আদম (আ) ও মুহাম্মদ (সা) এর মাঝে কত বছর সময়ের ব্যবধান রয়েছে? লেখক : শায়খ আল-মুনাজ্জিদ।

 

বিষয় : আদম (আ) ও মুহাম্মদ (সা) এর মাঝে কত বছর সময়ের ব্যবধান রয়েছে? 

লেখক : আশ-শায়খ মুহাম্মদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ

অনুবাদক : সামিউল হাসান তবিব আল-ইনফিরাদী

******************

প্রশ্ন : আদম (আ) কে সৃষ্টি করা ও মুহাম্মদ (সা) কে সৃষ্টি করার মধ্যকার সময়ের ব্যবধানটা কত বছরের? 

উত্তর :

শরিয়তে আদম (আ) ও মুহাম্মদ (সা) এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধানের ব্যাপারে কোনো নির্দিষ্ট হিসাব বর্ণিত হয়নি, এমনকি আদম (আ) কতবছর পর্যন্ত জীবিত ছিলেন সেটাও জানা যায়না।

তবে কিছু ভিন্ন ভিন্ন হাদিস ও আছার বর্ণিত হয়েছে যেগুলোর মাঝে সামঞ্জস্য করে একটা সময়ের ধারনা পাওয়া যায়, তবে এদ্বারা সম্পুর্ণভাবে ব্যবধানটির পরিমাণ জানা যায়না। এসব হাদিস ও আছারের মধ্যে কিছু আছে সহিহ, কিছু আছে মতভেদপুর্ণ, এবং এমনো কিছু সময়ের ব্যবধান আছে যেগুলোর নির্দিষ্ট হিসাব বর্ণনা করে কোনো আছার বর্ণিত হয়নি।

এব্যাপারে বর্ণিত সহিহ দলিলসমুহের মধ্যে আছে :

1. নুহ (আ) যেই পরিমাণ সময় যাবত নিজের কওমের মাঝে অবস্থান করে দাওয়াতের কাজ করেছিলেন, সেই সময়ের পরিমাণের ব্যাপারে আল্লাহর বক্তব্য "এবং সে (নুহ) তাদের মাঝে পঞ্চাশ বছর কম এক হাজার বছর যাবত অবস্থান করে "।

2. ইসা (আ) ও আমাদের নবি মুহাম্মদ (সা) এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধান। আল-বুখারি বর্ণনা করেছেন (হা/3732) যে সালমান আল-ফারসী (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে, ইসা (আ) ও নবী মুহাম্মদ (সা) এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধান হচ্ছে ৬ শত বছর।

এব্যাপারে বর্ণিত মতভেদপুর্ণ দলিলগুলোর মধ্যে আছে :

3. আদম (আ) ও নুহ (আ) এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধান। আবু-উমামাহ (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে, একজন ব্যাক্তি রাসুল (সা) কে উদ্দেশ্য করে বললো ; হে আল্লাহর রাসুল, আদম কি নবী ছিলেন?  তিনি (সা) বললেন, হ্যা।লোকটা বলল, তাহলে তাঁর ও নুহের মধ্যকার সময়ের ব্যবধান কতো? তিনি (সা) বললেন : দশটি ক্বারন (দশ শতাব্দী)। হাদিসটি ইবনু হিব্বান তাঁর "সহিহ"(14/69) তে ও আল-হাকিম 'আল-মুস্তাদরাক'(2/262) এ বর্ণনা করেছেন। বর্ণনা করে আল-হাকেম বলেছেন যে হাদিসটি মুসলিমের শর্তে সহিহ এবং এব্যাপারে আয-যাহাবি তাঁর সহিত একমত পোষণ করেছেন। এবং ইবনু কাসির উক্ত হাদিসটির ব্যাপারে "আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ" গ্রন্থে (1/94) বলেছেন যে এটি মুসলিমের শর্তে সহিহ যদিও তিনি (মুসলিম) এটা বর্ণনা করেন নি।

4. নুহ (আ) ও ইব্রাহিম (আ) এর মধ্যকার ব্যবধান। এবং এর দলিল হলো পুর্বে উল্লেখিত আবু-উমামাহর (রা) হাদিসটির বর্ধিতাংশ। … তিনি (লোকটি) বললেন : নুহ ও ইব্রাহিমের মধ্যকার সময়ের ব্যবধান কতো?  তিনি (সা) বললেন : 'দশটি ক্বারন'(দশ শতাব্দী)। এই হাদিসটিকে আল-হাকিম "আল-মুস্তাদরাকে"(2/288) বর্ণনা করেছেন ও বলেছেন যে এই হাদিসটি মুসলিমের শর্তে সহিহ এবং এটাকে তাঁরা দুজন (ইমাম বুখারি ও মুসলিম) বর্ণনা করেন নি। এবং হাদিসটিকে আত-তাবারানী "আল-মুজামুল কাবির"(8/118) এ বর্ণনা করেছেন। অপরদিকে এই হাদিসটির কিছু রাবিদেরকে হাদিস বর্ণনায় যইফ সাব্যস্ত করে সমালোচনা বর্ণিত হয়েছে। এবং আল-আলবানী উক্ত হাদিসটির জন্য থাকা বহু শাহেদের ভিত্তীতে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।

এব্যাপারে বর্ণিত হয়া অন্যান্য আরো আছারের মধ্যে আছে ;

5.  মুসা (আ) ও ঈসা (আ) এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধান।

আল-কুরতুবী বলেছেন : "এই ব্যবধানটির পরিমাণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে মতভেদ হয়েছে। মুহাম্মদ বিন সাদ আত-তাবাকাত গ্রন্থে ইবনু আব্বাস রা. (যিনি কিনা ইসরাইলি উৎস হতে তথ্যগ্রহণকারী হিসেবে প্রসিদ্ধ একজন সাহাবি) হতে বর্ণনা করেছেন যে তিনি (রা) বলেছেন, মুসা বিন ইমরান (আ) ও ইসা বিন মারইয়াম (আ) এর মাঝে ১৭০০ বছরের ব্যবধান আছে, এবং বনি ইসরাইলের বাহির হতে আগত নবীদের বাদ দিয়ে বিবেচনা করলে এই ১৭০০ বছরের ব্যবধানের মধ্যে বনি ইসরাইল থেকে এক হাজার জন নবী এসেছেন, এবং ইসা (আ) ও মুহাম্মদ (সা) এর মধ্যকার ব্যবধান হচ্ছে ৬৯০ বছর। " দেখুন : "তাফসিরুল কুরতুবী"(6/121)। ইবনু হাজার বলেছেন যে : "ইতিহাসবিদ ও মুহাদ্দিসরা এব্যাপারে একমত হয়েছেন যে ইয়াহুদিদের আগমন ও রাসুল (সা) এর প্রেরিত হয়ার মধ্যকার সময়ের ব্যবধান হাজার বছরের চেয়ে বেশি, এবং নাসারাদের আগমন ও রাসুল (সা) এর প্রেরিত হয়ার মধ্যকার সময়ের ব্যবধান ৬০০ বছর। " দেখুন : "ফাতহুল বারি"(4/449)।

উপরে উল্লেখিত আয়াত, হাদিস, আছার ও মতামতগুলোর মধ্য হতে যেগুলো সহিহ, সেগুলো কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের ব্যবধানের হিসাবের বেলায় গ্রহণযোগ্য।

পক্ষান্তরে যদি সামগ্রিকভাবে আদম (আ) ও মুহাম্মদ (সা) এর মধ্যকার সময়ের পরিমাণের একটি নিশ্চিত হিসাব প্রদানের কথা আসে, সেক্ষেত্রে তা উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও  অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে, যেমন ;

ক. উলামাদের মাঝে ক্বারনের ব্যাপারে হয়া ইখতিলাফ, যে এর দ্বারা কি এক শতাব্দী উদ্দেশ্য নাকি এক প্রজন্ম উদ্দেশ্য। যদি এইটা সহিহ হয় যে এদ্বারা প্রজন্ম উদ্দেশ্য, সেক্ষেত্রে এতটুকু প্রমাণিত আছে যে সেই ব্যবধানের মাঝের সময়ে বসবাসকারী লোকদের আয়ুর পরিমাণ নুহ (আ) যে পরিমাণ সময় যাবত দাওয়াতী সংগ্রাম করে গিয়েছিলেন সেই পরিমাণ সময়ের ভগ্নাংশের সমান ছিলো। কিন্ত আমরা এইটা জানিনা যে এসব প্রজন্মের  লোকদের গড় আয়ু কত ছিলো।

খ. এমন কিছু বর্ণিত হয়নি যা ইব্রাহিম (আ) ও মুসা (আ) এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধান কত ছিলো সেটাকে নির্দেশ করে।

অবশিষ্ট কথা হচ্ছে এই যে, এই ধরনের বিষয়গুলো নিশ্চিত হয়া এবং এসব নিয়ে গবেষণা করা এমন কিছু নয় যাদ্বারা আমরা আল্লাহর ইবাদত করি, এবং এগুলো কোনো আমল হিসেবেও গণ্য হয়না। এব্যাপারে আমাদের জন্য আল্লাহর এই বক্তব্যটিই যথেষ্ট যে, (এবং আদ ও ছামুদ ও আসহাবুর রাস ও এদের মাঝে আগত প্রচুর সংখ্যাক প্রজন্মকে)  আল-ফুরকান (আয়াত /38)।

এবং সকলের উচিত এই নবীদের উদাহরণ অনুসরণ করা, তাঁদের পথের অনুসারী হতে আগ্রহী হয়া, কেননা এটিই তাঁদের ও তাঁদের সিরাতের উল্লেখিত হয়ার প্রধান উদ্দেশ্য। আয়াত- (আল্লাহ যাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন, তাদেরই নির্দেশনা অনুসরণ করো) আল-আনয়াম (আয়াত 90)।

এবং আল্লাহই অধিক জ্ঞানী।

-----

মূল লেখাটির উৎস :
https://islamqa.info/ar/20907

উল্লেখ্য যে, islamqa এর এই আরবি  লেখাটির ইংরেজি ও উর্দু সংস্করণও আছে।

ইংরেজি সংস্করণটির লিংক :
https://islamqa.info/en/answers/20907/how-many-years-were-there-between-adam-and-muhammad-peace-be-upon-them-both

উর্দু সংস্করণটির লিংক :
https://islamqa.info/ur/20907

 




Share this:

More articles

প্রাকৃতিক নির্বাচন এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোন প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো জনগোষ্ঠীতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এটি ডারউইনীয় বিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি। দৈব ঘটনার সম্ভাবনা চেপে যাওয়া জেনেটিক ড্রিফট প্রাকৃতিক নির্বাচনকে গণিতের মত নির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয় যে, শক্তিশালী জীব টিকে থাকবে। কিন্তু এখানে আকস্মিক ঘটনাকে উপেক্ষা করা হয়। যেমন : হঠাৎ কোন দুরারোগ্য মহামারীর আগমন, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দীর্ঘ শীতকালীন শৈত্যপ্রবাহ কিংবা বর্ষায় সুবিস্স্তৃৃত ভয়ানক প্লাবন যা সেসব জ....
4 Min read
Read more
বর্তমান নাস্তিক- ইসলাম বিদ্বেষীদের একটি প্রশ্ন যে, স্রষ্টা যদি থেকেই থাকেন তবে তিনি কেন মানুষকে এতো দুঃখ, কষ্ট ও বিপদ দেন? স্রষ্টা যদি থাকতেন তবে তার সৃষ্টিকে সাহায্য করতেন! এ ভাবে বিপদের মধ্যে তাকে রাখতেন না? জবাব :-  এই প্রশ্নের উত্তর স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নিজেই কুরআনে দিয়েছেন।  وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ  এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-....
13 Min read
Read more
অজ্ঞতা : ইসলামে তালাকের অধিকার শুধু পুরুষদের দেয়া হয়েছে। নারীকে তালাক দেয়ার অধিকার দেয়া হয়নি।নারীর ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন মূল্য নাই এই ধর্মে। অজ্ঞতার জবাব: ইসলামে নারীরা ও তালাক দিতে পারে: তালাক শব্দের অর্থ হচ্ছে বিয়ে বিচ্ছেদ। আর ইসলামি শরিয়তে তালাক নিকৃষ্ট কাজ বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। রাসূল সা: এক হাদিসে বলেন , “তালাক হচ্ছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হালাল কাজ।” [১] ইসলামে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা শর্ত সাপেক্ষে নারী পুরুষ উভয়কে দেওয়া হয়েছে। তবে নারী ও পুরুষের তালাকের মধ্য কিছুটা পার্থক্য আছে । নারী পুরুষের তালাক দে....
5 Min read
Read more
🖋️লেখক:- Nebuda Khan   ◼️নাস্তিক প্রশ্নঃ কুরআনের উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টনে কেনো এমন ভুল থাকবে (কুরআন ৪:১১-১২)? একজন সৃষ্টিকর্তার পক্ষে কি মানুষের মত কোনরূপ ভুল হওয়া আদৌ সম্ভব? স্ত্রীঃ ১/৮ = ৩/২৪; কন্যাঃ ২/৩ = ১৬/২৪; পিতাঃ ১/৬ = ৪/২৪; মাতাঃ  ১/৬ =  ৪/২৪;   মোট=২৭/২৪  = ১.১২৫ (যা ১ এর চেয়েও বেশি)   ➡ জবাব:-   ◼️কুরআনে আসলে কি বলা হয়েছে?   => সূরা নিসার ১১ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে কেবল ২ বা ততোধিক কন্যা থাকলে তারা পাবে মোট সম্পত্তির ২/৩ অংশ।আর মৃত ব্যাক্তির পিতা-মাতা প্রত্যেকে পাবে ১/৬ অংশ করে। ....
7 Min read
Read more
নাস্তিকসহ কিছু মডারেট মুসলিমদেরকেও বলতে শুনা যায় যে, ইসলামে গান-বাজনা কেন নিষিদ্ধ! গান-বাজনা শুনতে সমস্যা কোথায়! এই লেখাটিতে গান-বাজনার ক্ষতিকর দিক, ইসলামে গান-বাজনা হারাম হওয়ার রেফারেন্স এবং কেন গান-বাজনা হারাম তা তুলে ধরা হয়েছে।  আল-কোরআনে গান-বাজনা হারাম  ● মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا ۚ أُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ কর....
17 Min read
Read more
Falsifiability ধারণার প্রবক্তা কার্ল পপার বলেছেন যে, বিবর্তন তত্ত্ব পরীক্ষণযোগ্য ফ্যাক্ট না, বরং অধিবিদ্যা গবেষণা কার্যক্রম। উইলিয়াম ডেম্বস্কি লিখেছেন, falsifying Darwinism seems effectively impossible. কিন্তু কেন? কারণ বিবর্তন তত্ত্ব একটা প্যাকেজ তত্ত্ব, এর আরও অনেক অনুমান আছে। যখনই কোন প্রমাণ বিবর্তনের বিরুদ্ধে যায়, তখনই কোন না কোন অনুমান সেই আঘাত সহ্য করে নেয়। আর বিবর্তন তত্ত্ব সুরক্ষিত থেকে যায়। যখনই কোন ফসিল 'older than previously thought' প্রমাণিত হয়, তারা বলবে যে, "পূর্বের ক্ল্যাডোগ্রামে....
3 Min read
Read more