Are you sure?

তুলনামূলক ধর্মতত্ব »  বিবিধ

খ্রিস্টান মিশনারিদের পবিত্র কোরআনের ৪২ নং সুরা আশ শূরার ৭ নং আয়াতের অপপ্রচারের যথার্থ জবাব?"

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম 

খ্রিস্টান বনাম মুসলিম সংলাপ 

আলোচনা:-রাসূল সাঃ কী সমগ্র মানবজাতির জন্য এসেছেন নাকি যীশু তথা ঈসা আঃ সমগ্র মানবজাতির জন্য এসেছেন?পবিত্র কোরআন ও বাইবেলের আলোকে যৌক্তিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ:

\____________________________________/

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতাহু প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা। আশা করি অবশ্যই সবাই মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলার অশেষ রহমত ও দয়ায় ভালো এবং সুস্থ আছেন। আজকে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে আলোচনা করব ইনশাআললাহ। আর সেটা হলো খ্রিস্টান মিশনারি/পাদ্রীদের একটা মিথ্যা অভিযোগের জবাব দিব।কারণ বর্তমানে খ্রিস্টান মিশনারিরা ইচ্ছাকৃতভাবে কোরআনের সুস্পষ্ট আয়াতগুলোকে গোপন করে কিছু অস্পষ্ট আয়াতের মাধ্যমে সাধারণ মুসলিমদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।আর তারা কোরআনের একটা আয়াতের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চায় যে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ সারা পৃথিবীর জন্য আসেননি বরং এসেছিলেন কেবলমাত্র আরবদের জন্য। আর তাদের এই দাবি যে সম্পূর্ণ মিথ্যা তা প্রমাণ করব।আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে বলে দিয়েছেন সূরা আন নাহল (النّحل), আয়াত: ৪৩

 

وَمَآ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُّوحِىٓ إِلَيْهِمْ فَسْـَٔلُوٓا۟ أَهْلَ ٱلذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ

 

অর্থঃ আপনার পূর্বেও আমি প্রত্যাদেশ সহ মানবকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে।"[এই হুবহু কথাটি কোরআনের ২১ নং সূরা আল আম্বিয়ার ৭ নং আয়াতেও বলা হয়েছে]

 

অর্থাৎ আল্লাহ্ বলে দিয়েছেন যা কিছু আমরা বুঝতে পারব না তা জানার জন্য,বোঝার জন্য জ্ঞানীদের কাছে যেতে হবে।আর আমরাও কোরআন না বুঝে অপপ্রচার করব না ইনশাআললাহ।আর বর্তমান খ্রিস্টান মিশনারিরা হচ্ছে ঠিক এরুপ,তারা নিজেরা কখনোই কোরআনের আয়াত বোঝার জন্য তাফসীর গ্রন্থগুলো পড়েই না বরং নিজেরা ভুলভাল বুঝে অপপ্রচার করে তাদের ধর্ম কে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। আর কোরআনের এরুপ একটি আয়াত হলো যাতে বলা হয়েছে সূরা আশ্‌-শূরা (الشّورى), আয়াত: ৭

 

وَكَذَٰلِكَ أَوْحَيْنَآ إِلَيْكَ قُرْءَانًا عَرَبِيًّا لِّتُنذِرَ أُمَّ ٱلْقُرَىٰ وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنذِرَ يَوْمَ ٱلْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيهِ فَرِيقٌ فِى ٱلْجَنَّةِ وَفَرِيقٌ فِى ٱلسَّعِيرِ

 

অর্থঃ এভাবে আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি আরবী ভাষায় যাতে তুমি সতর্ক করতে পার মাক্কা এবং ওর চতুর্দিকের জনগণকে এবং সতর্ক করতে পার কিয়ামাতের দিন সম্পর্কে, যাতে কোন সন্দেহ নেই। সেদিন একদল জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে।"(অনুবাদক মুজিবুর রহমান)

 

ইংরেজি অনুবাদ:

And thus We have revealed to you an Arabic Qur'an that you may warn the Mother of Cities/towns [Makkah] and those around it and warn of the Day of Assembly, about which there is no doubt.When a party will be in Paradise (those who believed in Allah and followed what Allah's Messenger SAW brought them) and a party in the Blaze (Hell). (those who disbelieved in Allah and followed not what Allah's Messenger SAW brought them).(অনুবাদ Sahih International)

 

আর খ্রিস্টান মিশনারিরা এই আয়াতের মূল সারমর্মসহ ভাষার সাহিত্যগত শৈলীর অলংকার না বুঝেই বলেন যে,"রাসূল সাঃ কে নাকি কেবলমাত্র আরবদের জন্য পাঠানো হয়েছে কিন্তু সারা মানবজাতির জন্য পাঠানো হয়নি।এখন আসলে কী খ্রিস্টানদের এই দাবি সঠিক না ভুল তা এখানে প্রমাণ করব।প্রথমে আমরা এই আয়াতের প্রতিটা শব্দের অর্থ দেখি:

 

وَ كَذٰلِكَ اَوْحَیْنَاۤ اِلَیْكَ قُرْاٰنًا عَرَبِیًّا لِّتُنْذِرَ اُمَّ الْقُرٰى وَ مَنْ حَوْلَهَا وَ تُنْذِرَ یَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَیْبَ فِیْهِؕ فَرِیْقٌ فِی الْجَنَّةِ وَ فَرِیْقٌ فِی السَّعِیْرِ

 

শব্দার্থ: وَكَذَٰلِكَএবং এভাবেأَوْحَيْنَا আমরা ওহী করেছি,     إِلَيْكَতোমার প্রতি,     قُرْآنًاকুরআনকে,     عَرَبِيًّاআরবী(ভাষায়),     لِتُنْذِرَ = তুমি যেন সতর্ক করতে পারো,     أُمَّকেন্দ্রকে,     الْقُرَىٰজনপদ সমূহের(অর্থাৎ মক্কাবাসীদেরকে),     وَمَنْ =   এবং যারা ,     حَوْلَهَاতার চারিপ্বার্শে(আছে),     وَتُنْذِرَ = এবং সতর্ক করো তুমি(যেনো),     يَوْمَদিন(সম্পর্কে),     الْجَمْعِসমবেত/মিলিত হওয়ার (অর্থাৎ ক্বিয়ামাতের),     لَاনেই,     رَيْبَকোনো সন্দেহ,     فِيهِতারমধ্যে,     فَرِيقٌএকদল(সেদিন হবে),     فِيমধ্যে,     الْجَنَّةِজান্নাতের,     وَفَرِيقٌএবংএক দল(হবে),     فِيমধ্যে,     السَّعِيرِজাহান্নামের। [সম্পূর্ণ অনুবাদ উপরে দেওয়া হয়েছে]।

 

এইখানে উপরোল্লিখিত আয়াতের কোথাও সুনির্দিষ্টবাচক শব্দ যেমন কেবলমাত্র, শুধুমাত্র, একমাত্র, ছাড়া,ব্যতীত জাতীয় শব্দ গুলোর প্রয়োগ হয় নাই যা বাক্যের উদ্দেশ্যকে সম্পূর্ণ ভাবে স্বীকার করে নিবে যে রাসূল সাঃ কে কেবলমাত্র/শুধুমাত্র আরবদের জন্য পাঠানো হয়েছিল।অথচ এসব শব্দ যীশু নিজের ক্ষেত্রে অনেকবার প্রয়োগ করেছেন যে," তিনি ইস্রায়েল জাতির জন্য ছাড়া আর কারো জন্য আসেননি যা বাইবেল থেকেই প্রমাণিত (মথি ১৫:২৪)।আর এদিকে আপনি যদি এই আয়াতের দিকে লক্ষ্য করেন তাহলে দেখতে পাবেন যে,এখানে أُمُّ শব্দ রয়েছে যার অর্থ জননী/মাতা এবং الْقُرَى শব্দ রয়েছে যার অর্থ গ্রাম/শহর/নগরী (towns/Cities).আর এই উভয় শব্দের মিলনে যুক্ত হয়ে أُمُّ الْقُرَى শব্দটি গঠিত হয়েছে যার অর্থ হলো সমস্ত শহরের জননী বা Mother of the town's/Cities যা ইংরেজি অনুবাদে ব্যবহার করা হয়েছে।এছাড়া আরবি সাহিত্যের ক্ষেত্রে বা আরবি ভাষায় অনেক সময় أُمَّ শব্দের অর্থ কেন্দ্র বা মূলকে বোঝানো হয়,তবে এর শাব্দিক অর্থ হলো জননী।

 

প্রশ্ন:০১

পবিত্র মক্কা কে কেন أُمُّ الْقُرَى বা উম্মুল ক্বুরা তথা সমস্ত শহরের জননী (Mother of the towns) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে ?

 

ক)এর যথার্থ কারণ হলো এটি সমগ্র বিশ্বের শহর-জনপদ এমন কী ভূ-পৃষ্ঠ অপেক্ষা দয়াময় স্রস্টার কাছে অধিক সম্মানিত এবং শ্রেষ্ঠ"(তাবারী,ইবনে কাসীর)।সূরা আন‘আমের ৯২ নম্বর আয়াতেও এটা আলোচনা করা হয়েছে।হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাঃ মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার সময় মক্কাকে সম্বোধন করে বলেছিলেন:-"অবশ্যই তুমি আমার কাছে আল্লাহর সমগ্ৰ পৃথিবী থেকে শ্রেষ্ঠ এবং সমগ্ৰ পৃথিবী অপেক্ষা অধিক প্রিয়।যদি আমাকে তোমার থেকে বহিস্কার করা না হত, তবে আমি কখনও স্বেচ্ছায় তোমাকে ত্যাগ করতাম না"[তিরমিযী:৩৯২৬;  মুসনাদে আহমদ ৪/৩০৫;  

 

খ)এছাড়া মক্কা কে أُمُّ الْقُرَى বা উম্মুল ক্বুরা তথা সমস্ত শহরের জননী (Mother of the towns) বলা হয়েছে এই জন্য যে, এটা হল আরবের অতীব পুরাতন বসতি।অর্থাৎ এটা যেন সমস্ত গ্রাম-শহরের মা তথা কেন্দ্র বা মূল ভিত্তি।একজন মাতা-ই পরিবারের জন্ম দিতে পারে অর্থাৎ তাঁর থেকে পরিবারের সূচনা হয়।ঠিক এরুপই অন্যান্য গ্রাম-শহরগুলোর সূচনা লাভ করেছে এই মক্কা থেকেই।وَمَنْ حَوْلَهَا এর মধ্যে মক্কার পার্শ্বস্থ সমস্ত অঞ্চল শামিল।এছাড়া এখানে حَوْلَهَا দ্বারা প্রাচ্যের ও পাশ্চাত্যের সমস্ত শহর ও জনপদকে বুঝানো হয়েছে অর্থাৎ সমস্ত মানব জাতি।

 

(সোর্স:এই সকল কথাগুলো তাফসীরে আহসানুল বয়ান,তাফসীরে আবু বকর যাকারিয়া,তাফসীরে তাবারী/ফাতহুল মাজীদ এবং তাফসীরে ইবনে কাসীরে দ্রষ্টব্য ,পবিত্র কোরআন ৪২:৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দেখুন)

 

প্রশ্ন:০২

কাবা কী পৃথিবীর ভৌগলিক কেন্দ্র?

 

ক)ভৌগলিক অবস্থানের দিক বিবেচনা করে কাবা পৃথিবীর কেন্দ্র বিন্দুতে অবস্থিত অর্থাৎ গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। কাবাকে কেন্দ্রে ধারণ করে পৃথিবী ঘূর্ণায়মান রয়েছে।বৈজ্ঞানিকভাবে আমরা জানি যে, বছরের একটি বিশেষ দিনে একটি বিশেষ সময়ে (মধ্যাহ্নে) সূর্য কাবা শরিফের ঠিক মাথার ওপরে অবস্থান করে। তখন কাবা শরিফ বা মক্কা শরিফে অবস্থিত কোনো অট্টালিকা বা কোনো স্থাপনারই ছায়া চোখে পড়ে না। পৃথিবীর অন্য কোনো স্থানে এরূপ ঘটে না। এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, পবিত্র কাবা ভূমণ্ডলের ঠিক মধ্যস্থলে অবস্থিত।

 

ভূপৃষ্ঠের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় কাবাকে পৃথিবীর কেন্দ্র বা হৃদয় বলা যায়। মানুষের হৃৎপিণ্ডকে যেমন হৃদয় বলা হয়, পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দুকেও তেমনি সঙ্গত ভাবেই পৃথিবীর হৃদয় বলে অভিহিত করা চলে।এছাড়া কাবার অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এটা গোলাকারভাবে নির্মিত।শুধু ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে পবিত্র মক্কা নগরী পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত তাই নয়; ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্যের দিক থেকেও মক্কা নগরী মানবসভ্যতার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত।এছাড়া আপনি যদি ওয়ার্ল্ড ম্যাপে কাবা লিখে সার্চ করেন তাহলে কাবাকে ঠিক মাঝখানে দেখতে পারবেন।

 

এছাড়া পৃথিবীটা হলো একটা গোলাকার আকৃতির ন্যায়।যাকে একটি বৃত্ত হিসেবে কল্পনা করতে পারি।ঠিক এই বৃত্তের কেন্দ্র বিন্দু থেকে এর চারিপাশ বলতে সমগ্র বৃত্তকেই বোঝানো হয়।আর অনুরূপ ভাবে "মক্কা এবং ওর চতুর্দিক" বলতে সারা বিশ্বকে বোঝানো হয়েছে। কেননা পবিত্র কোরআনের ৪২:৭ নং আয়াতে মক্কা কে أُمُّ الْقُرَى বা উম্মুল ক্বুরা তথা সমস্ত শহরের জননী (Mother of the towns/Cities) বলা হয়েছে।আর এখানে أُمُّ শব্দের অর্থও কেন্দ্র। তাই এই আয়াত কোন ভাবেই প্রমাণ করে না যে,"মহানবী সাঃ কে কেবলমাত্র আরবদের জন্য পাঠানো হয়েছিল বরং এটি থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে তিনি বিশ্বমানবতার মহান রাসূল,যিনি এসেছিলেন সমগ্র মানবজাতির জন্য। এছাড়া ধরে নিলাম: এই আয়াতটাও বলতে গেলে অস্পষ্ট যা সুস্পষ্ট ভাবে বলা যায় না যে,তাঁকে কেবলমাত্র আরবদের জন্য পাঠানো হয়েছিল।কেননা এই আয়াতে মক্কা কে বলা হয়েছে "উম্মুল ক্বুুুরা" তথা শহরের জননী বা মূূল ভিত্তি হিসেবে।আর "উম্মুুল ক্বুরা তথা শহরের জননী "শব্দের পরে "পাশ্বববর্তী জনপদ "কথাটা উল্লেখ করা হয়েছে, যাঁর জন্য কোনভাবেই প্রমাণ করা সম্ভব নয় যে,"রাসূল সাঃ কেবলমাত্র আরবদের জন্য এসেছিলেন।

 

পবিত্র কোরআন, সমগ্র সহীহ হাদিস সহ জাল এবং বানোয়াট হাদিসেও পর্যন্ত এবং কি ইতিহাসের কোথাও একটা সুস্পষ্ট বাক্য নেই যেখানে বলা হয়েছে,"নবী মুহাম্মদ সাঃ কে শুধুমাত্র আরবজাতি ছাড়া অন্য কোন জাতির জন্য পাঠানো হয়নি।"আমি সমগ্র ইসলাম বিদ্বেষী অমুসলিম নাস্তিক কাফের মুশরিক খ্রিস্টানদের চ্যালেঞ্জ করলাম!

 

বরং সমগ্র কোরআন, সহীহ হাদিসে সুস্পষ্ট ভাবে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মহান আল্লাহর বাণী এবং বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর উক্তি রয়েছে যে,"তাঁকে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। "মহান আল্লাহ্ পাক রাসূল সাঃ কে সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরণ করেছেন যা কোরআনের ভাষায় সূরা আল আরাফ (الأعراف), আয়াত: ১৫৮ তে এরশাদ করা হয়েছে:-

 

قُلْ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّى رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا ٱلَّذِى لَهُۥ مُلْكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ يُحْىِۦ وَيُمِيتُ فَـَٔامِنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِ ٱلنَّبِىِّ ٱلْأُمِّىِّ ٱلَّذِى يُؤْمِنُ بِٱللَّهِ وَكَلِمَٰتِهِۦ وَٱتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ

 

অর্থঃ বলঃ হে মানবমন্ডলী! আমি তোমাদের সকলের জন্য সেই আল্লাহর রাসূল রূপে প্রেরিত হয়েছি, যিনি আকাশ ও ভূ-মন্ডলের সার্বভৌম একচ্ছত্র মালিক, তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই, তিনিই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান। সুতরাং আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর সেই বার্তাবাহক নিরক্ষর নাবীর প্রতি ঈমান আন। যে আল্লাহ ও তাঁর কালামে বিশ্বাস স্থাপন করে, তোমরা তারই অনুসরণ কর। আশা করা যায়, তোমরা সরল সঠিক পথের সন্ধান পাবে।"(অনুবাদক মুজিবুর রহমান)

 

আরো বলা হয়েছে সূরা আল আম্বিয়া (الأنبياء), আয়াত: ১০৭

 

وَمَآ أَرْسَلْنَٰكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَٰلَمِينَ

 

অর্থঃ আমি তো তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি শুধু রহমাত রূপেই প্রেরণ করেছি।"(অনুবাদক: মুজিবুর রহমান)

 

আরো বলা হয়েছে সূরা সাবা (سبا), আয়াত: ২৮

 

وَمَآ أَرْسَلْنَٰكَ إِلَّا كَآفَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ

 

অর্থঃ আমি তো তোমাকে সমগ্র মানব জাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপে প্রেরণ করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানেনা।"(অনুবাদক:মুজিবুর রহমান)

 

আর এইভাবে পবিত্র কোরআনের বহু জায়গায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে,"নবী মুহাম্মদ সাঃ কে সমগ্র মানবজাতির জন্য পাঠানো হয়েছে "(পবিত্র কোরআন ৬:৯০; ৭:১৫৮;  ২১:১০৭; ২৫:১; ৩৪:২৮; ৩৮:৮৭; ১২:১০৪; ৬৮:৫২;অনুরুপ ভাবে ৩:২০,৩১; ১৭:১০৫; ২৫:৫৬; ৩৩:৪৫-৪৭; ৩৫:২৩-২৪; ৪৮:৮,২৮; ৮১:২৭ আয়াত দ্রষ্টব্য)।এইভাবে একটা লিস্ট দেওয়া যাবে বৃহৎ আকারের।

 

• i)আর সহীহ হাদিসে স্বয়ং রাসূল সাঃ এর জবাব থেকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় অসংখ্য উক্তি পাওয়া যায় যেখানে তিনি বলেছেন,"আমি সকল মানুষের জন্য প্রেরিত হয়েছি।"হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন:-"আমি তো আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত বিশ্ববাসীর জন্য  রহমত”(ত্বাবরানী, মুজামুল আওসাত্মঃ ৩০০৫, আস-সাগীরঃ ১/১৬৮, নং২৬৪, মুস্তাদরাকে হাকিমঃ ১/৯১ নং ১০০, মুসনাদে শিহাবঃ ১১৬০, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৫/৬৯, ৩০৫, মারফু' সনদে আর সুনান দারমী, হাদীস নং ১৫ মুরসাল সহীহ সনদে)।

• ii)মহানবী (সাঃ) বলেন, "আমাকে সাদা-কালো সকলের প্রতি নবী বানিয়ে পাঠানো হয়েছে।" (মুসলিমঃ মাসাজিদ অধ্যায়) " পূর্বে নবীকে বিশেষ একটি জাতির নিকট পাঠানো হত। আর আমাকে সকল মানুষের জন্য নবী হিসাবে পাঠানো হয়েছে" (বুখারী, মুসলিম)।

• iii)এছাড়া রাসূল সাঃ আরো বলেছেন,"তোমরা কি জান না যে, আল্লাহর অনুমতিক্রমে আমি যখন বললামঃ হে মানবমণ্ডলী, আমি তোমাদের সমস্ত লোকের জন্য আল্লাহ রাসূল। তখন তোমরা সবাই আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিলে। শুধু এই আবু বকর রাঃ-ই ছিলেন, যিনি সর্বপ্রথম আমাকে সত্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন"(বুখারীঃ ৪৬৪০)।

iv)এ বিষয়বস্তুটিকে আরো সুস্পষ্টভাবে নবী সাঃ হাদীসে বার বার বর্ণনা করেছেনঃ তিনি বলেছেনঃ “আমাকে লাল-কালো সবার কাছে পাঠানো হয়েছে।” [মুসনাদে আহমাদঃ ১/৩০১] 

• v)আরো বলেছেনঃ “প্রথমে একজন নবীকে বিশেষ করে তার নিজেরই জাতির কাছে পাঠানো হতো এবং আমাকে সাধারণভাবে সমগ্র মানব জাতির কাছে পাঠানো হয়েছে।” [বুখারীঃ ৩৩৫, ৪৩৮, মুসলিমঃ ৫২১]

vi)তিনি আরো বলেনঃ “আমাকে সমস্ত সৃষ্টির কাছে পাঠানো হয়েছে এবং আমার আগমনে নবীদের আগমনের ধারাবাহিকতা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।” [মুসলিমঃ ৫২৩]।

• vii)আবু মূসা আশ’আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে উদ্ধৃত বর্ণনায় আরো উল্লেখ রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে লোক আমার আবির্ভাব সম্পর্কে শুনবে, তা সে আমার উম্মতদের মধ্যে হোক কিংবা ইয়াহুদীনাসারা হোক, যদি সে আমার উপর ঈমান না আনে, তাহলে জাহান্নামে যাবে’ । [মুসনাদে আহমাদঃ ২/৩৫০]।

• viii)রাসূল সাঃ বলেছেন, "আমি রহমতের মূর্তপ্রতীক হয়ে আল্লাহর পক্ষ হতে বিশ্বজগতের জন্য একটি উপহার।" (সহীহুল জামে' ২৩৪৫নং)।এছাড়া হাদিসের অসংখ্য জায়গায় বলা হয়েছে নবী মুহাম্মদ সাঃ এসেছেন সমগ্র মানবজাতির জন্য।

 

অপরদিকে যদি বাইবেল পড়লে তাহলে দেখবেন বাইবেলের মধ্যে স্বয়ং যীশু নিজেই সুস্পষ্ট ভাবে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিয়েছেন:-

 

"ইস্রায়েল কুলের হারানো মেষ [ইয়াহুদিদের] ছাড়া আর কারো নিকটে আমি প্রেরিত হইনি। "(মথি ১৫:২৪)।"

 

পবিত্র কোরআন বলেছে:- যীশু তথা ঈসা আঃ এসেছিলেন কেবলমাত্র ইস্রায়েল জাতির নিকট"(পবিত্র কোরআন ৬১:৬)।

 

আর (মথি ১৫:২৪) পদে ইংরেজি অনুবাদে বলা হয়েছে:-

i) I was sent only to the lost sheep of the house of Israel"(New American Standard Bible)

ii) I am not sent but unto the lost sheep of the house of Israel"(King James Bible)

iii) I was sent only to the lost sheep of the house of Israel."(Holman Christian Standard Bible)

 

এখানে যীশু খ্রিস্ট only to the lost ,but unto the lost অর্থাৎ বাক্যের উদ্দেশ্যেকে সম্পূর্ণভাবে/সুস্পষ্টভাবে স্বীকার করে নেওয়া অর্থে বাংলা তর্জমায় শুধু,শুধুমাত্র, কেবল, কেবলমাত্র, মাত্র, ছাড়া/ব্যতীত....শব্দগুলো তিনি ব্যবহার করেছেন।আর যখন যীশু নিজেই বলেছেন,"তিনি ইস্রায়েল ব্যতীত অন্য কোন জাতির জন্য আসেননি" তখন কোন যুক্তিতে তিনি সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরিত হবেন?" তাহলে এটা কী যীশুর প্রতি ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টানদের মিথ্যাচার নয়।তাহলে তো এটা পরস্পর সাংঘর্ষিক বক্তব্য হয়ে যাবে। এছাড়া যীশু খ্রিস্ট ইস্রায়েল ব্যতীত অন্য কোন জাতির জন্য আসেননি।এই কথাই তিনি তাঁর জীবদ্দশায় অর্থাৎ তথাকথিত ক্রুশিফিকশনের আগে তাঁর ঘনিষ্ঠ ১২ জন শিষ্যের কাছে প্রচার করেছেন এবং তাঁদের শিক্ষা দিয়ে গেছেন "যাই হোক এখানে বোঝার সুবিধার্থে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।প্রথমে জেনে আসি যীশু কোন জাতির জন্য এসেছিলেন যা তিনি নিজেই তাঁর তথাকথিত ক্রুশিফিকশনের আগে (জীবদ্দশায়) সুস্পষ্টভাবে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছিলেন?আর এটা আছে প্রচলিত ইঞ্জিলের মথির ১৪ নং অধ্যায়ে যা নিম্নরুপ:

 

অপবিত্রতার বিষয়ে উপদেশ দেওয়ার পরে 

21. যীশু সেই জায়গা ছেড়ে সোর ও সীদোন অঞ্চলে গেলেন।

22. আর দেখ, ঐ অঞ্চলের একটি কেনানীয় মহিলা এসে চিৎকার করে বলতে লাগল, হে প্রভু, দায়ূদ-সন্তান, আমাকে দয়া করুন, আমার মেয়েটি ভূতগ্রস্ত হয়ে অত্যন্ত কষ্ট পাচ্ছে।

23. কিন্তু তিনি তাকে কিছুই উত্তর দিলেন না। তখন তাঁর শিষ্যেরা কাছে এসে তাঁকে অনুরোধ করলেন, একে বিদায় করুন, কারণ এ আমাদের পিছন পিছন চিৎকার করছে?"

 

এখানে প্রশ্ন হলো যীশু কেনানীয় মহিলাকে কেন উত্তর না দিয়ে চুপ করে ছিলেন?এর যথার্থ কারণ উক্ত কেনানীয় মহিলা ছিল খৎনা বিহীন সম্প্রদায়ের লোক অর্থাৎ অইহুদি,যার জন্য যীশু কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে ছিলেন।যদি উক্ত মহিলা তাঁর জাতির অন্তর্ভুক্ত তথা ইহুদি সম্প্রদায়ের লোক হতো তাহলে নিঃসন্দিগ্ধ ভাবে তখন চুপ না থেকে সরাসরি উত্তর দিতেন।কিন্তু তারপর কী হলো?এরপরে শিষ্যরা করুণাময় বিগলিত হয়ে যীশুকে উক্ত মহিলার প্রতি দয়া করার অনুরোধ জানালে তিনি উত্তরে কী বলেছিলেন?

 

যীশু খ্রিস্ট বলেছিলেন:-"ইস্রায়েল কুলের হারানো মেষ [ইয়াহুদিদের] ছাড়া আর কারো নিকটে আমি প্রেরিত হইনি। "(মথি ১৫:২৪)।"

 

এখানে যীশু দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সুস্পষ্ট ভাবে কোন রকম দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছাড়াই বলে দিয়েছেন যে তিনি কেবলমাত্র ইস্রায়েল জাতি তথা ইহুদিদের জন্য ছাড়া অইহুদিদের [খৎনা বিহীন সম্প্রদায়ের] জন্য আসেননি।যীশুর উপরোল্লিখিত মন্তব্য করার পরে কী হলো?

 

25. মহিলাটি এসে তাঁকে প্রণাম করে বলল, “প্রভু, আমার উপকার করুন।”

26. তিনি বললেন, “সন্তানদের খাবার নিয়ে কুকুরদের কাছে ফেলে দেওয়া উচিত নয়।”

 

এখানেও যীশু কথাগুলো এদের নাপাকীর (অপবিত্রতার) দিকে ইঙ্গিত করে বললেন। কেননা এরা ছিল খৎনা বিহীন সম্প্রদায়ের লোক তথা অইহুদি।এরপরের ভার্সে দেখুন কী বলা হয়েছে:-

 

27. তাতে সে বলল, “হ্যাঁ, প্রভু, কারণ কুকুরেরাও তাদের মালিকের টেবিলের নিচে পড়ে থাকা সন্তানদের সেই সব খাবারের গুঁড়াগাঁড়া তারা খায়।”

 

এখানে অবশেষে উক্ত খৎনা বিহীন সম্প্রদায়ের লোক তথা অইহুদি মা মহিলাটি তার সন্তানের জীবন বাঁচানোর জন্য পক্ষান্তরে নিজেকে কুকুর বলে অভিহিত করল যা উপরোল্লিখিত ভার্স থেকেই স্পষ্ট।

 

এরপরে মহিলার এই বিনয় বাক্যে যীশু সপ্রশংস দৃষ্টিতে উক্ত নারীর উপরে দয়া করলেন।

 

□এখানে যীশু সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর ধর্ম সার্বজনীন নয় অর্থাৎ তিনি সবার জন্য আসেননি।

 

এছাড়া ঈসা মসীহ্ কেবলমাত্র ইস্রায়েল বংশের হারানো মেষপালের জন্য প্রেরিত ছিলেন (মথি ১০:৫-৬; এবং মার্ক ৪:১১-১২)

 

এখানে বোঝার সুবিধার্থে সম্পূর্ণ উদ্ধৃতি দেওয়া হলো (মথি ১০:৫-৬)

5. এই বারো জনকে যীশু পাঠিয়ে দিলেন, আর তাঁদের এই নির্দেশ দিলেন, তোমরা অযিহূদীরা যেখানে বাস করে সেখানে যেও না এবং শমরীয়দের কোন শহরে প্রবেশ কর না;

6. বরং ইস্রায়েল কুলের হারান মেষদের কাছে যাও।"(মথি ১০:৫-৬)

 

□এখানে "পরজাতি তথা অইহুদি"-(অ-ইস্রায়েলীয়)"-কোন মানুষকে তাঁর ধর্মে দীক্ষা দেওয়া যাবে না যা যীশু সুস্পষ্টভাবে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিয়েছেন।এমনকি "শমরীয়গণ "-যারা মূলত ইস্রায়েলীয় কিন্তু অ-ইস্রায়েলীয়দের সাথে বিবাহ-সাদী করে অন্য বংশে মিশে ছিল তাদেরকেও যীশুর ধর্মে দীক্ষা দেওয়া যাবে না। কেবলমাত্র "বিশুদ্ধ ইস্রায়েল বংশীয়দের "-মধ্যেই তাঁর ধর্মের প্রচার সীমাবদ্ধ থাকবে। খ্রিস্টধর্মের সকল রাজ্যের সুসংবাদ কেবলমাত্র তাদের জন্য সীমাবদ্ধ। 

 

● এখানে প্রশ্ন হলো যীশু কেন তাঁর শিষ্যদের অইহুদিদের কাছে যেতে নিষেধ করলেন এবং কেবলমাত্র/শুধুমাত্র ইস্রায়েলকুল তথা ইহুদিদের কাছে যেতে বললেন?এর উত্তর স্বয়ং যীশু নিজেই দিয়েছেন:-"ইস্রায়েলের হারান মেষ [ইহুদি] ছাড়া আর কারও কাছে আমাকে পাঠানো হয়নি।”(মথি ১৫:২৪)।এবং কী যীশু এর মূল কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন:-"পবিত্র জিনিস কুকুরদেরকে দিও না এবং তোমাদের মুক্তা শূকরদের সামনে ফেলো না; যদি তারা পা দিয়ে তা দলায় এবং ফিরে তোমাদের টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলে।"(মথি ৭:৬) [মথি ১৫:২৪-২৭ পদেও এসব ব্যাখ্যা করে বলেছেন]

 

এখানেও দেখেন যীশু অইহুদিদের কুকুর শুকর বলার মাধ্যমে একটি বিষয় সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে তিনি সবার জন্য আসেননি। যার জন্য তিনি পরজাতি কে কুকুর শুকর বলতে দ্বিধাবোধ করলেন না।যীশু যদি সকলের জন্য আসতেন তাহলে তিনি পরজাতি কে কখনোই কুকুর শুকর বলতেন না।এ থেকেই বোঝা যায় যে যীশু কে সকলের মুক্তির জন্য প্রেরণ করা হয় নাই।

 

এখন মার্কের (৪:১১-১২)-অনুচ্ছেদ সম্পূর্ণ উদ্ধৃতি দেওয়া হলো।তবে হ্যাঁ (মার্কের ৪ অধ্যায়ে ১-৭ নং অনুচ্ছেদে যীশু একটা গল্পের মাধ্যমে শিষ্যদের শিক্ষা দিয়েছেন।আর এই গল্পটাই হলো ১১ ও ১২ পদের প্রসঙ্গ।আর এই প্রসঙ্গটা পড়লেও বুঝতে পারবেন আসলে যীশু শুধুমাত্র ইহুদিদের জন্য এসেছিলেন বলেই কেবলমাত্র তাদের কে শিক্ষা দিতেন এবং তা বুঝিয়ে দিতেন কিন্তু অইহুদিরা সেটা শুনলেও কিছুই বুঝত না। কারণ তিনি তাদের শিক্ষা দিতে চাইতেন না।কিন্তু কেন?কারণ তিনি অইহুদিদের কাছে আসেননি বরং ইহুদিদের জন্য এসেছিলেন-মথি ১৫:২৪)।যাই হোক মূল উদ্ধৃতিতে চলে যাই:

 

10. যখন তিনি একা ছিলেন, তাঁর সঙ্গীরা সেই বারো জনের সঙ্গে তাঁকে গল্পের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন।

11. তিনি তাঁদেরকে বললেন, “ঈশ্বরের রাজ্যের গুপ্ত সত্য তোমাদেরকে দেওয়া হয়েছে; কিন্তু ঐ বাইরের লোকদের কাছে সবই গল্পের মাধ্যমে বলা হয়ে থাকে,”

 

●এখানে ঈশ্বরের রাজ্যের গুপ্ত তথ্য (বেহেশতে প্রবেশ করার সকল সুসংবাদ) কেবলমাত্র ইস্রায়েল জাতির জন্য দেওয়া হয়েছে।কারণ যীশু কেবলমাত্র ইস্রায়েল জাতির জন্য এসেছিলেন।কিন্তু তিনি অ-ইস্রায়েলীয়দের জন্য আসেননি বলেই তাদের কাছে গল্পের মাধ্যমে (উপমার ন্যায়) বলেন যেন তারা (অইহুদিরা) কিছুই বুঝতে না পারে অর্থাৎ যীশু এটার মাধ্যমেও বুঝিয়ে দিলেন যে তাঁর সকল সুসংবাদ বা শিক্ষা কেবলমাত্র ইস্রায়েল জাতির জন্য সীমাবদ্ধ কিন্তু বাইরের লোকদের জন্য নয়।

 

12. সুতরাং তারা যখন দেখে, তারা দেখুক কিন্তু যেন বুঝতে না পারে

এবং যখন শুনে, শুনুক কিন্তু যেন না বোঝে,পাছে তারা ফিরে আসে ও ঈশ্বর তাদেরকে ক্ষমা করেন।"(মার্ক ৪:১১-১২)

 

উপরোল্লিখিত যথার্থ তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বলা যায় যে যীশু কেবলমাত্র ইস্রায়েল জাতির জন্য এসেছিলেন এবং তাঁর শিক্ষা এবং কথা-বার্তা কেবলমাত্র ইস্রায়েল জাতির জন্য প্রযোজ্য।তাহলে প্রশ্ন হলো যীশুর উক্তি :-"আমিই পথ, আমিই সত্য এবং আমিই জীবন; আমাকে ছাড়া কেউ পিতার কাছে যেতে পারে না "(যোহন ১৪:৬)-উদ্ধৃতি দ্বারা যীশু কাদের ক্ষেত্রে বোঝানোর জন্য এরুপ মন্তব্য করেছেন?আগেই প্রমাণ দেখিয়েছি যে যীশু কেবলমাত্র ইস্রায়েল জাতির জন্য ছাড়া আর কারো জন্য আসেননি।তাই উক্ত কথাটা কেবলমাত্র ইস্রায়েল জাতির মুক্তি ছাড়া আর কারো ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।আমি সুস্পষ্ট ভাবে যথার্থ রেফারেন্স সহ উদ্ধৃতি দিয়ে অত্যন্ত যৌক্তিকতার সাথে প্রমাণ করে দিলাম যে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ সমগ্র মানবজাতির জন্য এসেছেন অপরদিকে যীশু তথা ঈসা আঃ ইস্রায়েল জাতির জন্য ছাড়া আর কারো জন্য আসেননি। 

 

তবুও খ্রিস্টানরা এসব যুক্তি খন্ডন না করে বাইবেলের কিছু বানোয়াট ভার্স উল্লেখ করে বলেন যে,"যীশু খ্রিস্ট সমগ্র মানবজাতির জন্য এসেছিলেন। আর এটাও প্রমাণ করে দেখাব এটা সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ নয় বরং পরবর্তী সময়ে সংযোজন।আর সেই ভার্স হলো:-

 

18. তখন যীশু কাছে এসে তাঁদের সঙ্গে কথা বললেন, “স্বর্গে ও পৃথিবীতে সমস্ত ক্ষমতা আমাকে দেওয়া হয়েছে।

19. অতএব তোমরা গিয়ে সমস্ত জাতিকে শিষ্য কর, পিতার ও পুত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাদের বাপ্তিষ্ম দাও, 

20. আমি তোমাদের যা যা আদেশ দিয়েছি, সে সমস্ত পালন করতে তাদের শিক্ষা দাও। আর দেখ, আমিই যুগের শেষ পর্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি"(মথি ২৮:১৮-১৯) [এই একই কথা বলা হয়েছে মার্ক ১৬:১৫-১৬ নং ভার্সে]।

 

পাঠক বন্ধুগণ আপনারা কী জানেন (মথি ২৮:১৮-১৯; মার্ক১৬:১৫-১৬) নং ভার্সে উল্লেখিত উক্তি যীশু কোন সময় করেছিলেন?এটা হলো যীশুর তথাকথিত ক্রুশিফিকশনের পরের ঘটনা। এখন আমরা উপরোল্লিখিত যৌক্তিক আলোচনাতে দেখেছি যে, যীশু তাঁর জীবদ্দশায় ১২ জন ঘনিষ্ঠ শিষ্যেদের শিক্ষা দিয়েছেন এবং বলেছেন তিনি কেবলমাত্র ইস্রায়েল জাতির জন্য ছাড়া আর কারো জন্য আসেননি এবং কী তাদেরও তিনি শমরীয়গণ সহ অইহুদিদের কাছে যেতে নিষেধ করেছেন বার বার।এবং কী তিনি যে অইহুদিদের জন্য আসেননি তা বার বার বিভিন্ন ঘটনা এবং কথার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন,জানিয়ে দিয়েছেন।

 

এখন প্রশ্ন হলো যীশু তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর অনুসারীদের শিক্ষা দিয়েছেন এক আর তথাকথিত ক্রুশিফিকশনের পরে বলবেন আরেক, কথা। এটা কী বিশ্বাস করা যায়?একজন মহান লোক কিভাবে পরস্পর সাংঘর্ষিক কথা বলতে পারেন?অথচ যদি আপনারা বাইবেলের নিউটেস্টামেন্টের চারটা প্রচলিত গসপেল (মার্ক,লুক,মথি ও ইউহান্না/যোহন) পড়েন তাহলে দেখবেন যীশুর সম্পূর্ণ দাওয়াতি মিশন শুধুমাত্র খাঁটি ইহুদিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল,তিনি পরজাতিদের সাথে মিশতেন না ইত্যাদি।এছাড়া (মথি ২৮:১৮-১৯; মার্ক১৬:১৫-১৬) নং অনুচ্ছেদগুলো চারটা গসপেলের মূল পান্ডুলিপিতে নেই।

 

এখন কথা হলো তাহলে এসব কী মিথ্যা?হ্যাঁ,আমরা বলব এসব অবশ্যই যীশুর নামে মিথ্যা অপপ্রচার এবং পরবর্তীকালের সংযোজন।কেননা এটা যীশুর তথাকথিত ক্রুশিফিকশনের পরের ঘটনা। আর যীশু তথা ঈসা আঃ এর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করা বাইবেল থেকেই প্রমাণ করা যায়। আবার ঠিক এর বিপরীতেও প্রমাণ করা যায় যে যীশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেননি। অর্থাৎ বাইবেল থেকেই দুই ধরনের তথ্য প্রমাণ করা সম্ভব যীশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেছেন ≠ যীশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেননি। তাহলে সুস্পষ্ট ভাবে যৌক্তিকতার সাথে বলা যায় যে স্বয়ং বাইবেল থেকেই যীশুর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করাটা ১০০% বিশুদ্ধ নয় অর্থাৎ প্রমাণিত নয় এবং কী অনেক ঐতিহাসিক ভাবেও স্বীকৃতি যে যীশু তথা ঈসা আঃ ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেননি।অর্থাৎ বাইবেল নিজেই যীশু তথা ঈসা আঃ এর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করার ঘটনা ১০০% বিশুদ্ধ প্রমাণ দিতে ব্যর্থ।আর এই জন্য পবিত্র কোরআনে এরশাদ করা হয়েছে:-"তারা ঈসা আঃ এর সম্পর্কে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন মতভেদ সৃষ্টি করল।"পবিত্র কোরআন ও বাইবেল অনুযায়ী যীশু তথা ঈসা আঃ ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেননি।এখন যখন যীশুর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করাটা যখন বিশুদ্ধ ভাবে ১০০% প্রমাণিত নয় সেখানে কোন যুক্তিতে (মথি ২৮:১৮-১৯;  মার্ক১৬:১৫-১৬) তে উল্লেখিত উক্তিগুলো সঠিক হবে এবং যীশুর পক্ষে বলা সম্ভব?

 

কোরআন ও বাইবেলের সাক্ষ্যানুযায়ী যীশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা যাননি:প্রমাণ 

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=238322300979067&id=104106391067326

 

নোট:আবারো স্মরণ করিয়ে দিলাম:

যীশু যখন সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি কেবলমাত্র,শুধুমাত্র ইস্রায়েলের জন্য এসেছেন অর্থাৎ ইস্রায়েল ব্যতীত অন্য কোন জাতির জন্য আসেননি। এই কথাই তিনি তাঁর জীবদ্দশায় অর্থাৎ তথাকথিত ক্রুশিফিকশনের আগে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ ১২ জন শিষ্যের কাছে প্রচার করেছেন এবং তাঁদের শিক্ষা দিয়েছেন।তিনি তাঁর জীবদ্দশায় কখনোই বলেননি যে তিনি সমগ্র পৃথিবীর জন্য এসেছেন!কিন্তু যীশুর মতো একজন মহান ব্যক্তি কিভাবে তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর ঘনিষ্ঠ শিষ্যদের শিক্ষা দিবেন একটা আর তথাকথিত ক্রুশিফিকশনের পরে বলবেন আরেকটা?তাহলে যীশু কী তার নিজের কথার বিরোধী তথ্য বলেন নাকি?আর যার কথার মধ্যে বৈপরীত্য রয়েছে তার স্বভাবের মধ্যেও প্রতারণা লুকিয়ে থাকে।তাহলে যীশু কী প্রতারক মিথ্যাবাদী ছিল নাকি?কারণ (মথি ১০:৫-৬; ১৫:২৪ এবং মার্ক ৪:১১-১২) এর উক্তির সাথে (মথি ২৮:১৯ ও মার্ক ১৬:১৫-১৬) উক্তি গুলো পরস্পর বিরোধী। তবে (মথি ২৮:১৯ ও মার্ক ১৬:১৫-১৬) এই উক্তি গুলো তথাকথিত ক্রুশিফিকশনের পরের ঘটনা যা জলন্ত মিথ্যা বানোয়াট এবং বাইবেলের নতুন সংযোজন।