বিষয়টি উল্লেখ্য করার পাশাপাশি এটাও উল্লেখ্য করেছেন যে সহিহ মুসলিমে অতি-অল্প সংখ্যাক কিছু ব্যাতিক্রমী হাদিসও আছে যেগুলোর সহিহ হয়ার উপর ইজমা হয়নি বরং সেগুলোর উপর মুহাদ্দিসদের সমালোচনা আছে। উদাহরণস্বরুপ : ইবনু আবিল-ইযয রহ. এইমর্মে যার একটি বক্তব্য উপরে উল্লেখিত হয়েছে।  আর এব্যাপারটা অবশ্যই একটা বিষয় সাব্যস্ত করে, আর বিষয়টা হলো এই যে সহিহ মুসলিমের প্রায় সব হাদিসের সহিহ হয়ার উপর ইজমা থাকলেও অতি-অল্প সংখ্যাক কিছু ব্যাতিক্রম অবশ্যই আছে, যেগুলোর সহিহ হয়ার উপর ইজমা হয়নি।

এপ্রসঙ্গে আরেকটি তৃতীয় প্রশ্ন আনা যেতে পারে, যে ;

"বিপুল সংখ্যাক আলেমদের কর্তৃক সহিহ মুসলিমের সব হাদিসের সহিহ হয়ার উপর ইজমা থাকার কথা উল্লেখ্য করার ব্যাপারটাকে বাদ দিন। এব্যাপারটা বাদ দিলেও দেখা যায় যে বিপুল সংখ্যাক আলেমরা নিজেদের পক্ষ হতে নিজেদের ব্যাক্তিগত মতামত হিসেবে বলেছেন যে সহিহ মুসলিমের সব হাদিস সহিহ ; অর্থাৎ সেই আলেমদের দৃষ্টিতে সহিহ মুসলিমের সব হাদিসই সহিহ ; উনারা যাচাই বাছাই করেছেন ও উনাদের নিকট সহিহ মুসলিমের সব হাদিসকেই সহিহ মনে হয়েছে, যার মধ্যে কিনা সেইসব অল্প সংখ্যাক সমালোচিত হাদিসগুলোও অন্তর্ভুক্ত। তো, এরমানে কি এটা দাড়ালো না যে, আলোচ্য অমুক বারে তমুক জিনিস সৃষ্টির হাদিসের ব্যাপারে সমালোচনাকারী উলামাদের তুলনায় এই হাদিসকে পরোক্ষভাবে সহিহ সাব্যস্তকারী উলামাদের সংখ্যা অনেক বেশি?  কেননা সেই পরিমাণ আলেমরা 'সহিহ মুসলিমের সব হাদিস সহিহ' এই কথাটা বা এই কথাটার সমার্থক কথা বলেছেন, তাদের সংখ্যাত এই হাদিসের উপর সমালোচনাকারী উলামাদের তুলনায় অনেক বেশি! "

এই তৃতীয় প্রশ্নটির উত্তর নিম্নরুপ ;

পুর্বে দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে যেই ব্যাতিক্রম থাকা সত্ত্বেও ব্যাতিক্রমসমুহকে উপেক্ষা করে সাধারণীকরণ করে নেয়ার প্রবণতার ব্যাপারে উল্লেখ্য করা হয়েছে, সেই একই জিনিস এক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এই প্রবণতা অনুযায়ী,  যখন কোনো আলেম সাধারণভাবে বলবেন যে 'সহিহ মুসলিমের সব হাদিস সহিহ ', তখন এরদ্বারা সেই অতি-অল্প সংখ্যাক সমালোচিত হাদিসকেও তিনি অন্তর্ভুক্ত করেই এমনটা বলেছেন এমনটা নিশ্চিতভাবে বলার কোনো উপায় নেই, বরং হতে পারে অন্তর্ভুক্ত করে বলেছেন, হতে পারে অন্তর্ভুক্ত না করেই বলেছেন। অর্থাৎ, সেসব আলেমদের কর্তৃক সাধারণীকরণ সহকারে সহিহ মুসলিমের 'সব' হাদিসকে সহিহ বলার দ্বারা এটা সাব্যস্ত হয়না যে উনাদের নিকট সহিহ মুসলিমের অতিসামান্য সংখ্যাক সমালোচিত হাদিসগুলোও সহিহই ছিল, বা সহিহ মুসলিমে একটাও যইফ হাদিস নেই ; কারণ এরকম সাধারণীকরণ তখনও হয় যখন ব্যাতিক্রমের পরিমাণ প্রচন্ড কম হয়, আমরা জানি যে সহিহ মুসলিমের ব্যাতিক্রমী সমালোচিত হাদিসগুলোর সংখ্যা প্রচন্ড কম, যার অর্থ দারায় এই যে এক্ষেত্রে হতে পারে সেসব আলেমরা সামান্য ব্যাতিক্রম থাকা সত্ত্বেও জেনে বুঝেই সাধারণীকরণ করেছেন, আরো বিস্তারিতভাবে বললে এক্ষেত্রে তাঁরা ব্যাতিক্রমী হাদিসগুলোকে পরিমাণে খুবই কম হয়ায় বিবেচনার বাহিরে নিয়ে উপেক্ষা করে তারপর সাধারণীকরণকরাপুর্বক বলেছেন যে সহিহ মুসলিমের সব হাদিস সহিহ। অতএব, এসব আলেমদের কর্তৃক সাধারণভাবে 'সহিহ মুসলিমের সব হাদিস সহিহ' কথাটা বলাদ্বারা এটা প্রমাণিত হয়না যে উনাদের নিকট আলোচ্য হাদিসটিও সহিহ। কারণ উনাদের এরকম অর্থের বক্তব্যের মধ্য হতে আলোচ্য হাদিসের কিংবা সহিহ মুসলিমের অতি-অল্পসংখ্যাক সমালোচিত হাদিসগুলোর বিশুদ্ধতার ব্যাপারে উনাদের দৃষ্টিভংগি কি ছিলো তা ফোটে উঠে না, বরং তা এক্ষেত্রে অজানা বা অজ্ঞাত থেকে যায়।

উল্লেখ্য যে,একশ্রেণীর আলেমরা আবার 'সাধারণভাবে'  'সহিহ মুসলিমের সব হাদিস সহিহ' কথাটা বলেন নি, বরং তাঁরা এই কথাটা বলার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে একদম সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন যে উনারা সেসব অতি-সল্প সংখ্যাক সমালোচিত হাদিসগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করে নিয়ে সহিহ মুসলিমের প্রত্যেকটা হাদিসকেই সহিহ বলেছেন। অর্থাৎ উনারা এমন কিছু কথা বলেছেন যাদ্বারা সুস্পষ্ট  হয়ে যায় যে এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রমসমুহকে উপেক্ষা করাপুর্বক সাধারণীকরণের প্রবণতাটার কোনো প্রভাব নেই। এসব আলেমদের ক্ষেত্রে এব্যাপারে আমার দেয়া এই উত্তরটা প্রযোজ্য হবেনা। এসব আলেমদের এই ধরনের সুস্পষ্টকরণবিশিষ্ট বক্তব্যগুলোকে আলোচ্য হাদিসের সহিহ হয়ার পক্ষেও দলিল হিসেবে আনা যাবে। তবে এখানে মুল সমস্যা হচ্ছে এই যে, এই ধরনের সুস্পষ্টকরণবিশিষ্ট বক্তব্য প্রদানকারী আলেমদের সংখ্যা আলোচ্য হাদিসের সমালোচনাকারী আলেমদের সংখ্যার তুলনায়  'বিপুল' না, অর্থাৎ খুবই বেশি না, বরং তুলনামুলকভাবে কিছুটা কমই।

তাছারা এব্যাপারে আরেকটি চতুর্থ আপত্তি আসতে পারে, তা নিম্নরুপ ;

"যেসব আলেমরা সহিহ মুসলিমের আলোচ্য হাদিসটিকে ইল্লতবিশিষ্ট বা যইফ বলেছেন। তাঁদের সবাইকে একত্রে এনে বিবেচনা করলে দেখা যাবে যে তাঁদের একটা মোটামোটি বড় অংশই অন্যান্য বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ্য করেছেন যে 'সহিহ মুসলিমের সব হাদিস সহিহ ' বা 'সহিহ মুসলিমের সব হাদিসের উপর সহিহ হয়ার ইজমা আছে '।  এরমানে কি এইটা হলোনা যে উক্ত হাদিসের সমালোচনাকারী আলেমদের একটা বড় অংশ অন্যান্য স্থানে স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন কিংবা আলোচ্য হাদিসকে যইফ বলার মত হতে রুজু করেছেন? "

এই প্রশ্নটির উত্তর নিম্নরুপ ;

কোনো একজন আলেমের একাধিক বক্তব্যগুলো পরস্পরবিরোধী তখনিই হবে, যখন সেই একাধিক বক্তব্যগুলোর মাঝে সামঞ্জস্য করা যাবেনা, যখন সামঞ্জস্য করা যাবেনা তখন ধরে নেয়া হবে যে বক্তব্যগুলো পরস্পরের বিরোধী, আর যখন সামঞ্জস্য করা যাবে তখন মোটেও এমনটা বলা যাবেনা যে বক্তব্যগুলো পরস্পরবিরোধী। কোনো একটা মত হতে রুজু করার জন্য সেই মতটির বিরোধী অপর আরেকটি মত দিতে হয়, অর্থাৎ একজন আলেমের একটি মত সেই একই আলেমের আরেকটি মতের বিরোধী হলে সম্ভাবনা থাকে যে উক্ত আলেম সেই একটা মত হতে রুজু করে সেই একটা মতের বিরোধী অপর আরেকটি মতের পক্ষাবলম্বন করেছেন। আর উক্ত আলেমের সেই মতদুটি অউদো একে অপরের বিরোধী কিনা সেইটা যাচাইয়ের জন্যও দেখতে হবে যে সেই দুটি মতের মাঝে সামঞ্জস্য করা যায় কিনা, করা গেলে ধরা হবে যে সেই মতদুটি পরস্পরবিরোধী না, করা না গেলে ধরা হবে যে বিরোধী। আর পরস্পরবিরোধী হলেই বলা যাবে যে তিনি স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন বা একটা মত হতে রুজু করে আরেকটা মতের পক্ষাবলম্বন করেছেন। অন্যথায় এমন কিছু দাবি করা যাবেনা।

যেসব আলেমরা আলোচ্য হাদিসের সমালোচনা করেছেন, এবং একইসাথে অন্যান্য বিভিন্ন স্থানে বলেছেন যে 'সহিহ মুসলিমের সব হাদিস সহিহ ' কিংবা 'সহিহ মুসলিমের সব হাদিসের সহিহ হয়ার উপর ইজমা আছে ' কিংবা এসবের সমার্থক অন্যকিছু ; তাঁদের এই দুরকমের অবস্থানের মাঝে সামঞ্জস্য সাধন করা যায়, পুর্বে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত ব্যাতিক্রমসমুহকে সংখ্যায় অতি-অল্প হয়ার দরুন উপেক্ষাকরাপুর্বক সাধারণীকরণের প্রবণতার দ্বারা। অর্থাৎ এসব আলেমদের কর্তৃক এই ধরনের বক্তব্য প্রদানের দ্বারা অউদো আলোচ্য হাদিসের শুদ্ধতার ব্যাপারে কিছু প্রমাণিত হয়না বা সাব্যাস্ত হয়না, কারণ এই ধরনের সাধারণীকরণ তখনও হয় যখন ব্যাতিক্রমের পরিমাণ খুবই কম হয়। যেহেতু সহিহ মুসলিমের আলোচ্য হাদিসটি অতিসামান্য ব্যাতিক্রমসমুহের অন্তর্ভুক্ত, সেহেতু এসব আলেমরা আলোচ্য হাদিসটিকে বিবেচনার বাহিরে রেখেই এমন অর্থের কথাগুলো বলেছেন, যা কিনা আলোচ্য হাদিসকে অন্তর্ভুক্ত করে বলা হয়নি বিধায় আলোচ্য হাদিসের জন্য প্রযোজ্য নয়। পক্ষান্তরে, যখন তারা পৃথকভাবে নির্দিষ্টভাবে আলোচ্য ব্যাতিক্রমী হাদিসটির ব্যাপারে আলোচনা করেছেন, তখন তাঁরা ঠিকিই সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন যে আলোচ্য হাদিসটি তাঁদের নিকট ইল্লতবিশিষ্ট।সুতরাং, এসব আলেমদের কর্তৃক 'সহিহ মুসলিমের সব হাদিস সহিহ' বা 'সহিহ মুসলিমের সব হাদিস সহিহ হয়ার উপর ইজমা আছে' এই ধরনের বক্তব্য প্রদান দ্বারা মোটেও এটা প্রমাণিত হয়না যে এনারা স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন কিংবা এনারা নিজেদের মত হতে রুজু করেছেন।

পুর্ববর্তী উলামাদের বক্তব্যসমুহকে বিবেচনায় এনে ও বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত প্রদানকারী সাম্প্রতিক কালের বিভিন্ন বড় বড় মুল-ধারার গবেষক মুহাদ্দিসদের বিভিন্ন বক্তব্যের অংশ এখন পর্যন্ত আমার বলা এই সব কথাকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন করে [3]। অর্থাৎ আমার এসব কথা সাম্প্রতিক কালের মুলধারার ইসলামের বড় বড় গবেষক মুহাদ্দিসদের দ্বারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থিত। মুলধারার মধ্যযূগীয় ইমামদের বক্তব্য হতে সরাসরি দলিল দেয়াটা অনেক সময়সাপেক্ষ হয়ায় সাম্প্রতিক কালের মুহাদ্দিসদের থেকে প্রমাণ দিয়েছি, যারা কিনা মুলধারার ইমামদের বক্তব্যগুলো বিচার বিশ্লেষণ করেই বিভিন্ন সিদ্ধান্ত দেন।

3. আলোচ্য হাদিসটির সুত্রসমুহের উপস্থাপনা ও আল-আখদ্বারের সুত্রটির অসারতার বর্ণনা:-

আলোচ্য হাদিসটির দুইটি প্রধান সুত্র রয়েছে। প্রথমটি হলো 'ইসমাঈল ইবনু উমাইয়াহ' এর সুত্র, এবং দ্বিতীয়টি হলো 'আতা ইবনু আবি-রাবাহ' এর সুত্র।

প্রথম সুত্রটি নিম্নরুপ ; …[1][4]

প্রচুর সংখ্যাক ভিন্ন ভিন্ন ও পৃথক পৃথক সনদ এসে মিলিত হয়েছে 'হাজ্জাজ বিন মুহাম্মদ', পর্যন্ত, আবার কিছু এসে মিলিত হয়েছে 'হিশাম বিন ইউসুফ' পর্যন্ত, আবার কিছু 'মুহাম্মদ বিন ছাওর' পর্যন্ত । অতপর হাজ্জাজ, হিশাম ও মুহাম্মদ  বর্ণনা করেছেন যে তাঁরা হাদিসটি পেয়েছেন 'ইবনু জুরাইজ' হতে, যিনি কিনা তা পেয়েছেন 'ইসমাঈল ইবনু উমাইয়াহ' হতে, যিনি কিনা তা পেয়েছেন 'আইয়ুব বিন খালিদ' হতে, যিনি কিনা তা পেয়েছেন 'আব্দুল্লাহ বিন রাফি' হতে, যিনি কিনা তা পেয়েছেন 'আবু হুরাইরাহ' (রা) হতে।

আলোচ্য হাদিসটির জন্য এই সুত্রটিই মুহাদ্দিসদের মাঝে প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ। আলোচ্য হাদিসের জন্য সহিহ মুসলিমের রেওয়ায়েতটি এই সুত্র ধরেই বর্ণিত হয়েছে।

দ্বিতীয় সুত্রটি নিম্নরুপ ;....[1]

একটিমাত্র সনদ কিংবা একাধিক অতি-অল্প সংখ্যাক সনদ এসে মিলিত হয়েছে 'আল-আখদ্বার বিন আজলান' পর্যন্ত। 'আল-আখদ্বার বিন আজলান' বর্ণনা করেছেন যে তিনি হাদিসটি পেয়েছেন 'ইবনু জুরাইজ' হতে, যিনি কিনা তা পেয়েছেন 'আতা ইবনু আবি-রাবাহ'
হতে, যিনি কিনা তা পেয়েছেন 'আবু-হুরাইরাহ'(রা) হতে।

এই সুত্রটি খুবই কম পরিচিত, খুবই কম প্রচলিত, এবং দুর্লভ। আলোচ্য হাদিসের জন্য এই সুত্রের কোনো বর্ণনা সহিহ মুসলিমে নেই, বরং আলোচ্য হাদিসের জন্য এই সুত্রের বর্ণনা  আন-নাসাঈর আস-সুনানুল কুবরা গ্রন্থে আছে।

এক্ষেত্রে দ্বিতীয় সুত্রটিকে বিবেচনার বাহিরে রাখা হয় কেননা তা বিবেচনায় আসার যোগ্য নয়, উক্ত হাদিসের জন্য একমাত্র বিবেচনাযোগ্য সুত্রটি হলো প্রথম সুত্রটি। কারণ দ্বিতীয় সুত্রটি 'আল-আখদ্বার' এর কারণে শায, বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য। দ্বিতীয় সুত্রের বর্ণনাকারী আল-আখদ্বার দ্বিতীয় সুত্রটির ক্ষেত্রে উনার চেয়ে অনেক উচুস্তরের ছিকাহ রাবিদের বর্ণনার সহিত অসমাঞ্জস্যপুর্ণ সনদ ও মতন বর্ণনা করেছেন, যা আল-আখদ্বারের বর্ণিত দ্বিতীয় সুত্রটিকে ভুল, শায, বাতিল ও অগ্রহণয্যোগ্য সাব্যস্ত করে।

আল-আখদ্বারের বর্ণনাটির ব্যাপারে,

ডক্টর মুহাম্মদ বিন ফারিদ যারইওহ বলেছেন :

أما ما استدل به من حديث الأخضر ، فغير سالم و لا مسلّم .لأن الأخضر بن عجلان خالف في سنده و متنه الثقات من رواة هذا الحديث عن ابن جريج و هم حجاج بن محمد المصيصي ، و هشام بن يوسف الصنعاني ، و محمد بن ثور . والصواب روايتهم دونه .والأخضر صدوق و نازل عن مرتبتهم في الضبط ، فروايته بهذا السياق الشاذ عن المعروف من متن الحديث و سنده مردودة _[5]

অর্থ :
যদি কথা আসে তাঁর (আল-আলবানীর) কর্তৃক আল-আখদ্বারের হাদিস হতে দলিল দেয়া প্রসঙ্গে, সেক্ষেত্রে বলব যে ইহা মোটেও সুস্থ ও ক্রুটিমুক্ত নয়, কেননা আল-আখদ্বার বিন আজলান বর্ণনাটির সনদে ও মতনে এই হাদিসটিকে ইবনু জুরাইজ হতে বর্ণনাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিকাহ রাবিদের বিরোধীতা করেছেন। এবং তাঁরা (সেই ছিকাহ রাবিরা) হলেন ; হাজ্জাজ বিন মুহাম্মদ আল-মাসিসী, এবং হিশাম বিন ইউসুফ আস-সানয়ানী,  এবং মুহাম্মদ বিন ছাওর। এবং তাঁদের (এইতিনজনের) রেওয়ায়েতটিই সঠিক, তাঁরটা (আল-আখদ্বারেরটা) সঠিক নয়। এবং আল-আখদ্বার (রাবি হিসেবে) সুদুক (সত্যবাদী) তবে
দ্ববাত্বের (হাদিস সংরক্ষণের) দিক দিয়ে তাঁদের চেয়ে নিচু স্তরের। কাজেই তাঁর কর্তৃক উক্ত হাদিসের সুপরিচিত মাতান ও সনদ থেকে ব্যাতিক্রমী (শায) রুপ বর্ণনা করাটা বাতিল।

শুয়াঈব আল-আরনাওওত (রহ) ও আদিল মুরশিদ বলেছেন :

أخرجه النسائي في الكبری من طريق الأخضر بن عجلان عن ابن جريج عن عطاء عن أبي هريرة و الأخضر بن عجلان صدوق وقد خالف ثقتين هما حجاج بن محمد وهشام بن يوسف والصواب قولهما ورواية الأخضر خطأ_[6]

অর্থ :
হাদিসটি আন-নাসাঈ আল-কুবরা গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন আল-আখদ্বার বিন আজলানের সুত্রে ইবনু জুরাইজ হতে, তিনি আতা হতে, তিনি আবু-হুরাইরাহ (রা) হতে। এবং আল-আখদ্বার বিন আজলান (রাবি হিসেবে) সুদুক (সত্যবাদী) কিন্ত এখানে তিনি দুইজন ছিকাহ রাবির বিরোধীতা করেছেন, সেই দুজন হলেন হাজ্জাজ বিন মুহাম্মদ এবং হিশাম বিন ইউসুফ। এবং তাঁদের দুজনের বর্ণনাই সঠিক, আল-আখদ্বারের বর্ণনাটি ভুল।

আল-মুয়াল্লিমী (রহ) হলেন সেইসব আলেমদের অন্তর্ভুক্ত একজন, যারা কিনা সহিহ মুসলিমের আলোচ্য হাদিসটির বিশুদ্ধতার পক্ষাবলম্বন করেছেন। অথচ তিনিও এই দ্বিতীয় সুত্রটির সমালোচনা করেছেন, যদিও তিনি প্রথম সুত্রটির পক্ষাবলম্বন করেছেন।

দ্বিতীয় সুত্রটির ব্যাপারে তিনি (আল-মুয়াল্লিমী) বলেছেন :
في صحة هذه الرواية عن ابن جريج عن عطاء بن أبي رباح نَظَرٌ لا أطيل ببيانه، فمن أحبَّ التحقيق فليراجع «تهذيب التهذيب» (٢١٣: ٧) و «فتح الباري» (٥١١: ٨) (٤) ومقدمته (ص ٣٧٣) (٥) وترجمتَي أخضر وعثمان بن عطاء من «الميزان» (٦) وغيره…[7]
অর্থ :
"ইবনু জুরাইজ হতে আতা বিন আবি-রাবাহ এর সুত্রে বর্ণিত এই রেওয়ায়েতটির শুদ্ধতার মধ্যে সমস্যা আছে, আমি এনিয়ে আলোচনা লম্বা করব না। অতএব যারা এব্যাপারে তাহকিক জানতে ইচ্ছুক তারা যেন এই উৎসগুলো দেখে নেয় : …… "

দ্বিতীয় সুত্রটির ব্যাপারে ডক্টর আহমদ আল-কাসাইইর বলেছেন :
وهذه الرواية معلولة…[7]
অর্থ : এবং এই রেওয়ায়েতটি ক্রুটিবিশিষ্ট।

অতএব, দ্বিতীয় সুত্রটি বাদ। দ্বিতীয় সুত্রটিকে আমলে নেয়া হবেনা। বরং এই হাদিসের ক্ষেত্রে সর্বদা শুধুমাত্র প্রথম সুত্রটিই বিবেচনায় থাকবে।

4.হাদিসটির ইল্লত বা দুর্বলতাসমুহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা :-

অত:পর, মুহাদ্দিসগন আলোচ্য হাদিসের সানাদ ও মাতান হতে বেশকিছু ইল্লত বেড় করেছেন ও সেই ইল্লতগুলোর উপর ভিত্তি করে হাদিসটিকে যইফ বলেছেন। ইল্লতগুলো নিম্নে সংক্ষেপে উল্লেখ্য করা হলো ; …[8]

এক. এই হাদিসটি প্রকৃতপক্ষে আবু-হুরাইরাহ (রা) কর্তৃক কাব আল-আহবার (রহ) হতে বর্ণিত বর্ণনাসমুহের অন্তর্ভুক্ত একটি বর্ণনা, এটি রাসুল (সা) এর হাদিস নয়, বরং নিছকই কাবের বক্তব্য ; যা কিনা সনদের এক বা একাধিক রাবির ভুলের কারণে ভুলবশত রাসুল (সা) হতে মারফু হিসেবে বর্ণিত হয়ে গেছে। বাস্তবে এটির মারফু হয়া ভুল,এটি আসলে কাবের উপর মাওকুফ।

দুই. আলি ইবনুল-মাদিনী (রহ) ঘোষণা করেছেন যে প্রকৃতপক্ষে 'ইসমাঈল ইবনু উমাইয়াহ ' এই হাদিসটি সরাসরি 'আইয়ুব বিন খালিদ' হতে নেন নি, বরং তিনি তা নিয়েছেন 'ইব্রাহিম ইবনু আবি-ইয়াহইয়া' নামক একজন যইফ মিথ্যাবাদী মাতরুক রাবি হতে।

তিন. এই হাদিসটির সুত্রে 'আইয়ুব বিন খালিদ' নামক একজন রাবি আছেন, যিনি কিনা (অনেক মুহাদ্দিসদের নিকট) রাবি হিসেবে যইফ।

চার. এই হাদিসটির মতন কোরআনের সহিত সামঞ্জস্যপুর্ণ নয়, বরং কোর'আন ও উক্ত হাদিসের মতনের মাঝে বেশকিছু অসামঞ্জস্যতা বিদ্যমান। উদাহরণস্বরুপ ;

(ক) হাদিসটিতে সৃষ্টির সময় বর্ণনার ক্ষেত্রে সাতটি ইয়াওমের কথা বলা হয়েছে, অথচ কোরান অনুযায়ী তা হয়ার কথা শুধুমাত্র ছয়টি। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ইয়াওমের সংখ্যাটা কোরআন বিরোধী।

(খ) হাদিসটি আকাশমন্ডলী সৃষ্টির ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি।

(গ) এই হাদিস অনুসারে পৃথিবী ও তার মধ্যের সবকিছু ছয় ইয়াওমে সৃষ্টি করা হয়েছে, অথচ কোরান অনুযায়ী পৃথিবী ও তার মধ্যকার সবকিছু সৃষ্টি করতে শুধুমাত্র চার ইয়াওম লেগেছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে হাদিসটি কোরানের বিরোধী।

পাচ. এই হাদিসটি বিভিন্ন সাহাবি-তাবেঈদের বক্তব্যসমুহের বিরোধী।

আদিল মুরশিদ, আল-আরনাওওত, মুহাম্মদ বিন ফারিদ, আহমদ আল-কাসাইইর এবং সুলাইমান আদ-দাবিখী উক্ত হাদিসের ইল্লতযুক্ত ও যইফ হয়ার পক্ষে এ টু যেট একদম বিস্তারিত লম্বা লম্বা আলোচনা করেছেন [9][10][11]। যারা এই হাদিসের অবস্থার ব্যাপারে একদম বিস্তারিতভাবে ও সুবিন্যাস্তভাবে জানতে ইচ্ছুক, তারা এনাদের সেই লম্বা আলোচনাগুলো দেখে নিতে পারেন। এখানে আমি ইল্লতগুলো অতি-সংক্ষেপে উল্লেখ্য করেছি, এখানে ইল্লতগুলো বিস্তারিতভাবে উল্লেখ্য করা হয়নি।

5.উক্ত হাদিসকে ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্তকারী কিছু আলেমদের তালিকা :-

উপরে বর্ণিত সবগুলো ইল্লতের কারণে কিংবা এই ইল্লতগুলো হতে নির্দিষ্ট একটি বা নির্দিষ্ট একের অধিকটি ইল্লতের কারণে বিপুল সংখ্যাক আলেমরা আলোচ্য হাদিসটিকে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্ত করেছেন। নিম্নে এমন কিছু আলেমদের নাম উল্লেখ্য করা হলো ; _[9][10][11][12][13][14][15][16][20]

(১) মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল আল-বুখারী
(২) আলি ইবনুল মাদিনী
(৩) ইয়াহইয়া ইবনু মুয়াঈন
(৪) আব্দুর-রহমান বিন মাহদী
(৫) আবু-বকর আল-বায়হাকী
(৬) তাকিউদ্দিন ইবনু তাইমিয়াহ
(৭) ইবনু কাইয়িমিল যাওযিয়াহ
(৮) আমাদুদ্দিন ইবনু কাসির
(৯) মুহাম্মদ বিন জারির আত-তাবারী
(১০) মুহিউদ্দিন আল-কুরেশী

(১১) বদরুদ্দিন আয-যারকাশী
(১২) মুহাম্মদ আস-সানআনী
(১৩) শামসুদ্দিন আল-কুরতুবী
(১৪) সিরাজুদ্দিন ইবনুল মুলাক্কিন
(১৫) মুহিউদ্দিন আন-নওওই
(১৬) জামালুদ্দিন আল-মিযযী
(১৭) আলাউদ্দিন আল-খাযিন
(১৮) আল-মোল্লা আলী আল-কারী
(১৯) শিহাবুদ্দিন আল-আলওয়াসী
(২০) যাইনুদ্দিন ক্বাসিম ইবনু কুতলুবাগা

(২১) ইবনু আতিয়াহ আল-আন্দালুসী
(২২) আবুল-আব্বাস আল-কুরতুবী
(২৩) আব্দুর-রউফ আল-মুনাওওই
(২৪) বুরহানুদ্দিন আল-বাকাঈ
(২৫) আব্দুল আযিয বিন বায
(২৬) মুহাম্মদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন
(২৭) শুয়াঈব আল-আরনাওওত
(২৮) আব্দুর রহমান আল-হাওত
(২৯) জামালুদ্দিন আল-কাসিমী
(৩০) ছানাউল্লাহ আল-মাযহারী

(৩১) মুহাম্মদ আল-আমিন আশ-শানকিতিঈ
(৩২) দ্বিয়াউর-রহমান আল-আ'যামী
(৩৩) সফিউর রহমান আল-মোবারকফুরী
(৩৪) সালিহ আল-ফাওযান
(৩৫) আব্দুল্লাহ বিন গাদইয়ান
(৩৬) আদিল মুরশিদ
(৩৭) ইব্রাহিম আল-লাহিম
(৩৮) আব্দুল আযিয আর-রাজিহী
(৩৯) আব্দুল আযিয আলেশশায়খ 
(৪০) বকর আবু যায়দ

(৪১) সাঈদ বিন মুহাম্মদ আস-সানারী
(৪২) হুসাইন সালিম আসাদ
(৪৩) বাশার আওয়াদ মারুফ
(৪৪) মুহাম্মদ রাশিদ রিদ্বা
(৪৫) আব্দুল হাফিয আল-ফাসী
(৪৬) আহমদ আল-গুমারী
(৪৭) মুহাম্মদ আবু-শুহবাহ
(৪৮) সুলাইমান আদ-দাবিখী
(৪৯) মুহাম্মদ বিন ফারিদ যারইওহ
(৫০) আব্দুল্লাহ আল-গুনাইমান

(৫১) আহমাদ আল-কাসাইইর
(৫২) নাসির আল-আলী

… (রহিমাহুমুল্লাহ/হাফিযাহুমুল্লাহ) ; এই ৫২ জন ছারাও আরো অনেকেই উক্ত হাদিসটিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্ত করেছেন।

6. উক্ত হাদিসকে ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্তকারী আলেমদের সংখ্যাটা কি কম? :-

অনেকে মনে করে বা দাবি করে যে, উক্ত হাদিসকে নাকি খুবই কম সংখ্যাক আলেমরা ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্ত করেছেন (আর এর বিপরীতে অধিকাংশ উলামাদের নিকটই নাকি হাদিসটি ইল্লত-মুক্ত ও সহিহ)। এই দাবি বা ধারনা ভুল।

বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, আলোচ্য হাদিসটিকে ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্তকারী আলেমদের সংখ্যাটা
"অনেক" বা "বেশি" বা "প্রচুর", মোটেও 'কম' নয়। এই হাদিস নিয়ে গবেষণাকারী অনেক আলেমরাই একদম সুস্পষ্টভাবে এমনটা বলেছেন যে আলোচ্য হাদিসটিকে 'প্রচুর সংখ্যাক' মুহাদ্দিসরা ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্ত করেছেন। উদাহরণস্বরুপ ;

উক্ত হাদিসকে ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্তকারী মুহাদ্দিস 'ইব্রাহিম আল-লাহিম' বলেছেন :
ومتن الحديث فيه نكارة رده بسببها كثير من النقاد_[17]
অর্থ : "এবং হাদিসটির মাতানে নাকারাত বিদ্যমান, এবং এরকারণে প্রচুর সংখ্যাক নাকিদ মুহাদ্দিসরা হাদিসটিকে রদ্দ করেছেন "

উক্ত হাদিসটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ ক্রুটিহীন সাব্যস্তকারী মুহাদ্দিস 'হাসান আবুল-আশবাল আয-যুহাইরী' বলেছেন :
وهذا الحديث نازع في ثبوته كثير من المحدثين[18]
অর্থ : "এই হাদিসটির বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রচুর সংখ্যাক মুহাদ্দিস আপত্তি তুলেছেন "

উক্ত হাদিসের ইল্লতমুক্ত সহিহ হয়ার মতকে অধিক সঠিক সাব্যস্তকারী মুহাদ্দিস 'মুহাম্মদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ' উক্ত হাদিসকে ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্তকারী কিছু আলেমের নাম উল্লেখ্য করে বলেছেন : "وغيرهم كثير " অর্থাৎ "এনারা ছাড়াও আরো অনেক"[19]

7. আলোচ্য হাদিসের শুদ্ধতার ব্যাপারে অধিকাংশ আলেমদের মত আসলে কী? :-

অনেকে ধারনা রাখে বা দাবি করে যে, 'অধিকাংশ' বা 'বেশিরভাগ' উলামাদের দৃষ্টিতেই নাকি উক্ত হাদিসটি 'ইল্লত-মুক্ত' ও 'সহিহ' ; উক্ত হাদিসকে ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্তকারী আলেমদের তুলনায় এই হাদিসকে ইল্লত-মুক্ত সহিহ সাব্যস্তকারী আলেমরা নাকি সংখ্যার দিক দিয়ে 'বেশি ' বা 'অধিক'। এই ধারনাও সম্পুর্ণ ভুল। বরং উলামাদের অধিকাংশের দৃষ্টিতে আলোচ্য হাদিসটি 'ইল্লতবিশিষ্ট ' ও 'যইফ'।

(দ্রষ্টব্য : কোনো আলেম কর্তৃক সৃষ্টির আরম্ভ হয়ার ইয়াওমকে ইয়াওমুল-আহাদ বলার অর্থ হলো আলোচ্য হাদিসটির বিরোধীতা করা, আলোচ্য হাদিসটির বিপরীতে অবস্থান নেয়া ও আলোচ্য হাদিসটিকে অমান্য করা । কেননা আলোচ্য হাদিসটি বলছে যে সৃষ্টির আরম্ভ হয়েছে ইয়াওমুস-সাবাতে, ইয়াওমুল-আহাদে নয়, এবং সেই আলেম কর্তৃক বলা হচ্ছে যে তা ইয়াওমুল-আহাদে আরম্ভ হয়। এখন রাসুল (সা) হতে বর্ণিত সেইসব হাদিসেরই বিরোধিতা করা যায়, যেই হাদিসগুলো যইফ ইল্লতবিশিষ্ট হয় ও রাসুল (সা) হতে প্রমাণিত না হয় কিংবা যেগুলোর বিধান রহিত হয় ; অন্যথায় কোনো উপায়েই রাসুল (সা) হতে প্রমাণিত কোনো হাদিসের বিরোধীতা করা বা বৈধ নয়। অতএব, একজন আলেম কর্তৃক সৃষ্টির আরম্ভ ইয়াওমুল-আহাদে বলার অর্থ হলো সেই আলেম আলোচ্য হাদিসিটির বিরোধিতাকারী আলোচ্য হাদিসটিকে অমান্যকারী ; আর সেই আলেমের আলোচ্য হাদিসিটির বিরোধিতাকারী ও আলোচ্য হাদিসটিকে অমান্যকারী হয়ার অর্থ হলো এই যে সেই আলেমের দৃষ্টিতে আলোচ্য হাদিসটি যইফ।) 

'মুহাম্মদ বিন জারির আত-তাবারী'(রহ) আলোচ্য হাদিসটির বিরোধিতা করতে গিয়ে ও  আলোচ্য হাদিসটিকে ক্রুটিপুর্ণ সাব্যস্ত করতে গিয়ে আলোচ্য হাদিসটির বিরোদ্ধে লিখেছেন যে ;
اليوم الذي ابتدأ الله تعالى ذكره فيه خلق السموات والأرض يوم الأحد، لإجماع السلف من أهل العلم على ذلك _[21][22]
অর্থ : "যেই ইয়াওমে আল্লাহ তায়ালা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকার্য আরম্ভ করেছেন সেই ইয়াওমটি হলো ইয়াওমুল আহাদ, কেননা এর উপর (অতি-সামান্য সংখ্যাক বাদে) অধিকাংশ (বা জুমহুর) সালাফদের ঐক্যমত রয়েছে। "

'আবু-জাফর আন-নাহহাস' (রহ) উল্লেখ্য করেছেন যে ;

فأما الاختلاف في ابتداء الخلق، فقال ابن سلام فيه: ابتداؤه يوم الأحد، وكذا قال مجاهدٌ والضحاك، وعليه أكثر الناس، وقال بعض العلماء: يوم السبت؛ وكذا قال محمد بن إسحاق_[45]

অর্থ : "যদি কথা আসে সৃষ্টির আরম্ভসক্রান্ত মতভেদ সম্পর্কে, সেক্ষেত্রে ইবনু সালাম (রা) বলেছেন যে তা ইয়াওমুল-আহাদে সৃষ্টি হয়েছে, এবং অনুরুপ বলেছেন মুজাহিদ ও দ্বুহহাক এবং অধিকাংশ মানুষ এই মতেরই অনুসারী। পক্ষান্তরে কিছু উলামারা বলেছেন যে তা ইয়াওমুস সাবাতে হয়েছে, যেমন মুহাম্মদ বিন ইসহাক।"

'তাকিউদ্দিন ইবনু তাইমিয়াহ '(রহ) আলোচ্য হাদিসটির বিরোধিতা করে আলোচ্য হাদিসটির বিরোদ্ধে লিখেছেন ;
وقد روى في ابتدائه يوم السبت حديث رواه مسلم فالذي عليه الجمهور أن ابتداءه يوم الأحد[46]
অর্থ : 'এবং সৃষ্টির শুরু ইয়াওমুস সাবাতে হয়ার ব্যাপারে একটি হাদিস আছে যা মুসলিম বর্ণনা করেছেন। তবে এব্যাপারে জুমহুরদের (অধিকাংশের) মত হচ্ছে এই যে সৃষ্টির আরম্ভ হলো ইয়াওমুল আহাদে। '

'মুহিউদ্দিন আব্দুল-কাদির আল-কুরেশী'(রহ) আলোচ্য হাদিসটিকে এই বলে ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্ত করেছেন যে ;
اتفق الناس علی أن يوم السبت لم يقع فيه خلق وأن ابتداء الخلق يوم الأحد_[23][28]

অর্থ : "মানুষদের মাঝে এব্যাপারে ইত্তেফাক (সামান্য কয়েকজন বাদে বাকি সকলের ঐক্যমত) ঘটেছে যে ইয়াওমুস সাবাতে কোনো সৃষ্টির কাজ সংঘটিত হয়নি, এবং সৃষ্টির শুরু হয়েছে ইয়াওমুল আহাদ হতে।"

'আব্দুল-হক্ক আদ-দেহলভী'(রহ) আলোচ্য হাদিসটির ব্যাপারে লিখেছেন যে ;

دل هذا الحديث على أن ابتداء الخلق يوم السبت، والمشهور أنه يوم الأحد_[47]
অর্থ : "এই হাদিসটি ইংগিত দেয় যে সৃষ্টির আরম্ভ হয়েছে ইয়াওমুস-সাবাতে, পক্ষান্তরে (উলামাদের মাঝে) প্রসিদ্ধ প্রচলিত মত হলো যে তা ইয়াওমুল-আহাদে হয়েছে। "

'আব্দুর-রহমান বিন মুহাম্মদ আল-হাওত'(রহ) আলোচ্য হাদিসের ব্যাপারে লিখেছেন যে ;
"وَأكْثر أهل الْعلم على أَنه غلط"_[24]
অর্থ : "এবং অধিকাংশ আলেমদের মতে ইহা ক্রুটিপুর্ণ"

'ড. সুলাইমান বিন মুহাম্মদ আদ-দাবিখী' আলোচ্য হাদিসের ব্যাপারে বলেছেন :
"إلا أن المضعفين له أكثر عددا وأعلم بالعلل من المصححين له "_[25]

অর্থ : "কিন্ত এটাকে যইফ সাব্যস্তকারীগণ এটাকে সহিহ সাব্যস্তকারীগণের তুলনায় সংখ্যার দিক দিয়ে বেশি এবং ইলালের ব্যাপারে অধিক জ্ঞানী "

'ড. আহমদ বিন আব্দুল-আযিয আল-কাসাইইর' আলোচ্য হাদিসের ব্যাপারে বলেছেন :
"وهذا رأي الأكثر من المفسرين  و المحدثين "_[26]

অর্থ : "এবং এটাই (যইফ ও ইল্লতবিশিষ্ট হয়ার মতটাই) অধিকাংশ মুফাসসির ও মুহাদ্দিসদের মত "

ইসলামোওয়েবে এই হাদিসের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে ;
"وأكثر المحققين والجهابذة الكبار على إعلاله."_[27]
অর্থ : "বেশিরভাগ মুহাক্কিকগণ ও উচুস্তরের দক্ষ সমালোচক মুহাদ্দিসগণ এটাকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্ত করার পক্ষে।"

মুতাকাদ্দিমদের যূগের আলেম 'আত-তাবারী'(রহ) এর উক্ত বক্তব্যটি হতে প্রমাণিত হয় যে অধিকাংশ সালাফদের বা মুতাকাদ্দিমদের মতেই সৃষ্টির আরম্ভ ইয়াওমুল-আহাদে হয়েছে, ইয়াওমুস-সাবাতে নয় এবং অধিকাংশ সালাফ বা মুতাকাদ্দিমরাই আলোচ্য হাদিসটির বিরোধিতাকারী, আলোচ্য হাদিসটির বিরোদ্ধে অবস্থানকারী । অর্থাৎ অধিকাংশ সালাফ বা মুতাকাদ্দিমদের দৃষ্টিতেই আলোচ্য হাদিসটি ইল্লতবিশিষ্ট রাসুল (সা) হতে অপ্রমাণিত, যদি তাঁদের নিকট আলোচ্য হাদিসটি ইল্লতবিশিষ্ট না হয়ে সহিহ হতো তাহলে তাঁরা কখনোই রাসুল (সা) এর কথাকে অমান্য করে রাসুল (সা) এর কথার বিরোধিতা করে ইয়াওমুল-আহাদের পক্ষে মত দিতেন না, কেননা রাসুল (সা) হতে বর্ণিত সেই হাদিসগুলোকেই অমান্য করা যায় সেই হাদিসগুলোরই বিরোধিতা করা যায় যেগুলো ইল্লতবিশিষ্ট ক্রুটিপুর্ণ অপ্রমাণিত, রাসুল (সা) হতে বর্ণিত সহিহ হাদিসগুলোর বিরোধিতা করা বৈধ না।

মুতাকাদ্দিমদের যুগের ঠিক পরের দিকের আলেম 'আন-নাহহাস' (রহ) এর উক্ত বক্তব্য হতে প্রমাণিত হয় যে মুতাকাদ্দিমদের যুগ অতিক্রান্ত হয়ার পরেও অধিকাংশের মত এটাই ছিলো যে সৃষ্টির আরম্ভ হয়েছে ইয়াওমুল-আহাদে, অর্থাৎ তখনো অধিকাংশের নিকট আলোচ্য হাদিসটি ইল্লতবিশিষ্ট ছিলো।মুতায়াখখিরদের অন্তর্ভুক্ত বা খালাফদের অন্তর্ভুক্ত আলেম ইবনু তাইমিয়াহ (রহ), আল-কুরেশী (রহ) এবং আদ-দেহলভী (রহ) এর উক্ত বক্তব্যসমুহ হতে প্রমাণিত হয় যে মুতায়াখখিরদের যূগেও বা খালাফদের যুগেও অধিকাংশ উলামাদের দৃষ্টিতে আলোচ্য হাদিসটি ইল্লতবিশিষ্টই ছিলো।একইভাবে মুয়াসিরদের যূগের বা সাম্প্রতিক যুগের আলেম 'আল-হাওওত'(রহ), 'ড. সুলাইমান আদ-দাবিখী' এবং 'ড.আহমদ আল-কাসাইইর' এর উল্লেখিত বক্তব্যসমুহ এবং সাম্প্রতিক-কালের আলেমদের দ্বারা পরিচালিত 'ইসলামোওয়েব' এর বক্তব্যটি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে অধিকাংশ সালাফ, খালাফ এবং মুয়াসির-যূগের উলামাদের  দৃ্ষ্টিতেই আলোচ্য হাদিসটি ইল্লতবিশিষ্ট

সুতরাং উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোর ভিত্তিতে আলোচ্য হাদিসটির ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে এটা বলা সম্পুর্ণ সঠিক হবে যে "অধিকাংশ বা বেশিরভাগ আলেমদের নিকটই আলোচ্য হাদিসটি ইল্লতবিশিষ্ট ক্রুটিপুর্ণ যইফ।"

8. 'সহিহ মুসলিমের সব হাদিসের সহিহ হয়ার উপর ইজমা থাকা' বা 'সহিহ মুসলিমের সব হাদিস সহিহ হয়া' বনাম 'আলোচ্য হাদিসের ইল্লতবিশিষ্ট হয়া' :-

এই হাদিসের ব্যাপারে অনেকে দাবি করে যে ;

"সহিহ মুসলিমের এই হাদিস সহ সহিহ মুসলিমের সব হাদিস সহিহ হয়ার উপর ইজমা আছে। প্রমাণ ; অমুক অমুক আলেম অমুক অমুক স্থানে উল্লেখ্য করেছেন যে সহিহ মুসলিমের সব হাদিস সহিহ হয়ার উপর সারা উম্মতের ইজমা হয়েছে "

জবাব : যেসব আলেমরা উল্লেখ্য করেছেন যে সহিহ মুসলিমের সব হাদিসের সহিহ হয়ার উপর ইজমা আছে, তাদের এইধরনের বক্তব্যগুলো হতে আলোচ্য হাদিসের ব্যাপারে কিছুই সাব্যস্ত হয়না। কারণ আলোচ্য হাদিসটি সহিহ মুসলিমের অতি-অল্প সংখ্যাক ব্যাতিক্রমী হাদিসসমুহের অন্তর্ভুক্ত একটি। আর ব্যাতিক্রমের সংখ্যা খুবই কম হলে ব্যাতিক্রমসমুহকে উপেক্ষাকরাপুর্বক সাধারণীকরণ করে নেয়া যায়। এব্যাপারে পুর্বে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

পাল্টা আপত্তি আসতে পারে এই মর্মে যে ;

"ব্যাতিক্রম থাকা সত্ত্বেও ব্যাতিক্রমের সংখ্যা অতি-অল্প হয়ার দরুন ব্যাতিক্রমসমুহকে উপেক্ষা করাপুর্বক সাধারণীকরণের প্রবণতা" এসব আবোল-তাবোল ও  ভিত্তিহীন কথাবার্তা। এসব মানিনা। বরং সহিহ মুসলিমের সব হাদিস সহিহ হয়ার উপর ইজমা থাকার অর্থ হলো এই যে প্রত্যেকটা হাদিসের ক্ষেত্রেই সহিহ হয়ার ইজমা আছে। যার মধ্যে আলোচ্য হাদিসটিও অন্তর্ভুক্ত। "

জবাব :

প্রথমত, "ব্যাতিক্রম থাকা সত্ত্বেও ব্যাতিক্রমের সংখ্যা অতি-অল্প হয়ার দরুন ব্যাতিক্রমসমুহকে উপেক্ষা করাপুর্বক সাধারণীকরণের প্রবণতা", এব্যাপারটা যে সম্পুর্ণ বাস্তবসম্মত ও সত্য ; তা যেকোনো সৎ মানুষই স্বীকার করবে ও মানবে, কেননা এটা মানুষদের কথাবার্তার ধরন-প্রকৃতির সহিত সম্পৃক্ত একটি বাস্তব বৈশিষ্ট। যারা খুবই অসৎ কিংবা প্রবৃত্তিপুজারী, শুধুমাত্র তারাই উক্ত প্রবণতাকে অবাস্তব বা মিথ্যা বলে দাবি করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, যদি তাই ই হয় ; অর্থাৎ যদি 'সহিহ মুসলিমের সব হাদিস সহিহ হয়ার উপর ইজমা আছে' এর মধ্যে আলোচ্য হাদিসটিও অন্তর্ভুক্ত হয় ; তাহলে ব্যাপারটা ; অর্থাৎ আলোচ্য হাদিসের সহিহ হয়ার উপর ইজমা থাকার ব্যাপারটা ; সম্পুর্ণ বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক হবে। কেননা আলোচ্য হাদিসকে উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যাক আলেমরা ইল্লতবিশিষ্ট ক্রুটিপুর্ণ গায়রে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন, এর সহিহ হয়ার উপর যদি ইজমা হয়ে যেতো তাহলে তো এসব সমালোচনার অস্তিত্বই থাকার কথা ছিলোনা! ইজমা মানেত প্রত্যেকের একমত হয়া ও একজনেরও দ্বিমত না থাকা!  অতএব এটা হয়া সম্ভবই না যে আলোচ্য হাদিসের সহিহ হয়ার উপর ইজমা হয়েছে।

এই জবাবের বিরোদ্ধে সাম্ভাব্য পাল্টা আপত্তিগুলো  হলো এই যে ;

১. আলোচ্য হাদিসের সহিহ হয়ার ব্যাপারে ইজমা হয়েছেই। আলোচ্য হাদিসকে যারা সমালোচনা করেছেন তাদের বক্তব্য বিবেচনা হতে বাদ।

২. আলোচ্য হাদিসকে অনেক আলেমরা সমালোচনা করেছিলেন। তবে পরবর্তী সময়ে সব আলেমরা ইজমায় উপনিত হোন যে আলোচ্য হাদিসটি সহিহই ও সমালোচনাকারীরা এক্ষেত্রে ভুল।

৩.  আলোচ্য হাদিসকে সমালোচনাকারী আলেমরা উনাদের এই ইল্লত সাব্যস্তকরণের মত হতে রুজু করে নিয়েছিলেন বা অন্যান্য স্থানে আলোচ্য হাদিসের শুদ্ধতার ব্যাপারে স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছিলেন।

৪. যদি ধরে নেয়া হয় যে আলোচ্য হাদিসটির সহিহ হয়ার উপর ইজমা হয়নি। সেক্ষেত্রে  একে সহিহ সাব্যস্তকারীদের সংখ্যা একে যইফ ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্তকারীদের সংখ্যার চেয়ে অনেক অনেক অনেক বেশি, অতএব আলোচ্য হাদিসটি সহিহ।

এই ৪ টি সাম্ভাব্য পাল্টা আপত্তির জবাব যথাক্রমে নিম্নে দেয়া হলো ;

জবাব ১.এই দাবি শুধুমাত্র তারাই করতে পারে যারা কিনা ইজমা জিনিসটা কি সেব্যাপারেই কোনো ধারনা রাখেনা।

জবাব ২. আলোচ্য হাদিসটির শুদ্ধতা নিয়ে সালাফদের যুগ থেকে আরম্ভ করে বর্তমান যুগ পর্যন্ত উলামাদের মাঝে মতভেদ হয়েই আসছে, এখন পর্যন্ত এর ব্যাপারে কোনো ইজমা হয়নি।[9][10][11]। কাজেই  এই দাবি বাস্তবতার সহিত সাংঘর্ষিক।

জবাব ৩. এই দাবির ব্যাপারে পুর্বে দ্বিতীয় পয়েন্টে বিস্তারিত আলোচনা গত হয়েছে।

জবাব ৪.  এই দাবির জন্য দুইটি ভিত্তি বিদ্যমান, যেগুলোর উপর আলোচ্য দাবিটির শুদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে । প্রথম ভিত্তি হলো এই যে ; যারাই 'সহিহ মুসলিমের সব হাদিস সহিহ ', 'সহিহ মুসলিমের সব হাদিস সহিহ হয়ার উপর ইজমা আছে', বা এই ধরনের কোনো মন্তব্য করেছেন , তাদের সবাইকেই নির্বিচারে ঢালাওভাবে আলোচ্য হাদিসের সহিহ সাব্যস্তকারী হিসেবে গণ্য করে নেয়া বা এইটা ধরে নেয়া যে তাঁরা সবাই ই আলোচ্য হাদিসটিকে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়ে এইধরনের মন্তব্যগুলো করেছেন।এবং দ্বিতীয় ভিত্তিটি হলো আলোচ্য হাদিসকে ইল্লতবিশিষ্ট ক্রুটিপুর্ণ যইফ সাব্যস্তকারী আলেমদের একটা বড় অংশের ব্যাপারে এমন মন্তব্য করা যে তাঁরা নাকি আলোচ্য হাদিসের শুদ্ধতার ব্যাপারে স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন কিংবা আলোচ্য হাদিসটিকে ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্তকরণ হতে রুজু করে নিয়েছিলেন। এদুটা ভিত্তিই ভুল, এদুইটা ভিত্তির অসারতার ব্যাপারেই পুর্বে দ্বিতীয় পয়েন্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং এদুটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এই দাবিও ভুল।

9. আলোচ্য হাদিসটিকে ইল্লত-মুক্ত সহিহ সাব্যস্তকারী উলামাদের ব্যাপারে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা :-

ইমাম মুসলিম, ইবনু ইসহাক, ইবনু হিব্বান, ইবনু খুযাইমাহ,  ইবনুল-আরাবী, ইবনুল-যাওযী, আল-আলাঈ, আস-সুয়ূতী,আস-সুহাইলী,ইবনুস সালাহ, ইবনুল-আনবারী, আল-বালিনসী, আল-আযহারী, ইবনুয-যাহিরী, আবু-হাইয়ান, সাবাতু ইবনিল-যাওযি,আল-ফাইয়ুমী, আশ-শাওকানী, আল-মুয়াল্লিমী, সিদ্দিক হাসান খান, আল-আলবানী, আহমদ শাকির, ইসমাঈল হাক্কী এবং আল-হুয়াইনী (রহিমাহুমুল্লাহ ওয়া হাফিযাহুল্লাহ)। এনারা হলেন সেইসব উলামাগণ, যারা আলোচ্য হাদিসটিকে 'সহিহ' সাব্যস্ত করেছেন বলে আমি জানতে পেরেছি। আমি বিশ্বাস করি যে এনারা ছাড়াও উক্ত হাদিসকে সহিহ সাব্যস্তকারী অন্যান্য আরো আলেম আছেন, যাদের ব্যাপারে কিনা আমি জানতে পারিনি।

অতএব, এই পয়েন্ট টিতে আমি প্রথমে সেসব আলেমদের সহিহ সাব্যস্তকরণের ব্যাপারে আলোচনা করব যাদের ব্যাপারে আমি জানতে পেরেছি যে তাঁরা আলোচ্য হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন । এবং তারপর সেসব আলেমদের সহিহ সাব্যস্তকরণের ব্যাপারে আলোচনা করব, যারা আলোচ্য হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্ত করলেও আমি সেব্যাপারে জানতে পারিনি।

9.1 জ্ঞাত উলামাদের কর্তৃক আলোচ্য হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্তকরণের ব্যাপারে আলোচনা :

এক - ইমাম মুসলিমের (রহ) সহিহ সাব্যস্তকরণ প্রসঙ্গে,

ইমাম মুসলিম ইবনুল-হাজ্জাজ (রহ) আলোচ্য হাদিসটিকে নিজ 'সহিহ' গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। যার অর্থ তাঁর দৃষ্টিতে আলোচ্য হাদিসটি 'সহিহ'। কিন্ত ইমাম মুসলিম রহ. হতে হাদিসবিদ্যার ব্যাপারে তুলনামুলকভাবে অধিক জ্ঞানী ও অধিক অভিজ্ঞ বিভিন্ন মুহাদ্দিস (যেমন : ইমাম আল-বুখারী, ইয়াহইয়া বিন মুয়াঈন, আলি ইবনুল-মাদিনী, আব্দুর-রহমান বিন মাহদী ইত্যাদি ইত্যাদি) আলোচ্য হাদিসটিকে 'ইল্লতবিশিষ্ট' সাব্যস্ত করেছেন। সুতরাং ইমাম মুসলিমের উক্ত তাসহিহ অর্থাৎ সহিহ সাব্যস্তকরণ 'ভুল'। শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়াহ (রহ) এই যুক্তি দেখিয়েই  আলোচ্য হাদিসের জন্য ইমাম মুসলিমের (রহ) কৃত তাসহিহকে (তথা সহিহ সাব্যস্তকরণকে) পরোক্ষভাবে ভুল সাব্যস্ত করেছেন ; এইটা আমার নিজস্ব ব্যাক্তিগত কোনো দৃষ্টিভংগি, মত বা যুক্তি না।

ইমাম মুসলিম রহ. কর্তৃক আলোচ্য হাদিসটির জন্য কৃত তাসহিহটির বিরোধিতা ও জবাবস্বরুপ ইবনু তাইমিয়াহ রহ. লিখেছেন :

رَوَى مُسْلِمٌ {خَلَقَ اللَّهُ التُّرْبَةَ يَوْمَ السَّبْتِ} وَنَازَعَهُ فِيهِ مَنْ هُوَ أَعْلَمُ مِنْهُ كَيَحْيَى بْنِ مَعِينٍ وَالْبُخَاريِّ وَغَيْرِهِمَا فَبَيَّنُوا أَنَّ هَذَا غَلَطٌ لَيْسَ هَذَا مِنْ كَلَامِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالْحُجَّةُ مَعَ هَؤُلَاءِ [29]

অর্থ : "মুসলিম  বর্ণনা করেছেন যে {খালাকাল্লাহুত তুরবাতা ইয়াওমাস সাবাতি (আলোচ্য হাদিসটি)}। কিন্ত এক্ষেত্রে সেসব ব্যাক্তিগণ তাঁর বিরোধিতা করেছেন যারা কিনা তাঁর তুলনায় অধিক জ্ঞানী ; যেমন ইয়াহইয়া বিন মুয়াঈন, আল-বুখারী এবং এনারা দুজন ছাড়াও অন্যান্য আরো অনেকে। এবং তাঁরা সুস্পষ্ট করেছেন যে এইটা (আলোচ্য হাদিসটা) ক্রুটিপুর্ণ এবং ইহা নবী সা. এর কথাসমুহের অন্তর্ভুক্ত নয়,  এবং হুজ্জত এক্ষেত্রে এনাদেরই সহিত বিদ্যমান। "

দুই - ইবনু ইসহাকের (রহ) সহিহ সাব্যস্তকরণ প্রসঙ্গে,

প্রসিদ্ধ সিরাতবিদ ইবনু ইসহাক রহ. আলোচ্য হাদিসটিকে পরোক্ষভাবে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন। আত-তাবারী রহ. প্রত্যক্ষ ও সুস্পষ্টভাবে ইবনু ইসহাকের উক্ত পরোক্ষ তাসহিহটির বিরোধিতা করেছেন ও আলোচ্য হাদিসটিকে কোরানবিরোধী ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্ত করেছেন। এবং ইবনু ইসহাকের উক্ত পরোক্ষ তাসহিহটির বিরোধিতা করতে গিয়ে ইবনু ইসহাকের বিরোদ্ধে তিনি নিজের পক্ষে দলিল হিসেবে উল্লেখ্য করেছেন যে সামান্য কিছু সংখ্যাক সালাফ বাদে বাকি সব সালাফরাই আলোচ্য হাদিসটিকে পরোক্ষভাবে ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্ত করার উপর একমত হয়েছেন [30]। অর্থাৎ ইবনু ইসহাকের রহ. এই পরোক্ষ তাসহিহ অধিকাংশ সালাফদের দৃষ্টিভংগির বিরোধী, আত-তাবারীর রহ. দৃষ্টিভংগির বিরোধী ; তার উপর আবার উনার উপরে অনেক মুহাদ্দিসদের জারাহও আছে যে তিনি নাকি হাদিসের ক্ষেত্রে যইফ, মিথ্যাবাদী, নির্ভরযোগ্য নন। সবমিলিয়ে বলা যায় যে ইবনু ইসহাকের উক্ত তাসহিহও এক্ষেত্রে বিবেচনার যোগ্য নয়।

তিন - ইবনু হিব্বানের (রহ) সহিহ সাব্যস্তকরণ প্রসঙ্গে,

ইবনু হিব্বান রহ. আলোচ্য হাদিসটিকে নিজ 'সহিহ' গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। যার অর্থ, উনার দৃষ্টিতে আলোচ্য হাদিসটি 'সহিহ'। কিন্ত ইবনু হিব্বান (রহ) হাদিস সহিহ সাব্যস্তকরণের ক্ষেত্রে প্রচুর তাসাহুল  (ঢিলেমি) করতেন [31][32][34]। অর্থাৎ উনার মধ্যে এমনেতেই বিভিন্ন যইফ হাদিসকে বেখেয়ালিবশত বা ভুলবশত বা যথাযথভাবে যাচাই বাছাই না করার কারণে সহিহ বলে গণ্য করে নেয়ার একটা অভ্যাস ছিলো। এই কারণে দেখা যায় যে এমন বিপুল সংখ্যাক হাদিস আছে, যেগুলো বাস্তবে যইফ কিন্ত ইবনু হিব্বানের রহ. নিকট সহিহ। সুতরাং এক্ষেত্রে ইবনু হিব্বানের (রহ) উক্ত তাসহিহ গ্রহণযোগ্য নয়, বিবেচ্য নয় ;

ইবনু হিব্বান রহ. এর তাসহিহ প্রসঙ্গে শায়খ নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী (রহ) লিখেছেন যে ;

فإني شخصيا لا أستطيع الاعتماد على مجرد تصحيح ابن حبان له قبل الاطلاع على سنده ورواته لما علمنا من تساهله في ذلك حسبما نبهنا عليه مرارا[33]

অর্থ : "আমি অবশ্য ব্যাক্তিগতভাবে ইবনু হিব্বানের একক তাসহিহের (সহিহ সাব্যস্তকরণের) উপর নির্ভর করতে পারিনা, যতক্ষণ না আমি নিজ থেকে হাদিসটির সনদ ও রাবিদের ব্যাপারে ঘাটাঘাটি করে দেখে নেই। কারণ আমরা এক্ষেত্রে (তাসহিহের ক্ষেত্রে) তাঁর তাসাহুলের ব্যাপারে জেনেছি এবং এরই অনুসরণে আমরা বার বার এব্যাপারটি সম্পর্কে সতর্ক হয়েছি।"

চার- আস-সুয়ুতীর (রহ) সহিহ সাব্যস্তকরণ প্রসঙ্গে,

জালালুদ্দিন আস-সুয়ুতী (রহ) আলোচ্য হাদিসটিকে 'সহিহ' সাব্যস্ত করেছেন। কিন্ত আস-সুয়ুতী রহ. তাসহিহের ক্ষেত্রে প্রচুর তাসাহুলকারী ছিলেন, তিনি বিপুল সংখ্যাক যইফ, খুবই যইফ ও জাল হাদিসকে 'সহিহ' বা 'হাসান' সাব্যস্ত করে গিয়েছেন! [35] উনার মাঝে বিভিন্ন যইফ ও বাতিল হাদিসকে সহিহ বা হাসান হিসেবে গণ্য করে নেয়ার অভ্যাস ছিলো। সুতরাং এক্ষেত্রে উনার তাসহিহ গ্রহণযোগ্য নয়, নির্ভরযোগ্য নয়, বিবেচ্য নয়।

পাচ - সাবাতু ইবনিল যাওযি (রহ) এর সহিহ সাব্যস্তকরণ প্রসঙ্গে,

সাবাতু ইবনিল-যাওযি (রহ) এর গ্রন্থ 'মারাতুয জামান ওয়া তাওয়ারিখুল আইয়ান' এর প্রথম খন্ডের ৩২ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে যে আলোচ্য হাদিসটি সহিহ।

পর্যালোচনা ; মূল 'মারাতুয যামান' গ্রন্থের প্রথম খন্ডের ৩২ নম্বর পৃষ্ঠায় আসলে এইমর্মের কোনো কথার অস্তিত্ব নেই যে সহিহ মুসলিমের আলোচ্য হাদিসটি সহিহ। প্রথম খন্ডের ৩২ নং পৃষ্ঠার এইমর্মে যেই বক্তব্যটি আছে তা মারাতুয যামানের অন্তর্ভুক্ত কিছু নয়, মুল গ্রন্থটির কোনো অংশ নয়। বরং তা হচ্ছে 'আবু-বকর আদ-দাওয়াদারী' নামক একজন লেখকের বক্তব্যের অংশ ,এই বক্তব্যের অংশটিকে মারাতুয যামান গ্রন্থের মুহাক্কিকরা মারাতুয যামান গ্রন্থটির মূলপাঠের একটা ফাঁক দিয়ে  ব্র‍্যাকেট দ্বারা আবদ্ধ করে 'যিয়াদাহ'
(অতিরিক্ত সংযুক্তি) হিসেবে মারাতুয যামানের মূলপাঠের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছেন।এটা মারাতুয জামান গ্রন্থের মূলপাঠের অন্তর্ভুক্ত কিছু নয়, এটা নিছকই একটি অতিরিক্ত সংযুক্তি। 'আবু-বকর আদ-দাওয়াদারী' উক্ত বক্তব্যের অংশটি তাঁর গ্রন্থ 'কানযুদ দুরার ওয়া জামিউল গুরার' এর প্রথম খন্ডের ২৯ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখেছেন, আর এখান থেকেই মারাতুয যামান গ্রন্থের মুহাক্কিকরা উক্ত বক্তব্যের অংশটিকে নিয়েছেন এবং নিয়ে সেটাকে মারাতুয যামানের মূল-পাঠের মধ্যে অতিরিক্ত সংযুক্তি হিসেবে নিজেদের পক্ষ হতে  যুক্ত করে দিয়েছেন। আর এব্যাপারটা স্বয়ং মারাতুয জামান গ্রন্থের মুহাক্কিকরাই (প্রথম খন্ডের পৃষ্ঠা নং ৩২ এর টিকা নং ৩ এ) সুস্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন।

ছয়- আবু হাইয়ান (রহ) এর সহিহ সাব্যস্তকরণ প্রসঙ্গে,

আবু-হাইয়ান আল-আন্দালুসি রহ. আলোচ্য হাদিসটির সহিত কোরানের সামঞ্জস্যসাধন
করাপুর্বক আলোচ্য হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন। কিন্ত উনি যেই ধরনের যুক্তি দেখিয়ে আলোচ্য হাদিসটির সহিত কোরানের সামঞ্জস্যসাধন করে হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন ; সেই যুক্তিটি অত্যন্ত অদ্ভুত , ভিত্তিহীন,  কোরানবিরোধী ও সম্পুর্ণ ভুল । সুতরাং আবু-হাইয়ানের রহ. উক্ত তাসহিহ বিবেচনায় আনারই যোগ্য নয়। উনার যুক্তিটা এতই আজগুবি ও ক্রুটিবিশিষ্ট, যে আলোচ্য হাদিসকে সহিহ সাব্যস্তকারী অন্যান্য আলেমরাও তাঁর এই যুক্তির সহিত একমত হবেন না।_[36]

সাত - আল-আযহারী (রহ) এর সহিহ সাব্যস্তকরণ প্রসঙ্গে,

আবু-মানসুর আল-আযহারী রহ. আলোচ্য হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন। কিন্ত আল-আযহারী ছিলেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যের একজন বড় ইমাম ও পন্ডিত। উনার পান্ডিত্য ও উচ্চতর দক্ষতা ছিলো আরবি ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে। কোরান-সুন্নাহ ভাষা সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে তিনি অনেক কাজও করেছেন। তবে হাদিসের সহিহ-যইফ যাচাইয়ের ক্ষেত্রে তিনি আসলে তেমন কেওই নন। অতএব, হাদিসবিদ্যার ব্যাপারে তেমন অভিজ্ঞ না হয়ার দরুন তাঁর তাসহিহ বিবেচনার যোগ্য নয়।

আট - ইবনুল-আনবারী (রহ) এর সহিহ সাব্যস্তকরণ প্রসঙ্গে,

আবু-বকর ইবনুল-আনবারী  (রহ) আলোচ্য হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন এই বলে যে ;
"واتفق أهل العلم على أن الله جل وعز ابتدأ الخلق يوم السبت"[37]
অর্থ :" সব উলামারা এব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির আরম্ভ করেছেন ইয়াওমুস-সাবাতে। "

আত-তাবারী, আল-কুরেশী, আল-হাওওত, আন-নাহহাস, ইবনু তাইমিয়াহ, এবং ইবনু কাসির এক্ষেত্রে ইবনুল-আনবারীর উক্ত বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন ও বলেছেন যে অধিকাংশ উলামাদের মতেই সৃষ্টির আরম্ভ ইয়াওমুস সাবাতে 'হয়নি'।[38][21][23][24]। এবং ইবনু তাইমিয়াহ একদম সুনির্দিষ্টভাবে ইবনুল-আনবারীর এই ঐক্যমত থাকার দাবিটিকে 'ভুল' সাব্যস্ত করেছেন [39]। সুতরাং, ইবনুল-আনবারীর এই বক্তব্যটি ভুল ; যার অর্থ ইবনুল-আনবারীর উক্ত তাসহিহটি বিবেচনায় আসার যোগ্য নয়।

নয় - ইবনুল-যাওযির (রহ) সহিহ সাব্যস্তকরণ প্রসঙ্গে,

আবুল-ফারাজ ইবনুল-যাওযী রহ. আলোচ্য হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন।

এখন প্রশ্ন হলো, ইবনুল-যাওযী রহ. আলোচ্য হাদিসটিকে 'কেন' সহিহ সাব্যস্ত করেছেন?  এই প্রশ্নের উত্তরস্বরুপ তাকিউদ্দিন ইবনু তাইমিয়াহ রহ. লিখেছেন যে ;

'فَصَحَّحَ هَذَا لِظَنِّهِ صِحَّةَ الْحَدِيثِ إذْ رَوَاهُ مُسْلِمٌ'_[40]

অর্থ : "তিনি (ইবনুল-যাওযি) এটাকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন এই চিন্তার কারণে যে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করলেই হাদিসের বিশুদ্ধতা (নিশ্চিত) হয়ে যায়।"

অর্থাৎ, 'ইমাম মুসলিম যেহেতু বর্ণনা করেছেন, সহিহ তো হতে হবেই ', এই নিতীর অনুসরণেই ইবনুল-যাওযি রহ. আলোচ্য হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন এবং আলোচ্য হাদিসটির সহিহ হয়ার পক্ষে কথা বলেছেন। নিরপেক্ষভাবে যাচাই বাছাই করে তারপর সহিহ সাব্যস্ত করেন নি। কিন্ত আলোচ্য হাদিসটির জন্য এই নিতীর অনুসরণ প্রযোজ্য নয় সঠিক নয়, কেননা আলোচ্য হাদিসটি সহিহ মুসলিমের অতি-সল্পসংখ্যাক ব্যাতিক্রমী হাদিসসমুহের অন্তর্ভুক্ত এবং এই ব্যাতিক্রমী হাদিসগুলোর ক্ষেত্রে এই নিতী খাটেনা প্রযোজ্য হয়না। অতএব, ইবনুল-যাওযি (রহ) যেই কারণে আলোচ্য হাদিসটির সহিহ হয়ার মতটির পক্ষাবলম্বন করেছেন সেই কারণটি সমস্যাজনক ক্রুটিবিশিষ্ট। সুতরাং ইবনুল-যাওযির রহ. উক্ত সহিহ সাব্যস্তকরণ ভুল।

উপরে উল্লেখিত এই যুক্তি দেখিয়ে আলোচ্য হাদিসটির জন্য ইবনুল-যাওযির রহ. সহিহ সাব্যস্তকরণটিকে এইভাবে ভুল সাব্যস্ত করার ব্যাপারাটা আমার নিজের তরফ হতে আগত বা প্রকাশিত কোনো বিষয় নয়। বরং ইবনু তাইমিয়াহ রহ. ঠিক এই যুক্তি দেখিয়েই এইভাবেই ইবনুল-যাওযির রহ. তাসহিহটিকে ভুল সাব্যস্ত করেছেন।[41] ইবনু তাইমিয়াহর রহ. উক্ত ব্যাপারটিকে আমি নিজ ভাষায় বর্ণনা করেছি মাত্র, এক্ষেত্রে আমি নিজের পক্ষ থেকে কোনো যুক্তি বা মত নিয়ে আসিনি।

দশ থেকে চৌদ্দ - ইবনু খুযাইমাহ, ইবনুল আরাবী, ইবনুয-যাহিরী, আশ-শাওকানী ও সিদ্দিক হাসান খান (রহিমাহুমুল্লাহ) এর সহিহ সাব্যস্তকরণ প্রসঙ্গে,

মুহাম্মদ বিন ইসহাক ইবনু খুযাইমাহ (রহ), আবু-বকর ইবনুল-আরাবী (রহ), জামালুদ্দিন ইবনুয-যাহিরী (রহ), মুহাম্মদ বিন আলি আশ-শাওকানী (রহ) ও সিদ্দিক হাসান খান আল-কিন্নুজী (রহ) আলোচ্য হাদিসটিকে 'সহিহ' সাব্যস্ত করেছেন।

এরবিপরীতে আবু-বকর আল-বায়হাকী (রহ), আমাদুদ্দিন ইবনু কাসির (রহ), বদরুদ্দিন আয-যারকাশী (রহ), আবুল-আব্বাস আল-কুরতুবী (রহ) এবং আল-মোল্লা আলী আল-কারী (রহ) আলোচ্য হাদিসটিকে 'ইল্লতবিশিষ্ট' সাব্যস্ত করেছেন।

জারাহ তা'দিলের একটা প্রসিদ্ধ মুলনিতী হলো "আল-জারহুল মুফাসসার মুকাদ্দামুন আলাত তা'দিল " অর্থাৎ 'বিশদভাবে বর্ণিত জারাহ তা'দিলের উপর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত'।
উক্ত মুলনিতীটির পিছনে যেই ভিত্তি কাজ করছে সেই ভিত্তিটি হলো এই যে "কোনো একটা বিষয়ে বিশদভাবে বর্ণিত না-বাচক মন্তব্য সেই বিষয়ে অবিশদভাবে বর্ণিত নিছক হা-বাচক মন্তব্যের উপর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। "

একজন রাবিকে জারাহ বা তাদিল করা তথা নির্ভরযোগ্য বা অনির্ভরযোগ্য সাব্যস্ত করা আর একটি হাদিসকে সহিহ বা যইফ/ ইল্লতবিশিষ্ট বলা,  মূলত একই ধরনের বিষয়। অতএব, যেই ভিত্তিটির অনুসরণে উক্ত মুলনিতীটি প্রদান করা হয়েছে ; সেই একই ভিত্তি কোনো হাদিসকে সহিহ বা যইফ/ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

আর যদি সেই একই ভিত্তি হাদিসকে সহিহ বা যইফ/ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হয়, তাহলে এটা বলা সঠিক হবে যে :

"বিশদ-বর্ণনাসহ যইফ বা ইল্লতযুক্ত সাব্যস্তকরণ, বিশদ-বর্ণনাহীন সহিহ সাব্যস্তকরণের উপর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত "

নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী (রহ) বলেছেন যে,
قاعدة: " الجرح المفسر مقدم على التعديل " التي يتفرع عنها: أن التضعيف مقدم على التصحيح إذا تبينت العلة…[42]
অর্থ : মুলনিতী "বিশদভাবে বর্ণিত জারাহ তা'দিলের উপর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত"  যা হতে নির্গত হয় এই যে যইফ সাব্যস্তকরণ সহিহ সাব্যস্তকরণের উপর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত হবে, যদি (যইফ সাব্যস্তকরণের) কারণ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়ে থাকে।

এক্ষেত্রে সহিহ সাব্যস্তকারীগণ তথা ইবনু খুযাইমাহ, ইবনুল-আরাবী, ইবনুয-যাহিরী, আশ-শাওকানী ও সিদ্দিক-হাসান-খান আলোচ্য হাদিসটিকে নিছকই সহিহ বলেছেন। হাদিসটির ব্যাপারে অন্যান্য মুহাদ্দিসদের কর্তৃক যেই ইল্লতগুলো বর্ণিত হয়েছে সেই ইল্লতগুলোর ব্যাপারে কিছু বলেন নি, সেই ইল্লতগুলোর বিরোধিতা করে কোনো আলোচনা করেন নি। অর্থাৎ উনাদের সহিহ সাব্যস্তকরণটি হচ্ছে 'বিশদ-বর্ণনাহীন'। পক্ষান্তরে, হাদিসটিকে ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্তকারীগণ তথা আল-বায়হাকী, ইবনু কাসির, আয-যারকাশী, আবুল-আব্বাস এবং আলী আল-কারী আলোচ্য হাদিসটিকে নিছকই 'ইল্লতবিশিষ্ট' বলেন নি, বরং এরপাশাপাশি হাদিসটির ইল্লতবিশিষ্ট হয়ার এক বা একাধিক কারণও সংক্ষেপে বর্ণনা করে রেখেছেন। অতএব, উনাদের ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্তকরণটি হচ্ছে 'বিশদ-বর্ণনাবিশিষ্ট'।

যেহেতু বিশদ-বর্ণনাবিশিষ্ট ইল্লতযুক্ত সাব্যস্তকরণ, বিশদ-বর্ণনাহীন সহিহ সাব্যস্তকরণের উপর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ; সুতরাং এক্ষেত্রে ইবনু খুযাইমাহ, ইবনুল-আরাবী, ইবনুল-যাহিরী, আশ-শাওকানী এবং সিদ্দিক হাসানের সহিহ সাব্যস্তকরণের উপর আল-বায়হাকী, ইবনু কাসির, আয-যারকাশী, আবুল-আব্বাস এবং আলী আল-কারীর ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্তকরণ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত হবে।

পনেরো  -আহমদ শাকির (রহ) এর সহিহ সাব্যস্তকরণ প্রসঙ্গে,

শায়খ আহমদ শাকির (রহ) আলোচ্য হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন। কিন্ত আহমদ শাকির রহ. একজন তাসাহুলকারী ছিলেন। অতএব, আলোচ্য হাদিসের জন্য উনার উক্ত সহিহ সাব্যস্তকরণ নির্ভরযোগ্য নয়, বিবেচনায় আসার যোগ্য নয়।

আব্দুল-কারিম বিন আব্দুল্লাহ আল-খাদ্বির বলেছেন ;

الشيخ أحمد شاكر واسع الخطو جداً متساهل في التصحيح كما أنه متساهل في توثيق الرواة [43]

অর্থ : "শায়খ আহমদ শাকির প্রচুর ভুলকারী ছিলেন। তিনি সহিহ সাব্যস্তকরণের ক্ষেত্রে তাসাহুল-কারী ছিলেন, ঠিক যেভাবে তিনি রাবিদের ছিকাহ সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে তাসাহুলকারী ছিলেন। "

শায়খ আহমাদ শাকির (রহ) এর ব্যাপারে শায়খ আব্দুল-আযিয বিন বায (রহ) বলেছেন যে ;
عنده بعض التساهل، يعفو عنا وعنه، في التحسين والتصحيح، صحح حديث ابن لهيعة وجماعة من الضعفاء._[44]
অর্থ : "সহিহ সাব্যস্তকরণ ও হাসান সাব্যস্তকরণের ক্ষেত্রে তাঁর কিছু তাসাহুল বিদ্যমান, আল্লাহ আমাদেরকে ও তাঁকে ক্ষমা করুক, তিনি ইবনু লাহিয়াহর ও যইফ রাবিদের একটি জামাতের হাদিসকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন।"

ষোলো থেকে চব্বিশ -  ইসমাইল হাক্কী,আস-সুহাইলী,ইবনুস সালাহ, আল-মুয়াল্লিমী, আল-আলবানী,আল-বালিনসী, আল-হুয়াইনী, আল-আলাঈ এবং আল-ফাইয়ুমী (রহিমাহুমুল্লাহ/হাফিযাহুল্লাহ) এর সহিহ সাব্যস্তকরণ প্রসঙ্গে,

ইসমাঈল হাক্কী (রহ), আস-সুহাইলী (রহ), ইবনুস-সালাহ (রহ), আল-মুয়াল্লিমী (রহ), আল-আলবানী (রহ), আল-বালিনসী (রহ), আল-হুয়াইনি (হাফি), আল-আলাঈ (রহ) এবং আল-ফাইয়ুমী (রহ) আলোচ্য হাদিসিটিকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন।

এরবিপরীতে ; আল-আলওয়াসী (রহ), আল-কুরেশী (রহ), ইবনুল-কাইইম (রহ), আশ-শানকিতিঈ (রহ), আল-হাওওত (রহ), আস-সানয়ানী (রহ), বিন বায (রহ), ইবনুল-মুলাক্কিন (রহ) এবং আল-খাযিন (রহ) আলোচ্য হাদিসটিকে ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্ত করেছেন।

এই ৯ জন সহিহ ইল্লত-মুক্ত সাব্যস্তকারীর মধ্য হতে আল-আলবানী, আল-মুয়াল্লিমী এবং আল-হুয়াইনী আলোচ্য হাদিসের ব্যাপারে বর্ণিত হয়া প্রায় সবগুলো ইল্লতের বিরোধিতা করে সবগুলো ইল্লত নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এবং বাকিরা আলোচ্য হাদিসের ব্যাপারে বর্ণিত হয়া ইল্লতসমুহ হতে হাতেগোণা এক-দুটা ইল্লতের বিরোধিতা করে আলোচনা করেছেন।

তবে এই সহিহ সাব্যস্তকারী উলামারা আলোচ্য হাদিসটির ব্যাপারে বর্ণিত হয়া ইল্লতগুলোর বিরোদ্ধে যেসব জবাবমুলক ব্যাখ্যা দিয়ে আলোচ্য হাদিসিটিকে সহিহ ইল্লতমুক্ত সাব্যস্ত করেছেন, সেই জবাবমুলক ব্যাখ্যাগুলো ক্রুটিপুর্ণ ও সমস্যাজনক।  সেই জবাবমুলক ব্যাখ্যাগুলোর বিরোদ্ধে ব্যাখ্যাগুলোর ভুল-ক্রুটিসমুহ বর্ণনা করে পালটা জবাবমুলক ব্যাখ্যা অনেক আলেমদের কর্তৃক প্রদান করা হয়েছে।

ড. মুহাম্মদ বিন ফারিদ, ড. আহমদ আল-কাসাইইর এবং ড. সুলাইমান আদ-দাবিখী আলোচ্য হাদিসটির ব্যাপারে, হাদিসটির শুদ্ধতা নিয়ে হয়া মতভেদের ব্যাপারে, হাদিসটির ইল্লতবিশিষ্ট হয়ার পক্ষে, ও হাদিসটির সহিহ হয়ার পক্ষে প্রদানকৃত জবাবমুলক ব্যাখ্যাগুলোর বিরোদ্ধে ব্যাখ্যাগুলোর ক্রুটিসমুহ বর্ণনা করে সুবিস্তারিতভাবে সুবিন্যাস্তভাবে এ টু যেট বিশাল দৈর্ঘের আলোচনা করেছেন [10][11]। যারা উক্ত সহিহ সাব্যস্তকারী আলেমদের কর্তৃক প্রদানকৃত জবাবমুলক ব্যাখ্যাগুলোর ভুলক্রুটি ও অসারতার ব্যাপারে বিস্তারিভাবে জানতে ইচ্ছুক, তারা এইতিনজন আলেমের আলোচনাগুলো দেখে নিতে পারেন।

9. 2 অজ্ঞাত বা অনুল্লেখিত আলেমদের কর্তৃক আলোচ্য হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্তকরণের ব্যাপারে আলোচনা :

আলোচ্য হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্তকারী যেসব উলামাদের ব্যাপারে আমি জানতে পারিনি যে তাঁরা উক্ত হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন কিংবা আলোচ্য হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্তকারী উলামাদের মধ্য হতে যাদেরকে এখানে উল্লেখ্য করা হয়নি ; তাদেরকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।

এক.  তাঁরা যারা কিনা শুধুমাত্র হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন। সহিহ সাব্যস্তকরণের পাশাপাশি আলোচ্য হাদিসটির ব্যাপারে বর্ণিত হয়া ইল্লতসমুহের মধ্য হতে কোনো একটাকে নিয়েও আলোচনা করেন নি, কোনো একটারও বিরোধিতা করে কিছু লিখেন নি।

দুই.  তাঁরা যারা কিনা আলোচ্য হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্ত করার পাশাপাশি আলোচ্য হাদিসটির ব্যাপারে বর্ণিত হয়া ইল্লতসমুহের মধ্য থেকে কোনো না কোনো একটা ইল্লতকে নিয়ে কিংবা সবগুলো ইল্লতকে নিয়েই আলোচনা করেছেন,কোনো একটা ইল্লতের বা সবগুলো ইল্লতেরই বিরোধিতা করেছেন।

প্রথম শ্রেণীর উলামাদের সহিহ সাব্যস্তকরণ প্রসঙ্গে ;

এই শ্রেণীর উলামারা বিশদ-বর্ণনাহীনভাবে নিছকই সহিহ সাব্যস্ত করেছেন। পক্ষান্তরে অন্যান্য আলেমরা আলোচ্য হাদিসটিকে বিশদ-বর্ণনা প্রদান করার সহিত ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্ত করেছেন। সুতরাং এই শ্রেণীর উলামাদের বিশদ-বর্ণনাহীন সহিহ-সাব্যস্তকরণের উপর আলোচ্য হাদিসটিকে বিশদ-বর্ণনাসহ ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্তকারী উলামাদের বিশদ-বর্ণনাবিশিষ্ট ইল্লতযুক্ত সাব্যস্তকরণ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত।

দ্বিতীয় শ্রেণীর উলামাদের সহিহ সাব্যস্তকরণ প্রসঙ্গে ;

এই শ্রেণীর উলামারা যেসব জবাবমুলক ব্যাখ্যা দেখিয়ে আলোচ্য হাদিসটির ব্যাপারে বর্ণিত হয়া ইল্লতসমুহকে ভুল ও অগ্রহণযোগ্য সাব্যস্তকরাপুর্বক আলোচ্য হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন। সেই জবাবমুলক ব্যাখ্যাগুলো সমস্যাজনক ও ক্রুটিযুক্ত। ড. আহমদ আল-কাসাইইর, ড. মুহাম্মদ বিন ফারিদ ও ড. সুলাইমান আদ-দাবিখী এসব জবাবমুলক ব্যাখ্যাসমুহকে পাল্টা জবাব প্রদানকরাপুর্বক খন্ডন করেছেন।

10. সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কিছু উল্লেখ্যযোগ্য বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচনা :-

এক.

অনেক আলেমরা উল্লেখ্য করেছেন যে আলোচ্য হাদিসটি প্রকৃতপক্ষে কাব আল-আহবারের (রহ) বক্তব্য, যা তিনি ইসরাইলি তথ্যভান্ডার হতে নিয়েছেন ; ইহা রাসুল (সা) এর বক্তব্য নয়। এরবিপরীতে কিছু আলেমরা জবাবস্বরুপ যুক্তি দিয়েছেন যে  স্বয়ং কা'ব আল-আহবার (রহ) হতেই এমনটা সহিহ সনদে বর্ণিত আছে যে সৃষ্টির আরম্ভ হয়েছে ইয়াওমুল-আহাদে, ইয়াওমুস সাবাতে নয় ; সুতরাং এটা হতেই পারেনা যে আবু-হুরাইরাহ (রা) আলোচ্য হাদিসটি কাব হতে নিয়েছেন, তাছারা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থসমুহেও সৃষ্টির আরম্ভ ইয়াওমুল-আহাদে বলা হয়েছে।

কিন্ত জবাবস্বরুপ প্রদানকৃত এই যুক্তিটি দ্বারা প্রকৃতপক্ষে এটা প্রমাণিত হয়না যে আবু-হুরাইরাহ (রা) আলোচ্য হাদিসটি কা'ব হতে নেন নি কিংবা কা'ব আল-আহবার (রহ) আলোচ্য হাদিসটিতে যা বর্ণিত আছে তা নিজ পক্ষ হতে বলেন নি। নিম্নে এই যুক্তিটির সমস্যাগুলো বর্ণনা করা হলো ;

কাব (রহ) হতে সহিহ সনদে এমন একটা বর্ণনা প্রমাণিত আছে যেখানে তিনি আলোচ্য হাদিসে বর্ণিত তথ্যের সহিত সাংঘর্ষিক তথ্য বর্ণনা করেছেন, তিনি সেখানে উল্লেখ্য করেছেন যে সৃষ্টির আরম্ভ হয়েছে ইয়াওমুল-আহাদে, যা কিনা আলোচ্য হাদিসের বিরোধী, আলোচ্য হাদিস অনুযায়ী তা আরম্ভ হয়েছে ইয়াওমুস-সাবাতে, ইয়াওমুল-আহাদে নয়।

কিন্ত এরমানে এইনা যে কাব (রহ) কর্তৃক আলোচ্য হাদিসটি বর্ণিত হয়ে থাকতে পারেনা। কেননা এটা হয়া সম্ভব যে কাব (রহ) ইয়াওমুল-আহাদে সৃষ্টি আরম্ভ হয়ার হাদিস ও সহিহ মুসলিমে বর্ণিত আলোচ্য হাদিস ; উভয় হাদিসকেই বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ এটা সম্ভব যে তিনি পরস্পরবিরোধী দুটি হাদিসের উভয়কেই (অর্থাৎ ইয়াওমুল-আহাদের হাদিসটি ও আলোচ্য হাদিসটি) বর্ণনা করেছেন। একজন ব্যাক্তি কর্তৃক স্ববিরোধী বক্তব্য প্রদান করা অস্বাভাবিক কিছুনা, বরং এমন বহু উদাহরণ পাওয়া যায় যে একজন আলেম এক জায়গায় একধরনের মন্তব্য করেছেন,আবার আরেক জাগায় নিজের সেই মন্তব্যটিরই বিরোধী আরেক ধরনের মন্তব্য করেছেন।

প্রশ্ন - কাব (রহ) ইসরাইলি তথ্যভান্ডার হতে এই ধরনের বিষয়গুলো বর্ণনা করতেন। কিন্ত ইসরাইলি উৎসসমুহে আলোচ্য হাদিসে যা বলা হয়েছে সেই ধরনের কিছুই বর্ণিত নেই, বরং তাওরাত-বাইবেলসহ ইহুদি-খ্রিষ্টানদের অন্যান্য বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে আলোচ্য হাদিসে বর্ণিত তথ্যের বিরোধী তথ্য বর্ণিত আছে এইমর্মে যে সৃষ্টির আরম্ভ ইয়াওমুল-আহাদে হয়েছে ইয়াওমুস-সাবাতে নয়। ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের মাঝে প্রচলিত বিশ্বাসও এটাই যে সৃষ্টির আরম্ভ ইয়াওমুল-আহাদে হয়েছে ইয়াওমুস-সাবাতে নয়। তাহলে কিভাবে এমনটা হতে পারে যে কা'ব (রহ) আলোচ্য হাদিসটি ইসরাইলি তথ্যভান্ডার হতে নিয়েছেন?  আর আবু-হুরাইরাহ (রা) আলোচ্য হাদিসটি প্রকৃতপক্ষে  কা'ব হতে গ্রহণ করেছেন? 

উত্তর :

হতে পারে কাব (রহ) কোরান, সুন্নাহ, বিভিন্ন ইসরাইলি তথ্য, নিজ মেধা ও বুদ্ধির
স্বমন্বয়ে নিজের একটি ব্যাক্তিগত ধারনা বা তত্ত্ব তৈরি করেছিলেন আর সেই তত্ত্বটিই হলো আলোচ্য হাদিসটি। ইসরাইলি উৎস বলতে শুধুমাত্র বাইবেল-তাওরাত বা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থই উদ্দেশ্য নয়, বরং এসবের পাশাপাশি ইহুদি-খ্রিষ্টানদের মাঝে লোকমুখে প্রচলিত সব কথাও ইসরাইলি উৎসের অন্তর্ভুক্ত। একইভাবে মুল-ধারার ইহুদি-খ্রিষ্টানদের পাশাপাশি ধর্মের মুলধারা হতে বিচ্ছিন্ন মতাদর্শের অনুসারী ইহুদি-খ্রিষ্টানদের কার্যকলাপও ইসরাইলি উৎসের অন্তর্ভুক্ত। অতএব, হতে পারে যে আলোচ্য হাদিসটি কাব (রহ) ধর্মের মুল-ধারা হতে বিচ্ছিন্ন কোনো ইহুদি বা খ্রিষ্টান উপদল হতে গ্রহণ করেছেন, আর এটাও হয়া সম্ভব যে সেই উপদলটি বর্তমান পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেনি, বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। এইক্ষেত্রে এধরনের বহু সম্ভাবনা বিদ্যমান রয়েছে।

তবুও, কিছুক্ষণের জন্য ধরে নিলাম যে কাব (রহ) শুধুমাত্র ইয়াওমুল-আহাদে সৃষ্টির আরম্ভ হয়ার পক্ষেই বলেছেন। আলোচ্য হাদিসটিতে যা বর্ণিত হয়েছে তা আসলে কাব (রহ) বর্ণনা করেন নি, বরং তিনি এর বিরোধী ছিলেন ; যদি এমনটা ধরে নেয়া হয়, তাহলে উলটা আরো নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয় যে আলোচ্য হাদিসটি আবু-হুরাইরাহ (রা) রাসুল (সা) হতে বর্ণনা করেন নি! কিভাবে?  এর ব্যাখ্যা নিম্নে উল্লেখ্য করা হলো ;

'আবু-বকর আব্দুল্লাহ ইবনু আবি-শাইবাহ'(রহ) বর্ণনা করেছেন যে ;

وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا الْأَعْمَشُ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ كَعْبٍ، قَالَ: «بَدَأَ اللَّهُ تَعَالَى بِخَلْقِ السَّمَوَاتِ يَوْمَ الْأَحَدِ فَالْأَحَدُ وَالِاثْنَانِ وَالثُّلَاثَاءُ وَالْأَرْبِعَاءُ وَالْخَمِيسُ وَالْجُمُعَةُ وَجَعَلَ كُلَّ يَوْمٍ أَلْفَ سَنَةٍ…[48]

"ওয়াকিঈ বলেছেন যে আমাদের আল-আ'মাশ বর্ণনা করে শুনিয়েছেন আবু-সালিহ হতে তিনি কা'ব হতে যে তিনি (কাব) বলেছেন : আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির আরম্ভ করেছেন আকাশমন্ডলী সৃষ্টির মাধ্যমে ইয়াওমুল-আহাদে। এভাবে আল-আহাদ, আল-ইসনান, আস-সুলাসা, আল-আরবিয়া, আল-খামিস ও আল-জুময়াহ। এবং প্রত্যেক ইয়াওমকে তিনি করেছেন হাজার বছরের সমান।"

বর্ণনাটির সনদের তাহকিক : এই সনদের দুজন রাবি 'وكيع بن الجراح' (ওয়াকিঈ ইবনুল-জাররাহ) এবং 'الأعمش' (আল-আ'মাশ) হলেন প্রসিদ্ধ দুজন উচুস্তরের মুহাদ্দিস, এনাদের ছিকাহ হয়ার ব্যাপারটা প্রসিদ্ধ।এখানে 'أبو صالح '(আবু-সালিহ) হলেন 'أبو صالح السمان'
(আবু-সালিহ আস-সাম্মান)। আবু-হাতিম, আবু-যুরয়াহ, আহমাদ, আল-জাইলী, ইব্রাহিম আল-হারবী, ইবনু হাজার, আয-যাহাবী, আস-সাজী, ইবনুল-মাদিনী, ইবনু মুয়াইন এবং ইবনু সাদ 'আবু-সালিহ আস-সাম্মান' কে "ছিকাহ" আখ্যা দিয়েছেন, যার অর্থ আবু-সালিহ একজন ছিকাহ রাবি[49]। সুতরাং এই বর্ণনাটির সনদ সহিহ।

অতএব, কাব (রহ) যে আলোচ্য হাদিসটির বিরোধী ও ইয়াওমুল-আহাদে সৃষ্টি আরম্ভ হয়ার পক্ষে বর্ণনা করেছেন, তা সহিহ সনদে কাব হতে প্রমাণিত আছে, এব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এবার মুল কথায় আসি, যদি আবু-হুরাইরাহ (রা) আলোচ্য হাদিসটি রাসুল (সা) হতে প্রকৃতপক্ষেই বর্ণনা করে থাকতেন, তাহলে কাব (রহ) অবশ্যই এই হাদিসের ব্যাপারে জানতেন ; কেননা কাব (রহ) ও আবু-হুরাইরাহ (রা) একে অপরের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন, উনারা দুজন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশেষ করে সৃষ্টির আরম্ভ সক্রান্ত ও নবীদের ঘটনা সক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে প্রচুর আলোচনা করতেন, কাব আবু-হুরাইরাহ (রা) এর উদ্দেশ্যে ইসরাইলি উৎস হতে বিভিন্ন তথ্য বর্ণনা করতেন আর আবু-হুরাইরাহ (রা) কাবের (রহ) উদ্দেশ্যে রাসুল (সা) এর বিভিন্ন হাদিস বর্ণনা করতেন;  আর যদি কাব (রহ) এব্যাপারটা জানতেন যে আলোচ্য হাদিসটি রাসুল (সা) এর বক্তব্য , তাহলে তিনি কখনৌই এমন কিছু বর্ণনা করতেন না যা আলোচ্য হাদিসটির বিরোদ্ধে যায়। কেননা কোনো মুসলিমই জেনে বুঝে রাসুল (সা) এর বক্তব্যের বিরোধী কোনোকিছু বলবেনা।এক্ষেত্রে কাব (রহ) এমন একটা বর্ণনা বর্ণনা করেছেন যা আলোচ্য হাদিসটির বিরোদ্ধে যায়, আলোচ্য হাদিসটিকে ভুল সাব্যস্ত করে। সুতরাং কাব (রহ) জানতেন না যে আলোচ্য হাদিসটি রাসুল (সা) এর বক্তব্য। সুতরাং আবু-হুরাইরাহ (রা) আলোচ্য হাদিসটি রাসুল (সা) হতে বর্ণনা করেন নি। সুতরাং আলোচ্য হাদিসটি রাসুল (সা) এর বক্তব্য নয়।

দুই.

আলি-ইবনুল-মাদিনী (রহ) আলোচ্য হাদিসটিকে এই বলে ইল্লতবিশিষ্ট সাব্যস্ত করেছেন যে আলোচ্য হাদিসটিকে ইসমাঈল বিন উমাইয়াহ (রহ) আইয়ুব বিন খালিদ হতে নেন নি বরং ইব্রাহিম বিন আবি-ইয়াহইয়া নামক একজন যইফ মিথ্যুক রাবি হতে নিয়েছেন।আলি ইবনুল-মাদিনীর (রহ) এই বক্তব্যটির বিরোদ্ধে জবাব হিসেবে বলা হয়েছে যে 'ইসমাইল বিন উমাইয়াহ' সব মুহাদ্দিসদের নিকট ছিকাহ এবং তিনি কোনো তাদলিসকারী মুদাল্লিস ছিলেন না, অতএব আলি-ইবনুল-মাদিনীর (রহ) এই বক্তব্যটি ভুল।

কিন্ত এই জবাবটি সমস্যাজনক ও ক্রুটিপুর্ণ। ইবনুল-মাদিনী (রহ) কোথাও এটা বলেন নি যে 'ইসমাইল ইবনু উমাইয়াহ ' ছিকাহ রাবি ছিলেন না কিংবা ইসমাইল বিন উমাইয়াহ কোনো তাদলিস-কারী মুদাল্লিস ছিলেন। বরং তিনি নির্দিষ্টভাবে শুধুমাত্র আলোচ্য হাদিসিটির জন্য প্রযোজ্য করে ইসমাইল সম্পর্কে বলেছেন যে আলোচ্য হাদিসটির ক্ষেত্রে ইসমাঈল ভুল করেছেন। কোনো একজন রাবির ছিকাহ ও গায়রে মুদাল্লিস হয়ার মানেই এইনা যে তিনি একটা ক্ষেত্রেও ভুল করতে পারেন না, বরং হাদিসশাস্ত্রের ইতিহাসে এমন বহু উদাহরণ পাওয়া যায় যে কিছু ছিকাহ রাবিরা ১-২ টা বিশেষ ও নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ভুল করেছেন। কোনো একজন রাবিকে একটিমাত্র নির্দিষ্ট হাদিসের ক্ষেত্রে ভুলকারী বলার মানে এইনা যে এরজন্য সেই রাবিকে অনির্ভরযোগ্য গায়রে ছিকাহ কিংবা মুদাল্লিস হতে হবে, বরং গায়রে মুদাল্লিস ছিকাহ রাবি হলেও শুধুমাত্র একটা-দুটা হাদিসে ভুল হয়ে যাওয়া সম্ভব ও এমন হয়ার বহু উদাহরণ বিদ্যমান রয়েছে।অতএব, ইবনুল-মাদিনী (রহ) কর্তৃক নির্দিষ্টভাবে ইসমাইলের শুধুমাত্র এই একটা হাদিসের বর্ণনা করাকে ক্রুটিপুর্ণ সাব্যস্ত করার বিরোদ্ধে জবাব হিসেবে সকল মুহাদ্দিসদের দৃষ্টিতে ইসমাইলের ছিকাহ ও গায়রে মুদাল্লিস হয়ার বিষয়টি ব্যবহার করা ভুল, কেননা ইবনুল-মাদিনীর এই বক্তব্যের সহিত সাধারণভাবে ইসমাইলের ছিকাহ ও গায়রে মুদাল্লিস হয়ার কোনো বিরোধ নেই।

তিন. 

হাদিসশাস্ত্র সুবিন্যাস্ত হয়ার পর থেকে আরম্ভ করে বর্তমান পর্যন্ত আলোচ্য হাদিসের শুদ্ধতা নিয়ে ইখতিলাফ হয়ে আসছে। এবং এই ইখতিলাফ এখনো চলমান। সালাফদের সময়েও এই হাদিস নিয়ে বিতর্ক ছিলো, খালাফদের সময়েও ছিলো, সাম্প্রতিককালে গত হয়া সময়গুলোতেও ছিলো, এখনো আছে।

11. আলোচ্য হাদিসটি যইফ হয়ার মতটিই অধিক সঠিক :-

আলোচ্য হাদিসটির ক্ষেত্রে এর ইল্লতবিশিষ্ট যইফ হয়ার মতটিই অধিক সঠিক, পয়েন্ট নং 1 থেকে আরম্ভ করে পয়েন্ট নং 10 পর্যন্ত এতক্ষণ যেই আলোচনাগুলো গত হয়েছে ; সেই আলোচনাগুলো দ্বারাই ব্যাপারটা সুস্পষ্ট হয়ে যায় আলোচ্য হাদিসটির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অধিক সঠিক মত হচ্ছে এই যে তা ইল্লতবিশিষ্ট।তাছারা ড. মুহাম্মদ বিন ফারিদ, ড. সুলাইমান আদ-দাবিখী এবং ড. আহমদ আল-কাসাইইর আলোচ্য হাদিসের ব্যাপারে হয়া মতভেদ নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন [10][11]। তাঁরা আলোচ্য হাদিসটির ক্ষেত্রে হাদিসটির যইফ হয়ার মতটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত হয়ার পক্ষে বিস্তারিত আলোচনা করে দেখিয়েছেন যে আলোচ্য হাদিসটির ক্ষেত্রে অধিক সঠিক মত হলো এই যে তা ইল্লতবিশিষ্ট কোরআনবিরোধী যইফ।যারা আলোচ্য হাদিসটির যইফ হয়ার মতটি অধিক সঠিক হয়ার ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে ও সুবিন্যাস্তভাবে জানতে ইচ্ছুক, তারা আলোচ্য হাদিস সম্পর্কে এইতিনজন আলেমের আলোচনাগুলো দেখে নিতে পারেন।

12. পরিশিষ্ট :-

তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম যে আলোচ্য হাদিসটি ইল্লতমুক্ত ও সহিহ। এখন প্রশ্ন হলো এই যে, আলোচ্য হাদিসটি কি বিজ্ঞান বিরোধী না? 

উত্তর : আলোচ্য হাদিসটিকে বিজ্ঞানের বিরোধী হিসেবেও ব্যাখ্যা করা যায়, আবার বিজ্ঞানের সহিত সামঞ্জস্য করেও ব্যাখ্যা করা যায়। অতএব, কেওই নিশ্চিতভাবে দৃঢ়তার সহিত এই দাবি করতে পারবেনা যে আলোচ্য হাদিসটি বিজ্ঞানের বিরোধী। নিম্নে আলোচ্য হাদিসটির বিজ্ঞানসম্মত একটি সাম্ভাব্য ব্যাখ্যা দলিলসহ উল্লেখ্য করা হলো ;

এক.

আলোচ্য হাদিসটিতে যেই সাতটি ইয়াওমের কথা বর্ণিত হয়েছে, সেই ইয়াওমগুলো কোরানে বর্ণিত ছয় ইয়াওম হতে সম্পুর্ণ পৃথক, ভিন্ন ও আলাদা বিষয়।

নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী (রহ) লিখেছেন :
"إن الأيام السبعة في الحديث غير الأيام الستة في القران "_[50]
অর্থ : " অবশ্যই উক্ত হাদিসের সাত ইয়াওম কোরানের ছয় ইয়াওম হতে ভিন্ন ও পৃথক"

দুই.

মুহাম্মদ ছানাউল্লাহ আল-মাযহারী (রহ) বলেছেন :

"لا دليلَ في الحديثِ على أنَّ المُراد بالجمعة الَّتي خُلِق فيها آدم أوَّلَ جمعةٍ بعد خلق الأرض، لعلَّ ذلك الجمعة بعد مُضيِّ الدُّهور " _[51]

অর্থ :" উক্ত হাদিসের মধ্যে এমন কোনো দলিল নেই যা প্রমাণ করে যে যেই জুময়াতে আদম (আ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে সেই জুময়াহ পৃথিবীকে সৃষ্টি করার ঠিক পরের প্রথম জুময়াহই, বরং হতে পারে যে সেই জুময়াহ বলতে উদ্দেশ্য বহু-যূগ গত হয়ে যাওয়ার পরে আগত কোনো জুময়াহ। "

ছানাউল্লাহর (রহ) উক্ত বক্তব্যটির অনুরূপ বক্তব্য প্রদান করেছেন 'আল-কাশ্মিরী'(রহ), 'ইবনু আতিয়াহ' (রহ), এবং 'আবু-ইসহাক আল-হুয়াইনী'(হাফি) [52]

এখন এই বক্তব্যের পিছনে যেই উহ্য নীতিটি কাজ করছে, সেই নীতি অনুযায়ী চিন্তা করলে দেখা যাবে যে এই একই কথা আলোচ্য হাদিসে বর্ণিত অন্যান্য ইয়াওমগুলোর জন্যও প্রযোজ্য। আলোচ্য হাদিসে এমনো কোনো দলিল নাই যা প্রমাণ করে যে হাদিসটিতে বর্ণিত ইয়াওমগুলো দ্বারা একটা সপ্তাহের ধারাবাহিক ইয়াওম বর্ণনা করা হচ্ছে। বরং এমনটাও হয়া সম্ভব যে আলোচ্য হাদিসে বর্ণিত একেকটা ইয়াওমের মাঝে হাজার হাজার,  লক্ষ লক্ষ বা কোটি কোটি বছরের ব্যবধান বিদ্যমান। তাছারা শনিবারের আগেও রবিবার থাকে, রবিবারের পরেও শনিবার আসে, এই হিসেবে হতে পারে আলোচ্য হাদিসে এসব বার বলতে আমরা যেই বারের ধারাবাহিকতা চিনি সেই ধারাবাহিকতা উদ্দেশ্য নয়। অর্থাৎ হতে পারে যে  শনির পর রবি, তারপর সোম, তারপর মঙ্গল, তারপর বূধ, তারপর বৃহস্পতি, তারপর শুক্র এই পরিচিত ধারাটি আলোচ্য হাদিসটিতে উদ্দেশ্য নয় ; বরং এটা সম্ভব যে এই হাদিসে নিছকই বারের নামগুলো ঠিক রেখে ও বারের সপ্তাহভিত্তিক ধারাবাহিকতাকে বজায় না রেখে ইয়াওমগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। বারের সপ্তাহভিত্তিক ধারাবাহিকতাকে বজায় না রাখার  উদাহরণ : যেমন ধরুন আমি বললাম "রাকিব সোমবারে একটা কাজ করল, এর আগে মঙ্গলবারেও সে উক্ত কাজটি করেছিল" এখানে বারের সপ্তাহভিত্তিক  ধারাবাহিকতাকে বজায় রাখা হয়নি, কেননা সপ্তাহভিত্তিক ধারাবাহিকতা অনুসারে সোমবারের আগে মঙ্গলবার আসেনা বরং মঙ্গলবার সোমবারের পরে আসে।

তিন.

কোরআনে বর্ণিত ছয় ইয়াওমের ব্যাপারে আমাদুদ্দিন ইবনু কাসির আদ-দিমাশকী (রহ) লিখেছেন :

وَقَدِ اخْتَلَفَ الْمُفَسِّرُونَ فِي مِقْدَارِ هَذِهِ السِّتَّةِ الْأَيَّامِ عَلَى قَوْلَيْنِ: فَالْجُمْهُورُ عَلَى أَنَّهَا كَأَيَّامِنَا هَذِهِ. وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، وَمُجَاهِدٍ، وَالضَّحَّاكِ، وَكَعْبِ الْأَحْبَارِ: أَنَّ كُلَّ يَوْمٍ مِنْهَا كَأَلْفِ سَنَةٍ مِمَّا تَعُدُّونَ. رَوَاهُنَّ ابْنُ جَرِيرٍ، وَابْنُ أَبِي حَاتِمٍ، وَاخْتَارَ هَذَا الْقَوْلَ الْإِمَامُ أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ فِي كِتَابِهِ الَّذِي رَدَّ فِيهِ عَلَى الْجَهْمِيَّةِ، وَاخْتَارَهُ ابْنُ جَرِيرٍ، وَطَائِفَةٌ مِنَ الْمُتَأَخِّرِينَ، وَاللَّهُ أَعْلَمُ

অর্থ : " মুফাসসিরগণ এই ছয় ইয়াওমের পরিমাণের ব্যাপারে দুটি মতে বিভক্ত হয়েছেন। জুমহুর (অর্থাৎ অধিকাংশ) উলামাদের মতে ইহা আমাদের দিনের মতোই। পক্ষান্তরে ইবনু আব্বাস, মুজাহিদ, আদ্ব-দুহহাক ও কাব আল-আহবার হতে বর্ণিত আছে যে এই ছয় ইয়াওমের প্রতিটা ইয়াওম হলো আমাদের হিসেব অনুযায়ী হাজার বছরের ন্যায়। এসব বর্ণনা ইবনু জারির ও ইবনু আবি-হাতিম বর্ণনা করেছেন। এবং এই মতটিকে (অর্থাৎ দ্বিতীয় মতটিকে) পছন্দ করেছেন আল-ইমাম আহমদ বিন হাম্বল তাঁর সেই কিতাবটিতে যেটার মধ্যে তিনি জাহমিয়াহদের রদ্দ করেছেন, এবং ইবনু জারিরও সেই মতটিকে (দ্বিতীয় মতটিকে) পছন্দ করেছেন, অনুরূপ করেছেন মুতায়াখখির উলামাদের একটি দল। এবং আল্লাহই অধিক জ্ঞানী। "

সুতরাং কোরানে যেই ছয় ইয়াওমের কথা বলা হয়েছে সেই ছয় ইয়াওম দ্বারা হাজার বছরের মতো সময়কাল উদ্দেশ্য হয়া সম্ভব।

প্রশ্ন - এখানে দেখা যাচ্ছে যে ইবনু কাসির (রহ) উল্লেখ্য করেছেন যে অধিকাংশের মতে অর্থাৎ জুমহুরদের মতে এই ছয় ইয়াওম আমাদের দিনের মতই। যেহেতু এটা জুমহুরদের মত, এরমানে কি এইনা যে ছয় ইয়াওম আমাদের দিনের মতো হওয়ার মতটাই অধিক সঠিক? ও হাজার বছরের ন্যায় হয়ার মতটি ভুল? 

উত্তর ; জুমহুরদের মত ইজমা না, কাজেই জুমহুরদের মত অকাট্য কোনোকিছু না। যদি শুধুমাত্র একজন মুজতাহিদ এক কথা বলেন, ও বাকি সব মুজতাহিদরা এর বিপরীত কথা বলেন, তাহলেও সম্ভাবনা থাকে যে সেই একজনই সঠিক ; এক্ষেত্রে কে সঠিক কে ভুল তা অবশ্য দলিলই নির্ধারন করবে [54]। অথচ এক্ষেত্রে ইমাম আহমদ, ইবনু জারির সহ উলামাদের একটা দল হাজার বছরের ন্যায় হয়ার মতটির পক্ষাবলম্বন করেছেন। হাজার বছরের ন্যায় হয়ার মতটি অধিকাংশ উলামাদের মত না হলেও এরপিছনে বিভিন্ন ভিত্তি, দলিল ও যুক্তি রয়েছে। কাজেই আমাদের দিনের ন্যায় হয়ার মতটি অকাট্য কিছুনা, বরং হাজার বছরের ন্যায় হয়ার মতটিও এক্ষেত্রে সঠিক হতে পারে।

প্রশ্ন - আধুনিক বিজ্ঞান অনুযায়ী মহাবিশ্বের বয়স বিলিয়ন বিলিয়ন বছর। যদি প্রত্যেকটা ইয়াওম এক হাজার বছরের সমান হয় তাহলে ইসলাম অনুযায়ী মহাবিশ্বের বয়স ৬০০০-৭০০০ বছরের বেশি হবেনা। এরমানে এই জাগায় ইসলাম ঠিকিই বিজ্ঞানের বিরোধী। তাই না? 

উত্তর : এই দাবি সমস্যাজনক। বাংলা ভাষায় যেমন অনেক ক্ষেত্রে 'হাজার' বলতে এক হাজার না বুঝিয়ে 'আধিক্যতা' বোঝায়, একইভাবে আরবি ভাষাতেও অনেক সময় ألف (আল্ফ) বলতে 'এক' হাজার না বুঝিয়ে অনির্দিষ্ট সংখ্যায় 'আধিক্যতা/প্রচুর হয়া /বেশি হয়া' বোঝানো হয়।

ইবনু ফারিস (রহ) লিখেছেন :
الْهَمْزَةُ وَاللَّامُ وَالْفَاءُ أَصْلٌ وَاحِدٌ، يَدُلُّ عَلَى …الْأَشْيَاءُ الْكَثِيرَةُ_[55]
অর্থ : "হামযাহ, লাম ও ফা আসলুল ওয়াহিদ … প্রচুর পরিমাণ জিনিস /বিষয়ের দিকে ইংগিত দেয়"

যেসব আলেমরা ছয় ইয়াওমের প্রত্যেক ইয়াওমকে হাজার বছরের ন্যায় বলেছেন, তাঁরা মুলত সুরা আল-হাজ্জের আয়াত নং ৪৭ কে এই দৃষ্টিভংগির পক্ষে একটি দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আর সুরা আল-হাজ্জের আয়াত নং ৪৭ এর كألف سنة (হাজার বছরের ন্যায়) অংশটির ব্যাপারে 'বুরহানুদ্দিন আল-বাকাঈ '(রহ) লিখেছেন ;

 {كألف سنة} ولما كان المقصود هنا التطويل، فعبر بالسنة تنبيهاً عليه_[56]
অর্থ : {হাজার বছরের ন্যায়) অবশ্য এখানে বোঝানো হয়েছে 'দীর্ঘকরণ', অর্থাৎ বছর কথাটা বলে চালিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যাপারটার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ।

এখানে একটা বিষয় উল্লেখ্য, ছয় ইয়াওমকে যেসব আলেমরা আমাদের পরিচিত ছয় ইয়াওমের অনুরূপ 'নয়' বলে উল্লেখ্য করেছেন, তাদের সবাই যে এক্ষেত্রে প্রত্যেক ইয়াওমকে হাজার বছরের ন্যায় বলে হিসাব দিয়েছেন, ব্যাপারটা আসলে এমন না ; বরং অনেক আলেমরা ড. জাকির নায়েকের মতো করে বলেছেন যে এই ছয় ইয়াওম দ্বারা 'ছয়টা যূগ বা সময়কাল' উদ্দেশ্য [57] উদাহরণস্বরুপ : 'আবুস-সউদ মুহাম্মদ আল-আমাদী'(রহ), 'ফাখরুদ্দিন আর-রাযী'(রহ),'নাসিরুদ্দিন আল-বাইদ্বাওই'(রহ), 'আহমদ আল-কাস্তাল্লানী'(রহ), 'শিহাবুদ্দিন আল-আলওয়াসী' (রহ) ইত্যাদি ইত্যাদি।[58]

এবার মুল কথায় আসা যাক। কোরানে বর্ণিত ছয় ইয়াওমের প্রত্যেকটি বিভিন্ন বারের নামে নামকরণ করা হয়ে থাকে [57] ; এক্ষেত্রে প্রত্যেক ইয়াওমকে পরিচিত ইয়াওমের ন্যায় না ধরে 'হাজার বছরের ন্যায়' কিংবা 'অনির্দিষ্ট দৈর্ঘের যূগ বা সময়কাল' ধরা হলেও এই বারের নামে নামকরণের ব্যাপারটা প্রযোজ্য হয় [48]। অপরদিকে, আলোচ্য হাদিসে বর্ণিত ইয়াওমগুলোর নামও বিভিন্ন বারের নামেই নামকরণকৃত, অর্থাৎ কোরানের ছয় ইয়াওম ও আলোচ্য হাদিসের সাত ইয়াওম একই বিষয় না হলেও এদুটি বিষয়ের 'ধরন' একই। সুতরাং যদি কোরানে বর্ণিত ইয়াওমগুলোর ক্ষেত্রে এটা বলা যায় যে প্রত্যেকটা ইয়াওম হাজার বছরের ন্যায় বা প্রত্যেকটা ইয়াওম বলতে অনির্দিষ্ট দৈর্ঘের "যূগ বা সময়কাল" উদ্দেশ্য ; তাহলে এই একই ধরনের কথা আলোচ্য হাদিসের ক্ষেত্রেও বলা যাবে ও প্রযোজ্য হতে পারবে।

অর্থাৎ, হতে পারে যে আলোচ্য হাদিসটিতে বর্ণিত ইয়াওমগুলো দ্বারা পরিচিত দিন উদ্দেশ্য নয় বরং বড় বড় দৈর্ঘের কিছু সময়কাল উদ্দেশ্য।

চার.

এক্ষেত্রে হতে পারে যে আলোচ্য হাদিসটিতে বর্ণিত 'النُّور' (আন-নুর) বলতে 'সুর্যের আলো' কিংবা অন্য কোনো 'আলো' উদ্দেশ্য নয় বরং রুপকার্থে 'কল্যাণ' উদ্দেশ্য। এবং المَكْرُوه (আল-মাকরুহ) বলতে কোনো বস্তুগত জিনিস উদ্দেশ্য নয় বরং 'অকল্যাণ' উদ্দেশ্য। আবুস-সায়াদাত ইবনুল-আছির (রহ) এরুপ বলেছেন [59]।

13.উপসংহার :-

উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় যে আলোচ্য হাদিসটি ইল্লতবিশিষ্ট ক্রুটিপুর্ণ ও যইফ। এবং যদি তা সহিহও হয় তবুও এর বিজ্ঞান-বিরোধী হয়াটা জরুরি নয় বরং একে বিজ্ঞানের সহিত সামঞ্জস্য করেও ব্যাখ্যা করা সম্ভব।

14.টিকাসমুহ :

[1]দেখুন : সহিহু মুসলিম (হা/7155), মুসনাদু আহমাদ- রিসালাহ (14/82-84),আল-মুসনাদুল মুসান্নাফুল মুয়াল্লাল (34/484-485)।

[2]ইবনু আবিল ইযয, আল-ইত্তিবা (পৃ/48-49)

[3] সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন গবেষক মুহাদ্দিসদের বিভিন্ন আলোচনা ও বক্তব্য  আমার এই কথাগুলোকে প্রত্যক্ষভাবে এবং পরোক্ষভাবে সঠিক সাব্যস্ত করে। নিম্নে এমন কিছু আলেমের বক্তব্য ও আলোচনার রেফারেন্স উদাহরণস্বরুপ উল্লেখ্য করা হলো।

১. শায়খ আব্দুল আযিয বিন বায রহ. কে সহিহাইনের মধ্যে যইফ হাদিস থাকা না থাকার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি সেই প্রশ্নটির উত্তরে বিস্তারিত লম্বা আলোচনা করেন। সেই আলোচনাটি। binbaz.org.sa হতে আলোচনাটির লিংক দেয়া হলো :
https://binbaz.org.sa/fatwas/2735/%D8%A7%D9%84%D8%A7%D8%AF%D8%B9%D8%A7%D8%A1-%D8%A8%D8%A7%D9%86-%D8%B5%D8%AD%D9%8A%D8%AD%D9%8A-%D8%A7%D9%84%D8%A8%D8%AE%D8%A7%D8%B1%D9%8A-%D9%88%D9%85%D8%B3%D9%84%D9%85-%D8%A8%D9%87%D9%85%D8%A7-%D8%A7%D8%AD%D8%A7%D8%AF%D9%8A%D8%AB-%D8%B6%D8%B9%D9%8A%D9%81%D8%A9

* আরো দেখুন : মাজমুয়ু ফাতাওয়া ওয়া মুক্বালাতুন মুতানাওওয়াআহ - বিন বায (25/69-70)

*আরো দেখুন :
https://binbaz.org.sa/fatwas/21083/%D9%85%D8%A7-%D8%A7%D9%84%D8%B1%D8%AF-%D8%B9%D9%84%D9%89-%D8%A7%D9%86-%D8%A8%D8%A7%D9%84%D8%B5%D8%AD%D9%8A%D8%AD%D9%8A%D9%86-%D8%A7%D8%AD%D8%A7%D8%AF%D9%8A%D8%AB-%D8%B6%D8%B9%D9%8A%D9%81%D8%A9

২.  ডক্টর আশ-শারিফ হাতিম বিন আরিফ আল-আওনী কে শায়খ আল-আলবানী রহ. কর্তৃক সহিহ বুখারির একটি হাদিসকে যইফ সাব্যস্তকরণ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দিতে গিয়ে কথাপ্রসংগে বলেন :

"لكن العلماء قد نصوا أن أحاديث الصحيحين (صحيح البخاري وصحيح مسلم) كلها مقبولة، إلا أحاديث يسيرة انتقدها بعض النقاد الكبار، الذين بلغوا رتبة الاجتهاد المطلق في علم الحديث. وأن ما سوى تلك الأحاديث اليسيرة، فهي متلقاة بالقبول عند الأمة جميعها."

উৎস : "ফাতাওয়া ওয়া ইশতারাতুল ইসলামিল ইয়াওম (খন্ড -১, পৃষ্ঠা নং ৪৮৪) - আলমাকতাবাতুশ শামেলাহ "। লিংক ; https://shamela.ws/book/894/484

৩.  শায়খ আবু আব্দুল্লাহ মুস্তফা ইবনুল আদাওইকে সহিহাইনের হাদিসকে যইফ সাব্যস্তকরণসক্রান্ত প্রশ্ন করা হলে তিনি এর উত্তরে বলেন :

"وهو أن صحيحا البخاري ومسلم قد تلقتهما الأمة بالقبول إلا أحاديث يسيرة جداً انتقدها الحفاظ كـ الدارقطني وغيره، وهي نسبة لا تتجاوز نصف الواحد في المائة، أي: أن تسعة وتسعين في المائة ونصف صحيح ونصف في المائة ضعيف، فإذا كان المنتقد قد أورد حديثاً من الأحاديث المنتقدة، وقال: العالم الفلاني تكلم فيه فله ذلك، لكن إذا تطاول وأدلى برأيه ولم يورد مستنداً بذلك فقوله مردود عليه."

উৎস : "সিলসিলাতুত তাফসির - আশশামেলাহ (খন্ড -৮, পৃষ্ঠা ২৪)"।
লিংক : https://shamela.ws/book/7695/162

তাছারা অনুরুপ ধরনের কথা উনাকে একাধিক ভিন্ন ভিন্ন ভিডিওতেও বলতে দেখা যায়। উদাহরণস্বরুপ, এই ভিডিওটি : https://youtu.be/QBeaYhlIyUo

৪. ডক্টর ইব্রাহিম বিন আব্দুল্লাহ আল-লাহিম তাঁর গ্রন্থ "শারহু ইখতিসারে উলুমিল হাদিস"
  (পৃ/70-71) এ এব্যাপারে একটি মাঝারি দৈর্ঘের আলোচনা করেছেন। সেই আলোচনাটি।

৫. শায়খ হামদ বিন আব্দুল্লাহ আল-হামদ তাঁর গ্রন্থ "শারহু যাদিল মুস্তাকনা"(8/104)এ এব্যাপারে একটি মাঝারি দৈর্ঘের আলোচনা করেছেন। সেই আলোচনাটি।

৬. শায়খ মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদিয়িঈ  হলেন সাম্প্রতিক কালের একজন বড়মাপের ও প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস। তিনি তাঁর "গারাতুল ফাসল "(পৃ/93) গ্রন্থে বলেছেন :

"وأما حديث قد أخرجه الشيخان أو أحدهما فيكفي العزو إليهما، اللهم إلا أن يكون الحديث من الأحاديث المنتقدة التي انتقدها الدارقطني أو غيره من الحفاظ المعترف بانتقاده، كما قال ابن الصلاح ما معناه: إن أحاديث " الصحيحين " تفيد العلم اليقيني النظري إلا أحاديث يسيرة انتقدها الحفاظ كالدارقطني وغيره، فإذا كان من الأحاديث المنتقدة فله أن يبدي رأيه إن كان أهلاً لذلك - بتأييد الانتقاد أو دفعه"

৭.  শায়খ হাসান আবুল-আশবাল আয-যুহাইরী তাঁর গ্রন্থ "শারহু কিতাবিল বাঈসিল হাছিছ" (1/3) এ এব্যাপারে একটি মাঝারি দৈর্ঘের আলোচনা করেছেন। সেই আলোচনাটি।

৮.  শায়খ আব্দুর-রহমান আল-মুয়াল্লিমী আল-ইয়ামানী রহ.। তিনি বিংশ শতাব্দীর প্রসিদ্ধ ও উচুস্তরের আলেমদের অন্তর্ভুক্ত একজন। তিনি তাঁর রিসালাহগ্রন্থ "রিসালাহ ফি ফারদ্বিয়াতে ইত্তিবাইস সুন্নাহ ওয়াল কালামু আলা তাক্বসিমিল আখবার ওয়া হুজ্জিয়াতু আখবারিল আহাদ"(পৃ/48) তে লিখেছেন :

"فهو الذي يصح أن يقال: إن أئمة الحديث الذين اطلعوا على الكتاب أجمعوا على صحته، إلا ما انتقده بعضهم.وأما الباقي فغاية ما هناك أنهم أجمعوا على أنه صالح لموضعه الذي ذكر فيه. أعني المتابعات والشواهد وفضائل الأعمال والعواضد، ونحوها. ويقاس عليه "صحيح مسلم" فيما يتبيَّن منه."

[4]এই হাদিসের ক্ষেত্রে ; 'মুহাম্মদ বিন ছাওর' কর্তৃক 'ইবনু জুরাইজ' এর নিকট হতে উল্লেখিত প্রথম সুত্রটিদ্বারা বর্ণিত রেওয়ায়েতটির জন্য দেখুন 'আত-তাবারানী' এর "আল-মুজামুল আওসাত"(3/303), 'আবুশ-শাইখ' এর "আল-আযমাহ"(4/1360) ইত্যাদি ইত্যাদি।

[5]ড. মুহাম্মদ বিন ফারিদ যারইওহ, আল-মুয়ারাদ্বাতুল ফিকরিয়াতিল মুয়াসিরাহ লিয়াহাদিসিস সাহিহাইন (2/1010)

[6]মুসনাদু আহমদ (প্রকাশনা : আর-রিসালাহ, তাহকিক : আল-আরনাওওত ও আদিল মুরশিদ) : (খন্ড : 14/ পৃ: 83)

[7]আল-মুয়াল্লিমী, আল-আনওয়ারুল কাশিফাহ (12/266) ; আহমদ আল-কাসাইইর, আল-আহাদিসুল মুশকিলাতুও ওয়ারিদাহ (পৃ/244)

[8]ড. সুলাইমান বিন মুহাম্মদ আদ-দাবিখী, আহাদিসুল আকিদাতিল মুতাওয়াহহাম ইশকালুহা ফিস সহিহাইন (পৃ/357-361)

[9]মুসনাদু আহমাদ -মুয়াসসাতুর রিসালাহ, (খন্ড নং : 14/ মুহাক্কিক : আল-আরনাওওত, আদিল মুরশিদ / পৃষ্ঠা নং : 82-84 / টিকা নং : 1 )

[10]ড. মুহাম্মদ বিন ফারিদ যারইওহ, আল-মুয়ারাদ্বাতুল ফিকরিয়াতিল মুয়াসিরাহ লিয়াহাদিসিস সাহিহাইন (2/993-1021) ; ড. আহমদ আল-কাসাইইর, আল-আহাদিসুল মুশকিলাতুও ওয়ারিদাহ (পৃ/243-258)।

[11]ড. সুলাইমান বিন মুহাম্মদ আদ-দাবিখী, আহাদিসুল আকিদাতিল মুতাওয়াহহাম ইশকালুহা ফিস সহিহাইন (পৃ/356 -378)

[12]ফাতাওয়া আল-লাজনাতুদ দায়িমাহ - আলমাজমুয়াতুস সানিয়াহ (1/10) ; আয-যারকাশী, আত-তাযকিরাহ(পৃ/213) ; আস-সানয়ানী, আত-তাহবির (3/683) এবং আত-তানওইর (5/499-500) ; আল-আলওয়াসী, রুহুল মায়ানী (4/373); তাফসিরুল কুরতুবী (15/345, 6/385); ইবনুল মুলাক্কিন, তুহফাতুল মুহতাজ (2/563-564); আল-হাওত, আসনাল মাতালিব (পৃ/132) ; আলি আল-ক্বারী,আল-আসরারুল মারফুয়াহ (পৃ/456-457); ইব্রাহিম আল-লাহিম, মুক্বারানাতুল মারওইয়াত (2/173-174); আল-ক্বাসিমী, মুহাসিনুত তা'ওইল (5/68); আল-খাযিন, লুবাবুত তা'ওইল (2/206)।

[13]https://shamela.ws/book/37048/197

[14]https://shamela.ws/book/11/4237#p1

[15]https://shamela.ws/book/3047/26

[16]আস-সানারী, তাহকিকু মুসনাদে আবি ইয়া'লা (8/334-335,হাদিস নং 6132 এর টিকা); সালিম আসাদ, তাহকিকু মুসনাদে আবি ইয়া'লা (10/513, হাদিস নং 6132 এর টিকা); আশ-শানকিতিঈ, নাছরুও ওয়ারওয়াদ (1/333) এবং আল-আযবুন নামির (3/345); আল-মিযযী, তুহফাতুল আশরাফ (10/133); আল-মাযহারী, আত-তাফসিরুল মাযহারী (8/285, 9/76); আল-আযামী, আল-জামিউল কামিল (7/411); সফিউর রহমান, মিন্নাতুল মুনঈম (4/298); ইবনু কুতলুবাগা, আছ-ছিকাত (2/474); বাশার, তাহরিরু তাকরিবিত তাহযিব (1/160); আল-বাকাঈ, নিযমুদ দুরার (1/262)

[17]ইব্রাহিম আল-লাহিম, মুক্বারানাতুল মারওইয়াত (2/174)

[18]https://shamela.ws/book/37026/1066

[19]https://islamqa.info/ar/218080

[20]https://shamela.ws/book/37717/246

[21] আত-তাবারী, তারিখুর রুসুলি ওয়াল মুলুক (1/45)

[22] বিশেষ দ্রষ্টব্য ; আত-তাবারীর পরিভাষা অনুযায়ী অধিকাংশের মতকেও 'ইজমা' বলা যায়। অর্থাৎ যখন কোনো একটা মতভেদপুর্ণ বিষয়ের ক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যাক আলেমরা 'ক' মতের উপর একমত হবেন এবং এরবিপরীতে 'খ' মতপোষণকারী আলেমদের সংখ্যা তুলনামুলকভাবে খুবই কম হবে; তখন আত-তাবারীর পরিভাষা অনুযায়ী বলা যাবে যে উক্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে 'ক' মতের উপর ইজমা আছে। "ইজমা" এর সংজ্ঞা হিসেবে আত-তাবারী "ইজমা" পরিভাষাটির প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ পারিভাষিক সংজ্ঞাটি অনুসরণ করেন না। দেখুন : 'মুহাম্মদ বিন আব্দুল-আযিয আল-খুদ্বাইরি' কর্তৃক রচিত "আল-ইজমা ফিত তাফসির"(পৃ/61)

[23]আব্দুল-কাদির আল-কুরেশী, আজ-জাওয়াহিরুল মাদ্বিয়াহ (2/429)

[24] আব্দুর-রহমান আল-হাওত, আসনাল মাতালিব (পৃ/132)

[25]ড. সুলাইমান বিন মুহাম্মদ আদ-দাবিখী, আহাদিসুল আকিদাতিল মুতাওয়াহহাম ইশকালুহা ফিস সহিহাইন (পৃ/371)

[26]ড. আহমদ আল-কাসাইইর, আল-আহাদিসুল মুশকিলাতুও ওয়ারিদাহ (পৃ/248)

[27]https://www.islamweb.net/amp/ar/fatwa/137773

[28]আব্দুল-কাদির আল-কুরেশী (রহ) কর্তৃক প্রদানকৃত এই বক্তব্যটির বিপরীতে জবাব হিসেবে অনেকে বলে যে ইবনুল-আনবারী (রহ) আলোচ্য হাদিসের পক্ষে আলোচনা করতে গিয়ে ইয়াওমুস সাবাতে সৃষ্টির আরম্ভ হয়ার মতটির উপর ইজমা ঘোষণা করেছেন। এখন এই জবাবের পালটা জবাব হলো এই যে ;  ইবনু তাইমিয়াহ (রহ)  ইবনুল-আনবারীর (রহ) এই ইজমা ঘোষণাকে 'ভুল' সাব্যস্ত করেছেন, দেখুন : মাজমুয়ুল ফাতাওয়া (17/237)।

[29]ইবনু তাইমিয়াহ, মাজমুয়ুল ফাতাওয়া (1/256-157)

[30]আত-তাবারী, তারিখুর রুসুলি ওয়াল মুলুক (1/44-46)

[31]ফাতাওয়া আল-লাজনাতিদ দায়িমাহ আল-মাজমুয়াতুল উলা (3/62)

[32]https://islamqa.info/ar/285989

[33]আল-আলবানী, আল-মুস্তাতব (2/681)

[34]নুরুদ্দিন আতার, মানহাজুন নাক্বদ (পৃ/258) ; আল-ইরাকী,শারহুত তাবসারাহ ওয়াত তাযকিরাহ (1/121) ; ইবনুল আইনী, শারহুল আল-আলফিয়াহ (পৃ/66); ইবনু আম্মার, মিফতাহুস সাঈদিয়াহ (পৃ/49) ; আস-সাখাওই, ফাতহুল মুগিস (1/55)।

[35]আল-আলবানী, সিলসিলাতুয যইফাহ (6/430) & (14/204) & (5/280) & (12/80) ইত্যাদি ইত্যাদি।

[36]ড. আহমদ আল-কাসাইইর, আল-আহাদিসুল মুশকিলাতুও ওয়ারিদাহ (পৃ/256)

[37]ইবনুল আনবারী, আয-যাহির (2/138)

[38]আন-নাহহাস, উমদাতুল কিতাব (পৃ/88); ইবনু তাইমিয়াহ, বাগিইয়াতুল মুরতাদ (পৃ/299); ইবনু কাসির, আল-বিদায়াহ -দারুর রাইয়ান (1/13)

[39]ইবনু তাইমিয়াহ, মাজমুয়ুল ফাতাওয়া (17/237)

[40]ইবনু তাইমিয়াহ, মাজমুয়ুল ফাতাওয়া (17/236)

[41]ইবনু তাইমিয়াহ, মাজমুয়ুল ফাতাওয়া (17/235-236)

[42]আল-আলবানী, সিলসিলাতুয যয়িফাহ (12/332)

[43]https://shamela.ws/book/23834/111

[44]https://binbaz.org.sa/fatwas/23061/%D9%85%D8%A7-%D8%AF%D8%B1%D8%AC%D8%A9-%D8%AD%D9%83%D9%85-%D8%A7%D8%AD%D9%85%D8%AF-%D8%B4%D8%A7%D9%83%D8%B1-%D8%B9%D9%84%D9%89-%D8%A7%D9%84%D8%A7%D8%AD%D8%A7%D8%AF%D9%8A%D8%AB

[45]আন-নাহহাস, উমদাতুল কিতাব (পৃ/88)

[46]ইবনু তাইমিয়াহ, বাগিইয়াতুল মুরতাদ (পৃ/299)

[47]আদ-দেহলভী, লাময়াতুত তানকিহ (9/210)

[48]ইবনু আবি শাইবাহ, আল-মুসান্নাফ (7/269, বর্ণনা নং - 35975)

[49]http://hadith.islam-db.com/narrators/2840/%D8%B0%D9%83%D9%88%D8%A7%D9%86

[50]আল-আলবানী, মুখতাসারুল উলুউ (পৃ/112)

[51]ছানাউল্লাহ, আত-তাফসিরুল মাযহারী (1/49)

[52]আল-কাশ্মিরী, ফাইদ্বুল-বারী (4/340-341); আল-হুয়াইনী, তাখরিজু তাফসিরে ইবনে কাসির (2/232-233); ইবনু আতিয়াহ, আল-মুহাররির (5/5)

[53]ইবনু কাসির, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (1/27)

[54]আশ-শাওকানী, ইরশাদুল ফুহুল (1/234)

[55]ইবনু ফারিস, মাকাইসুল-লুগাহ (1/131)

[56]আল-বাকাঈ, নিযমুদ দুরার (13/67)

[57] আশ-শানকিতিঈ, আল-আযবুন নামির (3/344)

[58]আবুস-সউদ, ইরশাদুল আকলিস সালিম (3/232); আর-রাযী, মাফাতিহুল গাইব (28/183-184);আল-বাইদ্বাওই, আনওয়ারুত তানযিল (3/15);আল-কাস্তাল্লানী, ইরশাদুস সারী (10/473); আল-কাসিমী, মুহাসিনুত তা'ওইল (5/67)।

[59]ইবনুল-আছির, আন-নিহায়াহ (4/169) & জামিউল উসুল (4/25)





Share this:

More articles

ফসিল রেকর্ড ও মানুষের উদ্ভব বনের বিবর্তন ডাইনোসর আগে নাকি মুরগি আগে? উচ্চতর জীবে জিনের আকার বৃদ্ধি হল কিভাবে?   ফসিল রেকর্ড ও মানুষের উদ্ভব প্রাপ্ত ফসিলগুলোর কোনটিই মানুষের বিবর্তন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে সক্ষম নয়। - বাণীতে বিবর্তনবাদী[১] অবশ্য যতই বিজ্ঞানের সঙ্গে বিবর্তন তত্ত্ব অসামঞ্জস্যপূর্ণ হোক না কেন, এটা নি:সন্দেহে প্রত্যাখ্যান করা হবে না বনের বিবর্তন বিবর্তনবাদীদের মতে, প্রথম বন সৃৃষ্টি হয়েছিল এক প্রকারের উদ্ভিদ দিয়ে। Think for a minute about ‘early’ life on land. Complexity is probably n....
3 Min read
Read more
  রাসুল ﷺ উরাইনাহ গোত্রের কিছু লোককে উটের পশ্রাব ও দুধ পান করার কথা বলেছিলেন। এপ্রসংগে অনেকগুলো হাদিস রয়েছে। সব হাদিসের সারমর্ম হলো অনেকটা এরকম  : "উরাইনাহ গোত্রের কিছু লোক অসুস্থ অবস্থায় মুহাম্মাদের ﷺ নিকট আসল। এসে ইসলাম গ্রহন করল, তারপর খাদ্য-পানি ও আশ্রয় দেয়ার অনুরোধ জানাল। মুহাম্মাদ ﷺ তাদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে যেতে বললেন ও সেখানে গিয়ে উটের দুধ ও পশ্রাব পান করতে বললেন। তারপর তারা সুস্থ হলো, সুস্থ হয়ার পর তারা সেখানদের রাখালদের নির্মমভাবে হত্যা করল ও ইসলাম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে গেল। রাখালদের....
8 Min read
Read more
নাস্তিকসহ কিছু মডারেট মুসলিমদেরকেও বলতে শুনা যায় যে, ইসলামে গান-বাজনা কেন নিষিদ্ধ! গান-বাজনা শুনতে সমস্যা কোথায়! এই লেখাটিতে গান-বাজনার ক্ষতিকর দিক, ইসলামে গান-বাজনা হারাম হওয়ার রেফারেন্স এবং কেন গান-বাজনা হারাম তা তুলে ধরা হয়েছে।  আল-কোরআনে গান-বাজনা হারাম  ● মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا ۚ أُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ কর....
17 Min read
Read more
প্রাকৃতিক নির্বাচন এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোন প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো জনগোষ্ঠীতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এটি ডারউইনীয় বিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি। দৈব ঘটনার সম্ভাবনা চেপে যাওয়া জেনেটিক ড্রিফট প্রাকৃতিক নির্বাচনকে গণিতের মত নির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয় যে, শক্তিশালী জীব টিকে থাকবে। কিন্তু এখানে আকস্মিক ঘটনাকে উপেক্ষা করা হয়। যেমন : হঠাৎ কোন দুরারোগ্য মহামারীর আগমন, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দীর্ঘ শীতকালীন শৈত্যপ্রবাহ কিংবা বর্ষায় সুবিস্স্তৃৃত ভয়ানক প্লাবন যা সেসব জ....
4 Min read
Read more
  বিষয় : সুরা তাহরিমের নাযিলের প্রেক্ষাপট হিসেবে মারিয়াহ (রা) এর কাহিনীটির ব্যাপারে বর্ণিত হয়া শক্তিশালী দুইটি বিশেষ হাদিস প্রসঙ্গে। লেখক : সামিউল হাসান তবিব আল-ইনফিরাদী 0. সুচিপত্র :- 1. সুচনা। 2. বর্ণনাদুটির সনদ ও মতন উপস্থাপন। 3. মধুপানের কাহিনী ও মারিয়ার (রা) কাহিনী, উভয় কাহিনীই কি সঠিক?  4. উক্ত বর্ণনাদুটি প্রকৃতপক্ষে ক্রুটিবিশিষ্ট অগ্রহণযোগ্য। 5. বর্ণনাদুটির ক্রুটিবিশিষ্ট যইফ হয়ার ব্যাপারে উলামাদের বক্তব্য। 6. ইবনু আব্বাস (রা) এর হাদিস প্রসঙ্গে। 7. উপসংহার। 8. টিকাসমূহ। 1.সুচনা :- সুরা তা....
32 Min read
Read more
অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ ফেনোটাইপ পেতে একাধিক মিউটেশন যুগপৎ সংগঠিত হতে হয়।বিহি ও স্নোক প্রমাণ করেছিলেন যে, যদি দুটি প্রোটিনের মধ্যে একটি কার্যকরী বন্ধন তৈরি করার জন্য একাধিক মিউটেশনের প্রয়োজন হয়, তবে "শুধু জিনের অনুলিপি এবং পয়েন্ট মিউটেশনের প্রক্রিয়া অপ্রতুল হয়ে যাবে।কারণ খুব অল্প কিছু বহুকোষী প্রজাতি প্রয়োজনীয় জনসংখ্যার আকারে পৌঁছায়।" (Michael Behe and David Snoke, “Simulating Evolution by Gene Duplication of Protein Features That Require Multiple Amino Acid Residues,” Protein Science 13 (20....
5 Min read
Read more