ইসলাম অনুযায়ী চাঁদের আলো কি সম্পুর্ণ তার নিজস্ব আলো? একটি প্রচলিত কুযুক্তির খন্ডন।

 

বিষয় : কোরান সুন্নাহ অনুযায়ী চাঁদের আলো কি চাঁদ কর্তৃক নিজ দেহের মধ্যেই উৎপাদিত ও সম্পুর্ণ চাঁদ এর নিজস্ব ? একটি উদ্ভট ও অতিদুর্বল যুক্তির খন্ডন।

 

লেখক : সামিউল হাসান তবিব আল-ইনফিরাদী

 

বর্তমান যূগের কিছু মুসলিমদের দেখা যায় যারা কিনা আধুনিক বিজ্ঞানকে অন্ধভাবে বাছ-বিচারহীনভাবে ঢালাওভাবে ঘৃণা ও নিন্দা করে। আধুনিক বিজ্ঞানের যেসব বিষয় ইসলামের বিরোদ্ধে যায়না সেগুলোকে জোরপুর্বক ইসলামের বিরোধী সাব্যস্ত করার আপ্রান চেষ্টা করে, ইসলামের যেসব বিষয় আধুনিক বিজ্ঞানের বিরোধী না সেগুলোকেও জোরপুর্বকভাবে অপব্যাখ্যা করে হলেও আধুনিক বিজ্ঞানের বিরোধী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করে, একাধিক সমানভাবে সাম্ভাব্য ব্যাখ্যার মধ্য হতে নির্দিষ্টভাবে সেই ব্যাখ্যাটির পক্ষেই উকালতি করে যেই ব্যাখ্যাটি কিনা বিজ্ঞানের বিরোদ্ধে যায়। তারা তাদের এই ধরনের সব কথাবার্তার যৌক্তিকতা সাব্যস্তের জন্য প্রায়সময়ই বিভিন্ন 'কুযুক্তি' এর আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে।

 

এরই প্রেক্ষিতে তারা দাবি করেছে যে "ইসলাম অনুযায়ী চাঁদ এর আলো ধার করা নয় বরং তা চাঁদ এর নিজস্ব আলো, চাঁদ কর্তৃক নিজ দেহের মধ্যে উৎপন্ন আলো " এবং এই দাবির পক্ষে তাদের একটি প্রচলিত সাধারণ 'কুযুক্তি' বিদ্যমান। সেই কুযুক্তিটি নিম্নরুপ,

 

"কোরআনের অমুক অমুক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন যে তিনি চাঁদ কে করেছেন আলোবিশিষ্ট, অমুক অমুক হাদিসে চাঁদ এর আলো থাকার কথা বলা হয়েছে, অমুক অমুক হাদিসের ব্যাখ্যায় অমুক অমুক ব্যাখ্যাকারক উলামারা চাঁদ এর আলো থাকার ব্যাপারটা উল্লেখ্য করেছেন (ইত্যাদি, এইধরনের আরো অন্যান্য বিভিন্ন কথাবার্তা)। সুতরাং চাঁদ এর আলো তার নিজস্ব আলো, তা সুর্য হতে ধার করা নয় " 

 

উক্ত কুযুক্তির খন্ডন : 

 

আহলুস সুন্নাহর মুলধারার উলামাদের একটি দল একদম সরাসরিভাবে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে চাঁদ এর আলো তার নিজস্ব আলো নয়, বরং চাঁদ এর যেই আলো আছে তা হচ্ছে সুর্য হতে ধার করা, অর্থাৎ সুর্য হতে প্রতিফলিত। বিভিন্ন উলামাদের এইমর্মের বিভিন্ন বক্তব্য প্রমাণ সহ উল্লেখ্য করা যাবে, তবে এই লেখাটির আকৃতি ছোট রাখার স্বার্থে এখানে আমি এসব উল্লেখ্য করব না। তর্কের খাতিরে এই আলেমদের এসব বক্তব্যসমুহকে উপেক্ষা করলাম, অর্থাৎ তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম যে বিভিন্ন উলামাদের কর্তৃক প্রদানকৃত চাঁদের আলো সুর্য হতে ধারকৃত হয়ার পক্ষের এসব বক্তব্য এক্ষেত্রে বিবেচ্য না। এবার মুল খন্ডনের দিকে যাওয়া যাক।

 

চাঁদ এর আলো অবশ্যই আছে, কেও যদি বলে যে চাঁদ এর আলো নেই, তাহলে সে হয় পাগল আর নাহয় অন্ধ, কেননা দুনিয়ার সবাই রাত্রের আকাশে আলোবিশিষ্ট আলোকিত চাঁদ দেখতে সক্ষম। আসলে প্রশ্ন এখানে এটা না যে চাঁদ এর আলো আছে নাকি নাই, চাঁদের আলোত অবশ্যই আছে। বরং প্রশ্ন হচ্ছে এই যে চাঁদ এর যেই আলোটা আছে, সেই আলোটির প্রকৃতি কি? ধরন কি?  কৈফিয়ত কি?  তা কি চাঁদের নিজস্ব? নাকি সুর্য হতে ধারকৃত প্রতিফলিত?  

 

ধার করা আলোও আলোই, প্রতিফলিত আলোও এক ধরনের আলোই। সাধারণভাবে আলো বলতে যেকোনো ধরনের আলোওই উদ্দেশ্য হতে পারে, নিজস্ব আলোও উদ্দেশ্য হতে পারে, আবার প্রতিফলিত আলোও উদ্দেশ্য হতে পারে। সাধারণভাবে 'আলো' বললে আলোর ধরন প্রকৃতিটা কি তা অনির্দিষ্টই থেকে যায়। অতএব, চাঁদ এর আলো যে তার নিজস্ব আলো, এইটা প্রমাণের জন্য চাঁদ এর আলো থাকার ব্যাপারটা প্রমাণ করা যথেষ্ট নয়, "চাঁদ এর আলো আছে " এই কথাটা দ্বারা এতটুকু প্রমাণিত হয় যে চাঁদ এর আলো আছে, কিন্ত এই আলোর ধরন প্রকৃতি কি, এব্যাপারে কিছুই প্রমাণিত হয়না, এরদ্বারা এটাও প্রমাণিত হয়না যে এই আলোর ধরন হলো 'প্রতিফলিত বা ধারকৃত', আবার একইভাবে এরদ্বারা এটাও প্রমাণিত হয়না যে এই আলোর ধরন হলো এই যে তা 'নিজস্ব'।

 চাঁদ এর আলো থাকার ব্যাপারটিতে চাঁদ এর আলোর ধরন প্রকৃতি কি তা অনির্দিষ্ট, আর অনির্দিষ্ট হয়ার অর্থ হলো এই যে এক্ষেত্রে নিজস্ব ও প্রতিফলিত এর মধ্য হতে কোনো একটা উদ্দেশ্য আর প্রত্যেকটারই এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য হয়ার ৫০-৫০% সম্ভাবনা আছে।চাঁদ এর আলো যদি সুর্য হতে ধারকৃত ও প্রতিফলিত হয়, সেক্ষেত্রেও এটা সম্পুর্ণ বলা সঠিক হবে যে চাঁদ এর আলো আছে, কেননা সুর্য হতে ধারকৃত ও প্রতিফলিত আলোও এক ধরনের আলোওই। চাঁদ এর আলো থাকার ব্যাপারটির সহিত চাঁদ এর আলোর সুর্য হতে ধারকৃত বা প্রতিফলিত হয়ার কোনো বিরোধ নেই, সাংঘর্ষিকতা নেই, বরং এদুটি বিষয়ের মাঝে সামঞ্জস্যসাধন করে বলা যায় যে চাঁদ এর আলো আছে, এবং সেই আলোটির ধরন-প্রকৃতি হলো এই যে তা সুর্য হতে ধারকৃত ও প্রতিফলিত। 

 

 

মোদ্দাকথা, চাঁদ এর আলো থাকার ব্যাপারটি দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়না যে চাঁদ এর আলো তার নিজস্ব, কেননা সাধারণভাবে আলো বলতে যেকোনো ধরনের আলোওই উদ্দেশ্য হতে পারে, প্রতিফলিত আলোও উদ্দেশ্য হতে পারে, নিজস্ব আলোও উদ্দেশ্য হতে পারে। প্রতিফলিত বা ধারকৃত আলোও একধরনের আলোওই। সুতরাং যদি চাঁদ এর আলো সুর্য হতে ধারকৃত ও প্রতিফলিত হয়, সেক্ষেত্রেও এটা বলা সম্পুর্ণ সঠিক হবে যে চাঁদ এর আলো আছে। 

 

যেহেতু এক্ষেত্রে কোরান-সুন্নাহতে চাঁদ এর আলোর ধরন-প্রকৃতির ব্যাপারে নির্দিষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি, সেহেতু এক্ষেত্রে এই ধরনের বিজ্ঞানকে ঘৃণাকারী মুসলিমদের জন্য গ্রহণ করার মতো সবচেয়ে যৌক্তিক অবস্থান হবে এই যে "চাঁদ এর আলোর ধরন প্রকৃতি কি সেব্যাপারে আমরা কিছু জানিনা। "

 

Share this:

More articles

◾মহানবী মুহাম্মদ সা: তার ৬৩ বছর ৪ দিনের জীবনে মোট ১১টি বিবাহ করেন। রাসূল (সা.) এর ১১ জন স্ত্রীদের মধ্যে দশ জনই ছিলেন হয় বিধবা না হয় তালাক প্রাপ্তা। যথাক্রমে, ◾খাদিজা (রা:)। ◾সওদা বিনতে জামআ (রা:)। ◾আয়েশা বিনতে আবু বকর (রা:)। ◾হাফসা বিনতে ওমর (রা:)। ◾যয়নব বিনতে খোযায়মা (রা:)। ◾উম্মে সালমা হিন্দ বিনতে আবু উমাইয়া (রা:)। ◾যয়নব বিনতে জাহাশ ইবনে রিয়াব (রা:)। ◾যুয়াইরিয়া বিনতে হারেস (রা:)। ◾উম্মে হাবিবা বিনতে আবু সুফিয়ান (রা:)। ◾সাফিয়া বিনতে হুয়াই (রা:)। ◾মায়মুনা বিনতে হারেস (রা:)।  ◾খাদিজা (রা:) - মদি....
20 Min read
Read more
নাস্তিকসহ কিছু মডারেট মুসলিমদেরকেও বলতে শুনা যায় যে, ইসলামে গান-বাজনা কেন নিষিদ্ধ! গান-বাজনা শুনতে সমস্যা কোথায়! এই লেখাটিতে গান-বাজনার ক্ষতিকর দিক, ইসলামে গান-বাজনা হারাম হওয়ার রেফারেন্স এবং কেন গান-বাজনা হারাম তা তুলে ধরা হয়েছে।  আল-কোরআনে গান-বাজনা হারাম  ● মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا ۚ أُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ কর....
17 Min read
Read more
বর্তমান নাস্তিক- ইসলাম বিদ্বেষীদের একটি প্রশ্ন যে, স্রষ্টা যদি থেকেই থাকেন তবে তিনি কেন মানুষকে এতো দুঃখ, কষ্ট ও বিপদ দেন? স্রষ্টা যদি থাকতেন তবে তার সৃষ্টিকে সাহায্য করতেন! এ ভাবে বিপদের মধ্যে তাকে রাখতেন না? জবাব :-  এই প্রশ্নের উত্তর স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নিজেই কুরআনে দিয়েছেন।  وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ  এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-....
13 Min read
Read more
প্রাকৃতিক নির্বাচন এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোন প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো জনগোষ্ঠীতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এটি ডারউইনীয় বিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি। দৈব ঘটনার সম্ভাবনা চেপে যাওয়া জেনেটিক ড্রিফট প্রাকৃতিক নির্বাচনকে গণিতের মত নির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয় যে, শক্তিশালী জীব টিকে থাকবে। কিন্তু এখানে আকস্মিক ঘটনাকে উপেক্ষা করা হয়। যেমন : হঠাৎ কোন দুরারোগ্য মহামারীর আগমন, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দীর্ঘ শীতকালীন শৈত্যপ্রবাহ কিংবা বর্ষায় সুবিস্স্তৃৃত ভয়ানক প্লাবন যা সেসব জ....
4 Min read
Read more
"সূর্যের আরশের নিচে সেজদাহ করা" সক্রান্ত বেশকিছু হাদিস বিভিন্ন ধরনের শব্দ ও বাক্যে বিভিন্ন গ্রন্থে বর্নিত হয়েছে। এসবের মধ্য হতে সবচেয়ে বিশুদ্ধতর দুইটি বর্ননা হলো বুখারি ও মুসলিমের বর্ননাগুলো। ইমাম বুখারি, সুলাইমান আল-আ'মাশ হতে বর্ননা করেছেন: عن أبي ذر رضي الله عنه قال قال النبي صلى الله عليه وسلم لأبي ذر حين غربت الشمس أتدري أين تذهب قلت الله ورسوله أعلم قال فإنها تذهب حتى تسجد تحت العرش فتستأذن فيؤذن لها ويوشك أن تسجد فلا يقبل منها وتستأذن فلا يؤذن لها يقال لها ارجعي من حيث جئت فتطلع من مغربها....
10 Min read
Read more
ফসিল রেকর্ড ও মানুষের উদ্ভব বনের বিবর্তন ডাইনোসর আগে নাকি মুরগি আগে? উচ্চতর জীবে জিনের আকার বৃদ্ধি হল কিভাবে?   ফসিল রেকর্ড ও মানুষের উদ্ভব প্রাপ্ত ফসিলগুলোর কোনটিই মানুষের বিবর্তন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে সক্ষম নয়। - বাণীতে বিবর্তনবাদী[১] অবশ্য যতই বিজ্ঞানের সঙ্গে বিবর্তন তত্ত্ব অসামঞ্জস্যপূর্ণ হোক না কেন, এটা নি:সন্দেহে প্রত্যাখ্যান করা হবে না বনের বিবর্তন বিবর্তনবাদীদের মতে, প্রথম বন সৃৃষ্টি হয়েছিল এক প্রকারের উদ্ভিদ দিয়ে। Think for a minute about ‘early’ life on land. Complexity is probably n....
3 Min read
Read more