"আদম (আ) ও মুহাম্মদ (সা) এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধান", ইসলামওয়েব।

 

বিষয় : "আদম (আ) ও মুহাম্মদ (সা) এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধান", ইসলামওয়েব। 

লেখক : ইসলামওয়েব (islamweb)

অনুবাদক : সামিউল হাসান তবিব আল-ইনফিরাদী

 

প্রশ্ন - এমন কি কোনো সহিহ নস আছে যা আদম (আ) ও মুহাম্মদ (সা) এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধানের সুনির্দিষ্ট হিসাব প্রদান করে? 

উত্তর :

আল-হামদুলিল্লাহ, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালাম আলা রসুলিল্লাহ ওয়া আলা আলিহি ওয়া সহবিহী, আম্মা বা'দ।

নিশ্চয়ই আল্লাহর নবী আদম (আ) ও আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা) এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধানের কোনো নির্দিষ্ট হিসাব শরিয়তে বর্ণিত হয়নি। আর এই হিসাব প্রদান করা অউদো সম্ভবই নয়, এমন কিছু সময়কালের বিদ্যমান থাকার কারণে যেগুলোর পরিমাণ জানা যায়না, উদাহরণস্বরুপ : আদম (আ) এবং নুহ (আ) কত বছর যাবত জীবিত ছিলেন তা অজানা, অনুরূপভাবে এব্যাপারে এমনো কিছু আছার বর্ণিত হয়েছে যেগুলোর বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায়না।

এব্যাপারে শরিয়তে বর্ণিত যেসব তথ্যের বিশুদ্ধ হয়া নিশ্চিত,সেসব তথ্যের মধ্যে আছে নুহ (আ) কর্তৃক নিজ কওমের মাঝে দাওয়াতের জন্য অবস্থান করার সময়ের হিসাব, কেননা আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেছেন : "এবং আমি নুহকে তার কওমের প্রতি প্রেরণ করেছি, ফলে সে তাদের মাঝে পঞ্চাশ বছর কম এক হাজার বছর যাবত অবস্থান করে " (আল-আনকাবুত : 14)।এবং যেই সময়ের ব্যবধান আদম (আ) ও নুহ (আ) মাঝে, এবং নুহ (আ) ও ইব্রাহিম (আ) এর মাঝে বিদ্যমান ছিলো, সেই সময়ের ব্যবধানের ব্যাপারে সহিহ হাদিস প্রমাণিত আছে।

আল-হাকিম ও আত-তাবারানী, আবু-উমামাহ (রা) হতে বর্ণনা করেন, যে তিনি (রা) বলেছেন যে : একজন লোক রাসুল (সা) কে উদ্দেশ্য করে বলেন 'হে আল্লাহর রাসুল! আদম কি একজন নবী ছিলেন?' তিনি (সা) বললেন : হ্যা। লোকটি বললো : তো তাঁর ও নুহ এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধান কত ছিলো? তিনি (সা) বললেন 'দশ শতাব্দী/প্রজন্ম'। লোকটি বলল : নুহ এবং ইব্রাহিমের মধ্যকার সময়ের ব্যবধান কত ছিলো? তিনি (সা) বললেন : 'দশ শতাব্দী/প্রজন্ম'। অতপর সেখানে উপস্থিত লোকেরা বললো : হে আল্লাহর রাসুল! রাসুলদের সংখ্যা কতজন?  তিনি (সা) বললেন বললেন : '৩১৫ জন'। আল-আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।

এবং ইবনু হিব্বান হাদিসটিকে তাঁর 'সহিহ' গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন আবু-উমামাহ (রা) এর সুত্রে, যে তিনি (রা) বলেছেন যে : একজন লোক রাসুল (সা) কে উদ্দেশ্য করে বলেন 'হে আল্লাহর রাসুল! আদম কি একজন নবী ছিলেন?' তিনি (সা) বললেন : হ্যা। লোকটি বললো : তো তাঁর ও নুহ এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধান কত ছিলো? তিনি (সা) বললেন 'দশ শতাব্দী/প্রজন্ম'। আল-আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।

অনুরূপভাবে ঈসা (আ) ও আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা) এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধান সম্পর্কে সহিহ হাদিস প্রমাণিত আছে, আল-বোখারী, সালমান আল-ফারসী (রা) হতে বর্ণনা করেছেন যে তিনি (রা) বলেছেন : ইসা (আ) ও মুহাম্মদ (সা) এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধান হচ্ছে ৬০০ বছর।

আদম (আ) ও মুহাম্মদ (সা) এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধানকে নির্ধারণ করা সম্ভব, তবে তা নিশ্চিতভাবে দৃঢ়তার সহিত নয়, বরং তা সম্ভব নিছকই অনুমান বা ধারনা হিসেবে। আর এই অনুমান বা ধারনা করা যায় উপরে উল্লেখিত তথ্যগুলোর দ্বারা, এবং তাফসিরুল-কুরতুবীতে বর্ণিত হয়া কিছু তথ্য দ্বারা, যেখানে আল-কুরতুবী (রহ) উল্লেখ্য করেছেন যে : ……… [দেখুন : তাফসিরুল কুরতুবী (6/121-122)]

এবং আল্লাহু আ'লাম।

মুল লেখাটির উৎস :
https://www.islamweb.net/ar/fatwa/203734

--------

অনুবাদকের সংযোজন :

আদম (আ) ও নুহ (আ) এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধান হচ্ছে ১০ শতাব্দী (১০০০ বছর)  অথবা ১০ প্রজন্ম (অজানা সংখ্যাক বছর, কেননা সেসময়ের গড় আয়ু অজানা)।

একইভাবে, নুহ (আ) ও ইব্রাহিম (আ) এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধানও হচ্ছে ১০ শতাব্দী বা ১০ প্রজন্ম।

ইব্রাহিম (আ) ও মুসা (আ) এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধান অপ্রমাণিত। এব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য বর্ণিত হয়নি।

মুসা (আ) ও ঈসা (আ) এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধানের ব্যাপারেও নির্ভরযোগ্য কিছু বর্ণিত হয়নি, এব্যাপারে কিছু ইসরাইলি তথ্য বর্ণিত হয়েছে, তবে ইসরাইলি তথ্য দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়,  নির্ভরযোগ্য কিছু নয়।

ঈসা (আ) ও মুহাম্মদ (সা) এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধান প্রমাণিত, এই ব্যবধান হচ্ছে ৬০০ বছর।

ব্যাপারটা এভাবে উপস্থাপন করা যায়,

আদম → নুহ = ১০ শতাব্দী বা ১০ প্রজন্ম (এক হাজার বছর / অজানা সংখ্যাক বছর)।

নুহ → ইব্রাহিম = ঐ।

ইব্রাহিম → মুসা = অজানা, অপ্রামণিত।

মুসা - ঈসা =  অজানা, অপ্রমাণিত।

ঈসা - মুহাম্মদ = ৬০০ বছর।

(আলাইহিমুস সালাম) 

যেহেতু ইব্রাহিম ও মুসা, এবং মুসা ও ঈসা (আলাইহিমুস সালাম) এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধানের হিসাব নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয় ; সুতরাং রাসুল (সা) ও আদম (আ) এর মধ্যকার মোট সময়ের ব্যবধান সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কোনোকিছু বলা যাবেনা, নিশ্চিতভাবে কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব প্রদান করা যাবেনা । এব্যাপারে বড়জোর ধারনা ও অনুমান করা যায়।

'রাসুল (সা) ও আদম (আ) এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধান ৫, ৬,৭ হাজার বছর' ; এই ধরনের যা কিছুই বলা হয়, তার সবই হচ্ছে বিভিন্ন অনিশ্চিত ধারনা, অনিশ্চিত অনুমান ; এগুলো কোনো নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নয়।









Share this:

More articles

কুরআনের কিছু আয়াত দেখিয়ে নাস্তিকরা দাবী করে যে আল্লাহর ইচ্ছায় তারা পথভ্রষ্ট নাস্তিক হয়ে গেছে।যদিও তারা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে না,তবুও নিজেদের কুকর্মের জন্য সৃষ্টিকর্তাকেই দায়ী করে।অনেক মুসলিমের মনেও এ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরী হয়।তারা মনে করে যে মানুষের স্বাধীন কোনো ইচ্ছা নেই।এই লেখায় তাদের ভ্রান্ত ধারণা খন্ডন করে সত্য উন্মোচন করা হবে ইনশাআল্লাহ। অভিযোগকৃত আয়াতগুলো নিম্নরূপ: مَنۡ  یَّشَاِ اللّٰہُ  یُضۡلِلۡہُ ؕ وَ مَنۡ یَّشَاۡ  یَجۡعَلۡہُ  عَلٰی  صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ–আল্লাহ যাকে চান, তাকে পথভ্রষ্ট....
15 Min read
Read more
প্রাকৃতিক নির্বাচন এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোন প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো জনগোষ্ঠীতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এটি ডারউইনীয় বিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি। দৈব ঘটনার সম্ভাবনা চেপে যাওয়া জেনেটিক ড্রিফট প্রাকৃতিক নির্বাচনকে গণিতের মত নির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয় যে, শক্তিশালী জীব টিকে থাকবে। কিন্তু এখানে আকস্মিক ঘটনাকে উপেক্ষা করা হয়। যেমন : হঠাৎ কোন দুরারোগ্য মহামারীর আগমন, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দীর্ঘ শীতকালীন শৈত্যপ্রবাহ কিংবা বর্ষায় সুবিস্স্তৃৃত ভয়ানক প্লাবন যা সেসব জ....
4 Min read
Read more
"সূর্যের আরশের নিচে সেজদাহ করা" সক্রান্ত বেশকিছু হাদিস বিভিন্ন ধরনের শব্দ ও বাক্যে বিভিন্ন গ্রন্থে বর্নিত হয়েছে। এসবের মধ্য হতে সবচেয়ে বিশুদ্ধতর দুইটি বর্ননা হলো বুখারি ও মুসলিমের বর্ননাগুলো। ইমাম বুখারি, সুলাইমান আল-আ'মাশ হতে বর্ননা করেছেন: عن أبي ذر رضي الله عنه قال قال النبي صلى الله عليه وسلم لأبي ذر حين غربت الشمس أتدري أين تذهب قلت الله ورسوله أعلم قال فإنها تذهب حتى تسجد تحت العرش فتستأذن فيؤذن لها ويوشك أن تسجد فلا يقبل منها وتستأذن فلا يؤذن لها يقال لها ارجعي من حيث جئت فتطلع من مغربها....
10 Min read
Read more
    Fun – মাছ থেকে মানুষের বিবর্তন সকল বিষয়ে নোবেল-বিজয়ী’সহ গ্যালিলিও-নিউটন-আইনস্টাইনের মতো বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের কেউই কোনো ধর্মবিদ্বেষী ছিলেন না, এখনো নেই। গ্যালিলিও ও নিউটন বরং আস্তিক ছিলেন। আর আইনস্টাইন অন্ততঃ স্বঘোষিত নাস্তিক ছিলেন না। এদিকে তিনজন বিজ্ঞানী’সহ যে’কজন মুসলিম নামধারী নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তাঁদের সকলেই ইসলামে বিশ্বাসী।কারন ইসলামের সাথে বিজ্ঞানের কোন বিরোধ তারা পান নি, শুধু বিবর্তনবাদ ছাড়া। ভাবুন তো, বিজ্ঞানের সাথে কোন বিরোধ না থাকা সত্বেও বিবর্তনবাদ একা কেন ইসলামের সাথে শত্রুতা ....
2 Min read
Read more
Falsifiability ধারণার প্রবক্তা কার্ল পপার বলেছেন যে, বিবর্তন তত্ত্ব পরীক্ষণযোগ্য ফ্যাক্ট না, বরং অধিবিদ্যা গবেষণা কার্যক্রম। উইলিয়াম ডেম্বস্কি লিখেছেন, falsifying Darwinism seems effectively impossible. কিন্তু কেন? কারণ বিবর্তন তত্ত্ব একটা প্যাকেজ তত্ত্ব, এর আরও অনেক অনুমান আছে। যখনই কোন প্রমাণ বিবর্তনের বিরুদ্ধে যায়, তখনই কোন না কোন অনুমান সেই আঘাত সহ্য করে নেয়। আর বিবর্তন তত্ত্ব সুরক্ষিত থেকে যায়। যখনই কোন ফসিল 'older than previously thought' প্রমাণিত হয়, তারা বলবে যে, "পূর্বের ক্ল্যাডোগ্রামে....
3 Min read
Read more
  রাসুল ﷺ উরাইনাহ গোত্রের কিছু লোককে উটের পশ্রাব ও দুধ পান করার কথা বলেছিলেন। এপ্রসংগে অনেকগুলো হাদিস রয়েছে। সব হাদিসের সারমর্ম হলো অনেকটা এরকম  : "উরাইনাহ গোত্রের কিছু লোক অসুস্থ অবস্থায় মুহাম্মাদের ﷺ নিকট আসল। এসে ইসলাম গ্রহন করল, তারপর খাদ্য-পানি ও আশ্রয় দেয়ার অনুরোধ জানাল। মুহাম্মাদ ﷺ তাদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে যেতে বললেন ও সেখানে গিয়ে উটের দুধ ও পশ্রাব পান করতে বললেন। তারপর তারা সুস্থ হলো, সুস্থ হয়ার পর তারা সেখানদের রাখালদের নির্মমভাবে হত্যা করল ও ইসলাম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে গেল। রাখালদের....
8 Min read
Read more